গল্প: পানকৌড়ি বা ঘাসফড়িঙ না দেখেই কেটে গেছে প্রায় ছয়টি বছর
খেলার কাজটি ভালো পারতাম জন্মের পর থেকেই। আব্বু-আম্মু কিংবা আর সবার কোলে কত যে খেলেছি, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। তখন সবাই কোলে নিয়ে আমার খেলা দেখতেও মজা পেতো। আমিও সবার কোলে উঠে অনেক মজা পেতাম। এর কিছুকাল পর যখন একটু দৌড়াতে শিখেছি তখন জীবনের প্রথম সত্যিকারের খেলার সরঞ্জাম উপহার পেলাম। সে সময় স্কুলে যাওয়ার কোনো বালাই ছিলো না বলে দৌড়-ঝাপেরও কোনো সীমা-পরিসীমা ছিলো না। দিনের যখন খুশি, যেখানে খুশি শুরু হয়ে যেতাম। শুধু আম্মুজানের চোখের আড়াল হওয়ার পারমিশনটুকু ছিলো না। তাতে কোনো অসুবিধা হতো না। বাবা’র সরকারী চাকুরীর সুবাদের প্রাপ্ত বিশাল বাড়িটিতে অনেকখানি জায়গা জুড়ে ছিলো হাত-পা দুইদিকে যতদূর যায় ততদূর ছড়িয়ে দৌড়ানোর সুযোগ। আজ-কালকার ঈশ্বরের আশীর্বাদেরা সে সুযোগ কতটুকু পায়, জানি না।
প্রথম উপহারটি ছিলো একটি রাবারের ফুটবল। যারা পাঁচ নম্বুরী ডিয়ার বল চেনেন, তাদের এই রাবারের বলটিকেও ভালোভাবে চেনার কথা। এ বলটি আকারে একটু ছোট এবং কিছুটা শক্ত ছিলো, কিন্তু পাএর গোছ শক্ত করার জন্য ছিলো মোক্ষম। সেই বল নিয়ে আঙিনায় ছোটাছুটি, দূর থেকে কিক্ করা, গোলপোস্ট বানিয়ে গোল দেয়ার আনন্দ উদযাপন শেখা- এসব ছিলো জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মাঝে মাঝে ওয়ালের উপর দিয়ে বল বাইরে চলে যেতো। দারোয়ান কাকু বলতেন, আমার না কি ঘোড়াস্বভাব। ছ’ ফুটি ওয়াল পাঁচ বছর বয়সে টপকাতে পারতাম অনায়াসেই। বাবা জুতো কিনে দেবার সময় বলতেন, ওর পাএ আছে অদৃশ্য খুড়। যত ভালো জুতোই দিই। সর্বোচ্চ দুইমাস। এর বেশি টিকবে না।
ফুটবল আনার জন্য বাইরে যাওয়া থেকে আমার সীমানা পেরোনো শুরু। মা’র চোখেও ততদিনে বাজপাখির ভালবাসা কমে এসেছে। বাইরের পৃথিবীতে বিচরণ তাই অল্পদিনে সীমা ছাড়িয়ে গেল। কিন্তু কেউ সেভাবে জানতে পারলো না। দারোয়ান কাকু জানতো। তাতে কোনো সমস্যা ছিলো না। দারোয়ান কাকুই বোধহয় জীবনে সর্বপ্রথম বন্ধু হয়েছিলেন। তিনি আমার সব কাজই অন্ধভাবে সমর্থন করতেন।
আমাদের বাড়ির ঠিক সামনেই ছিলো একটা বড় খেলার মাঠ। সেই বিরাট মাঠে শ’খানেক ছেলে-পিলে একসাথে খেলতে পারতো। নানারকম খেলা। ক্রিকেট, ফুটবল, বোমবাস্টিং, সাতচারা, ডাঙগুলি আরো কত রকমের খেলা। সবকিছুই আমাকে বাড়ির ভেতর থেকে চুম্বকের মতো টানতো। কবে যে একদিন বিকেলবেলা আমি বাড়ির আঙিনা ছেড়ে সেই মাঠের ছেলেদের দলে ভীড়ে গেলাম, নিজেও টের পেলাম না।
মাঠে গলি-মহল্লার টুকটাক খেলা নয়; চলতো রথী-মহারথীদের যুদ্ধ। আমাদের পাড়ায় একজন কপিল দেব ছিলেন। ভোটকু সোহেল ভাই। কপিল দেবের মতোই কালো ও লম্বা বলে তাকে সেই নামেই ডাকা হতো। তিনি হতেন একদলের ক্যপ্টেন। আরেক দলের ক্যপ্টেন হতেন সুদর্শন ইমরান খান অর্থাৎ বাবু ভাই। তিনি ব্যটিং-বোলিং দু’টোই করতেন চমৎকার। আমরা যে কাজটা ভালো পারতাম তা হলো ফিল্ডিং করা। কারণ ওই কাজটি ছাড়া আর কিছু করার সুযোগও তেমন ছিলো না। আমি, মুন্নাভাই, মিশুভাই, ইদ্রিস ভাই, তোজা, পাটোয়ারী সোহেল, চুরা জনিরা মহাসমারোহে ফিল্ডিং করতাম। ইনিংসের শেষবেলায় এক বা দুই ওভার হয়তো ব্যাটিং করার সুযোগ পেতাম। আর আমার মতো যারা বোলার তারা মাঝে মাঝে বোলিংএর উপলক্ষে দুই-এক ওভারের বাড়তি মজা পেতো।
একটা বিষয় কখনোই ভালো লাগতো না। খেলায় ভালো করার পূর্ব শর্ত হিসেবে কার ব্যাট আছে, কার স্ট্যাম্প আছে- এসবও বিবেচনায় আনা হতো। তারপরে একজনকে ভালো খেলুড়ে বলে রায় দেয়া হতো। যেকারণে চুরা জনি’র ব্যটটার ওপর আমার রাগ ছিলো অনেক। একদিন ব্যটিংএর সময় সেটা দিয়ে পিচে খুব জোরে বাড়ি দিচ্ছিলাম। খট-খট-খট-খট। দেখে জনি দৌড়ে এসে আমার হাত থেকে ব্যাট কেড়ে নিল। আমাকে নাকি সে নিজের ব্যাট দিয়ে খেলতে দেবে না। আমাদের আর কোনো ব্যাটও নেই। আরেকটা কাঠের টুকরা ছিলো, নন-স্ট্রাইকিং এন্ডের জন সেটা হাতে রাখতো। কথাটা বিশ্বাস করা হয়তো একটু কষ্টই হবে, মাঝে মাঝে ওটা দিয়েও খেলা হতো। আমিও সেদিন কি আর করা, ওটা দিয়েই দু’তিন বল ঠেকানোর চেষ্টা করলাম। তারপর আউট হয়ে চলে আসলাম।
বাসায় এসে আব্বু-আম্মুর সঙ্গে একটা গোঁ ধরে ঘাপটি মেরে বসে থাকলাম। ব্যাট কিনে দিতে হবে। পিচ্চিকালে এক বিরাট পেইন ছিলো, কিছু চাইলেই বলা হতো, ফাইনাল পরীক্ষায় ১ থেকে ১০ এর মধ্যে থাকতে হবে। তাহলে পাওয়া যাবে। আর আমার প্রতি বছরই কোনো না কোনো দাবি থাকতোই। ফাইনাল পরীক্ষার আগে আগে বেশ একটা ঝামেলায় পড়ে যেতাম। তখন তো আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো হিজ হিজ হুজ হুজ পড়াশোনা না। আব্বু-আম্মু তো পড়ার খবর রাখতোই; বাড়তি একটা মাস্টারও ছিলো, সে কাজ করার জন্য। এদের সঙ্গে যুদ্ধে পেরে না উঠে আমি বিরক্ত হয়ে সিরিয়াসলি পরীক্ষা দিতাম। নিতান্ত অনিচ্ছায়। ১ থেকে ১০ এর মধ্যে একটা আসন জোগাড় করে দেখিয়ে দিতাম, ওটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। তারচে’ আমার কাছে একটা ব্যট অনেক বেশি গুরুত্ব রাখে। আমার ভেতরে গড়ে ওঠা পড়াশোনার প্রতি প্রচুর অরুচি'র ইতিহাস এটাই। আজকাল যারা বৈজ্ঞানিক উপায়ে শিশুর বেড়ে ওঠা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন, তাদের জন্য জিনিসটা জানা থাকা ভালো।
আমাকে ছোটবেলায় কে বা কারা, এক বা একাধিকবার বলেছিলো- বড় হয়ে গেলে নাকি পড়াশোনাটা আর খারাপ লাগে না। তার সঙ্গে একবার দেখা করতে খুব ইচ্ছা করে। কারণ আমি এ পূর্ণাঙ্গ ভুয়া কথাটি মোটেও বিশ্বাস করি না। একাডেমিক পড়াশোনা আমার কাছে সবসময় ছিলো দুই চোখের বিষ। পড়ার বইটা যদি পড়ার বই হিসেবে পড়তে না হতো, তাহলে আপত্তি ছিলো না। সিক্সে ওঠার পর আমার একক্লাস, দুইক্লাস উপরের দ্রুতপঠনের বইগুলোই আগে শেষ করে ফেলেছিলাম। কিন্তু নিজের ক্লাসের দ্রুতপঠনটি খুলেও দেখি নি বহুদিন। একদিন খুলে দেখে এত বিরক্ত লাগলো। এইসব বাচ্চাদের গল্প মানুষ পড়ে?
