বাঙালি মুসলমানের সাংস্কৃতিক টানাপোড়ন
ধর্ম এর সংস্কৃতি এই দু'য়ের মাঝখানে প্যাচে পইড়া বাঙালী মুসলিম আজ দ্বিধা বিভক্ত। আর চামে একদিকে ধর্মান্ধ আর জামাতীরা অন্যদিকে ধর্ম উন্নাসিক আর তথাকথিত বাঙালী সংস্কৃতির ধারকরা এই প্যাচটারে আরও ল্যাজে গোবরে কইরা ফেলছে।
১। বাঙালী মুসলিম তাই নিজের পোলামাইয়াগো আরবী/বাংলা নাম কেউ বুইঝা রাখে কেউ না বুইঝা রাখে। ২।কেউ সংস্কৃতি বুইঝা করে কেউ না বুইঝা করে।
(১। নাম সে যেই ভাষাতেই হোক, এর একটা সুন্দর অর্থ থাকবে, এটাই আসলে বিবেচ্য বিষয়।
২। আর বিশ্বাসের জায়গা থেকে যেহেতু আমি ইসলাম মাইনা চলি, সেহেতু ধর্ম আর সংস্কৃতির সাংঘর্ষিক অংশটুকু আমাকে ত্যাগ করতে হবে, যেই দিন আমার পূর্বপুরুষ অন্যধর্ম থেকে ইসলামকে গ্রহণ করেছে তারা এটা স্বীকার করেই করেছে অথবা কোন আরব বা ইয়েমেনী মুসলিমের রক্ত যেদিন বাঙালীর সাথে মিশেছে সেদিনও এই ধর্ম ও সংস্কৃতির ব্যালেন্সকে মেনে নিয়েই করেছে। )
তাই ঈদে নামাজ পড়ে কোলাকুলিটা করাটা যেমন আজ আমার সংস্কৃতি তেমনি একুশে শহীদের প্রতি ফুল দিয়ে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জাননোটাও আমার সংস্কৃতি।
ইসলাম ধর্ম আর আমাদের গ্রামবাংলার মানুষের সংস্কৃতির মধ্যে কোন সাংঘর্ষ বা দন্দ্ব কিন্তু আমি দেখতে পাইনা।
সংঘর্ষ বা দন্দ্ব বাধে কিন্তু চাপিয়ে দেয়া বাঙালী সংস্কৃতির সাথে। অনেকে হয়তো রে রে করে তেড়ে আসবেন যদি বলী নাঁচ আমাদের বাঙালী হিন্দু সংস্কৃতির অংশ, বাঙলা মুসলমান সংস্কৃতির নয়। কপালে টিপ দেয়া আমার বাঙালী হিন্দু সংস্কৃতির অংশ, বাঙলা মুসলিম সংস্কৃতির নয়। কিন্তু পালাগানের সাথে বাঙালী মুসলিম সংস্কৃতির কোন দন্দ্ব নাই। বৈশাখের গ্রাম বাংলার পিঠা পায়েস, ধান কাটার গান, ধান ভাঙ্গার গান, বৈশাখী মেলার সাথে বাঙালী মুসলিম সংস্কৃতির কোন সমস্যা নেই বরং এগুলোয় বাঙালী মুসলমানের আসল সংস্কৃতি। হিন্দুয়ানী নাচ নয়, কপালে টিপ দেয়া নয়, রবীন্দ্র সঙ্গীতকে ইবাদত বা ইবাদতের সমতূল্য বলা নয়।
হিন্দু বাঙালী এবং মুসলমান বাঙালী আমরা একই বাংলারই সন্তান। আমরা পরস্পরের সাথে হাজার বছর ধরে ধর্মীয় সম্প্রীতির সাথে বাস করে আসছি। তার বাড়ী বাড়ী বেড়িয়ে তাদের প্রতিমা দেখে বেড়িয়েছি সেও ঈদে আমার বাড়ীতে ঈদের সেমাই খেয়ে গেছে । বিভিন্ন পালা পার্বন আমরা কাধে হাত রেখে ঘুরে বেড়িয়েছি। বিশ্বাস না হয় জিজ্ঞেস করুন বাংলার গ গ্রামে গিয়ে আপনার বয়োজোষ্ঠদের, আপনার বাবা-মা'দের।
