১৮ বছর বয়স
ছেলেটি বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। আদরে আদরে মানুষ হচ্ছে। গরিব মা-বাবা এই একমাত্র সন্তানের কোনো আবদারই অপূর্ণ রাখছেন না। তবে ছেলেটি লেখাপড়ায় ভালো। কিন্তু বাস্তব-জ্ঞান মোটেই ভালো নয়।
গ্রামে থেকে এসএসসি পাস করেছে জিপিএ ফাইভ নিয়ে। মা-বাবা বহু স্বপ্ন নিয়ে ছেলেকে ভর্তি করালেন ঢাকার নামকরা কলেজে। এইচএসসিতেও সে জিপিএ ফাইভ পেল। বহু স্বপ্নের একটা স্বপ্ন ছিল--ছেলে বুয়েটে পড়বে। কিন্তু ইংরেজিতে এ প্লাস না থাকায় সে বুয়েটে আবেদনই করতে পারল না।
এসব কোনো ব্যাপার না। ব্যাপার অন্য। প্রাইভেট-কোচিং মিলিয়ে ২ বছরে ছেলের জন্য খরচ হয়ে গেল ৭-৮ লাখ টাকা। ছোট চাকরিজীবী বাবা-মায়ের বেতন পুরোটা তো খরচ হয়েছেই।অবধারিতভাবে ঋণও করতে হয়েছে অনেক। বেতনের পুরো টাকা ছেলের জন্য পাঠিয়ে তাঁরা কী খেয়ে-পরে কাটিয়েছেন সে এক রহস্য।
বুয়েটে আবেদন করতে পারেনি তো কী হয়েছে, ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর তো ছিল। ছেলেটি সেগুলোতেও চান্স পেল না। এটাও ব্যাপর না। চুয়েট-কুয়েট-রুয়েট...তো আছে এখনো। মা-বাবা আশায় বুক বাঁধেন। ছেলেটিও।
কাহিনি এটা নয়।
লাখ টাকা কখনো চোখে দেখেননি যে মা-বাবা, তাঁরাই নিজেরা না খেয়ে ছেলের জন্য খরচ করে ফেলেছেন ৭-৮ লাখ টাকা। এটার মর্ম বোঝার বয়স নিশ্চয়ই ছেলের হয়েছে। ছেলের বয়স তো ১৮।
এ বছর কোরবানি করেননি মা-বাবা। বরং ঈদের আগে ছেলের জন্য পাঠাতে হয়েছে ৫ হাজার টাকা। কোচিং খরচ।
আশেপাশে যাঁরা কোরবানি দেননি তাঁরা সবাই মিলে একটা গরু কিনবেন বলে ঠিক করলেন। জনা তিরিশেক মানুষ। ভাগে মাংস নেবেন। প্রতি ভাগ এক হাজার টাকা। কোরবানির সাধ ভাগের মাংসে মেটানো আর কী।
ছেলে ফোন করে বলল, বাবা, আরও কিছু টাকা লাগবে। বাবা তো আকাশ থেকে পড়লেন। ছেলে বলল, আমি তিন হাজার টাকা দিয়ে জুতা কিনে ফেলেছি।
তিন হাজার টাকার জুতা? তুই না ছাত্র। হাজার বারো শ টাকা দিয়ে কেডস কিনলেই তো হতো। তোর জন্য টাকা পাঠাতে গিয়ে আমি কোরবানি পর্যন্ত করতে পারিনি। এখন তো দেখছি ভাগের মাংসটাও কেনা হবে না।
বাবা এসব কথা বলতে পারলেন না। তিন হাজার টাকা দামের জুতার তলায় পিষ্ট হতে থাকল তাঁর স্বপ্নগুলো।
ফেবুতেও পড়েছিলাম এটা। বাবা মায়েরা অসাধারণ বোকা হয়। ছেলে বুয়েটে পড়লেই কি হতো? বাবা মাকে সুখে স্বপনে মুড়িয়ে দিতো? (
( (
রঙিন চশমা বড়ই খারাপ জিনিস!
কয়েকটা বিষয় নিয়ে সংশয় থাকলো আসলে,
ছেলেটা যা করেছে সেটাকে এক ধরণের অপরাধ সব্যস্ত করার সুক্ষ্ণ বক্তব্য এখানে থেকেই যাচ্ছে
বাবা মা যখন ছেলেকে পয়স খরচ করে ঢাকায় রেখেছে, সে সময় কি তারা জানতো না ঢাকায় সঙ্গ বিশেষত ভালো কলেজে নিজের সঙ্গ মানিয়ে রাখতে বাড়তি পয়সা খরচ হয়, সেটা ট্যুইশনি কিংবা স্কুল কলেজের বেতনের চেয়ে বেশী।
দ্বিতীয় যে বিষয়টা অনুপস্থিত তা হলো ছেলে এই জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, বাবা মাই সেটাকে অনুপ্রাণীত করেছে, সহযোগিতা করেছে, এখন সেটার জন্য ছেলের মুখে কালি ছুড়ে মারতে হবে কেনো?