ততদিনে আমি শাহরিয়ার কবিরের লেখার সঙ্গে পরিচিত হয়ে গেছি। ছোট ছোট ছেলেপিলেদের দুষ্টুমি মাখা কার্যকলাপ। হয়তো বইএর একদম শেষ লাইনে আমারই বয়েসী কোনো এক পিচ্চি মেয়ে আর এক পিচ্চি ছেলের একা হয়ে যাওয়া। এ সামান্য ব্যপারই সে সময় আমাকে এত আলোড়িত করতো; যা এখন সত্যিকার অর্থে একা হয়েও পাই না। সে সময় আবেগ নামক একটা অনুভূতি কেবল মনে মনে জন্ম নিচ্ছে। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত যা কিছু করেছি তা নেহায়েত দুষ্টু ছেলে হিসেবে শীর্ষস্থান ধরে রাখার জন্য। সিক্স থেকে খানিকটা সিরিয়াস হলাম।
সিরিয়াসনেসের প্রথম ফসল আমার প্রথম গার্লফ্রেন্ড। মিষ্টি আপু। পুলিশের মেয়ে ছিলেন। আমার চেয়ে একক্লাস বড় ছিলেন। টিফিন পিরিয়ডে দেখা হতো। গুটুর গুটুর করে প্রচুর কথা হতো। আমি ভদ্রছেলের মতো বসে বসে বা হাঁটতে হাঁটতে তার সঙ্গে কথা বলতাম। অনেক রকমের কথা। মনে হয় আমাদের দু’জনের পেটে একজন আরেকজনকে বলার জন্য সারাদিন ধরে কথা জমতে থাকতো।
এই নিয়ে পরে আমার বোজম ফ্রেন্ডরা বেশ ক্ষ্যাপাক্ষ্যাপি করতো। কিন্তু কোনো এক অবোধ্য কারণে আমি টিফিন পিরিয়ডের মতো একটা মহান সময় মিষ্টি আপুর জন্য বিসর্জন দিতে একটুও ইতস্তত বোধ করতাম না। মাঝে মাঝে হয়তো স্কুলের সিমেন্টের সিটগুলোয় বসে আছি, পেছন থেকে এসে আমার চোখ দু’টো আটকে দিতো মিষ্টি আপু। আমি বলতাম, জানি এটা তুমি। সে বলতো, জানবিই তো। আমি ছাড়া আর কে তোকে ধরবে? হাত ভেঙ্গে দেবো না।
তার সঙ্গে আমার কোনো হৃদ্যতার সম্পর্ক হয় নি কখনো। তবুও আমি কখনো তাকে ভুলি নি। সবচে’ মজার বিষয় হচ্ছে সেও আমাকে কখনো ভোলে নি। ষোলো বছর পর একদিন দেখা হয়েছিলো মেয়েটির সঙ্গে।
দেখলাম ছোটবেলার চেয়ে অনেক সুন্দরী হয়েছে। রূপ-লাবণ্য সেই স্কুলবেলায় যা ধারণা করেছিলাম তা ছাপিয়ে গেছে। কি দারুণ সিল্কি চুল। দেখলে দেখতেই ইচ্ছা করে। আমি পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সে সামনের দিকে ছিলো প্রথম থেকেই। আমাকে দেখার কোনো কারণ ছিলো না। কিন্তু হঠাৎ চমকে পেছনে ঘুরে তাকালো। ওর চোখ দু’টো প্রথমে বড় বড় হয়ে গেলো এবং তারপর বিস্ফোরিত হলো। আমি মেয়ে হলে মনে হয় ইইইই বলে একটা চিৎকার দিয়ে বসতো। কিন্তু মেয়ে না হওয়ায় সে যাত্রা বেঁচে গেলাম। সে মুখটা হাত চাপা দিয়ে চিৎকার ঠেকালো। ক্লাস সিক্সের পর ষোলো বছর। এর মধ্যে আমি মাস্টার্স পাশ দিয়ে ভদ্রলোক হয়ে উঠেছি। সঞ্জীব চৌধুরীর গানের ভক্ত হয়ে গেছি। আরো কত কত ঘটনা ঘটে গেছে। আমার জীবনে যেমন ঘটেছে, তার জীবনেও নিশ্চই তেমনি ঘটেছে। কারো কাছে সেসবের কোনো হিসাব নেই। এই মেয়েটা ছোটবেলায় আমার হাত দু’টো ধরে একবার কি ঝরঝর করে কান্না। তাও নিজের বাসায়। নিজের আম্মুর সামনে। অথচ কারণ খুবই সামান্য। ওর দুই বান্ধবী সেদিন আমাকে খুব শাসিয়েছিলো ‘আমি কেন মিষ্টির সঙ্গে অতো বেশি মিশি’ বলে বলে। আমি অবশ্য কিছুটা মুখচোরা প্রকৃতির ছিলাম। তাই জবাব দিতে পারি নি। ওরা মেয়েবাহিনী ছিলো, তাই শাসিয়ে চলে যেতে পেরেছিলো। ছেলে হলে হয়তো ঠেঙিয়ে দিতাম। আমাদের ক্লাসের ছেলেরা এর আগেও সেভেনের ছেলেদের ঠেঙিয়েছে। আমি তাতে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু মেয়েরা কোনো কারণে শাসালে কি করতে হয় সেটা আমার জানা ছিলো না। পরে চিন্তা করেও এ ব্যপারে কিছু জানতে পারি নি। যদিও জীবনে ওই একবারই আমাকে মেয়েদের শাসানি খেতে হয়েছিলো।
একটা বিষয় খেয়াল করলাম। দেখা হওয়ায় বেশ ভালো লাগছে। এটা কেন হচ্ছে বুঝতে পারলাম না। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে হঠাৎ দেখা হওয়া আমি সবসময় এড়িয়ে চলি। বলে-কয়ে দেখা হওয়ার সুবিধা হচ্ছে একটু প্রস্তুত থাকা যায়। ফলে নানাবিধ কারণে বিশেষ লজ্জায় পড়তে হয় না। হুট-হাট দেখা হয়ে যাওয়ার ম্যালা হ্যাপা আছে। যাক্ সেসব নিয়ে চিন্তিত হলাম না। বলা ভালো সুযোগই পেলাম না। মেয়েটি এক নাগাড়ে মিনিট দশেক কথা বলে গেলো। যার মর্মার্থ এরকম- সে চারমাস হলো এই শহরে এসেছে একটা বেসরকারী সংস্থায় চাকুরী নিয়ে। তার প্রকল্পের নাম সৌহার্দ্য। আজ সাপ্তাহিক ছুটি তাই মার্কেটে এসেছে। এখানে যে বোনের বাসায় থাকে তার মেয়েকে বলেছিলো সঙ্গে বের হতে। কিন্তু সে নাকি বলেছে; খালামনি তুমি তো জানো না, শনিবারের রাস্তায় মানুষ বের হয় না। ঘরে বসে থাকে। যেমন আমি এখন ঘরের মধ্যে ডেটিং করবো। প্লীজ খালামনি আজ আমায় ছেড়ে দাও। ও নাকি জানতে চেয়েছিলো, বাসায় তোর বাবা-মা সবাই আছে। এর মধ্যে কেমনে ডেটিং করবি? সে নাকি উত্তর করেছে, ভার্চুয়াল ডেটিং করতে ঘরে আব্বু-আম্মু থাকলেও কোনো সমস্যা হয় না। এরপরে নাকি অনেক অসভ্য অসভ্য কথা পিচ্চি মেয়েটা খালামনিকে বলেছে। যেগুলো খালামনি আমাকে বলতে পারবে না। সে শুধু আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারবে, তুমি চিন্তা করেছো, আমরা ক্লাস সিক্স-সেভেনে থাকতে শুধু একটু গল্প-টল্প করার সাহস পেতাম। অন্যরা তাও পেতো না। আর প্রেমের কথা তো চিন্তাই করা যায় না। আজকালকার ছেলেপিলে কত ফার্স্ট দেখেছো?