শাহ আব্দুল করিমের "গ্রামের নওজোয়ান, হিন্দু মুসলমান মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদি গাইতাম" গানের কথাতেই তার প্রমান মেলে।
উপরের কথাগুলো যা বোঝাতে চাইছি তা হলো। প্রকৃত ইসলাম আর প্রকৃত বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যে কোন দ্ন্দ্ব নাই। দ্বন্দ্ব আছে ধর্মীয় গোড়ামী আর সংস্কৃতিক গোড়ামির মধ্যে।
একজন বাঙালী হিসেবে আমি আপনি আমরা কেউই চাই না সাংস্কৃতিক গোড়ামি বা ধর্মীয় গোড়ামীকে লালন পালন বা উৎসাহ দিতে।
ভাল থাকবেন।
টিপ কিংবা নাচের অংশের সাথে একমত না।
বাঙ্গালির সবাই হিন্দু থেকেই মুসলমান হইছে, তাই হিন্দু কালচারের কিছু আমাদের সাথে থাকবেই। ঐটারে ধর্মের দোহাইয়ে উড়ায় দিতে গেলে কালচারের অনেক কিছু উড়ায় দিতে হবে... এরকম গোড়া হইয়া দেখতে গেলে আমি ফুল দেয়াটারেও মুসলমান সংস্কৃতি হিসাবে দেখার যুক্তি পাই না। এমনকি প্রতিমা দেইখা আসাটারেও যৌক্তিক মনে হয় না।
আপনি নাচ-টিপ হিন্দুয়ানী মনে করলে প্রতিমা দেখে প্রসাদ নিয়ে আসাটারে কেমনে মুসলমানের কাজ মনে করবেন? আমি ক্লিয়ার হইলাম না।
ধর্মীয় সম্প্রীতি আর অন্য ধর্মকে নিজের মধ্যে ধারণ করার মধ্যে যে পার্থক্য আছে সেটাকেই বুঝিয়েছি। There is a gray line between them.
তাইলে শহীদবেদীতে ফুল দেয়াটা কিভাবে যৌক্তিক বলবেন? এটা অনেকটাই হিন্দু কালচার নিজের মধ্যে ধারণ করা, ফুল দিয়া পূজা; তাই না?
আমি নাচ কিংবা টিপের সমস্যা কোথায় সেটাই বুঝলাম না... ইসলামের কোথায় মানা করা কে জানে!
মৃত আত্মাদেরকে সম্মান দেখানোর জন্য ফুল দেয়া কমবেশি সব কালভারেই আছে, তাই এটা কোনমতেই হিন্দুদের পূজার সাথে মিলেনা।
মুসলমান কালচারে স্পষ্টভাবেই নিষিদ্ধ
আপনি মনে হয় ইসলামের কথাই বলছেন, মুসলমান কালচার বলে আলাদা কোন কালচার আছে কিনা আমার জানা নেই। ইসলামে মূর্তীপুজা নিষিদ্ধ, কবরে ফুল দেয়াও নিষিদ্ধ। কিন্তু শহীদ বেদীতে ফুল দেয়া কি কবরে ফুল দেয়া? অনকে অল্পশিক্ষিত মোল্লারা কি বলে সেটা বলবেন না, কিন্তু শহীদ বেদীতে ফুল দেয়া কেন ইসলামে নিষিদ্ধ বলে মনে হচ্ছে আপনার? কোরান-হাদিসে এরকম কিছু কি আছে?
