সুগারলেস এন্ড সুগারকোটেড লাইফ
সময়টা খুব সম্ভবত নয় দশ বছর আগের যখন চট্টগ্রাম ডায়বেটিক সমিতিটা এনায়েত বাজার বাটালী রোডে ছিল। আমি অনেকদিন যাবত এ্যাপথাস আলসার নামের একধরনের মুখের অসুখে ভুগছিলাম, যে রোগের কারন বা ঔষধ এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়নি। এক পর্যায়ে আম্মার কথায় যখন ইন্ডিয়ায় যাওয়ার কথা ভাবছিলাম এমন সময় আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে এক ডাক্তারের স্বরণাপন্ন হই। ডাক্তার লম্বা লিষ্ট দিলো ল্যাব টেষ্টের। লিষ্টে ডায়বেটিস টেষ্টের কথাও উল্লেখ ছিল আর আমিও সুবোধ রোগীর মত চট্টগ্রাম ডায়েবেটিস সমিতিতে গিয়ে ব্লাড দিয়ে এলাম।
রিপোর্ট দেয়ার দিন সাথে করে এক বন্ধুকে নিয়ে রিপোর্ট আনতে গেলাম। রিপোর্ট কাউন্টারের ভদ্রলোক আমাকে রিপোর্টের খামখানা দিয়ে ডিউটি ডাক্তারের সাথে দেখা করতে বললেন। তারপর সেই ডাক্তার আমাকে যা বলল আমার বিশ্বাস হতে চাইছিল না। আমি শুনতে পেলাম ডাক্তার মুখ অন্ধকার করে বললেন আপনার ডায়বেটিস হয়েছে এবং আনফরচুনেটলি আপনার টাইপ ওয়ান ডায়বেটিস, এতে আপনার নিয়মিত দিনে দু'বার ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হবে। এত ইয়াং এইজে আপনার ডায়বেটিস হওয়াটা দু:খজনক কিন্তু এটাই বাস্তব। পাশে বসা আমার বন্ধুর তখন চোখের পানি টলমল করছে। ডাক্তার ওকে উদ্দেশ্য করে আমাকে জিজ্ঞেস করলো "উনি কে?" আমি বললাম সে আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড। শুনে ডাক্তরের মুখ থেকে বেড়িয়ে এলো "এ ফ্রেন্ড ইন নিড এ ফ্রেন্ড ইনডিড"।
সেদিনই একগাদা ঔষধ, ইনসুলিন ইনজেকশন, সিরিঞ্জ, ডিপষ্টিক, টেষ্ট টিউব, বার্নার সব নিয়ে বাসায় এসে আম্মাকে বল্লাম, বিলিভ ইট অর নট, আমি আজ থেকে ডায়বেটিক পেশেন্ট। রাতে আমার জন্য ভাতের পরিবর্তে রুটি বানাবে।
শুরু হলো আমার ডায়বেটিক জীবন। জীবনটা হয়ে গেল সুগারলেস। একটা তেতো দুনিয়া। যে পরিবর্তনগুলো লক্ষ্য করলাম সেগুলো হলো, চরম আলসে আর লেইট রাইজার আমি খুউব ভোরে আকাশ আলো হবার আগেই কেডস্ পড়ে বৃষ্টির মধ্যে জগিং করতে বেড়িয়ে গেছি। বন্ধুদের সাথে আড্ডার বদলে আমার আড্ডা হত তাদের ডায়েবেটিক মা বাবা'র সাথে। মোট কথা বুড়োবুড়িদের সাথে সখ্যতা বাড়তে থাকলো। প্রায় জিইসি মোড়ের ক্যান্ডিতে আমাকে দেখা যেত লুকিয়ে লুকিয়ে ঢাউস আকারের জিলাপী খাচ্ছি। রাতের বেলা যেখানে খাওয়া উচিৎ চারটা রুটি সেখানে আমি খেলে ফেলেছি বারো'টা।
এর তিন মাস পর....
আম্মা একদিন বললেন আমি তোমার জন্য আর রুটি বানাতে পারব না, রাতে শুধু তোমার জন্য ময়া করা, রুটি বেলা, রুটি শেঁকা, এ বড় হেপা। তারচেয়ে চলো ঢাকায় যাই ওখানে তোমার খালাত বোন, দুলাভাই, মামতো ভাই সবাই ডাক্তার, দেখি ওরা কি বলে।
যেই কথা সেই কাজ, মা-ছেলে রওনা দিলাম ঢাকা'য়। ঢাকায় এসে কাজিন ডাক্তারনীর তত্বাবধানে টেষ্ট হলো একটা প্রাইভেট ল্যাবে আর বারডেম এ।
টেষ্টের রেজাল্ট শুনে আরেক দফা আক্কেল গুরুম। তারা যা বলল তা হলো আমার কোন ডায়বেটিস নেই।
ডায়বেটিস নেই????!!!!!! বলে কি?!! তাহলে আগের রিপোর্ট?!!