আমি বললাম, তুমি আমাকে তুই-তোকারি করতে। আমি তুমি-তোমারি করতাম।
-সেটা তো তুমি অনেক ছোট ছিলে তাই। এখন তো মনে হচ্ছে না, তোমাকে তুই-তোকারি করা সম্ভব।
সম্ভব সম্ভব। একটু চেষ্টা চালাও, পারবে।
-আচ্ছা চালাবো। তুমি এখানে কি করো?
ছুটি কাটাই। ছুটির দিনে অবশ্য খুব কষ্ট না হয়ে গেলে আমি বাসা থেকে বের হই না। আজ একটু কষ্ট হয়ে গেছে।
-কি বলো? কষ্ট হয়ে গেছে? এর মানে কি?
মানে হলো, গ্রামের বাড়ি থেকে গোটা ত্রিশেক বা ত্রিশ না হলেও পাঁচ-সাতজন তো হবেই; ভাই-বেরাদর এসেছে। তারা শিশুপার্ক দেখতে চায়, চিড়িয়াখানা দেখতে চায়, বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঘুরতে চায়; আমি কোনোমতে কাজের কথা বলে পালিয়ে এসেছি।
-তুমি এখনো পিচ্চিকালের মতোই আছো। মনে আছে একবার খুব কান্না কান্না মুখ করে এসে আমাকে বলছিলে, স্যার নাকি তোমাকে পাচশো বেতের বাড়ি দিয়েছে ক্লাসে পড়া না পারার জন্য। আমি তো শুনে কেঁদেই ফেলতাম আরেকটু হলে। কিন্তু কি মনে হলো তাই জিজ্ঞেস করলাম, পাচশো’ বাড়ি দিতে বসলে তো ক্লাসে আর কিছুই করার সময় থাকে না। তুমি তখন স্বীকারই করতে চাও না। আমি অনেক চাপাচাপি শুরু করতে তুমি বললে, পাঁচশো না হলেও তিন-চারটা তো হবেই।
এইসব বলতে বলতে ঠিক ক্লাস সেভেনের মেয়েদের মতো করে হাসতে শুরু করলো মিষ্টি আপু। দেখা হয়েছিলো বসুন্ধরা সিটির সিঁড়িতে। তখনও দুপুরের আকাশে সূর্য্যিমামা পুরোপুরি চড়াও হয় নি। জানতে চাইলাম, মার্কেটে আসছেন কেন? কি চান?
-জামা কিনবো আর স্যন্ডেল কিনবো।
তাহলে এই মার্কেটে কেন? আপনে কি কোথা থেকে কি কিনতে হয় জানেন না? বাবাহ্। চলেন আপনাকে নিয়ে যাই।
-কোথায়?
যেখান থেকে যেটা কিনতে হয়।
-এ্যাই কি? এই মার্কেটে নিশ্চই ভালো ভালো জিনিস পাওয়া যায়। তুমি অত্যন্ত বদ্মাইশ প্রকৃতির ছেলে। আমাকে ভজিয়ে-ভাজিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে, ভুল জিনিস কিনে দেয়ার বুদ্ধি করছো।
অনুমান পুরোপুরি ভুল নয়। আপনাকে ভজিয়ে-ভাজিয়ে অন্যকোথাও নিয়ে যাওয়ার একটা ফন্দি যে আঁটছি না, তা না। কিন্তু সেটা তো আপনের কাজ ভায়োলেট করে করা হবে না। কাজকে সাপোর্ট দেয়ার জন্যই করা হবে। আর এতদিন পর আপনের সঙ্গে দেখা হলো, আপনে কেবল একটা স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং দিয়ে চলে যেতে চাচ্ছেন! এইটা কোনো কথা? এইটা কোনো কাম?
-আশ্চর্য! তুই আমাকে ঝাড়ি দিস মানে? বয়সে কে বড়? ঝাড়ি কে দিবে?
সেটা অবশ্য তোমারি দেয়ার কথা। কিন্তু এতক্ষণ তো সেই কথা মনেই ছিলো না মনে হয়।
-হু মনে পড়সে। কিন্তু কথা হচ্ছে, হাতে খুব বেশি সময় নাই। দুপুরের মধ্যে বাসায় ফিরতে হবে। অনেক কাজ ফেলে এসেছি।
ইয়ালী। বাসায় কাজ ফেলে এসেছো? এটাই তো সবচে’ জোস্। ঠিকঠাকমতো শপিংএ আসার মূলশর্তই হচ্ছে একগাদা কাজ ফেলে এসে প্রেশার নিয়ে মার্কেটে ঢোকা। দাঁড়াও আমি নিচে সাইকেল পার্ক করে এসেছি। ওটা নিয়ে আসি।
-তোর অনেক ঝামেলা হয়ে যাবে রে। বাদ দে। চল আমরা একসাথে এ মার্কেটেই ঘুরে শপিং-টপিং করে ফিরে যাই।
মেয়েটি ভাবছিলো আমি বুঝি তখনো এ কথাগুলো শোনার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম ওখানে। ততক্ষণে আন্ডারগ্রাউন্ডে পৌছে গেছি। মালটা নিয়ে বেরিয়ে আসলাম। দেখি সুন্দরী তখনো দাঁড়িয়ে আছে সেখানেই। ওকে নিয়ে চলে আসলাম চাঁদনী চকএ। মেয়েটি অবশ্য খুশি হলো। রেডীমেড জামার চাইতে বানানো জামা মেয়েদের সবসময়ই বেশি পছন্দ। এটা বোঝা শক্ত কিছু নয়। জামা কেনা শেষ হলে আমরা আসলাম মগবাজারের বিশাল সেন্টারে। কাভা কাভা থেকে জুতা কিনতে। এখানে জামার সঙ্গে ম্যাচিং করে পড়ার মতো দারুণ সব জুতা পাওয়া যায়। কেনা-কাটা শেষ হলে বসুন্ধরা সিটিতে ফিরে গেলাম আবার।
-চলে যাওয়া দরকার। দুপুর হয়ে গেছে।
চলে যাবে? ভেরী আনফেয়ার। কেবল একটা রোমান্টিক ডে শুরু হতে নিচ্ছিলো।
-আচ্ছা, তুমি তো আগে এমন ছিলে না।
কেমন?
-এই যে রোমান্টিক দিনের শুরু হওয়া বুঝতে পারো। আগে তো পারতে না।
এই কথাটা শুনে আমার একটু হাসি পেলো। আহা, আমার সেই পিচ্চিকালের ক্রাশ। যাকে কখনো বলি নাই সেটা। কখনো আরো একবার তার সঙ্গে এ জীবনে দেখা হবে, নেভার গেসড্ দ্যট। ইচ্ছা করেই ছাড়ছিলাম না মেয়েটিকে।
কি হবে বলো? তারচে’ থেকে যাও কিছুক্ষণ। নাহলে বাসায় গিয়ে দেখো মন কেমন করবে।
-আচ্ছা চল মুভি দেখি। তুই সিনেপ্লেক্সে গেছিস। আমি এখনো যাই নি। তোর কি মুভি দেখার কথা এখনো মনে আছে? তার আগে বল, তুই কি এখনো মুভি দেখিস। না যা শিখিয়েছিলাম সব খেয়ে বসে আছিস?