সহজ ভাষায় বলছিলাম।
মৃতদের জন্য মিনার বা বেদী বানানোর কোনো কালচার ইসলামের প্রথম যুগেও ছিল না। মিনারে ফুল দেয়াতে সমস্যা আছে কি নাই সেটা বিতর্কের বিষয় হইতে পারে, কিন্তু অবলীলায় টিপকে হিন্দুদের কালচার বললে আমিও মৃতদের জন্য মিনার/বেদী বানায়া তাতে ফুল দেয়াটারে হিন্দুদের কালচারই বলবো,- কোনকালে এটা ইসলামের ইতিহাসে ছিল না। থাকলে জানার ইচ্ছা থাকলো।
শহীদ বেদীতে ফুল দেয়াটা পূজা হিসেবে দেখবে ধর্মীয় মৌলবাদীরা আমি আপনি কেন দেখব। আমরাতো শহীদ মিনারের কাছে মাথা নত করিনা বা শহীদের সাথে খোদার শরীক করিনা। তাহলে কেন সেটা পূজা হবে?
নাচের ব্যাপারে আমি বলব। যে নাচটা দিয়ে আমরা বাঙালীত্ব বোঝাই আজকাল যেটা বাঙালী মুসলমানের সংস্কৃতি নয়, কখনও ছিল না। যেমন আপনি যদি আদিবাসীদের দেখেন তাহলে দেখবেন নাচ তাদের দৈনন্দিন জীবনের একটা অংশ। এটা তাদের ভাষা, তাদের পোষাক, তাদের ধর্মের মতোই প্রাত্যহিকতার একটা অংশ। আমরা এখন বাঙালী নাচ বলতে যা বুঝি সেটা কোন গ্রামে কোন সমাজে আপনি দেখেছেন?!! এটা কি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের কোন অংশ কোনদিন ছিল না এখনও আছে? সংস্কৃতি বানিয়ে তারপর সেটার চর্চাকে কতটুকু সংস্কৃতি বলা যায়? অন্যের থেকে ধার করা সংস্কৃতিকে কেন নিজের বলব। হিন্দু ধর্মের সাথে সাথে নাচের যে সম্পর্ক আমাদের নাচ সেই নাচ সহ আরও অন্যান্য বিদেশী নাচ যেমন ভারত নাট্যম, কথকলি ইত্যাদির এক যগাখিচুড়ি রূপ। কিন্তু এটা আর যাই হোক বাঙালীর প্রাত্যহিক জীবনাচারের কোন অংশ নয়, এখনো নয়। এটা আমাদের, আমাদের সমাজকে রিপ্রেজেন্ট করে না।
টিপ, ক্রশ, সিদুর সহ যাবতীয় চিহ্ন যা অন্য ধর্মের তার সাথে মুসলমানের পার্থক্য করার জন্য এগুলোকে পরিত্যাজ্য বলা হয়। তাই দেখবেন আমার আপনার ছোট বোন বা কম বয়সীদের ক্ষেত্রে আমরা এগুলিকে তেমন আমলে না আনলেও। কোনও বয়জোষ্ঠ মহিলা বা ধর্মভীরু মা, নানীরা এসব পরিত্যাগ করেন বা এড়িয়ে চলেন। তাই নামাজে তারা হাতের চুড়ি, নাঁকের ফুল পড়লেও টিপ পড়ে কেউ নামাজ পড়েন না।
গ্রামে আগেকার দিনের কোন সমাজে মৃতদের জন্য মিনার বানায়া সেইখানে ফুল চড়ানো হইছিল?
আমি আপনার কথা মাইনা চুপ মারতাছিলাম...কিন্তু পারলাম না নিচের কথাটা পড়ে।
ইসলামে চুড়ি কিংবা নাকের ফুল পড়ার চল কি ছিল? এইদিক দিয়া মুসলমানরা কাফেরদের সাথে মিললো কেন? আর এই দুইটা জিনিস কাফেরের চিহ্ন হইলো না কেন? টিপ দোষী হইতে পারলো, আর চুড়ি নাকফুল নির্দোষ?
