ইউজার লগইন

সব চরিত্র কাল্পনিক

জীবনের দুই ডজন পয়লা বৈশাখ আমার কাছে ছিল একলা বৈশাখ। না, ১লাকে ভুল করে একলা বলিনি। বৈশাখ আসার কথা মহাসমারোহে। তাপস নিঃশ্বাস বায়ে, মুমূর্ষুরে উড়িয়ে দিয়ে, বৎসরের আবর্জনা দূর করে। অথচ আমার ‘কেটেছে একেলা বৈশাখের বেলা আকাশ কুসুম চয়নে’। কিংবা আমি ছিলাম একেলা গৌরী, জলকে চলেছি গঙ্গাতে।
বৈশাখ একলা আসার কথা নয়। সে সঙ্গে নিয়ে আসবে কালবৈশাখী, গরম-ঠান্ডা, সর্দি-কাশি। এমনি এক বৈশাখে জ্বরের ঘোরে আমি বিছানায় কাতরাচ্ছিলাম। জ্বর বাড়ছিল। ১০২, ১০৩। আমি চোখে সর্ষেফুল দেখছিলাম। পানি খাব, পানি। টুংটাং। এটা কি পানির শব্দ? না। দেখলাম, সর্ষেফুলের বাগান ডিঙিয়ে এক সুন্দরী এসে বসল আমার পাশে। এটা ওর চুড়ির শব্দ। পাশে বসে আমার কপালে হাত রেখে বলল, ‘ওমা আপনার তো দেখছি অনেক জ্বর!’ আমার মাকে বলল, ‘খালাম্মা এক গ্লাস পানি দেন তো।’ তারপর পার্স খুলে একটা প্যারাসিটামল বের করে বলল, ‘নিন খেয়ে নিন।’ এই মেয়ে তো দেখছি ভ্রাম্যমান ফার্স্ট-এইড বক্স! আমি সিপ্রোসিন খাচ্ছিলাম। তবু ওর প্যারাসিটামলটা খেয়ে নিলাম। এবং অবধারিতভাবে খেতে গিয়ে বিষম খেলাম। সুন্দরী মেয়ে দেখলে আর বিষম খেলে কাশি বেড়ে যায়। আমার কাশি আর থামতেই চায় না। কাশি বাড়ছে, প্যারাসিটামল খাওয়ায় জ্বর কমছে। জ্বর কমছে, কিন্তু ওর প্রেমাসিটামল খেয়ে প্রেমজ্বর গেল বেড়ে। সারা জীবন কসরত করে এক লাইন কবিতা লিখতে পারিনি। এখন এক ট্যাবলেটেই রবিবাবুর সাহায্য নিয়ে লিখে ফেললাম দুই লাইন-'এক বৈশাখে একলা এসে বললে হঠাৎ ভালোবাসি/ চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।'
চিরদিনের কথা আপাতত তুলে রাখি। তবে পরের তিন-চার বৈশাখ বাঁশি বাজিয়েই কাটিয়েছি- এটা স্বীকার করছি। সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে তার নাম দিয়েছি বৈশাখী। এতে একটা সুবিধা ছিল। যখন-তখন তার নামটা নেওয়া যেত সবার সামনে। যেমন- বৈশাখী ফল খেতে ইচ্ছে করছে, আমার শরীর খারাপ লাগছে, মনে হয় বৈশাখী জ্বরে ধরেছে ইত্যাদি। অনেকদিন ধরে খুব গরম পড়ছিল। মাকে বললাম- ‘মা, যদি কালবৈশাখী আসত। মা বললেন, কাল কেন, বৈশাখীকে আজই আসতে বল, নইলে তোকে আবার বৈশাখী-ব্যারামে ধরবে।’ মা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছিলেন। আর আমি তো মরে যাই...মরে যাই...।