কিচ্ছু খেয়ে বসে নেই। তোমার সঙ্গে মুভি নিয়ে তো আমার চারদিনের ম্যারাথন আলাপ আছে। চলো এখন সিনেপ্লেক্সে গিয়ে গেরিলা' দেখি। অনেক নাম শোনা যাচ্ছে আজকাল। দেখা যাক বিষয়টা কি। তার আগে চলো কুকার্সএ যাই। খিচুড়ি খাই।
আমরা দুইটা ঠান্ডা কোক, দুই প্লেট খিচুড়ি খেয়ে আটতলায় উঠে গেলাম। কিন্তু টিকিট পেলাম না। দু’জনেরই ভীষণ মেজাজ গরম হলো। এখন কি করা যায়? চিন্তা করে কিছু পাচ্ছিলাম না। না পেতে পেতেই নিচে নেমে সাইকেল বের করে ফেলেছি। আর অনবরত গল্প করে যাচ্ছি বলে এরপরে কি করবো সেটা আলাদা করে ভাবার সুযোগ পাচ্ছিলাম না।
চমৎকার একটা রোদ উঠেছিলো। আঁচ টের পাওয়া যাচ্ছিলো ঠিকই কিন্তু গাএ ফোসকা পড়ছিলো না। সবচে' বেশি ভালো লাগছিলো মাঝে মাঝে বয়ে যাওয়া জোর বাতাস। ঘুরতে ঘুরতে একসময় আমার বাসায় চলে আসলাম। এই বাসাটায় নতুন এসেছি। দারোয়ানটা খানিক অবাক হলো। সাড়ে পাঁচতলা বেয়ে আমার চিলেকোঠাটায় নিয়ে আসলাম মিষ্টি আপুকে, যেটা অনেক অগোছালো অবস্থায় ছিলো। আমার ক্ষেত্রে সেটা অস্বাভাবিকও নয়।
ঘরের দুইটা স্লাইডিং গ্লাস আছে। আমি দুইটা ভারী কালো পর্দা কিনে নিয়েছি সেগুলোর জন্য। বাইরের আলো এক ফোঁটাও ঢুকতে পারে না। একটা বড় ফোম আর তিনটা বড় বড় কাগজের কার্টন হচ্ছে আমার আসবাব। কার্টনগুলোয় আমার তিন ধরনের কাপড় থাকে। বডি স্প্রে’র বোতলটা রাখার কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নেই। সেটা কখনো বিছানার ওপর পড়ে থাকে, কখনো রেডি-ক্লথস্এর কার্টনের ভেতর লুকিয়ে থাকে আবার হয়তো কখনো সে বেসিনের আয়নার সামনেই থেকে যায়। এছাড়া আমার আর কোনো জিনিস নেই।
তারপরও কেন যেন পুরো ঘরে কোনো জায়গা নেই। গ্রাম থেকে আসা ভাইগুলো আজ রাতে কোথায় থাকবে কে জানে। সারা ঘরে প্রচুর কাগজ-পত্র, খাতা আর বই ছিটিয়ে-টিটিয়ে আছে। আছে অসংখ্য ডিস্ক আর ডিস্কের খাপ। অনেকগুলো বড় বড় কাগজের প্যাকেট বা খামও আছে। আমি জানি ওগুলোর কোনোটিতে হয়তো গালিবের নিয়ে আসা সবিতা ভাবি'র এ-ফোর সাইজের প্রিন্ট আউটও পাওয়া যাবে। গালিব একটা ছেলে ছিলো বটে। হেন বিষয় নেই, যাতে তার আগ্রহ ছিলো না। আমি কয়েক দিস্তা কাগজ টেনে-টুনে একটা প্ল্যাটফর্মমতো বানিয়ে সেটার ওপর মুভি চালানোর ব্যবস্থা করলাম। মুভি দেখার ইচ্ছাটা কাজ করছিলো দু'জনের ভেতরেই।
কি মুভি দেখা যায়?
-কি আছে?
ফাইভ হান্ড্রেড ডে’জ অভ সামার, ধোবি ঘাট, অ্যামাদিউস, আই’স ওয়াইড শাট, গ্রান টরিনো, কিকি’র ডেলিভারী সার্ভিস,
-ওরে থাম থাম। তুই তো নামতা পড়া শুরু করেছিস। সবগুলোই তো দেখতে হবে। আই’স ওয়াইড শাট। আহা কি মুভির কথা মনে করায় দিলি! টম ক্রুজ আসলে বেশি হ্যান্ডসাম একটা লোক। এটা দেখে আমি ও'র প্রেমে পড়েছিলাম জানিস? তখন কেবল ভার্সিটিতে উঠেছি। এত পার্ফেক্ট একটা ফেস্-কাটিং, আমি জীবনে আর কারো দেখি নি। এখনো অনেক ভালো লাগে। ওয়ালকুরে দেখেছিস না? দারুণ লেগেছে কিন্তু। আচ্ছা ফাইভ ডে’জ অভ সামার'টা দেখি নি। নামও শুনি নি আগে। ওটাই চালা। তুই দেখেছিস?
ফাইভ ডে'জ নয়, ফাইভ হান্ড্রেড ডে'জ। দেখেছি। খুব সুন্দর। ধোবি ঘাট দেখেছো? যাচ্ছেতাই রকম ভালো। আমির খান আসলে দিন দিন একজন বস্ হয়ে উঠছে।
-ইয়াপ। একদিন আমির খানের নাম উচ্চারণ হবে বিগ বসদের সঙ্গে। ধোবি ঘাট তো পুরা অসাম মুভি একটা। শেষে আমির খান যে ছবিটা আঁকায়, আমার এমন কি সেটাও ভালো লেগেছে। তুই তো ভালোই মুভি দেখছিস মনে হচ্ছে। আসলে মুভি দেখার জন্য পরিবেশও একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট। ধর নিজের একটা রুম। স্বাধীনভাবে থাকতে পারা। নিজের মতো করে যা খুশি তাই করতে পারা। তাহলে না পাওয়া যায় মুভির আসল মজা। তোর এই স্পেসটা যেমন। দিনশেষে বাড়ি ফিরে যদি তোর এই চিলেকোঠাটার মতো কিছু পেতাম, তাহলে গভীর রাতে ঘর অন্ধকার করে প্রতিদিন মুভি দেখতাম রে।
ঘরে অবশ্য পপকর্ণ ছিলো না। ছিলো লেইস্। আজকাল লাইট স্বাদের ক্লাসিকটা খাচ্ছি। সেটা সহযোগেই শুরু করলাম সামারের সঙ্গে পাচশো’ দিন। প্রেমের যে বিষয়গুলো মুভিতে দেখতে খুব বেশি ভালো লাগে তার একটি হচ্ছে সহজাত ভঙ্গিমা। যেমন ছেলে-মেয়েরা ঘোরাফেরা করছে নিজেদের মতো করে। বাইরের কারো সেখানে কিচ্ছু বলার নেই, দেখারও নেই। যখন খুশি নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে আসছে। হয়তো গল্প করতে করতেই। খেয়াল না করেই। এবং তারপর শুরু হয়ে যাচ্ছে। একসাথে শাওয়ার নিচ্ছে। বাইরে দু’জনে একসঙ্গে ঘুরছে। কুল একটা ভাব। দুইটা মানুষকে মানসিক ও শারীরিকভাবে কাছাকাছি আসতে দেখাটা সবসময়ই আনন্দদায়ক।
মুভিটা দেখতে দেখতে আমরা দুইজনও অনেক কাছাকাছি চলে আসলাম। ঠিক নেই কতগুলো বছর পর ও’র হাত ধরলাম। ধরে একটা শিহরণ টের পেয়েছিলাম কেবল। ইচ্ছে হচ্ছিলো শিহরণের ভেলায় চড়ে বসতে। অরণ্যঘেরা খরস্রোতা নদীর ঢেউয়ে ঢেউয়ে ভেসে যেতে। মানুষ তার প্রতিটি শারীরিক অনুভূতিকেও আলাদা আলাদা করে উপলব্ধি করতে পারে। তাই মুভিটা শেষ হওয়ার পরও অনেকক্ষণ চুপচাপ দু’জন হাত ধরে বসেছিলাম। হয়তো ভালো লাগছিলো বলেই। নীরবতা ভাঙার জন্য ওস্তাদ পাঠালেন একটা একটা এসএমএস। তাকে টাইমমতো একটা যোগাযোগ দিতেই হবে। এটা ইদানীং আমার মজাই লাগছে। চব্বিশ ঘন্টা সঙ্গে একজন শত্রু নিয়ে ঘুরছি।
জিপি ইনফো’র বিরাট অফার এসেছে, এনজয় ইন্টারনেট প্যাকেজ পি-সিক্স (ওয়ান জিবি এ্যট টাকা তিনশ’ পার মান্থ ওনলি)। এরচে' সুখের খবর আর কি হতে পারে? ওরা সেটা বুঝতে না পেরে দিশেহারা হয়ে গেছে। হয়ে আমার কাছে জানতে চেয়েছে। আমি স্রেফ যন্ত্রটা একদিকে সরিয়ে রাখলাম। মিষ্টি আপুর আরো একটু কাছে গিয়ে তার গালের ওপর চলে আসা চুলের গুচ্ছটা সরিয়ে দিয়ে বললাম, তুমি আগের চেয়ে অনেক সুন্দর হয়ে গেছো, জানো?
