ইউজার লগইন

বিজন সরকার'এর ব্লগ

১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর, ২১ আগস্ট এবং.........

১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর এবং ২১ আগস্টের পিছনের অপশক্তিগুলি এক ও অভিন্ন। তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক। তারা বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কোটায় শ্রেনী বিভক্ত হলেও, চূড়ান্ত আদর্শিক জায়গায় তাদের মধ্যে তেমন কোন বিভেদ নেই।

৫মে হেফাজতের সরকারকে স্টেপ ডাউন ও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ব্যহত করার বিএনপি জোটের অপচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর, গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বর্তমান সরকারকে নামানো যে সম্ভব নয়, অপশক্তিগুলির কনসরটিয়ামের প্রধান বিএনপির মুল নীতিনির্ধারকরা ভাল ভাবেই বুঝে গেছেন।

সংখ্যালঘু বিতারনের (Elimination of Minorities) রাজনীতি ২:স্বাধীনতা উত্তর পর্ব

দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মহাকাব্যিক স্বাধীনতা সংগ্রামের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা নতুন দেশে সম-অধিকার নিয়ে বাচার স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্ন দেখাটা খুবই যৌক্তিক ছিল। দেশটাকে স্বাধীন করতে হিন্দুদেরকে সবচেয়ে বেশী মূল্য দিতে হয়েছে । ১৯৪৭ সালের পর যখনই পূর্ব বাংলার জনগণ পাকিস্তানের উগ্র শাসক গোষ্ঠীর অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে, তখনই পাকশাসকেরা ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক বিষবাস্প ছড়িয়ে দিয়ে হত্যা করেছে হিন্দুদের । ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, রাষ্ট যন্ত্রকে ব্যবহার করে হিন্দুদের কে শত্রু বানিয়ে তাদের চাষাবাদ ও বসতবাড়ির জমিজমা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১ নভেম্বর এডওয়ার্ড কেনেডি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর সিনেট কমিটিকে দেওয়া এক রিপোর্টে লিখেছিলেন “"Hardest hit have been members of the Hindu community who have been robbed of their lands and shops, systematically slaughtered, and in some places, painted with yellow patches marked "H". All of this has been officially sanctioned, ordered and implemented under martial law from Islamabad"

সংখ্যালঘু বিতারনের (Elimination of Minorities) রাজনীতি ১: স্বাধীনতাপূর্ব পর্ব।

১৯৪৭ সালে যখন দ্বি-জাতি ( Dual Nation Theory) তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয় তখন পূর্বপাকিস্তানে হিন্দুদের সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যায় ৩১%। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পথ পরিক্রমায় ১৯৫২ সালে ২২ %, ১৯৬১ সালে এর সংখ্যা দাড়ায় ১৮ % (সুত্র: আবুল বারাখাত, লিভিং উইথ ভেস্টেড প্রপার্টি) । স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন আসে কেন হিন্দুদের সংখ্যা সময়ের সাথে সাথে কমে গেল। তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট মৌলিকভাবে বিশ্লেষণে করলে যে মূল কারণ পাওয়া যায় তা হল পূর্বপাকিস্তানের জনগণকে শোষণ করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলির ও সামরিক শাসকদের ধর্মীয় উগ্রবাদের অপব্যবহার । রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মকে অপব্যবহার করে দেশ থেকে হিন্দুদের বিতারনের (elimination) কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। এখানে উল্লেখ্য যে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের ফলে সংখ্যালঘু বিতারনের (elimination) রাজনীতি নতুন ধর্মীয় মোড়কে বাজারজাত করা হয়েছে (পড়ুন এই লেখার ২য় অংশে)।

জামাত ও সুশীল সমাজ: আমেরিকার শেষ ভরসা?

পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনৈতিক বাস্তবতায় স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভিন্ন আদর্শের মেরুকরণের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলি সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের সাপেক্ষে যে রাজনীতি বিনির্মাণ অপরিহার্য ছিল তা করতে সর্বাংশে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলি ধর্মের নামে রাজনীতিতে বিভাজন সহায়ক উগ্রবাদী আদর্শতা, সমাজ জীবনের বিভিন্ন স্তরে জ্যামিতিক হারে ছড়িয়ে দিতে সমর্থ হয়েছে। আমরা এখন বাঙ্গালি মুসলিম না হয়ে মুসলিম বাঙ্গালি পরিচয়ে পরিচিত হতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

ধর্মের আলোকে(!!!) স্বাধীনতার বিরোধিতা, যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন ও ধর্মীয় জঙ্গিপনাঃ

তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে স্বাধীনতার বিরোধিতা, যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন ও ধর্মীয় জঙ্গি-পনা তিনটি একেবারেই আলাদা বিষয়। এই বিষয়গুলির উদ্দেশ্য সময়কাল ভেদে পার্থক্য হলেও রাজনৈতিক বিচারের এক। বিশেষ করে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিষয় তিনটির আন্ত-সম্পর্ক দ্রুততার সহিত স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যদিও সাধারণ জনগণের মননে এই তিনটি বিষয়ের আন্ত-সম্পর্কটি এখনো তেমন জায়গা করে নেয়নি, তবে বিষয় তিনটির অতি উচ্চমাত্রার আন্ত-প্রতিক্রিয়াশীলতা দেশের রাজনীতিতে ক্ষমতায় পালা বদলের হাতিয়ার হয়ে উঠছে। অন্যান্য সামাজিক সমস্যা গুলিকে ছাপিয়ে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ইস্যু হিসাবে স্থান করে নিয়েছে। আর রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রিক এই ইস্যুগুলির বাণিজ্যিক নিউক্লিয়াস হিসাবে ব্যবহ্রত হচ্ছে ধর্ম।

সিএনএন ও বিবিসি মিথ্যাচারের শিকার

সিএনএন আই রিপোর্ট (ireport) একটি রিডার অপিনিয়ন পেইজ। প্রি- স্ক্যানিং ছাড়াই যে কেউ তাঁর মতামত সিএনএন আই রিপোর্টটে পোস্ট করতে পারে। অথচ প্রথম আলোতে কমেন্ট পোস্ট করতে গেলেও স্ক্যানিং হয়। প্রকাশ যোগ্য হলে তারপর পোস্ট টি প্রকাশ করা হয়। সিএনএন আই রিপোর্টে এমনটি হয়না। হেফাজতের উপর রাতে অভিযানের ফলে ৩০০০ নিহত হয়েছে বলে যিনি দাবি করেছিলেন সেই পোস্ট কারি ছিল pseudonymous.

