কোন দিন আমি গাইবো সেই গান?
ওয়ারফেজের মোটামুটি শ্রোতা পছন্দের গান, বিচ্ছিন্ন আবেগ। যদিও ইউটিউবে হিট কম, মিজান বালাম বা পলাশ কেউই গানটা গায় না। গানটা লেখা ও সুর জানতাম বাবনা করিমের। কিন্তু সে গায় নাই। গেয়েছে তুষার, অন্য এক ব্যান্ডের ভোকাল। গানটা এক অদ্ভুত নষ্টালজিয়া আর ডিপ্রেশনে ভরা। লোকমুখে প্রচলিত গানটা বাবনা করিম লিখেছিল ভাইয়ের মৃত্যুর পর। গানটা আপনি আশাবাদী হিসেবে ধরতে পারেন আবার বিষন্নতারও ভাবতে পারেন। শিল্পী জানাচ্ছে, কোন দিন আমি গাইবো সেই গান যেখানে থাকবে না মলিন অহংকার/ যে গানে থাকবে জোৎস্নার স্বচ্ছতা/ যে গানে থাকবে মহাশূন্যের উদারতা। এইটিজের দ্যা দ্যা ব্যান্ডের একটা গান আছে, দিজ ইস দ্যা ডে, লাইফ উইল শিউরলি চ্যাঞ্জ। সেরকম কোনো একটা দিন কি আসে জীবনে? সবদিনই তো ঘুরে ফিরে একইরকম আঁধারের।
আমাদের সবার ভেতরে আছে, নটিংহিল সিন্ড্রোম। একুশ বাইশ বছর আগে নটিংহিল সিনেমাটা এসেছিল। এক ফ্যান্টাসি লাভ স্টোরি। এক বইয়ের দোকানীর সাথে হলিউড সুপারস্টারের প্রেম। আমরা ভাবি হয়তো ভাবি কোনো জুলিয়া রবার্টস এসে আমাদের উদ্ধার করবে। যদিও আমরা হিউ গ্রান্টের মত হ্যান্ডসাম নই, ট্রাভেল বুক স্টোরও চালাই না। জাতি হিসাবে আমাদের আছে এই সিন্ড্রোম। কেউ না কেউ আসবে এই আধার সময়ে? আসলে কেউ আসবে না। যে মায়োপিক ভিশনে আমাদের যাপিত জীবন সেখানে এসব আশা করাও বাতুলতা।
নতুন এক কথা শুনি মানুষের মুখে। যে নেগেটিভ পিপল থেকে দূরে থাকতে হবে। আমার তাদের বলতে ইচ্ছে করে, পজেটিভ থেকে এত ইন্সপিরেশন নিয়ে কি দিয়েছেন পৃথিবীকে। পৃথিবীতে এত পজেটিভিটির আদৌ কি দরকার আছে? আপনি একটা ধামড়া বোকাচোদা, একটা বাসার ঝি গিরি কাজের জন্য মেয়েকে বিয়ে করলে অনাগত যে সন্তানটা আসবে সেটা আরেকটা বোকাচোদাই হবে। আজ দুইজন বন্ধুস্থানীয় কিন্তু ইয়াং ফাদারদের কথা হচ্ছিল আমার সাথে। তারা বলছিলো, বাচ্চা অসুস্থ থাকলে কিচ্ছু ভালো লাগে না। আমার মনে হচ্ছিল আমার বাবার কথা। আমার বাবা আমি অসুস্থ হলে বিরক্ত হতো, সামরিক ডিসিপ্লিনে কেন জীবন কাটাই না তার সন্তান হয়ে তা নিয়ে বকা ঝকা করতেন। আমার মা চিন্তায় পড়ে যেতেন, খালি মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলতেন, আমার সোনা বাবা লক্ষী বাবা কিচ্ছু হবে না তোর। এই সমাজের চোখে এখন আমার বাবা খারাপ মানুষ হয়তো, আসলেই কি তিনি খারাপ? আজ এক দাওয়াত খেতে খেতে ফোনে বলছেন আমাকে, পোলাও তো খেতে পারি না, পোলাও গরুর মাংস রোষ্ট দেখলে তোর কথা মনে পড়ে, তুই কি আনন্দ করে টিভির সামনে খাইতি।