তারপর উঠে কিচেনের দিকে চলে গেলাম চা বানাতে। চা খেয়ে বের হতে হবে। বিকাল প্রায় শেষ হয়ে গেল। মেয়েটিকে নিয়ে একটু বাইরে বেরোনো দরকার। কই যাওয়া যায়? জানতে চাইলাম।
-আমি কি জানি। আমি বাসায় যাবো।
বাসায়?
-এখনই না। কিন্তু যেতে তো হবেই, তাই না?
গুড। চলো বের হই। দেখা যাক কই যাওয়া যায়।
খিলগাঁও থেকে রামপুরা ব্রীজের ওপর দিয়ে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় যাওয়ার রাস্তাটা খুবই যানজটবহুল। সেটা এড়ানোর জন্য গোড়ান প্রজেক্টের ভেতর দিয়ে এগোলাম। এদিকে অল্প-স্বল্প প্রাকৃতিক দৃশ্য আছে। তবে সেগুলো এখন নির্মানাধীন বিল্ডিংগুলোর আড়ালে চলে গেছে প্রায়। মেরুল ও বাড্ডা পেরিয়ে বসুন্ধরায় গিয়ে ঢুকলাম। এখানে বরং অনেক ভালো। অনেক নিরিবিলি আর শান্ত পরিবেশ। বেশকিছু পত্রিকা অফিস খুলেছেন একজন শিল্পপতি। অফিসভবনগুলো চমৎকার। তারপরের মেঠোপথগুলো আরো চমৎকার। সন্ধ্যা নামার সময় সেখানেই এক খালের পাশে সাইকেলের ওপর বসে বসে পশ্চিম আকাশে সূর্য্য-ডোবা দেখলাম। বড় বড় ঘাসের ডগায় বাতাসের শন শন শব্দ হচ্ছিলো। আর খালের ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছিলো দু’একটা নৌকা। নৌকাগুলোর ওপর বড় বড় কাটা ঘাসের আঁটি। আশপাশে হয়তো গবাদি পশুর বড় ফার্ম আছে। প্যাকেটজাত দুধ উৎপন্ন হয়। শহরের মধ্যে এমন একটা পরিবেশ প্রায় অচিন্ত্যনীয়। বসে থাকতে থাকতে ও বললো,
-আজকে যা-ই করতেসি ভালো লাগছে, খেয়াল করেছিস?
তাইতো। বাসায় শুয়ে শুয়ে মুভি দেখলাম, ভাল্লাগলো। এখানে বসে বসে ঘাসের ডগা চিবুচ্ছি, তাও ভাল্লাগছে। সামনে কিছু একটা করবো, এটা ভাবতেও ভালো লাগছে। সমস্যাটা কি? সবকিছু এমন লাগছে কেন?
-মনে হয় আমরা দুইজনে নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছি বুঝলি। তোর সঙ্গে যখন দেখা হলো তখন কি কিছু খেয়েছিলাম? মনে করে বল।
উম, না। খেলাম তো গিয়ে কুকার্সএ। ওখানে মনে হয় খিচুড়ির মধ্যে গুডফিলার ট্যবলেট গুঁড়ো করে মিশিয়ে দিয়েছিলো।
-হইতে পারে। এইজন্যই এই অবস্থা।
তবে খুবই হালকা নেশা। চলো অন্যকিছু খেয়ে এই নেশাটা কাটিয়ে উঠি।
-কি খেয়ে?
চলো দেখি কি খাওয়া যায়।
গেলাম গুলশান নিকেতনে। এখানে বেশ কিছু খাবারের দোকান আছে। গোপন রেসিপি’র একটা আইটেম বিক্রি হচ্ছে দেখলাম এক জায়গায়। আমেরিকার একটা শহরে সেই চল্লিশের দশকে এক বুড়ো ক্যাপ্টেন সর্বপ্রথম এই রেসিপি আবিস্কার করেন। ১১ রকম হার্বাল মসলা দিয়ে ভাজা মুরগি’র আইটেম। খেয়ে ভালো লাগার পাশাপাশি নেশা কাটার চেয়ে বেড়ে গেলো আরো। গুলশানের বিভিন্ন রাস্তায় অকারণেই দু'জনে টহল দিতে থাকলাম।
একটা রোড পাওয়া গেলো। জাতিসংঘ রোড। প্রায় বিদেশের মতো রাস্তাঘাট। সিনেমায় যেমন দেখায় তেমন। আমরা কত কষ্ট করে শহরের ঘিঞ্জি ঘিঞ্জি এলাকাগুলোতে বাস করি। আর এই দেশেই বাইরে থেকে মানুষ এসে এমন হাত-পা ছড়িয়ে, খোলা বাতাসে থাকার সুযোগ পায়। আমাদের নব্বুই ভাগ বাচ্চা-কাচ্চারা এমন পরিবেশে বড় হওয়ার কথা ভাবতেও পারে না। অথচ ওরাই আমাদের আগামী দিনের আশা-ভরসা সবকিছু। ওদের জন্য আমরা একটু খোলামেলা পরিবেশে বড় হওয়ার ব্যবস্থাও করে দিতে পারছি না। কি ভয়ংকর কথা!
কূটনৈতিক এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে আসলাম। গুলশান দুই নম্বর চত্বরটায় সিগন্যালে আটকালাম। সে সময় মিষ্টি আপু বলছিলো,
-তুমি কি সবসময়ই এদিক-সেদিক ঘুরতে থাকো? তাহলে তো তোমার জীবনটা অনেক আরামেই কাটছে মনে হয়।
মোটেও আমি সবসময় এদিক-সেদিক ঘুরাঘুরি করি না। বলা যায়, এসব রাস্তা-ঘাটই চিনি না। আজকে তুমি সঙ্গে আছো বলেই একটু কেয়ারফ্রী মুডে ঘোরাঘুরি করছি।
-কেন? কেয়ারফ্রী কেন?
কারণ কোনো বিপদাপদ হলে তো তুমি বাঁচাবেই। তাই না?
