ইউজার লগইন

জামাত ও সুশীল সমাজ: আমেরিকার শেষ ভরসা?

পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনৈতিক বাস্তবতায় স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভিন্ন আদর্শের মেরুকরণের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলি সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ও সামাজিক প্রেক্ষাপটের সাপেক্ষে যে রাজনীতি বিনির্মাণ অপরিহার্য ছিল তা করতে সর্বাংশে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলি ধর্মের নামে রাজনীতিতে বিভাজন সহায়ক উগ্রবাদী আদর্শতা, সমাজ জীবনের বিভিন্ন স্তরে জ্যামিতিক হারে ছড়িয়ে দিতে সমর্থ হয়েছে। আমরা এখন বাঙ্গালি মুসলিম না হয়ে মুসলিম বাঙ্গালি পরিচয়ে পরিচিত হতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

দেশের মূলধারার রাজনীতিতে ধর্মীয় দল ও সংগঠনগুলির ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রসারণের পাশাপাশি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সুশীল সমাজ নামে আরেকটি গোষ্ঠী সময়ের সমান্তরালে বেশ বাড়ন্ত বলেই মনে হচ্ছে। সরাসরি ক্ষমতার স্বাদ না নিলেও এই গোষ্ঠীগুলি দেশের রাজনীতি কিংবা ক্ষমতার পালাবদলের ক্ষেত্রে গত এক দশক ধরে বেশ শক্তিশালী অনুঘটক হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে, যখনই বড় দল গুলির মধ্যে নির্বাচন-কালীন সরকারের ইস্যুতে রেষারেষি শুরু হয়, বুদ্ধিবৃত্তিক এই গোষ্ঠীর দৌড়ঝাঁপ বেড়ে যায়।

বাংলাদেশের এই বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজের একটি অংশের কর্মকাণ্ডে মনে হয় তাঁরা পশ্চিমা দুনিয়ার পোশাকে বিশ্ব দরবারে দেশের মান মর্যাদা বৃদ্ধির ঠিকাদারি হাতে নিয়েছে!! মার্কিনীদের পরামর্শ পত্রে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সকল শ্রেণীর মতামতের প্রতিফলনের নিশ্চয়তার তাগিদ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কোন গোষ্ঠী উগ্র কিনা, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর সামাজিক জীবন ব্যবস্থার স্বার্থের পরিপন্থী কিনা তা বিবেচ্য বিষয় হয়ে দাড়ায় না। বাংলাদেশসহ অনেক দেশেই ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে একই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে মার্কিনীরা লালন পালন করে আসছে। এটা তাদের সাম্রাজ্যবাদী হীন মানসিকতার নিয়মিত চর্চারই অংশ। বিশেষ করে যেসব দেশে ও তার আশে পাশের এলাকাতে তাদের কৌশলগত সম্পর্কের মোড়কে সাম্রাজ্যবাদি শক্তি প্রসারণের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।

মার্কিন প্রশাসনের মতে, এই সকল ধর্মীয় উগ্র গোষ্ঠী ও সুশীল সমাজের রাজনৈতিক ও সামাজিক বৈধতার বিষয়টি মেনে না নিলে দেশের মুলধারার রাজনীতির গণতান্ত্রিক আচরণ ও বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আর এই বৈধতার অনুষঙ্গটি আমাদের বড় দুই রাজনৈতিক দল গুলির মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করে, পারস্পারিক অবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয় এবং তারা প্রচণ্ড স্নায়ু চাপে ভুগে। এই সুযোগে মার্কিনীরা ব্যাপক সরব হয়, এবং তাদের কুটকৌশল বাস্তবায়নে যে কোন হীন পন্থা অবলম্বন করে। জঙ্গিবাদী রাজনীতির প্রমাণ থাকার পরেও জামাত-শিবিরকে মডারেট মুসলিম দল হিসাবে ঘোষণা করা কিংবা সেনা প্রিয় সুশীলদের কে বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত করাটা মার্কিনীদের গণতান্ত্রিক দায়িত্বের ও মূল্যবোধের মধ্যেই পরে বলে মনে হয়।

মার্কিন প্রশাসনের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চরিত্রটি দেশ ভেদে পরিবর্তনশীল। অতি সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া মিশরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসি কে সরিয়ে দেওয়াটা অগণতান্ত্রিক স্বত্বেও তাদের চোখে এটি একটি গণতান্ত্রিক পদক্ষেপ । কারন মুরসি মুসলিম ব্রাদার হুডের রাজনৈতিক আদর্শবাদী নেতা। আর এই সংগঠনটি মার্কিনীদের চোখে এখনো সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসাবে সংজ্ঞায়িত। ব্রাদার হুডকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে মার্কিনীদের আজ্ঞাবহ সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় আনা হল। মার্কিনীদের এই তথাকথিত বহুমুখী গণতান্ত্রিক মাল্টি ড্রাগ থেরাপির ফলেই আজ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মত অনেকে দেশেই জঙ্গি গোষ্ঠী ধর্মীয় জিহাদের নামে নামাজের সময়ও মসজিদে বোমা ফাটাচ্ছে।