উচ্চমাধ্যমিক কলেজে ভর্তি হবার সময় আমাদের বন্ধুর সংখ্যা এক লাফে বেড়ে যায়। তখন আমাদের ভেতর একটা ভিন্নধরনের পারসোনালিটি আসে। যে আমরা আগে ছয় টাকা অন্যের উপরে গচিয়ে দিলে আত্মপ্রসাদ পেতাম সেই আমরাই তখন সবার বিল দিতে চাই। যুদ্ধ করতে চাই, আমি দেই আমি দেই। তখন কিছু ছেলে থাকে। রেফারেন্স পয়েন্ট বের করে, ঐ সময় তো বিল দিতে চাইলি, এখন দে। এরকম এক দেয়াদেয়ির দিনে কানে কানে ভেসে আসে, কোনো ক্লাসমেটের বিয়ে। তার উপর যাদের ক্রাশ ছিল তারা নীরব হয়ে কোনো এক সমুদ্রতীরে অবস্থান নেয়। কিন্তু সন্ধ্যা হলেই তো বাসায় ফিরতে হবে। তাই শোকটাও জমে না। ফেরার সময় মিনি বাসের জানালায় চোখ রেখে ফিরতে হয়, গান আসে মনে, আগে যদি জানতাম কিংবা যেদিন বন্ধু চলে যাবো। মেয়েদের বেড়ে উঠাটা হয়তে অন্যরকম। আমার বান্ধবী বলেছিল সে কলেজ লাইফে কথাই বলতো কম। নিজের আঞ্চলিকতা যদি এসে পড়ে। সিডির দোকানে গিয়ে, হামারা দিল আপকে পাস হ্যায় সিনেমাটা চাইলে সেই দোকানের ছোকড়া বারবার আয়নায় মুখ দেখতো, যে তাকে মনে হয় হিন্ট দিচ্ছে আমার বন্ধু। আর ছেলেদের নানান টিজতো আছেই। বান্ধবী বলেছিল বলে জানা, নয়তো মেয়েদের গল্প তো শোনাই হয় না। সাহিত্য নাটক সিনেমায় খালি পুরুষের চোখে ও ভাবনায় মেয়েদের গল্পের চর্বিত চর্বন। এক সাক্ষাৎকারে পড়লাম, সারিকা সাবাহ নামের এক অভিনেত্রী বলছে, সজল ভাইয়ের সাথে কাজ করার ইচ্ছে অনেকদিনের। সজলের সাথে নাটক করার এত ইচ্ছে আসলেই কি কারো থাকে, এসব তো স্রেফ বলার জন্য বলা।
আজকে এক রিকশা চালক আক্তার সাহেব বলছিল, প্রতিবেশীর এক বিয়ে নিয়ে তারা খুব উত্তেজিত ছিল। কিন্তু বিয়েটা কেন জানি হচ্ছে না। বিয়েটায় ভাগড়া দিয়েছে এক বাড়ীওয়ালা, তার কথা রাস্তায় কিসের বিয়ে। কিন্তু রাস্তায় প্যান্ডেল খাটিয়ে বিয়ে করা যে নিম্নবিত্তের এক ধরনের অথোরিটিটিভ পাওয়ার সেটা কে বোঝাবে? আজ বিয়েটা ক্যান্সেল হয়ে আখতার, খলিল, হারুন কত লোকের যে ভালো মন্দ খাওয়া হলো না। ডিম আর ডালের চচ্চড়ি খেতে খেতে তারা বকা দিবে রিজিককে। আমি রিজিকের ভালো ফ্যান, দুপুরে এক জায়গায় খেতে বসে দেখি, টাকা হারিয়ে বসে আছি। কি আর করা, বাসায় ফিরলাম। আমাদের এই যে মর্মান্তিক দিনযাপন এখানে পজেটিভিটির দিশা পাবেন কই?
মন্তব্য করুন