হয়তো ভুল ছিল। বারডেম কাউন্টারে বসা ব্যাক্তির নির্লিপ্ত উত্তর।
কাহিনী শেষ।
কৃতজ্ঞতা: মাইনুল এইচ সিরাজী, যার দ্বিতীয় জীবন পোষ্টের কারনে এই পোষ্টের অবতারনা।
এই পোস্টটা ভালো লাগলো।
থ্যাংকিউ মীর ব্রো
এও তো এক নতুন ও দ্বিতীয় জীবন । ভাল লাগলো ।
হুমম, এ যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পাওয়া। ভাল লাগাতে পেরে ভাল লাগল।
হায় হায়, আমার রিপোর্টটাও যদি ভুল হয়!
বালাই ষাট..
ভুল চিকিৎসার যে কত রকম ঘটনা আছে দেশে।
হুমম
আমি সেইদিন ইএনটির একটা সমস্যায় অ্যাপোলোতে বসেন এক ইন্ডিয়ান ডাক্তার দেখালাম। নানা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে ডাক্তার জানালেন একটা অপারেশন করতে হবে। ৬০-৭০ হাজার টাকার মতো খরচ হবে। অপারেশনটা এক মাসের মধ্যেই করাতে হবে, নাইলে কানের হাড্ডি, টিউমার... আরো কী কী হাবিজাবি যেন বললেন। অর্থাৎ অপারেশন না করালে জীবনমরণ সমস্যা।
পরে ডাক্তার কলিগের সূত্রে আরেক ইএনটি স্পেশালিস্টকে দেখালাম। তিনি দেখেশুনে বললেন, অপারেশন লাগবে না। এই ওষুধগুলো খান।
খেলাম। আপাতত বেশ আছি। কতো এক মাস পার হলো!
ভুল ডায়াগনোসিসের কারনে কত মানুষের যে অর্থ, সময়, স্বাস্থ্যের অপচয় হচ্ছে তা এই পোষ্টের কমেন্টগুলোতেও ফুটে উঠেছে। এখন তাই মানুষ কোন নিদ্দিষ্ট অসুখের জন্য এক ডাক্তারের উপর খুব কমই নির্ভর করতে পারে। আমি নিজেই ভুল চিকিৎসা থেকে বাঁচাতে আমার শিশু কন্যাকে শিশু হাসপাতালসহ তিনজন বিভিন্ন ডাক্তারের স্বরণাপন্ন হয়েছি। এর সাথে শারিরীক আর মানসিক স্ট্রেস এর কথাতো বলাই বাহুল্য।
যে কারনেই পোষ্টের অবতারন হয়ে থাকুক, হয়েছে যে সেটাই আসল। দেখাই যায় না আপনাকে।
মাসুম ভাই, ভুল চিকিৎসা হয় না এমন দেশ নাই। যতোদিন মানুষ চিকিৎসা করবে, ততোদিনই মানুষ মাত্র ভুল হয় এটা টিকে থাকবেরে ভাই।
কেমন আছেন তানবীরা আপু? কারনটা যাই হোকনা কেন, কথাগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে আমারও ভাল লাগছে।
ভুল চিকিৎসা হয় না এমন দেশ নাই, কথা সত্যি। তবে ভুলের সংখ্যাধিক্যের কারনে চিকিৎসার অপর নাম আতংকে রূপ নেয়াটাও অনাকাঙ্খিত।
বকলমভাইকে দেখলাম অনেক দিন পর! লেখা ভালো লেগেছে।
পোস্টের শুরু থেকেই মনে মনে প্রার্থনা করছিলাম, যেন ভুল রিপোর্টের ব্যাপার ঘটে। যাক, বাঁচা গেলো। জীবনে সবার সব আশঙ্কা যদি মিথ্যে হতো!
কন্যা কেমন আছে?