মায়ের পীড়াপীড়িতে আমার প্রাণের বাঁশি বাজানো অবশেষে থামল। অর্থাৎ আমরা বিয়ে করে ফেললাম। বছর ঘুরল। আবারও ঘুরল। বাঁশি আর বাজে না। সে যে ডাকাতিয়া বাঁশি। এ বছর আমার মেয়ে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। স্কুল থেকে কী শুনতে কী শুনে এসেছে। আমাকে বলল- ‘বাবা, কাল তো কয়লা বৈশাখ। আমি শাড়ি পরব, মেলায় যাব। মাকেও নিয়ে যাব। পান্তা-ইলিশ খাব।’ যখনই বলতে যাব- ওটা কয়লা বৈশাখ নয়, পয়লা বৈশাখ; মুখ খিঁচিয়ে ওর মা বলল, ‘সত্যি কথাটা মেয়ের মুখ থেকেই বেরিয়েছে। তুমি আমার পয়লা বৈশাখগুলোকে কয়লা বানিয়ে দিয়েছ। বেরসিক কোনহানের।’ রেগে গেলে ও আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা শুরু করে।
আমি আতঙ্কের সঙ্গে লক্ষ করছিলাম মা-মেয়ের পরিকল্পনা। পারলারে যাবে। খোঁপা করবে একজন। একজন করবে বেণী। চুপিচুপি খোঁজ নিলাম, ফ্রিজে ইলিশের কোনো টুকরাটাকরা পড়ে আছে কি না। না, নেই। লইট্টা মাছ আছে। সবজির বক্সে আছে পুঁইশাক। এখন উপায়? পান্তা-লইট্টা খেলে কেমন হয়? ধুর, লাভ নেই। বৈশাখী ব্যারামের ভান ধরলাম। হাঁইচ্চো...। হাঁচি তো আসে না। অবশেষে একটা কুটনৈতিক ঘুম দিলাম। এক ঘুমেই দুপুরপার। বউয়ের খোঁচায় ‘জাগলাম’। বউ মারাত্মক মায়াবি কণ্ঠে বলল, ‘পান্তা-ইলিশের জোগাড় তো হয়নি, এখন চলো, মেলায় নিয়ে চলো।’ এসব মায়াবি কণ্ঠের মাজেজা এখন আমি বুঝি। গলে না গিয়ে এবার আমি মুখ খিঁচিয়ে বললাম, ইলিশের দাম কত- সেই খবর রাখো? মাসের মাঝখানে এত টাকা খরচ করব? আমাকে গাধা পেয়েছ নাকি? বউ আমার ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে কাঁদতে বলল, ‘গাধারা ইলিশ কেনে এটা তো কখনো শুনিনি। ভ্যাঁ...ভ্যাঁ...।’ এই এক সমস্যা। এবার আমি গলে গেলাম। আর্দ্র গলায় বললাম, পত্রিকায় লিখেছে দুই মণ ধানে একটা ইলিশ পাওয়া যায়। আমাদের তো দুই মণ ধান নেই। কিন্তু আমাদের দুটো মন আছে প্রিয়। এসো আমরা দুই মন এক করে ঘরে বসেই পয়লা বৈশাখ পালন করি। ইলিশের কী দরকার? বউ আকাশ-বাতাস ফাটিয়ে দিয়ে বলল, ‘নিকুচি করি দুই মনের। ফকির কোনহানের।’ আমি বললাম, তাই তো। দাও একটা থালা দাও। গলির মোড়ে গিয়ে বসি। আমার আল্লাহ নবিজির নাম, দুইটা পয়সা দিয়া যান...। বউ সত্যি সত্যি একটা থালা এনে দিল। দিনদুপুরে কী অপমান! যে বৈশাখী এক সময় আমাকে প্যারাসিটামল, প্রেমাসিটামল ইত্যাদি দিত, এখন সে প্রতিনিয়ত কী সিটামল দেয় তা আর না-ইবা বললাম। তবে তার গালিসিটামল খেলে আমার আবার কবিতা বেরোয়। আজ বেরুল- এসো হে বৈশাখ/ ঘরে আছে পুঁইশাক।