সম্প্রতি এই বিষয়ে এই সাক্ষাৎকারটি পড়লাম
সাক্ষাৎকারটি অডিও
বলাবাহুল্য রেডিও তেহরানের প্রতি আমার বিশেষ কোনো মোহ বা এ্যালার্জি কোনটিই নেই।
কিছু কইলে ভাল হইত তানবীরাপু।
বাই দ্যা বাই ,,, হিন্দি গানের সাথে আপনার নাচের ভিডিয়ুটা ভালু হইছে ।
১. কিছু অল্প কথায় কওয়া যাবে না। আলাদা পোষ্ট লাগবে।
২. অনেকেই এই কথাগুলো অনেকবার আলোচনা করেছেন কিন্তু ফায়দা হয় নাই। তাই আমি আর নাইই বল্লাম শুধু আপনার সাথে একমত না তাই জানালাম। গনতান্ত্রিক ব্লগে এটুকু অধিকারতো আছে নাকি?
৩. বাই দ্যা বাই, আমারে খোঁচানোর জন্য যদি হিন্দী গান আর নাচের কথা বলে থাকেন তাহলে বলব, এখানে খোঁচাইয়া লাভ নাইরে পাগলা, আমি খোঁচানোপ্রুফ।
আমাকে ইন্ডিয়ান অর্গানাইজেশন থেকে দাওয়াত করা হয় ওদের সাথে নাচ গান করার জন্য এবং ওদেরকে নাচ শেখানোর জন্য। ওদের বাচ্চাদেরকে শেখানোর জন্য। আর আমি ওদেরকে হিন্দী নাচের পাশাপাশি অনেক সময়ই বাংলা নাচও শেখাই। ঐ ভিড্যুওগুলোও দেখছেন আশাকরি।
আর আমার যেহেতু জাত, ধর্ম, বর্ণ, ভাষার কোন সমস্যা নাই, আমার কাছে যেহেতু সবই এক। আমাকে খুঁচিয়ে আর কি হবে? আমি পাথরের কাছ থেকে ঢিল শিখেছি আমায় ঢিল দেখানোর ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই ঃ) ঃ) ঃ)
আমার চিন্তা হলো, মানুষ কি জাত সংসারে ...............
১। পোষ্ট যদি লাগে তয় একখান দিয়েন কষ্টকইরা।
২। অন্তত: অন্যপোষ্ট যেখানে এই বিষয়ে আলোচনা হইছে তার একটা লিংক হইলেও দিয়েন। বকলম নিক নিছি কম জানি এবং জানতে চাই বইলা। আমি ভুল হইতেই পারি, তয় নিজেরে শোধরানোর সাহসটুকুও আছে।
৩। নাচ আসলেই ভালো হইছে তানবীরাপু। এই কথা এইজন্যই কইছি যে আমি কোন কট্টর পন্থী নই। শুধু নিজের অভিমতটুকু জানাইলাম। গনতান্ত্রিক ব্লগে এটুকু অধিকারতো আছে নাকি?
৪। আমার নিজের মেয়েটা যখন একটু বড় হয়ে হাত ঘুড়িয়ে পা দুলিয়ে নাচবে তখন আমার চেয়ে আনন্দিত হয়ত আর কেউই হবে না।
১ আর ২ এর জন্য http://ratjagapakhi.blogspot.com/
৩। প্রশংসা পেয়ে ব্লাশ করলাম ঃ)। হঠাৎ হিন্দী নাচ লিখলেনতো তাই জিজ্ঞেস করলাম। ব্যাপার না বস, হিন্দী - বাংলা, ডাচ - ইংলিশ এরকম বিস্তর শুনি আর শোনার নামইতো জীবন।
আপনে কট্টরপন্থী হলেও আমার আপত্তি নাই বস। সবাই একসাথে মিলেমিশে থাকার নামই পৃথিবী। সাদা আছে বলেই কালো আছে সুতরাং সব রঙই আমার প্রিয়, সম্মানের। সবার মতকে সম্মান করতে না পারলে আর কি শিখলাম জীবনে?