নুশেরাপু, ব্লগে আসি না লজ্জা ও অপরাধ বোধে। দেশের সংক্ষিপ্ত সফরে আপনাদের কারও সাথে (বিশেষ করে আপনার সাথে) যোগাযোগ করতে না পারার অপরাধ বোধ। এই পোষ্টটা দেয়ার সময়ও ইতস্তিত বোধ করছিলাম। মেয়ের অসুস্থতা, ডাক্তার, হাসপাতাল নিয়ে ব্যস্ততাও একটা কারন। চট্টগ্রাম শহরের বাইরে থেকে নেট ব্যবহারের ঝামেলা আর নিজেকে নিয়ে সংকীর্নতায় ভুগি বলেও হয়তো যোগাযোগটা হয়ে উঠেনি। আশাকরি ক্ষমা করবেন।
কন্যা এখন অনেকটা ভাল। দোয়া করবেন যাতে সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়ে উঠে।
অপনা মা'মনি কেমন আছে?
আমি আরো ভেবেছিলাম আপনি হয়তো শেষমেষ ছুটি পাননি... তাই আর বিব্রত করতে চাইনি
কন্যার সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠুক, দোয়া করি।
অপনার শরীর খারাপ ছিলো বেশ কিছুদিন, এখন ভালো।
অপনা মামনির জন্য সবসময়ই অনেক অনেক আদর ও দোয়া।
যাক অবশেষে আপনাকে পাওয়া গেল...
দু:খজনক হলেও সত্যি যে ডায়াবেটিস নাই এমনদের মধ্যে আপনি একমাত্র ডায়াবেটিস রোগীদের দু:খ বুঝবেন
কঠিন অভিজ্ঞতা
আপনার একটা মেইল পেয়েছিলাম যাতে সম্বোধন ছিল "রোবট" ভাই হিসেবে। তাই রং নাম্বার মনে করে মেইলটার রেসপন্স করা হয়নি। কতটা ভাল বুঝি বলতে পারি না, তবে এ অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। সব ডায়বেটিক রোগীদের সাথে সবসময় আমি সমব্যাথি।
শুরুর আগেই প্রতিরোধের কাজকারবার শুরু করতে হয়েছে তা হলে?... :)
এপেন্ডিক্সের সহজ লক্ষন নিয়ে যাবার পর, রেডিওলজি'র ডাক্তার বললেন, ডান পাশের কিডনীতে ফোলা কি যেন একটা দেখা যাচ্ছে!!... আরো টেষ্ট করিয়ে অপারেশন করাতে হবে জলদিই... চেনা ডাক্তার দেখানোর পর রিপোর্টটা ছিড়েঁ ফেলে দিয়ে সাথে সাথে অপারেশনের ব্যাবস্থা করে দিছেন...
:D আরেকটুর জন্যে গেছিল আমার কিডনী!!...
তা আর বলতে!.. কেমন আছেন জেবীন?
আমারও একবার ছোটবেলায় ক্রিকেট খেলতে গিয়ে হাতের আঙ্গুলের লীগামেন্ট গেল ছিড়ে। আর্থপেডিক ডাক্তার বললেন, পা কেটে একটা লীগামেন্ট নিয়ে সেটা হাতে লাগাতে হবে অপারেশন করে, খরচাপাতিও হবে কিছু। আম্মা বললেন বাপরে, টাকার একটু টানাটানি যাচ্ছে কিছুদিন সবুর করো। প্রায় এক বছর পর লক্ষ করলাম লীগামেন্ট নিজ থেকেই জোড়া লেগে গেছে। তারপরও থেকে বুঝি সবুরে মেওয়া ফলুক আর নাই ফলুক, সবুরে লীগামেন্ট ঠিকই জোড়া লাগে।
ভালো আছি

ওই অসুস্হতার সময় বন্ধুদের আন্তরিকতায় যে ভালোলাগা জমছে, বলে বুঝাতে পারবো না । অপারেশনের পর হুশ ফিরেই কাছে পেলাম জয়িতাকে, জানলাম বাকিরাও আছে কাছেই!
কাকতালীয়ভাবেই আপনার কথা মনে হয়েছিল কাল, সবার এসএসসি ব্যাচ নিয়ে সামুতে একটা পোষ্ট ছিল আপনার ওটাকে নিয়েই
জেবীন বন্ধুরা তো সবসময়ই কাছেই থাকে, ছুঁয়ে থাকে। তারা যে বন্ধু!ভালো থাকো সবসময়।
কাকতাল সে যেই হোকনা কেন তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ওফ! বাঁচা গেল। শেষে এসে মনে হলো আপনি না, ডাক্তার যেন আমার রিপোর্ট দিলো।
তাই নাকি?!!
