ইউজার লগইন

কবিতা: সহস্র সারস পাখি আকাশের আঙিনায়

জ্যৈষ্ঠ মাস চলছে। এবারে গ্রীষ্মের শুরুতে প্রকৃতি অনেক প্রসন্ন ছিলো। প্রতিদিন ঝড় না হলেও, এক-আধবার বাতাস ছাড়তো ঠিকই। এখন সেটা একটু কমে এসেছে। দু'তিন দিন গরমে অসহ্যও লেগেছে। কিন্তু অসহ্য হতে পেরে খারাপ লাগে নি।

ঝড় শুরু হলেই আমি রাস্তায় নেমে যাই। প্রকৃতিদেবীর এই উপহারটির সঙ্গে আসলে কোনোকিছুর তুলনা চলে না। এখন আবার মনে আরেকটা ইচ্ছা তৈরী হয়েছে। একটা ভীষণ ঝড়ের মধ্যে রমনা পার্কে গিয়ে বসে থাকবো। সোহরাওয়ার্দী পার্কের প্রতি বর্গইঞ্চি চিনি। ঝড়ের সময় কি হয়, কে কই আশ্রয় নেয়, কোন দিকে তাকিয়ে বাতাসের কীর্তিকলাপ দেখে মুগ্ধ হয়; সব জানি। অথচ ঠিক উল্টোদিকেই রমনা। তার কিচ্ছু চিনি না!

আমার এই শহর, এই মানুষমেলা আর রাস্তাঘাটের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রত্যেকটা ঝড়কে দীর্ঘসময় পর্যন্ত আলিঙ্গনে ধরে রাখতে ইচ্ছা করে। তারপর যদি সে আমাকে ছেড়ে এগোতে চায়, তখন গভীর বেদনায় আচ্ছন্ন হতে ইচ্ছা করে। আক্ষরিকভাবে হয়তো পারি না। কিন্তু কাল্পনিকভাবে তো কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা। আমি বাহুলগ্না তুমুল বৃষ্টিকে নিয়েই এগোতে থাকি। একটা ঠান্ডা সজীব বাতাস আমার মুখে এসে ধাক্কা দেয়। ফুটফুটে জলকণাগুলোর ঝাপটা টের পাই। সেই সময়টায় একটু চোখ বন্ধ করলেই আমি একটা টাইম মেশিন দেখতে পাই। সেটায় চেপে প্রিয় স্মৃতিগুলোয় হারিয়ে যাওয়া আমার খুবই প্রিয় একটা খেলা।

---
একটা কবিতা লিখতে চাই,
রাত্রির শেষ প্রহরে
যখন
একটা বিষমাখা তীর এসে অনেক গভীরে ঢুকে যায়;
কিংবা যখন এক অচ্ছ্যুৎ বালাই
উঠে আসে আদম আপেলের কাছে।
তুমি জানো কেন আজো
আমি সাপ আর বিবমিষা ভয় পাই?
আমি সত্যিই একটা কবিতা লিখতে চাই।

সেদিন ভেজা বিকেলের ঝড়ো বাতাসে
ঝাউচূড়াগুলো নেমে এসেছিলো অনেক নিচে।
ওরা আমাকে একটু একটু ছোঁয়ার চেষ্টা করেছিলো।
কার্জন হলের করিডরে বসা ছেলেমেয়েরা ওদেরকে
অনেক উন্নাসিক দেখে অভ্যস্ত।
তুমি আর আমি কিন্তু ভয় পেতাম না।
তাই সে সময় মনে মনে চাচ্ছিলাম
তুমি পাশে এসে দাঁড়াও একবার।

সেদিনের প্রতিধ্বনিমুখর ঝড়ের আওয়াজ শুনে
কোনো এক পরিচিত ব্যাগ পিঠে কাটানো দুপুর
মনে পড়ে গিয়েছিলো।
নিঃসঙ্গ ঘুঘুর ডাকে জেগে থাকা
কলাভবনের গোপন সিঁড়িঘরে
ভয়হীন তুমি-আমি,
সেখানে তোমার-আমার রাজত্ব
কম দিন চলে নি।

তুষারকণাদের তীক্ষ্ণ ঝাপটায়
সেদিন বহুদিনে গড়ে ওঠা একটা ধূলাস্তর
সরে গিয়েছিলো, আর তখুনি
একটা চাকু বসিয়ে দিয়েছিলো কেউ
ফুসফুস ও কলিজায়।