এবিসি বিল্ডিংটার সামনে দিয়ে কাকলী মোড়ে চলে আসলাম। এখান থেকে স্পীড ওঠানো শুরু করলাম। দূর থেকে মহাখালী ফ্লাইওভারের সারিবদ্ধ নিয়ন লাইটগুলো ভালো লাগছিলো। এর মধ্য দিয়ে দু’জনে প্রায় ৯৪-৯৫ কিলো স্পীডে ছুটে যাচ্ছিলাম। আমার চমৎকার লাগছিলো। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত এভাবেই আসলাম। তারপর আস্তে আস্তে গতি কমে যাওয়া শুরু হলো। শাহবাগ মোড়ে কাশেমের দোকানের সামনে এসে যখন দাঁড়িয়েছি তখন একেবারে শূন্য। যখন চা হাতে নিয়েছি ততক্ষণে রাত নয়টা বাজে।
চা খাওয়ার পর দু’জনেরই খুব হাঁটতে হাঁটতে গল্প করতে ইচ্ছে হলো। কাশেমের ওখানেই সবকিছু রেখে আমরা ছবির হাটের দিকে এগোলাম। ছোটবেলাতেও এভাবে স্কুলের করিডরে আমরা হাঁটতে হাঁটতে গল্প করতাম। রাজ্যের সব গল্প। বাসার সদস্যদের গল্প। স্যারের বাসার গল্প। টিভিতে কি হয় সেটা, কার ক্যাসেট শুনতে ভালো লাগে সেটা, এমনকি রাজনীতি নিয়েও কথা হতো। তিন গোয়েন্দার বিভিন্ন বই নিয়ে আলাপ হতো। আমি জিনাকে পছন্দ করি শুনলেই সে আমার পিঠে দুমদাম কিল মারা শুরু করতো। তখন আমরা দুইজনে একসঙ্গে টিনটিন আর এ্যসটেরিক্সএর কমিক কিনতাম। তার আগে কিনতাম প্রাণের চাচা চৌধুরী, পিঙ্কী, বিল্লু, এর বাইরে হী-ম্যান ইত্যাদি। সে সময়গুলো জীবনে আর কখনো ফিরে আসবে না। আমরা দু’জনেই জানি।
এ শুধুই ফেলে আসা দিনগুলোয় মনে মনে ঘুরে বেড়ানো। ঘুরে ঘুরে কিছু একটা খুঁজে ফেরার চেষ্টা। তবে আজ যে একটা বিশেষ দিন চলছে, যা করছি সবই ভালো লাগছে; সেটা মাথায় ছিলো না। যে কারণে খোঁজাখুজি করতে গিয়ে কখন যে পুরো পার্কটা একবার চক্কর দিয়ে ফেলেছি টেরই পাই নি। ছবির হাটের দোকানগুলোর পর থেকে ছেলে-মেয়েদের দলবাঁধা আড্ডার আসর বসে। অসামান্য প্রাণের উচ্ছ্বাস। দেখেও শান্তি। আমাদের ছেলে-মেয়েরা এখন অনেক সাহসী। টিএসসি’র গেটের কাছটায় বিক্রি হয় নানাবিধ ভাজাপোড়া। সোজা চলে গেলে পার্কের একমাত্র গাঁজার স্পট। অন্ধকার জায়গা। দু’চারটে দুঃসাহসী কাপল এখানকার গাছগুলোর আড়ালে লুকিয়ে থাকে। তাদের আড়াল চাই, এই কর্মবহুল জনজীবনের মাঝখানেই। স্পটের পরে একটা অবকাঠামো তৈরী হয়েছে। বাংলা একাডেমীর উন্মুক্ত মঞ্চ। সেটার পাশে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে বানানো একটা স্তম্ভ। এমন স্তম্ভ আমি বগুড়াতেও একটা দেখেছি। আর কোথায় কোথায় আছে কে জানে। পার্কের সবখানেই অল্পবিস্তর মানুষ আছে। এরমধ্যে আমরা হেঁটে চলছি। একজন আরেকজনকে বলছি ফেলে আসা জীবনের গল্প। রমনা কালীমন্দিরের পাশের রাস্তাটা পুরোপুরি নির্জন। সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় ভাটার মতো জলন্ত চোখওয়ালা বাঁশিখেকোদের দেখে আমার সঙ্গের জন একটু ভয় পেয়ে থাকতে পারে। যদিও জানে না, এই মানুষগুলো ভীতু পোকাদের মতো। মানুষ দেখলে ভয় পায়। ভেতরে ভেতরে একদম সিঁটিয়ে যায়। সে সময় ওদেরকে কিছু বললে ভীষণরকম কেঁপে ওঠে। একটা জবাব দিতে অনেক কষ্ট হয়। তাই ওদের দেখলে কিছু বলতে হয় না। চুপচাপ পার হয়ে গেলেই হলো।
হাঁটতে হাঁটতে স্বাধীনতা স্তম্ভ, লেক আর শিখা অনির্বাণ পেরিয়ে আবারো ছবির হাটে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের দিকে আর গেলাম না। ঠিক হলো সেদিকটায় যাওয়া হবে অন্য কোনো দিন। একটা আইল্যান্ডের ওপর বসে দুইজন চা খেলাম। শাহবাগ আসতে আসতে জানতে চাইলাম, তোমার বাসা কোথায়?
-মিরপুর, সেনপাড়া।
ওকে, লেটস্ মুভ। যাওয়া যাক সেনপাড়া।
বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে শহরটাকে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছিলো। তার খুব বেশি এখন আর অবশিষ্ট নেই। কিন্তু তাও এ শহরটাকে আমার ভালো লাগে। কোনো রকম সাজসজ্জা ছাড়াও একে আমি প্রেমিকার মতো ভালবাসি। সেটা জানাতেই অবশ্য তীব্র প্রতিবাদ ভেসে আসলো পেছন থেকে।
-তোমার নতুন প্রেমিকা জুটেছে? জানতাম না তো।
আস্ত একটা শহর জুটেছে কপালে, প্রেম তো হওয়ারই কথা ছিলো; তাই না?
-বেশি কাব্য করার চেষ্টা করো না। যা জিজ্ঞেস করেছি, সোজাসুজি জবাব দাও।
কেন জানতে চাইছো হে সুন্দরী।
-কেন জানতে চাইবো না হে বালক। আমি কি তোমার কেউ নই?
হুম, জুটেছিলো। কিন্তু যাকে ভালোবেসেছিলাম, সে মরে গেছে।
-বলো কি? কিভাবে?
রোড এক্সিডেন্ট। অনেকদিন হলো। ২০০৫-এর মে মাসে। এই শাহবাগ মোড়েই। আমার এরচে' বড় দুঃখ আর নাই। তাই আর প্রেম করি না।
-হুমম। শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
হওয়াই উচিত। তোমার কি খবর?
-আমার জামাই জাতিসংঘের মিশনে গেছে। তাঞ্জানিয়া। এ বছরই গেছে। আমরা বিয়েও করেছি এ বছরেই। ও যে কবে আসবে জানি না।
কোথায় কাজ করে? পুলিশ না সেনাবাহিনী?
-পুলিশ।
তাহলে দুই বছর পরে চলে আসার কথা। পুলিশের কন্ট্রাক্টগুলো সাধারণত দুই বছরের হয়।
-কিন্তু তোমার জন্য আমার অনেক খারাপ লাগছে জানো। কেমন এমন হয়?
এই প্রশ্নটার জবাব তো তুমি একদিনে খুঁজে পাবে না। আমি দীর্ঘ সময় ধরে চেষ্টা করেও পাই নি। আর একমাস পর ওর চলে যাওয়ার ছয় বছর হবে।
রাত তখন সোয়া দশটা। একটা অনেক ভেজা বৈশাখি হাওয়া বারবার আমাদের দু’জনকে ছুঁয়ে যাচ্ছিলো। বুঝতে পারছিলাম আজ রাতে বৃষ্টি নামবে, অঝোরধারায়।
---
আপনেরা বহুত পেটুক হইছিলেন ঐ দিন...
তবে গুলশানে রিকসায় কইরা ঘুরার মজাটাই আলাদা। লেখা অনেক অনেক ভালো লাগছে। নিজেদের গল্প মনে হইছে। আমার বাবাও একটা কমলা রঙের ডিয়ার বল আইনা দিছিলো। সারাদিন পায়ে পায়ে লেগে থাকা।
ভাস্করদা' আছেন কেমন? ছোটবেলায় খেলার সরঞ্জামই ছিলো সবচে' প্রিয় গিফট্। সেগুলোর কথা মনে পড়লে অনেক নস্টালজিক হই।
দারুন হইসে লেখাটা।
গত সামারের ছুটিতে আমি এরকম টো টো করে ঘুরসিলাম ঢাকায়। ঢাকা আমার আদি প্রেমিক। আর যে ছেলেটার সাথে ঘুরসিলাম, কিছুদিন তার প্রেমে হাবুডুবু খাইলাম। ফোন, স্কাইপ, চিঠি, ইমেল করে ফাটায়ে ফেলসি দিনরাত। তবে শহর এবং প্রেমিক --এই দুইয়ের সাথেই হাজার হাজার মাইল দুরত্বের কারনে প্রেমে ভাঁটা পড়ে গেসে ৬ মাসের মধ্যে। আফসুস!