৪। নম্বরের ওপরে কোন কথা নাই বস। মেয়েকে বৈশাখের নাচ শিখাচ্ছি, আপনের জন্য ভিডুও আপলোড দিবোনে ঃ)
আমার রিপ্লাই যদি হার্স লেগে থাকে বস দেন সর্যি। নো হার্ড ফিলিংস বস।
ভালো থাকবেন।
আমারও একই কথা, নো হার্ড ফিলিংস বস।
১। যে কোন দেব-দেবীর নামে উৎসরগ করা খাবার খাওয়া মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ।
২। একইভাবে হালাল মাংশ শিখরা খায় না।
৩। রিয়েল লাইফে মানুষ এক গােয় তেলাপোকা না পড়লে নাচে না। গান গাইতে গাইতে মানুষ লেখালেখি করে, ঘর মুছে, কাপড় ধোয়। দেখসেন কোনদিন কেউ নাচতে নাচতে ডালে বাগার দেয়?
১নং টার সাথে সহমত, ধর্মীয় সম্প্রীতি দেখাইতে গিয়া আমার এই উদাহরণটা অতিরিক্ত বলা হয়ে গেছে ।
২নং টা ১ নং টার সাথে সম্পৃক্ত
৩নং এর ব্যালায় বলব। আমরা যেটাকে বাঙালী নাচ বলি তেমন নাচ আমি আমাদের মুসলিম বাঙালি সমাজে কোথাও দেখিনাই। আমাদের রুট যে্ই গ্রামে সেখানেও এর চিহ্ন পাওয়া যায় না। ডালে বাগার দিতে গিয়া না নাচুক কিন্ন্তু ধানকাটার উৎসবে বা ঈদে কোরবানে বা বৈশাখেও বা গ্রামের বিয়েতেও তো বাঙালী নাচতে পারত । কিন্তু রোবট ভাই যদি আমাদের পার্বত্য আদিবাসীদের দেখেন দেখবেন নাচ কিন্তু তাদের খুব জীবন ঘনিষ্ঠ।
উত্তর বঙ্গে জৈষ্ঠের খরতাপে, অনাবৃষ্টিতে যখন সবদিক চৌচিড় তখন গ্রামে একদল লোক দেখা যায় যারা নেচে গেয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি চাল সংগ্রহ করেন। সেই নাচ আমার বাঙালী নাচ হতে পারে তাতে আমার আপত্তি নাই। কিন্তু যেটা আমার নয় কেন আমি তা আমার বলব?
পোস্টের মূলসুর ভাল লেগেছে।
অনেক আগে সামুতে লেখা পোস্টের কিয়দংশ:
"আমি আমার বাংগালি এবং মুসলিম পরিচয় সবখানেই বহন করি এবং আমার এই দুই পরিচয়ে কোনদিনই কোন সংঘাত সৃষ্টি হয়নি। বরং আমি দেখেছি আমাকে লোকজন শ্রদ্ধা করে আমি ঝাঁকের কইয়ের মত নিজের আইডেনটিটি নিয়ে ক্রাইসিসে ভুগিনা বলে। আমি বাংলার মাধ্যমে যেমন সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে আসি তেমনি আমি আমার মুসলমান পরিচয় নিয়েই আমার আশেপাশে হাজার হাজার অমুসলিমদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলি। আমি দূর্গাপুজায় যাই আমার মুসলমান পরিচয় অক্ষুন্ন রেখেই। আমি রামকৃষ্ঞ পরমহংসকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করি আমার মুসলমান পরিচয়কে সাথে নিয়েই। আমি ইসলাম নিয়ে কথা বলার সময় রামকৃষ্ঙকে কোট করি, তাতে আমার মুসলমানিত্ব কমেনা। চৈতন্যের ইকনমিক আর পলিটিকাল ফিলসফি আমি মুগ্ধভাবে পড়ি, সাহাবা (রাঃ) দের পলিটিকাল ইতিহাস জেনেও আমার তাতে কোন ধরনের সমস্যা হয়না। আমি আমার মুসলমানিত্ব নিয়েই বন্ধুদের ডিনার পার্টীতে যাই এবং সেখানে আমাকে পর্ক বা মদ কেন খাচ্ছিনা সেটা জিজ্ঙেস করলে আমি বলি আমি মুসলিম আর আমার জন্য এটা খাওয়া বৈধ না। তাতে কোনধরণের হীণমন্যতায় আমি ভুগিনা।"