মনে পড়ে গিয়েছিলো
তুমি রিকশায় ডানে বসার জন্য লড়তে।
আর কদম ফোয়ারায় মুখ মেলে ধরতে।
সেই মুখ আমি স্বপ্ন দেখার জন্য তুলে রাখতাম।

সেদিন তোমার জন্য
অকারণেই প্রহরখানিক থমকেছিলাম।
তুমি তখন সিএনজি'তে
এলিয়ে ছিলে ক্লান্তিতে,
মাথা ছিলো অন্য কারো কাঁধে।
আর আমি মনে মনে
ছুরিকাঘাত টের পাচ্ছিলাম।

চোরাবালিতে ডুবে যাবার আগে সত্যিই
একটা কবিতা লিখে যাবো।
আর তোমার জন্য রেখে যাবো
অজস্র অভিনন্দন বার্তা।
---

পোস্টটি ১১ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

ভাস্কর's picture


পড়লাম...

মীর's picture


এতো তাড়াতাড়ি?

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


তুমিটা কে? আমি হইলে বিষ দিতাম তারে!

মীর's picture


তুমিটা কে আমি কেমনে কইবাম? কবি'রে জিগাইতে হপে।

জেবীন's picture


নাম কি কবিতার কবি'র?

লীনা দিলরুবা's picture


আমি সাপ আর বিবমিষা ভয় পাই?
আমি সত্যিই একটা কবিতা লিখতে চাই।

মীরের লেখা সেরা কবিতাটি পড়লাম।

মীর's picture


লীনা আপু কি কয়!!!Smile
কবিতা লিখতে তো পারিই না; আর কবিতা পড়ার কাজটা তার কাছ থেকেই শিখছি।

লীনা দিলরুবা's picture


এই কবিতাটা নিজে একবার পড়েন, তাহলে বুঝবেন কেমন লিখতে পারেন Big smile

জেবীন's picture


মনে পড়ে গিয়েছিলো
তুমি রিকশায় ডানে বসার জন্য লড়তে।
আর কদম ফোয়ারায় মুখ মেলে ধরতে।
সেই মুখ আমি স্বপ্ন দেখার জন্য তুলে রাখতাম।

আহা, কতো কি মনে পড়লো! Cool

আমার কান্ডকারখানায় আজ এক বন্ধু বলছিলো আমি অস্থির হয়ে আছি, কেন জানি এই কবিতায় আমার সেই অস্থিরতা খুজেঁ পেলাম।

ভালো লাগলো কবিতা।

১০

জ্যোতি's picture


মীর কি দারুণ কবিতা লিখে! প্রিয়তে রাখলাম।
কিন্তু খালি অন্র কেউ কেন আসে? তারে গুল্লি মারেন।
আমি অফিস ফাঁকি দেই নাই। প্রক্সি দিয়া ঢুকছি এবং অন্য জায়গায় কমেন্ট লিখে এখানে পেষ্ট করছি। বুঝেন তাইলে কতটা ভালোবাসা!

১১

তানবীরা's picture


বুঝেন তাইলে কতটা ভালোবাসা!

খুক খুক, খালি কাশি আসে

১২

হাসান রায়হান's picture


খক খক খক

১৩

জ্যোতি's picture


এই যে ম্যাডাম, এখানে বলতে ব্লগে বুঝাইছি। যেমন আপনার পোষ্টেও করেছি আজকে সবার আগে।
আর ভালোবাসা বলতে যা বুঝায় তা আপনার কমেন্টের ঠিক নীচেই। কাশি দিতেই একজন হাজির।

১৪

তানবীরা's picture


মানুষ মানুষকে ভালবাসবে এতে চেতার কি আছে? আমি কি চেতি? Big smile

১৫

হাসান রায়হান's picture


চেতে নাই লইজ্যা পাইছে মনে লয় Cool

১৬

লীনা দিলরুবা's picture


মানুষ মানুষকে ভালবাসবে এতে চেতার কি আছে? আমি কি চেতি?

