ও বৈশাখী
সেদিন পয়লা বৈশাখ ছিল। দিনটি আমার জীবনে নতুন কোনো রং নিয়ে কখনো আসেনি। তার ওপর সেদিন আমার জ্বর ছিল। বিছানায় শুয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছি। জ্বর বাড়ে। একশ এক, একশ দুই। একটা ঘোর। তন্দ্রা। ছটফটানি। ঘুম, ঘোর, তন্দ্রা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এক অন্য রকম জগতে হাবুডুবু খাওয়ার মতো। যেন অনেকগুলো অন্ধকার দলা পাকিয়ে ধেয়ে আসছে আমার দিকে। বাঁচাও! বাঁচাও! কখনো যেন বা পড়ে যাচ্ছি। মাটিতে। মাটি ভেদ করে পাতালে। পতন! পতন! আবার কখনো যেন উড়ছি আকাশে। উড়তে উড়তে একেবারে সূর্যের কাছাকাছি। উফ, কত উষ্ণতা, কত আলো! চোখ ধাঁধিয়ে যায়, শরীর পুড়ে যায়। পানি চাই, পানি!...
টুংটাং। এটা কি পানির শব্দ? না তো!
সহন আছেন?
চোখ খুলে দেখি, অপূর্ব সুন্দর এক মেয়ে অবিন্যস্ত পায়ে হেঁটে আসছে আমার দিকে। চুড়ির শব্দ। পরনে বাসন্তী রং শাড়ি। খোঁপায় বেলি ফুল। কিসের সঙ্গে তুলনা করা যায় এ মেয়ের সৌন্দর্যকে? পরির সঙ্গে? না, খুব হালকা হয়ে যায়।
আমার জ্বরতপ্ত নিঃশ্বাস আবারও আটকে যায়। চোখ ফেরাতে ভুলে যাই আমি। ততক্ষণে মেয়েটি আমার কাছে চলে আসে। একেবারে নাগালের মধ্যে এসে বালিশের পাশে বসে।
হাত উঁচিয়ে অভিবাদন জানিয়ে মেয়েটি বলে, আমি রুবিনা। আপনি নিশ্চয়ই সহন রেহমান? চৈত্রসংক্রান্তি সংখ্যায় আপনার গল্প পড়ে আমি মুগ্ধ।
আমি হাঁ করে তাকিয়ে থাকি। আমার শরীরের জ্বর-টর কোথায় পালিয়ে যায়!
রুবিনা বলে, কী হয়েছে আপনার? খুব জ্বর বুঝি?
আমি বলি, একটু।
রুবিনা আমার কপালে হাত রেখে আঁতকে ওঠে, ওমা, আপনার তো দেখি অনেক জ্বর!
আমিও আঁতকে উঠি তার হাতের স্পর্শে!
পার্স খুলে একটা প্যারাসিটামল বের করে সে। আমার মাকে ডেকে বলে, ‘খালাম্মা, এক গ্লাস পানি দেন।
আমি যদিও সিপ্রোসিন খাচ্ছি, সঙ্গে প্যারাসিটামলও, তবু কী এক ঘোরে ওর প্যারাসিটামলটা খেয়ে ফেলি এবং যেন বা ভোজবাজির মতো ভালো হয়ে উঠি।
রিমঝিমিয়ে হেসে রুবিনা বলে, শুভ নববর্ষ। এই নিন গোলাপ। আপনার জন্য।
আমি ধন্যবাদ দিতে ভুলে যাই। হাসির শব্দ আমার সারা অস্তিত্বে রিনিঝিনি বাজতে থাকে।
রুবিনা বলে, আপনার লেখা আমি আগেও পড়েছি। আমার স্বপ্ন ছিল এই অসাধারণ ছেলেটার সঙ্গে একদিন দেখা হবে। আজ পয়লা বৈশাখে আমার স্বপ্ন পূরণ হলো। আমি পয়লা বৈশাখকে ১০১টা সালাম জানাই।
আমি মনে মনে বলি, আমিও!
আমি থেমে থেমে বলি, আমি যে ছেলে, সেটা জানলেন কী করে? বুড়োও তো হতে পারতাম।
রুবিনা বলে, জেনেছি। এমন অসাধারণ লেখা কোনো বুড়োর কর্ম নয়।
রুবিনা হঠাৎ আমার ডান হাতটা তুলে নিয়ে বলে, আপনি এত সুন্দর করে কীভাবে লেখেন! এত অসাধারণ চিন্তা কোত্থেকে পান আপনি!
আমি শুধু মুগ্ধ হই। রুবিনার ছোঁয়ায় এলোমেলোও হই। আমার একদম কাছে রুবিনা। রুবিনার গোলাপি ঠোঁট কেঁপে কেঁপে ওঠে। ইচ্ছে করলে আমি ছুঁয়ে দিতে পারি। হূৎপিণ্ড লাফাতে থাকে আমার।
রুবিনা বলে, উঠুন। আমাকে এগিয়ে দিন। আপনাদের বাড়িটা না এত ঘোরানো-প্যাঁচানো রাস্তায়!