বিষয়টা নিয়ে নির্মোহ দৃষ্টিতে কিছু বলার চেষ্টা করি। উল্লেখ্য আমি একজন পাঁড় রবীন্দ্রভক্ত এবং মনে হয় যা গান শুনি তার ৯৫% ই রবীন্দগীতি। নিচে বাংগালি মধ্যবিত্ত বলতে মূলত বাংলাদেশী বাংগালি মুসলিম মধ্যবিত্তকেই বুঝিয়েছি।
সমস্যা হচ্ছে মৌলবাদী হয়ে যাওয়া। কেউ ধর্মীয় মৌলবাদী যেমন হতে পারে তেমনি কেউ সাংস্কৃতিক মৌলবাদীও হতে পারে। অনেক ধর্ম-নিরপেক্ষ মৌলবাদী হয়, অনেকে নাস্তিক মৌলবাদী। সংস্কৃতি খুবই চলমান এবং পরিবর্তনশীল। বাংগালি মধ্যবিত্ত সমাজ এখন যেসবকে সংস্কৃতি হিসেবে চিহ্নিত করে তার মেজরিটি অংশই কমবেশি ঠাকুর পরিবার থেকে উঠে এসেছে। এটার বাংগালির মননে কঠিনভাবে প্রোথিত হয়েছে ৫০-৬০এর দশকে যখন পাকিস্তানিরা রবীন্দ্রচর্চার বিরোধিতা করল। তখন স্বাভাবিকভাবেই বাংগালি তার আত্বপরিচয় হারানোর ভয়ে আরো বেশি করে তার সাংস্কৃতিক পরিচয়কে তুলে ধরতে চেয়েছে এবং রবীন্দ্রচর্চা করতে গিয়ে ঠাকুরবাড়ির সংস্কৃতিকে বাংগালি সংস্কৃতি হিসেবে নিয়ে নিয়েছে। অথচ ঠাকুরবাড়ির সংস্কৃতির সাথে আপামর জনতার সংস্কৃতির সেভাবে মিল নেই। কারন ঠাকুরবাড়ি হচ্ছে এলিটশ্রেণী (আমি যখন কমিউনিস্ট ছিলাম তখন ঠাকুরকে শ্রেণীশত্রু মনে করতাম!!) আর এলিটশ্রেণীর সংস্কৃতি স্বভাবতই সাধারণ মানুষের সংস্কৃতিকে ধারণ করেনা। যেমন এই ঢাকায় যেভাবে নববর্ষ উদযাপিত হয় সেটা কিন্তু ধরেন ১০০ বছর আগেও ছিলনা, প্রকৃতপক্ষে নববর্ষ ছিল বাংগালি কৃষকসমাজের জন্য খুবই করুন অভিজ্ঞতা। যাইহোক ডিটেইলসে যাচ্ছিনা। বাংগালি মুসলমান মধ্যবিত্ত সমাজের ঠাকুরবাড়ির সংস্কৃতিকে ধারণ করার আরেকটা কারন হচ্ছে তারা মনে করে ঠাকুরবাড়ির সংস্কৃতি হচ্ছে জাতে উঠার সিঁড়ি। এটার কারন হচ্ছে যখন ইংরেজ শাসনামলে মুসলমানরা শিক্ষায়-দীক্ষায় পিছিয়ে পড়ল, স্বভাবতই তাদের মধ্যে ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স গ্রো করল আর এলিট শিক্ষিত কলকাতাকেন্দ্রিক হিন্দুরা বিভিন্নভাবে সেটা বুঝিয়েই দিত। এখন কলকাতাকেন্দ্রীক এলিট হিন্দুরা বাংলাদেশের মুসলমানকে বাংগালি বলে স্বীকার করেনা। এদিক দিয়ে বাংগালি মধ্যবিত্ত খুবই দুঃখী। তাদেরকে বাংগালিত্বের জন্যই পাকিরা গুড এনাফ মুসলমান মনে করতনা আবার মুসলমান বলেই কলকাতাকেন্দ্রিকে এলিট হিন্দুরা গুড এনাফ বাংগালি মনে করতনা। এই দ্বৈত পরিচয় সংকটে পড়ে তার হয়েছে তথৈবচ অবস্থা। পাকিস্তানিদের চাপ হেতু তাই নিজেদেরকে আরো বাংগালি প্রমাণ করতে তারা কলকাতাকেন্দ্রীক এলিট হিন্দু এবং ঠাকুরবাড়ির পালিত আচার-আচরণকে আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরল। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় বাংগালি মধ্যবিত্ত যেটাকে বাংগালি সংস্কৃতি মনে করে সেটা আসলে মাত্র ১০০-১৫০ বছরের পুরনো সংস্কৃতি, কোনমতেই হাজার বছরের পুরনো সংস্কৃতি বলে সে যে সেলফ-কমপ্ল্যাসেন্সে ভুগে সেটা না। বাংলার হাজার বছরের পুরনো সংস্কৃতি ধারণ করে বাংলার হাজার হাজার গ্রামের দরিদ্র কৃষকসমাজ, শহুরে মধ্যবিত্ত না। তাই বাংগালি মধ্যবিত্ত হালখাতা বা পূন্যহ কখন সেটা জানেওনা, সেসবের খেয়ালও রাখেনা। সে সবসময় অতিরিক্ত করে ফেলে, বাংগালি হতে চেয়ে সে অতি-বাংলিপনা দেখায় আর তাতে তার ইসলাম চলে গেল বলে অন্যেরা চেঁচিয়ে উঠে। আবার সে ইসলামী হয়ে গেলে বাংগালি সংস্কৃতিকে হিন্দুয়ানি মনে করে, তাতে সে বাংলার কিছুই ধারণ করেনা। দরিদ্র কৃষক সমাজের সেই সমস্যা নাই, কারন সংস্কৃতি তার রক্তে, তাকে সেটা জাহির করতে হয়না। সে ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভুগেনা। পাকিস্তানিরা তাকে গুড এনাফ মুসলমি না বললে সে থোরাই কেয়ার করে, আবার কলকাতাকেন্দ্রীক এলিট হিন্দুরা তাকে বাংগালি না বললে সে চট করে "ঘটির বাচ্চা ঘটি" বলে গালিও দেয়, তার কাছে বাংগালি হওয়া এবং ইসলামিক হওয়ার মধ্যে কোন ডাইকটমি নাই, সে একইসাথে দুটাই এবং এতে কোনধরণের কন্ট্রাডিকশান তার নেই। মধ্যবিত্তের কাছে বাংগালি সংস্কৃতি এবং ইসলাম তেল আর জলের মত, কোনমতেই মিশ খায়না, সে সারাজীবন দুটার রিকনসিলিয়াশান ঘটাতে গিয়ে হাঁশপাশ করে। দরিদ্র কৃষকসমাজের কাছে বাংগালি সংস্কৃতি আর ইসলাম একই সুত্রে গাঁথা, তার কাছে তেল-জল না হয়ে দুটা একে অপরের কম্প্লিমেন্টারি। তাই হাজারবছর ধরে মুসলিম কৃষক আর হিন্দু কৃষক বাস করতেছে, কেউ কোনদিন একে অন্যকে পর মনে করেনি। মধ্যবিত্ত উপরে উপরে অসাম্প্রদায়িকতা দেখালেও ঠিকই বাসায় বসে হিন্দুদেরকে "মালাউনের বাচ্চা" বলে গালি দিবে। আবার বাইরে এসে অতিরিক্ত সাংস্কৃতিক হতে গিয়ে সিঁদুড় পড়ে ফেলবে, সেটা কেন বাংগালি সংস্কৃতি না সেটা নিয়ে তর্ক জুড়ে দেবে, তার সাথে একমত না হলে তাকে মৌলবাদী বলে গালি দিবে।