আফসুস। তবে আদি প্রেমিকের সঙ্গে ভাটা না পড়লেই হইলো
ফাইভ হান্ড্রেড ডে'জ অভ সামার দেখসেন আপনি?
দেখসি। ভালো লাগসে। সাউন্ডট্র্যাকটা ও জোস।
খাইছেরে , এই পোলায় এত্ত কিছু জানে কেমনে? আবার কাভা ও চিনে? আবার কুকারস্!!!
করপে।
গেরিলা আমরা শিগ্গিরই দেখপো। দাওয়াত।
পুলিশের বউ নিয়া ঘুরেন! আবার চিলেকোঠায় বসে মুভি দেখা! সাবধান। মিশন থেকে এসে
একটা শহরে থাকলে সেখানে কই কি পাওয়া যায়, জানতে হপে না? আজব!
আর আমি আপনের সঙ্গে কথা বলি না, নাকি রাত্রেবেলা আপ্নারই কোনো খবর থাকে না; কোনটা?
আজকাল আর রাত জাগা হয় না। অনেকদিন গভীর রাতের সাথে দেখা হয় না। দিনের শুরু হয় সেই ভোরবেলাতেই, তারপর বিরামহীনভাবে চলতে থাকে যন্ত্র। রাত ১২ টা বাজার আগেই চোখ আর খোলা থাকতে চায় না, ক্লান্তিতে আপনি বুঁজে যায়, তাই রাতের পাখিদের কিচিরমিচির মিস হচ্ছে খুব।
অকালে যন্ত্রটার উপর এত প্রেশার দিয়েন না। আছেন কেমন?
সমু ও শামার মীরীয় ভার্সন। এক্কেরে পিলিশের বউ তক !!!
চমৎকার লেখা। ক্রিকেট, ব্যাট এইসব অনেক দিক দিয়ে মিলে যায়। আমি অবশ্য আপনের মত পড়ালেখায় ভালো ছিলামনা। ফেল করতে করতে পাশ করতাম। তাই রেজাল্টের পর কোনো উপহার পাই নাই। মনে আছে কীভাবে জানি টাকা যোগাড় করে গুলিস্তান থেকে একটা ব্যাট কিনে ট্যাম্পয় দিয়ে বাসায় ফিরেছিলাম। সেই রাত ব্যাট পাশে নিয়ে শুয়েছিলাম। উত্তেজনায় সারা রাত ঘুম হয় নাই।
ভাই গল্পের ছেলেটা ভালো ছাত্র হলেও হতে পারে। কিন্তু আমার রোল নাম্বার কখনো ৩০ এর নিচে নামে নাই। সারাজীবন ছিলাম ব্যকবেঞ্চার। এখনো আছি।
যাক্ আমারও প্রায়ই নতুন কিছু একটা পেলে উত্তেজিত সময় কাটতো। আজকাল এমন হয় না। বাঁশি আর আগের মতো বাজে না।
গল্পের ভেতর অনেক গল্প পড়লাম। সময় লাগলো কিন্তু মীরের গল্প যেমন হয় পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত মনোযোগ সরে না, আরেকটি তেমন গল্প পড়া হলো।
শহরের সব অলিগলি তো কথক চেনেই, মজা লাগলো তখন যখন সে মেয়েরা কেমন ড্রেস পরে সেটিও খুব নির্ভুল করে বলে দিলো, বলে দিলো এক মার্কেট থেকে সব শপিং হয়না! মীরের জানার দেখি কোন সীমারেখা নাই!!
মেয়েদের প্রিয় মার্কেট চাঁদনীচকেই গেলো!
পোলাটা একটু মেয়েলি

আসলেই কি পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত মনোযোগ সরে নাই? এইটা নিয়েই আমি সবচে' বেশি টেনশিত। লেখাটা পোস্ট করার আগে মনে হচ্ছিলো, মানুষ পড়তে বসে অল্প কিছুদূর গিয়েই আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। নিজের লেখা কখনোই নিজের কাছে ভালো লাগে না।

রায়হান ভাই, শহরের কই কি পাওয়া যায়; জানা থাকা ভালু
স্তম্ভিত হয়ে মীরের লেখা পড়লাম। কী বলবো এটাকে ? গল্প, আত্মকথন, নাকী সত্যি আর কল্পনার মিশেল কিছু একটা ! স্মৃতির জাবর কাটলাম...। কেন জানি মীরের জায়গায় নিজেকে টের পেলাম। স্বভাব, কথার পিঠে কথা বলার ঢং, ঘোরাঘুরি...। মিষ্টি আপাকে মিস করি আমিও...
থ্যাংকস মীর
খাইছেরে! আপনারও মিষ্টি আপা! পোষ্ট দেন জলদি।
পোস্ট দিলেতো দিতে পারি !

কিন্তু একবার ভাবো, গোটা এপ্রিল মাসে তোমার পোস্ট হচ্ছে
অনেকগুলো। প্রায় ২ টা। চ্যালেঞ্জ দেয়া রায়হান সাহেবের ৫ টা।
আমারও ৫ টা... সো, পোস্ট বাড়িয়ে লাভ কী !!
রায়হান ছাবের কিন্তু ৬ টা। আবার সিরিজ শুরু কর্ছে
হ, মাত্রই দেখলাম...
আমার তো মন বসে না লেখার টেবিলে। আপনি দেন মেসবাহ ভাই।
অনেকদিন ছবির হাটে আড্ডাই না।সবাইরে মিস করি। কাল আড্ডাইবেন? আপনাদের যার স্কোর কম সেই খাওয়াইবেন জানি। রায়হান ছাব যে আগায়া গেলো!
ওয়েলকাম মেসবাহ ভাই। আপনের মন্তব্য পড়ে অত্যন্ত খুশি হইসি। এত প্রশংসা করেন আপনে যে কি আর বলবো


আপনাকে অশেষ
আর আপনের গল্পটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দেন।
কাইলকের আড্ডায় যদি মীররে আনতে পারো, তাইলে খাওয়ামু। তুমি আর লীনা আফায় কৈলে মীর না করতে পারবো না...
আমি মীর পামু কই? আগেই তো কইছেন যার স্কোর কম সে খাওয়াবে। আপনার স্কোর কমে গেলো তো!
সেইটাতো মাস শেষের হিসাব। আমি যদি আইজকা আরেকটা পোস্ট দেই ? তাইলেতো সমান সমান হৈবো
। তখন কে খাওয়াইবো ?
। নইলে কৈলাম খাওয়ামুনা
মীরের লগে তোমার আর লীনার খাতির বেশি। মীররে পয়দা কর
আর কালই মাস শেষ। তারপর তো ছুটির দিন । কাল বিকালেই হিসাবটা হোক।
মীর তো আমার সাথে কথাই বলে না। আমি তারে কই পাই! আচ্ছা খাইতে খাইতে চিন্তা করুম নে।
তার মানে কি আমি এখনো পয়দাই হই নাই?
Congrats

সবাই যেহেতু খুশি সেহেতু আমিও খুশি

দারুন দারুন............
মিশনে পুলিশেরও ১ বছর পর পর রোটেশন হয় । সিভপোল , এফপিইউ , অবসার্ভার --- সবার জন্যই। শুধু ইউ এন জব এ ব্যপারটা অন্যরকম।
এই গল্পের ডিসক্লেইমার কই?
=========================
তয় একটা জিনিস বুঝলাম না। তুমি কি আলাদা থাকো?আর তোমার বাবা-মা কি একই শহরে আরেক জায়গাতে থাকে??
এইটা গল্প বুকটুশ।
আপনেরে খুঁজি।
ওইটা আসলেই একটা সিরিয়াস মিসটেক হয়ে গিয়েছিলো। যাক্ এখন দেখেন।
সহকারে 
রাসেল ভাইকে
একটানে পড়ে ফেললাম
জটিল লিখছেন
ইয়ে....মানে......এরপর কি হইল? 