আমি হাওয়ায় ভেসে চলি। ভাসতে ভাসতে ওকে এগিয়ে দিই।
রিকশায় পাশাপাশি বসে এক অন্য জীবনের ঘ্রাণ পাই আমি রুবিনার কাছ থেকে। এই প্রথম। এমন ঘ্রাণের খোঁজ, এমন জীবনের খোঁজ আগে কখনো পাইনি আমি কারও কাছ থেকে। তবে খুঁজে বেড়িয়েছি।
রিকশা থেকে নেমে ওকে দিয়েছি সাদা রজনীগন্ধা। কাঁপা হাতে ও যখন সেটা নিচ্ছিল, ওর চোখে আবেশ দেখেছি।
যাওয়ার সময় একটা ছোট্ট কাগজে ঠিকানা লিখে দিয়ে রুবিনা বলল, চিঠি লিখবেন।
আমি বলি, চিঠি কেন? ফোনই না হয় করব।
না, আমি চিঠি চাই।
চাইলেই পাবেন—এতটা নিশ্চিত আপনি?
হ্যাঁ। পাব। লিখবেন?
লিখব।
কখন?
হয়তো কালই।
চোখ নাচিয়ে, ঠোঁট কাঁপিয়ে রুবিনা বলল, আসি।
আমি বলি, জি, দেখা হবে।
যেন হঠাৎই কবি হয়ে যাই আমি। মনে মনে কবিতা ভাঁজতে থাকি—
এক বৈশাখে একলা এসে বললে হঠাৎ ভালোবাসি
চমকানো রং ঢেউয়ের গলায় শোনা গেল একটু বসি?
বসবে মানে? চোখে বসো, বুকে বসো ও বৈশাখী
শীতলপাটি, কাঠের পিঁড়ি...কী করে যে কোথায় রাখি!...
চোখ দুটো তার মেঘনা নদী ভুরু যেন প্রজাপতি
পুলক-নাচন কোনখানে নাই খুঁজে ফিরি আঁতিপাতি
কে গো তুমি স্বপ্নভূমি বানিয়ে দিলে হৃদয়টাকে
বৈশাখী ঝড় সহ কুটোখড় উড়িয়ে নিল এক কথাতে!
ও চিনেছি তুমি আমার মেলায় দেখা ছোট্ট পাখি
ও চিনেছি তুমি আমার এক জীবনের দুষ্টু পাখি
প্রথমে সিরাজী ভাইকে অনেকদিন পর হলেও চমৎকার লেখা দেয়ার জন্য

এটা এই লেখাটির ক্ষেত্রেও খাটে। আপনি দিন দিন চিরযৌবন প্রাপ্তির পথে এগোচ্ছেন।
আর কবিতাটা সম্পর্কে তো বলার নেই কিছুই। অসাধারণ!
মুগ্ধ। পুরোদস্তুর মুগ্ধ।
ভাই আছেন কেমন?
হায়, এই কথাটা যদি সত্যি হতো! আমার দাঁড়ি পেকে যাচ্ছে, চুল উঠে যাচ্ছে। এ জন্য আমার মন খারাপ। আগে পোলাপান ভাই সম্বোধন করত, এখন বলে আংকেল!
হায় ভালবাসা!
দীর্ঘশ্বাস কেন ভাঙ্গা পেন্সিল?
আপনার জরিমানা হবে কম লেখার জন্য। জরিমানা অর্ধেক কমানো হইল ভাল লেখাটার জন্য।
বাকি অর্ধেকের কথা বলেন মাসুম ভাই। জরিমানা দিতে রাজি
দারুণ লেখাটি প্রিয়তে।
মন শুধু মন ছুঁয়েছে---- চমৎকার ভাবে লেখাটি পাঠকেরও মন ছুঁয়েছে।
সিরাজীর লেখা পড়লাম বেশ কয়দির পর, ভালো লাগলো বরাবরের মতো।
অনেক দিন পর আপনার লেখা পড়লাম...
চমৎকার বস
এদিক ওদিক দেখি
দেখিনা শুধু আমাদের আঙ্গিনায়...
ভাল আছেন কেমন, জনাব ?
লেখা ভাল পাইছি...
আপনাদের আঙ্গিনা কি আমারও আঙ্গিনা নয় মেসবাহ ভাই?
ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
ধন্যবাদ লীনা দিলরুবা, সামছা আকিদা জাহান, রশীদা আফরোজ, টুটুল।
বাহ! দারুন
মুগ্ধ। পুরোদস্তুর মুগ্ধ
মন্তব্য করুন