২ রা এপ্রিলঃ জিঞ্জিরা জেনোসাইড

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নরঘাতক পাকসেনাদের দ্বারা বিভিন্ন পরিকল্পিত গনহত্যা পরিচালিত হয়েছে। একাত্তরের এইসব গণহত্যাগুলো বিংশ্ব শতাব্দির কুখ্যাত ইহুদীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, ভিয়েতনামে মার্কিনের দ্বারা গণহত্যা কিংবা রুয়ান্ডায় সংঘটিত গণহত্যার সমান। জানোয়ার পাকসেনারা যে কত হিংস্র হয়ে বাংলার স্বাধীনতাকামী নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে তা একজন পাকসেনার স্বীকার উক্তি থেকে পাওয়া যায়।

“...we were told to kill hindus and kafirs (non-believers in God). One day in June, we cordoned a village and were ordered to kill the kafirs in that area. We found all the women reciting from the Holy Quran and the men holding special congregational prayers seeking God’s mercy. But they were unlucky. Our commanding officer ordered us not to waste any time”.( comfession of a Pakistani Soilder)।

“ আমরা অসহায় পরছি, আমাগোরে যদি দয়া কইরা একটু স্হান দেন, তয় আপনাগো দেশে থাকতে পারি”

[এটি একাত্তরের গনহত্যাকারী ,গনধর্ষণকারী ও মহাকাব্যিক স্বাধীনতার শত্রু দেইল্যা রাজাকারে ফাঁসির রায় উত্তর জঙ্গি জামায়েত-শিবিরের মধ্যযুগীয় নারকীয় হামলার শিকার এক হিন্দু ধর্মাবলম্বী বৃদ্ধার একটি আবেদন। আবেদনটি করেছেন এই দেশের জনগণের প্রতি।]

thumb_jammat 1.jpg

কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাইদি ওরফে দেইল্ল্যার ( আল্লামা কিংবা মাওলানা জাতীয় পবিত্র শব্দগুলি এই অপরাধীর সাথে ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি) ফাঁসির রায় হওয়ার পর স্বাধীনতা বিরোধীদল জামায়েত-ইসলাম ও শিবির দেশব্যাপি মধ্যযুগীয় ধংসাত্নক ও নারকীয় তান্ডব চালিয়েছে। কোন সভ্য, বিবেকবান ও মিনিমাম ধর্মজ্ঞান সম্পন্ন মানুষ এই তাণ্ডব লীলাকে সমর্থন করতে পারে না, পারে কি? দেশের অনেক জেলাতে পশুর মত নিরীহ মানুষ ও পুলিশকে হত্যা , বাড়ি ঘর ও সরকারী অফিস আদালততে অগ্নি সংযোগ , লুটতরাজ ও ভাঙচুর করেছে। পুলিশ প্রশাসনের উপর যে ভাবে হামলা করেছে তা ১৯৭১ সালে রাজারবাগ পুলিশলাইনের উপর পাকিস্তানি সেনাদের হামলাকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

তের কি বায়ান্ন এর মতই আমাদের রাজনৈতিক সম্পদ ?

বিশ্বের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে যে সব আন্দোলন জাতীয় চেতনা ও জন আকাঙ্ক্ষার প্রতিধ্বনি, কেবল সেইসব আন্দোলনই গণতন্ত্রকে প্রকৃত অর্থে বিকাশ ও শানিত করেছে। জাতীয় চেতনা ভিত্তিক এইসব আন্দোলন দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য যেমন অতীব প্রয়োজন, সমাজ ও সংস্কৃতির মানবিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য অংশ। শাহবাগের তরুণদের নবজাগরণ যে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক সম্পদ ও ভবিষ্যৎ পথ প্রদর্শক হিসাবে আবির্ভাব হল, এই বাস্তবতাটিকে স্বীকার না করলে আমাদের স্বভাবজাত অজ্ঞতাটাই প্রকাশ পাবে। রাজনৈতিক সম্পদ এই অর্থে যে ২০১৩ সালের এই চেতনা শক্তিটিই বাংলার ইতিহাসের পাতায় ১৯৫২ সালকে গৌরবময় ও সমৃদ্ধশালি করেছে। এই চেতনায় যে রাজনীতিটি আছে তা চলমান রাজনৈতিক চর্চার বাইরের এক নতুন শক্তি ও বেগবান অনুঘটক। এই দিকনির্দেশক রাজনৈতিক চেতনাটি যেমন ১৯৫২ সালেও আমাদের স্বাধীনতার পথ দেখিয়েছিল, তেমনি আজ ২০১৩ সালে এসে আহব্বান জানাচ্ছে প্রিয় জন্মভূমি থেকে ১৯৭১ সালের পরাজিত অপশক্তিকে নির্মূল করার জন্য। যারা এই চেতনার নির্মাতা তারা হল নতুন প্রজন্ম ,তরুণ সমাজ। এই সব আদর্শিক প্রেরনা ও চেতনার প্রতিফলন বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ঘটে