বাংগালি মুসলিম মধ্যবিত্ত এক আজীব চিজ, সে ডাংগারও না, নদীরও না। সারাজীবন সে নিজের পরিচয় খুঁজে বেড়ায়, কখনও পাইনা। কারন তার সবটাই মেকী, জাতে উঠার জন্য সে সাংস্কৃতিক হয়, সংস্কৃতি তার রক্তে নাই।
আমাদের উচিৎ মৌলবাদি না হওয়া, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় কোন ক্ষেত্রেই না। বাংলার হাজার বছরের কৃষকসমাজ যেভাবে সংস্কৃতি এবং ধর্মকে কোন বিরোধ ছাড়াই ধারণ করে, সেটাই হচ্ছে আসল। আমাদের সেখানেই ফিরে যেতে হবে।
টীকা: রবীন্দ্রচর্চা আর ঠাকুরবাড়ির সংস্কৃতিচর্চা একই জিনিস না।
নাড়ুদা' কমেন্টে উত্তম ঝাঝা। আমি যা গুছিয়ে বলতে পারিনি আপনি তা বলে দিলেন।
যথার্থ বলেছেন।
ওরে এখানেও দেখি বিশাল আলোচনা। এতো পড়ার টাইম এখন নাই। দৌড়ের উপর আছি... পরে একসময় পড়ে তখনো যদি কিছু বলার থাকে জোর গলায় বলে ফেলবো।
valoe liksen but please সংস্কৃতি r ধর্মকে pasha pashi dar korabenna. tulona korar cesta korbenna.....karon amar mone hoe সংস্কৃতি amader jati sottar sathe mishe ase. eta amader nijesso. but ধর্ম sobar/abar karo noe/abar jar jar tar tar....
অফটপিক- বকলম বস, আপনে আমার স্ট ইনডেক্স বিষয়ক পোস্টে একটা কমেন্ট করছিলেন..। ঐটার রিপ্লুতে কয়েকটা প্রশ্ন আসছিল মনে সেইগুলা রাখছি... পারলে উত্তরগুলা জানায়েন প্লিঝ
বকলমভাইর ব্লগে আসছিলাম দেশে কবে আসবেন জানতে...
ব্যাপক আলোচনা দেখে ভড়কায় গেছি
কন্যা কেমন আছে?
নুশেরাপা ব্লগে আপনারে দেইখা খুশি লাগতেছিল কিন্তু কেমনে কথা কমু বুঝাতেছিলাম না। দেশে আসব হয় আগষ্ট এর পরে না হয় হজ্ব করে তারপর। এখনও কনফার্ম না। কন্যা ভাল আছে । দেশে থাকলে বলতাম একবার এসে ঘুরে যান আমার বাড়ী থেকে। আমি প্রবাসে আপনারে কিভাবে ইনভাইট করুম বুঝতেছি না।
আপনা মা'মনি কেমন আছে? দেশে কতদিন আছেন?
আপনের পোস্ট পড়লাম। কমেন্টে চোখ বুলাইলাম। এতোগুলা কমেন্ট না পইড়া কমেন্ট করাটা কেমন জানি। তবুও
* বাঙালি কারা। মানে আপনে কি মধ্যবিত্ত বাঙালি নিয়া আলাপ করলেন না সমগ্র বাঙালি নিয়া আলাপ করলেন।
* মুসলমান কারা। যারা নামাজ পড়ে-ঈদ করে-রোজা রাখে। তারা না কি মুসলমান বলতে অন্য কিছু বুঝাইছেন।
*আমাদের আদি ধর্ম হিন্দু না, হিন্দু জাতিয় কিছু বলতে পারেন। সবাই হিন্দু আছিল না। বৌদ্ধ বলে পারেন। তাও তার নানা রকম আছে।
* আরো আরো আলাপ করা যাবে সময় থাকলে।
ভালো থাইকেন।
বাঙালি মুসলমানের সাংস্কৃতিক টানাপোড়ন
লিখেছেন: বকলম | এপ্রিল ৭, ২০১০ - ১১:২৪ অপরাহ্
বকলম ভাই, লিখছেন না কেন?
নুতন পোস্ট দিন।
মন্তব্য করুন