ইরাক,আফগানিস্তান ও লিবিয়াসহ অনেক দেশেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদি শক্তি প্রসারে ক্ষেত্রে ধর্মীয় উগ্র গোষ্ঠী ও সুশীল সমাজের ভূমিকা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশেও মার্কিন প্রশাসনের এই দ্বিমুখী সমান্তরাল নীতির প্রয়োগ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। অতীতের তুলনায় বর্তমানে মার্কিনীরা, বাংলাদেশের সুশীল সমাজের স্বার্থে যেমন বেশি সোচ্চার, ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের ধর্মীয় জঙ্গিবাদী দল জামায়েত ইসলামসহ ধর্মীয় উগ্র দল ও সংগঠনগুলির জঙ্গিবাদী, অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিস্ট কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে একেবারেই নীরব। বড় রাজনৈতিক দলগুলির ভিতরকার গণতান্ত্রিক চর্চার ঘাটতি ও পরস্পরের প্রতি চরম বৈরী সম্পর্কের সুযোগে ধর্মীয় উগ্র গোষ্ঠী ও তথাকথিত সুশীল সমাজকে দুধে ভাতে লালন পালন করছে।

এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশের নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মতই জামাত-শিবিরের সাথে মার্কিনীদের সম্পর্কটা কয়েক দশকের। এই সম্পর্কটা মার্কিন প্রশাসন একান্ত নিজের স্বার্থেই আজ পর্যন্ত টিকিয়ে রেখেছে। মার্কিন প্রশাসন জামাতের রাজনৈতিক আদর্শ কি এটা ভাল করেই জানে। তারা এও জানে যে জন্ম লগ্ন থেকেই জামায়েত ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় অনুভুতিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে উগ্র রাজনীতি করে আসছে। জঙ্গিবাদীদের পকেট হিসাবে কাজ করছে এই জামাত। তারা সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পও ছড়াচ্ছে। এখানেই যৌক্তিক জিজ্ঞাসা থেকে যায় যে মার্কিনীরা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস বিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয়, অথচ আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন, এমনকি আল কায়েদার সাথে জামাত শিবিরের কানেকশানের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পরেও জামাতের বিষয়ে তারা নীরব। সচেতনভাবেই প্রশ্নটা এসে যায়, তাহলে কি তাদের এই নীরবতা জামাতের কর্মকাণ্ডের প্রতি সন্মতিরই লক্ষন?

এই ইস্যুতে মার্কিন প্রশাসনের ভিন্ন ধরনের অবস্থানের পিছনে রয়েছে সাম্রাজ্যবাদি চিন্তা চেতনা। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সহ সারা বিশ্বব্যাপী আল কায়েদা বিরোধী যুদ্ধ ঘোষণা করলেও সিরিয়াতে আসাদ বিরোধী আন্দোলনে মার্কিন প্রশাসন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আল কায়েদাকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে। আরও দিচ্ছে রাজনৈতিক সমর্থন। এমনকি লিবিয়াতে গাদ্দাফির বিপক্ষে যুদ্ধের সময় বিরোধীদল সহ জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদা পেয়েছে মার্কিন অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা।

আমাদের উপমহাদেশে জামাতের উগ্র ও জঙ্গিবাদী রাজনীতির বিষয়ে সরব না হয়ে নীরব থাকাটা আমেরিকার সুদূর প্রসারী একটি সামরিক পরিকল্পনার অংশ কি না তা হয়ত আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হবে। চীন ও ভারতের ক্রমবর্ধমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটি এক্ষেত্রে একটি নিয়ামক হতে পারে। চীন ও ভারতের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি যত বৃদ্ধি পাবে, বাংলাদেশে পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তানের ন্যায় পশ্চিমাদের উস্কানি প্রদানের কৌশল যে প্রয়োগ হবে এটা সহজেই অনুমেয়। অতি সাম্প্রতিক ভারত আর চীনের মধ্যে অভিন্ন নদীর গুলির পানি বন্টনের বিষয়সহ বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। যদিও ভারতের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক অতীতের তুলনায় এখন সবচেয়ে ভাল বলে দাবি করা হয়, তবু দিল্লী মার্কিনীদের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশ সতর্ক বলেই মনে হয়। উদাহরণ স্বরূপ ,বাংলাদেশের নির্বাচন-কালীন সরকার নিয়ে আমেরিকার অবস্থানটি যে ভারতের জন্য সুখকর নয়, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার ব্যর্থ দিল্লি সফর থেকেই তাৎপর্য্যপূর্ণভাবে অনুমিত। এবং অতি উৎসাহি একটি অংশ অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দেবযানী ইস্যুটিকে এর সাথে মিলিয়ে দেখার চেস্টা করছেন।

বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্র গোষ্ঠী সহ জামাত-শিবিরের নৈরাজ্য ও ফ্যাসিস্ট রাজনীতি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদি আগ্রাসন প্রসারের পরিপন্থী নয়,বরং বাংলাদেশের দক্ষিণে,বঙ্গোপসাগরে ভবিষ্যতে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ঘাঁটি নির্মাণের যৌক্তিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করার জন্য সহায়ক। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জামাত-শিবির সহ হেফাজতে ইসলাম নজির বিহীন জঙ্গি কর্মকাণ্ড করা সত্ত্বেও মার্কিন প্রশাসন কোন বিবৃতি পর্যন্ত দেয়নি। তাদের এই নীরবতা অনেক তাৎপর্যপূর্ণ দুঃচিন্তার যোগান দেয়।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে যে প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের চিন্তা, চেতনার জগতে ধর্ম রক্ষার নামে তথাকথিত জিহাদের বীজ বপন করা হয়েছিল, বাংলাদেশে ভিন্ন প্রক্রিয়ার একই উদ্দেশ্যে সেই বিষবৃক্ষ রোপনের চেষ্টা পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সকল জঙ্গি গোষ্ঠীর শাখা থাকা স্বত্বেও মার্কিন প্রশাসন অনেকটা নির্লিপ্ত ছিল। নিরাপত্তা ও স্ট্র্যাটেজিক বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের বিপক্ষে পথচলায় আমেরিকা ভারতকে কৌশলগত অংশীদার হিসাবে পেতে বাংলাদেশের সম্ভাব্য জঙ্গি উত্থানটি কাজে লাগায়। ভারত তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পরে, দক্ষিণ এশিয়ায় জঙ্গি বিরোধী কর্মকাণ্ডে আমেরিকা সাথে কৌশলগত অংশীদ্বারিত্ব গড়ে তুলতে ভারত বাধ্য হয় ।

বর্তমান মহাজোট সরকার ২০০৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গি বিরোধী শক্ত অবস্থানের কারণে ভারত অনেকটাই নিশ্চিন্ত হয়। দ্বি-পাক্ষিক বেশ কিছু বিষয় অমীমাংসিত থাকা স্বত্বেও ভারতের সাথে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক বেশ ভাল বলে কূটনীতিক সমাজ মনে করে। সরকারে চীনপন্থি বাম নেতারা অংশীদার হওয়ায় চীনের সাথেও বর্তমান সরকারের সম্পর্ক ভাল। চীনের অর্থায়নে অনেক বড় প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। গভীর সমুদ্র বন্দরও চীনের অর্থায়নে নির্মাণ হওয়ার কথা। অন্যদিকে, বিগত বিএনপি-জামাত জোট সরকার তাইওয়ানকে বাংলাদেশে কূটনীতিক অফিস খুলতে দিয়েছিল, তা চীন ভাল ভাবে নেয়নি। তবে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের এই সিদ্ধান্তটি মার্কিনীদের পক্ষে গিয়েছিল। ধারনা করা হয়, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামাত জোটের শাসনকালে জঙ্গিবাদ উত্থানের ফলে মার্কিন প্রশাসনের চাপ থেকে বাচার জন্য অথবা খুশী করার জন্য অনেকটা স্বপ্রনোদিত হয়ে চীনের বিরুদ্ধে গিয়েই তাইওয়ানকে বাংলাদেশে অফিস খুলতে দিয়েছিল।

নাইন ইলাভেনের পর থেকেই মার্কিন প্রশাসনের সাথে ভারতের সম্পর্ক গভীর হতে থাকলেও ওবামা প্রশাসনের সাথে বর্তমান সম্পর্কটা আগের তুলনায় কিছুটা শীতল। সিরিয়ায় মার্কিনীদের সম্ভাব্য হামলার বিরোধিতা ও মার্কিনীদের বিরুদ্ধে গিয়ে ইরান থেকে তেল আমদানি করার মত ইস্যুসহ বহু ইস্যুতেই আমেরিকা ভারতের প্রতি নাখোশ । ভারতকে চাপে রাখার একমাত্র পরীক্ষিত কৌশল হচ্ছে পশ্চিমফ্রন্টের ন্যায় ভারতের পূর্বফ্রন্টের সীমান্ত এলাকাগুলোতে নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেওয়া। এতে ভারতের সাথে দেনা পাওনার বিষয়ে আলোচনা করতে মার্কিন প্রশাসনের অনেক সুবিধা হবে।

নব্য অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীন ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ভারতকে সামরিক শক্তির চাপে রাখার জন্য, মার্কিনীদের কাছে কৌশলগত দিক দিয়ে নির্ভরশীল স্থান হচ্ছে বঙ্গোপসাগর । বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু থাকায় একনায়কতন্ত্র কিংবা রাজতন্ত্রের দোহাই দিয়ে অনুপ্রবেশ করার গ্রহণযোগ্য যৌক্তিকতা ও নৈতিকতার কোন সুযোগ মার্কিনীরা পাচ্ছে না। তাদের অনুপ্রবেশ করার জন্য দুইটি পথ খোলা আছে এখন-জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটানোর জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা আর আমেরিকার উচ্ছিষ্টভুগি একটি দালাল সুশীল সমাজ তৈরি করা। বাস্তবতা হল, এই দুইটি পথ এখন সবার কাছেই খোলাসা হয়েছে।

বিশ্ব দরবারে চীন ও ভারতের উত্থান আমেরিকার জন্য স্বস্তির বিষয় নয়। এই দুইটি দেশের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক কৌশলগত, একে অন্যের প্রতি বেশ সতর্ক। আমেরিকার সামরিক ঘাটি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া মুল ভূখণ্ডের স্থল সীমানায় আছে। অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র সীমানাতেও মার্কিন সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। ২০১৬ সালে নাগাদ অস্ট্রেলিয়ার কাছে আরও সামরিক শক্তি বাড়ানোর কৌশলগত সিদ্বান্ত নিয়েছে আমেরিকা। চীন ও ভারতকে চাপে রাখার জন্য আর বাকি রইল বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।

বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ধর্মীয় উগ্র গোষ্ঠী কিংবা নিদেনপক্ষে মুল ধারার রাজনীতিতে এই শক্তি উত্থান ঘটানোর পথ প্রস্তুত করা হচ্ছে বলেই মনে হয়। বাংলাদেশের জনগণের একটি অংশের ভারত বিরোধীতা মনোভাব আমেরিকার কাছে বড় কৌশলী অস্র। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে জিহাদের নামে পাকিস্তান-ভারতের চিরবৈরী সম্পর্কটিকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে যে প্রক্রিয়ায় জঙ্গি রাষ্ট্র বানানো হয়েছে, ঠিক একইভাবে বাংলাদেশকে উগ্রবাদিতার দিকে নিয়ে যাওয়ার অনেকগুলি লক্ষণ বর্তমানে দৃশ্যমান। এখানেও নির্ভরশীল উপাদান দুইটি: রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার আর ভারত বিরোধিতা। এখানে উল্লেখ্য যে ভারত বিরোধিতার ইস্যুটিকে শক্তিশালী করার পিছনে ভারতেরও দায় অনেক। যেসব দ্বি-পাক্ষিক ইস্যুতে ভারতের প্রো-একটিভ হওয়া দরকার ছিল, সেইসব ইস্যুতে ভারতকে রি-একটিভ হতেও দেখা যায়নি। বর্তমানে বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি একটি নির্মম রাজনৈতিক ট্র্যাজিডি।

ফ্যাসিস্ট জামায়েত ইসলাম সহ ধর্মীয় উগ্র গোষ্ঠী গুলির সাথে মার্কিন প্রশাসনের মধুর সম্পর্কের বিষয়টির নিম্নের তুলনামূলক চিত্রে পাওয়া যাবে। ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ার মতই হিজবুত-তাহিরিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এবং মার্কিনীদের চাপে বর্তমান সরকারই করতে বাধ্য হয়েছে । এখানে উল্লেখ্য যে হিজবুত-তাহিরি কোন সশস্ত্র সংগঠন নয়। তবে তারা মার্কিন সামাজ্যবাদি চেতনার বিরুদ্ধে বেশ সোচ্চার । তাদের কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক। অপরপক্ষে জামাত শিবিরের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সাথে সম্পর্ক থাকার প্রমাণ স্বত্বেও,আমেরিকার কাছে এরা মডারেট মুসলিম দল। কারণ আজ পর্যন্ত জামাত শিবির এমন কিছুই করেনি যা মার্কিন স্বার্থের পরিপন্থী।

পোস্টটি ১৭ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

তানবীরা's picture


পড়লাম।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

বিজন সরকার's picture

নিজের সম্পর্কে

স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি।।। ...। ঘৃনা করি সেই সব মানুষদের যারা স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী। ।