পোস্টটি ১৮ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

জোনাকি's picture


হাহাহা........
প্রেম ভালুবাসা রাগ অনুরাগ সবই আছে
পড়তে মাজা লাগলো
শেষের লাইন বেশী মজার হইছে Big smile

মাইনুল এইচ সিরাজী's picture


পড়ে মজা পেয়েছেন এটাই শেষ কথা।
শুভ নববর্ষ।

আরাফাত শান্ত's picture


শুভকামনা নতুন বছরের জন্য!

মাইনুল এইচ সিরাজী's picture


শুভকামনা আপনার জন্যও।

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


হি: হি:

মজারু লেখা।

মাইনুল এইচ সিরাজী's picture


হো...হো...
কষ্টও আছে কিন্তু !

ফাহমিদা's picture


কয়লা বৈশাখের বৈশাখী শুভেচ্ছা আপনাকে Tongue Big smile

আপনি এত কম লিখেন কেন? খুব ভালো লেগেছে লেখা ...

মাইনুল এইচ সিরাজী's picture


আপনাকে একলা বৈশাখের শুভেচ্ছা।
লিখি কম। কারণ আলসেমি।

মেসবাহ য়াযাদ's picture


আরে সিরাজপুরের, সিরাজী বাড়ির সিরাজী ভায়া যে ! ভালো আছেন কেমন ? দুর এটা কী জিজ্ঞেস করলাম ! কেমন আছেন, সেটাতো জানালেনই... আহারে... আপনের জন্য মায়া রইলো Wink

১০

মাইনুল এইচ সিরাজী's picture


ধন্যবাদ মেসবাহ ভাই মায়া রাখার জন্য। তবে সব চরিত্র কিন্তু কাল্পনিক। হা... হা... হা...

১১

মীর's picture


তবে মেলায় না নিয়ে যাওয়াটা একদম ঠিক হয় নাই Big smile
সিরাজী ভাই, কেমন আছেন? কুশিয়ারা কেমন আছে?

১২

মাইনুল এইচ সিরাজী's picture


আরে আমরা তো মেলায় গেছি। একেবারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
কুশিয়ারা ভালো আছে। আপনি কেমন আছেন?
''কয়লা বৈশাখ''টা কুশিয়ারার আবিষ্কার।

১৩

মীর's picture


ভালো আছি। মেয়ে মনে হয় বড় হয়ে আপনের মতো লেখক হবে ভাইজান।

১৪

জ্যোতি's picture


হা হা হা। জট্টিল মজার লেখা। তবে বৈশাখীর বৈশাখকে কয়লা করা ঠিক হয়নি। আপনাকে ধিক্কার।

১৫

মীর's picture


হাই জয়িতা'পু! কেমন আছেন? Party

১৬

জ্যোতি's picture


আছি তো। আপনি কেমন আছেন? আপনাকে বললাম, পহেলা বৈশাখ কেমন কাটলো তা নিয়ে এক্টা পোস্ট দেন। পোস্ট কই?

১৭

মীর's picture


আপনাকে দেখে খুবি খুশি লাগতেসে। পার্টি

১৮

মাইনুল এইচ সিরাজী's picture


হা... হা... হা...।
ধিক্কারকে স্বাগতম।
শুভ কয়লা বৈশাখ !

১৯

তানবীরা's picture


ইলিশের ফ্লেভার মাখিয়ে পুইশাক আর লইট্টা ভুনা, এক্সিলেন্ট বৈশাখী মেনু যাকে বলে Big smile

২০

মাইনুল এইচ সিরাজী's picture


ইলিশের ফ্লেভার কি পাওয়া যায় বাজারে? খুঁজে দেখতে হবে।

২১

লীনা দিলরুবা's picture


চ্রম লেখা Big smile তবে কথা হলো, বানায় বানায় গল্প লিখে ভাবীরে পঁচাইলেন, আপনে মানুষ ভালা না Crazy

২২

মাইনুল এইচ সিরাজী's picture


ওই ভাবীটাও বানানো। আমি আসলে মানুষ ভালা না।
আপনি কেমন আছেন?

২৩

লীনা দিলরুবা's picture


ভাবীটাও বানানো! পঁচায়ে এখন পিছলান? Wink
আমি ভালোই আছি। কন্যা কেমন আছে?

২৪

মাইনুল এইচ সিরাজী's picture


পিছলাইতে আর পারলাম কই? আপনারা তো বিশ্বাসই করলেন না-সব চরিত্র কাল্পনিক।
কন্যা ভালো আছে।

২৫

শওকত মাসুম's picture


এবারের বৈশাখের সেরা লেখা। ব্যাপক মজা পাইছি। ভাবী এই বৈশাখে আর মাইর দেয় নাই কইতে চান?

২৬

মাইনুল এইচ সিরাজী's picture


ভাবী এই বৈশাখে আর মাইর দেয় নাই কইতে চান?

কই নাই তো মাসুম ভাই !
আর সেরা লেখা ! মরে যাই... মরে যাই...

২৭

রায়েহাত শুভ's picture


হা হা হা Tongue

২৮

মাইনুল এইচ সিরাজী's picture


শুভ নববর্ষ, রায়েহাত শুভ

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

মাইনুল এইচ সিরাজী's picture

নিজের সম্পর্কে

আমি এক স্বপ্নবাজ তরুণ। স্বপ্ন দেখতে দেখতে, ভালোবাসতে বাসতে হাঁটছি বার্ধক্যের দিকে...