তৃতীয়ত এই যে বাবা মা এক ধরণের স্বপ্নের চাপে কিংবা ফাঁদে ফেলে দিলো ছেলেটাকে সেই ছেলেটা কি আদৌ ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিলো? বাবা মা-এর স্বপ্ন পুরণের জোয়াল কেনো সন্তান বহন করবে?
শিক্ষা ব্যবস্থা কিংবা আমাদের সামাজিক মানসিকতায় বিভিন্ন ধরণের অসামঞ্জস্যতা আছে। আমরা এক ধরণের ফ্রাঙ্কেস্টাইন তৈরি করি তারপর সে হত্যাউদ্যত হলে তাকে গালমন্দ করি।
নিজেকে মানিয়ে চলার জন্যে পয়সা খরচ করতে হবে না থাকলেও, এর কোন মানে নেই। মফস্বল থেকে বড় শহরে গিয়ে কোচিং করার সময় বেশীর ভাগ ছেলেমেয়েরা খরচে সতর্ক থাকে। সেটল হয়ে গেলে তখন টিউশনি বা এ জাতীয় কিছু করে নিজেদের পকেট খরচ জোগারের চেষ্টা করে। মাসে মাসে বাসা থেকে এক গাদা টাকা নিয়ে আসা খুব ভাল কিছু না। আর যে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা এমন যে এক হাজার টাকা ভাগে কোরবানী দিতে হয় সে পরিবারের ছেলে কেন তিন হাজার টাকার জুতা কিনবে? এখানে ছেলের পক্ষে বা এই ধরনের ছেলের পক্ষে সাফাই গাবার কোন কারন নেই। এ ধরনের ছেলে আমাদের সমাজে অনেক আছে, যারা পরিবারকে এইভাবে নানান চাপে ফেলে রাখে সবসময়। গার্লফ্রেন্ডকে কেএফসিতে খাওয়ানোর জন্যে মোবাইল ছিনতাই এর কাহিনী ফেদে বাসা টেকে টাকা নিয়ে আছে অহরহ ছেলেরা। এদের জন্যে সহমর্মিতা প্রকাশের কোন রকমের কোন কারন নেই, যেখানে তাদের চোখের সামনে অনেক উদাহরন আছে যারা পরিবারের অর্খনৈতিক অসচ্চলতার কারনে পরিমীত খরচের জীবন যাপন করছে এবং ছাত্রজীবন থেকেই রোজগার করে পরিবারের উপর থেকে নিজেদের নির্ভরশীলতা কমাচ্ছে।
লেখাটা একটা ভালো রিডিং ম্যাটেরিয়াল। লেখালেখি নিয়ে ভাবনার খোরাক জোগায়।
তবে বাবার খুশি হওয়া উচিত ছিলো। ছেলে এখনো ইয়াবা টানা শুরু করে নি জেনে।
এটাই ভাবছিলাম। ঢাকায় এখন যেরকম ইয়াবার রমরমা
ভাল লাগল চমৎকার ।
হুম, লেখাটা পড়ে মনটা বিষন্ন হয়ে গেল....হয়ত দরিদ্র দেশে ছেলেটি যা করেছে, তা অমানবিক কিন্তু একটি দরিদ্র দেশে এরকম রাজনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থায় কারোর মোরালিটি ডেভেলপ করানোটা একটা চ্যালেন্জের বিষয়- বিশেষ করে শিশু এবং টিন এজদের মধ্যে। এরা চাকচিক্যময় জীবন দেখে বড্ড লোভী হয়ে পড়ে।
অযথাই প্যঁচাল পারলাম। ভালো থাকুন শুভেচ্ছা।
আপনার গল্পটা পড়ে আমার নিজের চোখে দেখা একটা পরিবারের কথা মনে পড়লো। মন খারাপ হবার মতোই ব্যাপার।
লেখাটা যখন পড়ছিলাম তখনই মুগ্ধ হয়ে ছিলাম। এই বৃষ্টি রাতে অন্ধকারে আবার পড়লাম আবার ভালো লাগলো!
তিন হাজার টাকা দামের জুতার তলায় পিষ্ট হতে থাকল তাঁর স্বপ্নগুলো-এই শেষ বাক্যটি বেশ ভালো হয়েছে। গল্পের প্রেক্ষাপট খুবই পরিচিত -লেখকের আবেগ আর ভালবাসায় এটি চমৎকার ব্যঞ্জনায় ফুটে ওঠেছে।
মন্তব্য করুন