এরপর কিছু হইলো না।

অ.ট. আপনি এবার একটা পোস্ট দেন। আমরাও আপনাকে ওয়েলকাম জানাই।
লেখাটা পড়ে ব্যাপক আরাম পাইলাম। কারন, লেখার মাঝে আপনারা যে এলাকা দিয়ে ঘুরে বেরাইতেছিলেন সেই সব এলাকা দিয়ে আমার নিয়মিত যাতায়ত। তা ছাড়া গুলশান আর বসুন্ধরা তো আমার বাপের এলাকা। থুক্কু.. মানে বাপের বাড়ির এলাকা আর কি
গুলশানে ১৮ বছর পার করেছি আর গুলশানের পর এখন আব্বা’রা আছেন বসুন্ধরায়।
অনেকের কাছেই বসুন্ধরার এমন বর্ননা শুনি। শুনি, তারা অনেক দূর-দূরান্ত থেকে সেখানে বেড়াতেও আসে। কিন্তু ঐ যে একটা কথা আছে না, “মক্কার মানুষ হজ্জ্ব পায়না” ঠিক তেমনি ২০০৬ সাল থেকে বসুন্ধরায় থাকা সত্বেও আজ অবধি কোনদিন ঐ এলাকাতে এভাবে ঘুরতে যাওয়া হয়নি। তবে হ্যাঁ, বসুন্ধরা আসলেই অনেক নিরিবিলি এলাকা এবং ওখানকার রাস্তা গুলো যে আসলেই সুন্দর তা অস্বীকার করার উপায় নেই
হু, আমার ভাইয়াদের সাথে যখন ক্রিকেট খেলতে যেতাম, আমাকেও তারা শুধু ফিল্ডিং করতে দিতো। কারন হয়তো আপনি যেটা বলেছেন এটাই ছিলো, কিন্তু তখন কি আর বুঝতাম?
আসলেই, ভাবতে অবাক লাগে যে, এখন কত কঠিন পড়াও নিজে নিজে গিলে ফেলতে পারি। অথচ এইচ এস সি পর্যন্তও পড়া নিজে গিলতে পারতাম না। টিচার লাগতো।
সে আর বলতে।
কি আশ্চর্য! মীর কে আসলে ধরা যায়
? ছোয়া যায়
? আমি তো ভাবছিলাম মীর অদৃশ্য কেউ। যাকে ধরা যায় না, ছোয়া যায় না, আড্ডায় ডাকলে পাওয়া যায় না।
তাই? তাইলে সামনে আসেন, আমরা "এবি মেয়েবাহিনী" আপনাকে একটু শাসিয়ে দেই।
উহু, নট অলওয়েজ ট্র্যু
যাক, কমেন্ট বেশি লং হয়ে যাচ্ছে। তাই আর কিছু বললাম না। তবে, আরেকটা জিনিস যেটা আমারও বেশ চোখে পরেছিলো তা হলো বাসার ব্যাপারটা। চিলেকোঠার বর্ণনা পড়ে আমিও ভাবছিলাম, এই বললেন বাপের ঘাড়ে দায়িত্ব চাপিয়ে পালিয়ে এসেছেন, আবার এই মাত্র ঘরের যে বর্ণনা দিলেন তাতে তো মনে হয় একাই থাকেন। যাক, রাসেল সাহেব দেখলাম সেটা আগেই বলে ফেলেছেন।
আবার মিরপুর আসলে ঋহানের বাড়ি আইসেন। ঋহান আপনেরে দেখতে চায় (যদিও আমি ওকে এতদিনে বুঝিয়ে দিয়েছি যে মীর চাচ্চু আসলে অদৃশ্য!)
শোনেন আপনে যেমন বলসেন তেমন না। আসলে আমার ক্ষুদ্র জীবনে বলা যায় এই ব্লগটার মতো চমৎকার একটা জায়গা (ভার্চুয়াল জগতের বাইরেও) কোথাও দেখি নি। তাই এর পেছনের মানুষগুলোর সামনে আসার মতো সাহস আমার এখনো হয় নি। কবে হবে জানি না। তবে একদিন সাহস সঞ্চয় করে ঠিক চলে আসবো। কারণ আমারও আপনাদের সবার সঙ্গে দেখা করতে, আড্ডা দিতে, আনন্দময় সময় কাটাতে ইচ্ছে করে। (আপনাকে অনেকগুলো গোপন কথা বলে দিলাম নাজ আপু
)
হুমম! যেমনটা করে আপনার ভালো লাগে, অবশ্যই তেমনটা-ই করবেন। তবে, আমাদের সামনে আসার জন্য এত সাহস সঞ্চয় করার কি দরকার? আমরা কি বাঘ না ভাল্লুক?
মীর মীর মীর...
যত আপনার লেখা পড়তেছি, ততই আগ্রহ বাড়তেছে একদিন আপনার লগে বইসা চা খাওনের...
আমিও চা খাইবাম চাই।
আপনে অতোদূর থেকে কেমনে খাবেন?
ফিরলে খাইবাম চাই।
এক্কেবারে এ্যমিবা সাইজের এক্টা মিস্টেক আছে। কুকার্স এ্যন্ড কুপার্স।
এক জায়গায় ভুল করে কুপার্স লিখে ফেলসিলাম বস্।
আছেন কেমন?
উহু, বসুন্ধরার পাশে হলো কুকার্স-সেভেন। পৃথিবীর সেরা খিচুরি এখানে পাওয়া যায়।
মীররে পর্যটন কর্পোরেশন একটা চাকরি দিতে পারে। দেশের বিভিন্ন এলাকা, রাস্তা-ঘাটে ঘোরাঘুরি নিয়ে এরকম গল্প লিখে বই বের করলে পর্যটকে সয়লাব হবে বাংলাদেশে। সিরিয়াস
এইটা ল্যাব এইডের খিচুড়ি থেকে ভালো?
আরে না লেবেইডের খিচুড়ি হইল রদ্দামার্কা। আমারা ইয়াযিদ ভাইরে পাম দেওয়ার জন্য বলতাম ভালা।
মিছা কথা কইয়েন না। আগে তো ভালো্ই ছিলো। মেসবাহ ভাই ল্যাব এইড ছাড়ার পর খিচুড়ী যাচ্ছেতাই হয়ে গেছে।
ক্য় কি??ঐ খিচুড়ী খারাপ??
আমারে ভুলায় ভালায় সেই খিচুড়ী খাওয়াইয়া যা এখনো মেসবাহ ভাই হজম করতে দিলো না কথায় কথায় ঝাড়ি দেয়।

মন্তব্য ৪৩,৪৪,৪৫ এবং ৪৬... চুপচাপ পড়ে গেলাম
আমি আর মেসবাহ ভাই একদিন খিচুড়ি খাবো। ল্যাবএইডে, বা ভাই যেখানে খাওয়াতে চায়।
পর্যটন কর্পোরেশনে পর্যটক নেয় না মাসুম ভাই?
মেসবাহ ভাই আমারে কোনদিন ল্যাবএইডের খিচুরি খাওয়ায় নাই

আর যাদের কে খাওয়াইছেন তাদের আসল চেহারা দেখলেন তো মেসবাহ ভাই? আমাদেরকে বাদ দিয়া খাওয়ার ফল
এ শুধুই ফেলে আসা দিনগুলোয় মনে মনে ঘুরে বেড়ানো।
মীরের লেখা নেশা জাগানিয়া হয়!... অনেক ভাল্লাগছে!...
লেখাটা অফিসে বসে পড়ছিলাম। (কিছু ভুল/অসঙ্গতি ছিল, চোখে পড়ার মত। তুই তুমি আপনি আর মেয়েটা/ মিষ্টি আপু বলার মধ্যে...)
আপনি আসলেই দারুণ লিখেন। আপনার একটা গল্প এখনো আমার কানে বাজে, চোখে ভাসে, সম্ভবত আরও এমন লেখা অনেক পাব।
আপনার লেখায় মন্তব্য দেবার কিছু থাকে না, সেইটা জানান দিয়া গেলাম।
বিশ্বাসযোগ্যভাবে চাপা ছাড়াও একটা আর্ট। আর এই আর্টটা পুলাডা ভালো রপ্ত করছে
নাজের মতো একটা বিশাল কমেন্ট দেয়ার ইচ্ছে ছিলো ........................হবে অন্যসময় আবার
মন্তব্য করুন