আমারও মনে হয়েছিল... কি যে একটা রিলিফ! একটা বড় পাথর যেন নেমে গেল বুক থেকে।
রিপোর্টে ভুল ছিলো, কাহিনি শেষ!! হাহাহা!!! এরমই ভোলাগাজীর বিচার!!
তবে বন্ধুর চোখের টলমল পানি তো দেখা গেছে।
হুমম বন্ধুটি জানতো ডায়বেটিস এর ভোগান্তী। বন্ধুটির মা ডায়বেটিক পেশেন্ট ছিল আর সে ছিল মা'র আদরের ছোট ছেলে।
পরের রিপোর্ট পাওয়ার পর কয়কেজি মিষ্টি খাইছেন?
নিষিদ্ধ জিনিসে আকর্ষন বেশি। নিষেধ ছিল বলেই বেশি খেতে মন চাইত। নিষেধ উঠে গেলে আর্কষনটা কমে যায়। মনেহয় বাধাতো নেই, যখন ইচ্ছে তখনই খেতে পারব, এই ভেবে আর খাওয়া হয় না।
ভুল রিপোর্ট, ভুল ট্রিটমেন্টের শিকার যে কত হতভাগ্য মানুষ হয়! ডাক্তার, হাসপাতাল এসবে ভয় পাই সবময়, বাবা-মা কে নিয়ে য়ে থাকি। ভাগ্যিস আবার টেষ্ট করিয়ে জানতে পারলেন যে আপনি সেফ।ভালো থাকেন সবসময়।
এখন আর ভুলেও ব্লাড সুগার টেষ্ট করি না। ভয় হয় যদি প্রথম রিপোর্টটা ভুল না হয়ে পরের রিপোর্টটা ভুল থাকে।

আমার মা মারা যাবার পর বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঢাকার একজন নামকরা ডাক্তার উনাকে হার্টের রোগী বানিয়ে দিলেন। পরবর্তীতে দেখা গেল, উনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা।
আপনার মা'র আত্মার শান্তি কামনা করছি আর আপনার বাবার দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আর আশাকরছি আমাদের চিকিৎসা ও ডায়াগনোসিস ব্যবস্থা আরও সচেতনতা ও নির্ভুলতার সাথে নিরুপিত হোক।
ল্যাবে রিপোর্ট ভুল!
কেমন আছেন বকলম ভাই। অনেক দিন পর দেখলাম। আশা করি ভাল আছেন। কবে ফিরছেন।
ভাল আছি উদরাজী ভাই। আপনি ভালো? এইতো কিছুদিন হলো প্রবাসে ফিরে এলাম। প্রবাস কি জিনিস আপনিতো ভাল করেই জানেন।
আপনি দেশে এলেন অথচ ফোন দিলেন না! কষ্ট পেলাম। তবে অনেক দিন ব্লগে ছিলেন না দেখেছি।
উদরাজী ভাই সেই অপরাধবোধে ব্লগে আসি না। আর লজ্জা দেবেন না প্লিজ। মেয়ের অসুস্থতা আর নিজের হীনমন্যতার কারনে কারও সাথে যোগাযোগ করা হয়নি। মুখচোরা আমি ব্লগে মুখ দেখাতে হয়না বলেই অনেক কিছু বলতে/লিখতে পারি। সবার সাথে দেখা হলে ভয় হয় বন্ধুত্বের টান যদি কমে যায়। আশাকরি ভুল বুঝবেন না। ভাল থাকুন, এই কামনা সবসময়।
আমি ভাবছি আপনে বলবেন বাংলা ছবির কোন এক কাহিনীর মত আরেকজনের রিপোর্ট দিয়ে দিছে।

বাংলা ছবিতে তাই হয় নাকি?!!
আহারে ক্যান্ডির জিলাপী!
ক্যান্ডির জিলাপীর নাম শুইনা মন খারাপ করলেন কেন্? জাতি জানতে চায়।
"কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!"- আমি বলি নাই; কবি বলেছেন।
মারাত্মক ভুল.। নিঃসন্দেহে.। কিন্তু পুস্ট টা যখন পয়লা পড়ছিলম তখন ভাবতাছিলাম যে তবু ভালো এই যে আপনে ভুলের এইপাশে পড়ছেন..। ঐ পাশে পড়লে কি হইত কে জানে!!! ভাইবা দেখেন কারো ডায়াবেটিস আছে অথচ তারে ডায়াবেটিস নাই কয়া ডিসিশান দিলো.. মর্মান্তিক..
মন্তব্য করুন