ঠিকইতো চেতার কি আছে? পবিত্র জিনিস Big smile

১৭

জ্যোতি's picture


লীনাপায় কয় কি? সত্যি তো। আপনি তো বুঝেন না। Tongue

১৮

জ্যোতি's picture


আরে ভালোবাসার সুযোগ কই পাইলাম কন? ব্লগেই ঢুকতে পারি না। তবে মন তো ভরা...সেটা বুঝতে হপে।

১৯

নাহীদ Hossain's picture


অসম্ভব রকম অদ্ভুত রকম হইছে ........ Smile

একটা ভীষণ ঝড়ের মধ্যে রমনা পার্কে গিয়ে বসে থাকবো

তুষারকণাদের তীক্ষ্ণ ঝাপটায়
সেদিন বহুদিনে গড়ে ওঠা একটা ধূলাস্তর
সরে গিয়েছিলো, আর তখুনি
একটা চাকু বসিয়ে দিয়েছিলো কেউ
ফুসফুস ও কলিজায়।

সেই মুখ আমি স্বপ্ন দেখার জন্য তুলে রাখতাম।

মাথা ছিলো অন্য কারো কাঁধে।
আর আমি মনে মনে
ছুরিকাঘাত টের পাচ্ছিলাম।

২০

তানবীরা's picture


চোরাবালিতে ডুবে যাবার আগে সত্যিই
একটা কবিতা লিখে যাবো।
আর তোমার জন্য রেখে যাবো
অজস্র অভিনন্দন বার্তা।

ব্যাপার না, যাবে আসবে। জীবন চলমান

২১

একজন মায়াবতী's picture


সেইটাই।

পুরাতন গেলে নতুন পাইবে। Big smile

২২

জেবীন's picture


কিন্তু পুরানটা যাবারকালে মনে একটা বর্শী বিধাঁয়ে দিয়া যায়, ঠিক যেন নতুন ফোড়াঁনো কানে পরা দুল যতই সতর্ক থাকো না কেন, যতই যন্ত্রনাটাকে জানো, অকারনেই ঠিক ওতেই ছোয়াঁ লেগে আমুল কেপেঁ উঠে ব্যাথায়!

২৩

একজন মায়াবতী's picture


বর্শী বাদ দিয়ে জাল দিয়ে ট্রাই করেন। Wink

২৪

নাজ's picture


সেই সময়টায় একটু চোখ বন্ধ করলেই আমি একটা টাইম মেশিন দেখতে পাই। সেটায় চেপে প্রিয় স্মৃতিগুলোয় হারিয়ে যাওয়া আমার খুবই প্রিয় একটা খেলা।

Sad

২৫

শওকত মাসুম's picture


আহারে ছেলেটা......আহারে মীর Sad

২৬

মনির হোসাইন's picture


এইবার কিন্তু আপ্নের লেখাটা এক্কেবারে পুরাটা পইড়া ফালাইছি ! ভালু হইছে . . . মীর, ভাস্কর , মাসুমভাই এবং আফারা আপ্নেরা আমারে হেল্পান আমি ক্যান ইমো , লেখা blockquote কইরতে ফারিনা !

২৭

নিশ্চুপ প্রকৃতি's picture


তুমিটা কে ভাইয়া...। Wink Wink
এবার কিন্তু কইতেই হইব... না কইলে মানতাম না... Tongue
ভাইয়া দেখি কেমুন জানি রোমান্টিক রোমান্টিক লেখা দেন।। Wink Wink
এবার কইয়া ফেলেন তো ভাইয়া সত্যি সতিই...তুমি টা কে...? Wink Cool

২৮

আহমাদ মোস্তফা কামাল's picture


একটা কথা জিজ্ঞেস করি। রাহাত খানের 'ভালো-মন্দের টাকা' গল্পটা পড়েছেন? না পড়ে থাকলে একবার চেখ বুলিয়ে দেখতে পারেন - 'আমি একটি কবিতা লিখতে চাই'- লাইনটি কী তীব্র হাহাকার তৈরি করে! আপনার লেখাটি পড়ে সেই হাহাকারের দেখা পেলাম।

২৯

রুমিয়া's picture


কবিতা মাশাল্লা সেইরকম হইসে।আসলেই সুন্দর কবিতা Smile লাইকিট।

৩০

মেসবাহ য়াযাদ's picture


আমি কবিতা পছন্দ করিনা।
বাট আমি মীররে লাইক করি।
মীর সোন্দর কবিতা (সবাই কয়) লেখে
সুতরাং আমি মীররে লাইক করি মানে কি
আমি কবিতা লাইক করি ?
বুঝতাছিনা, পেঁচগি খাইয়া যাইতেছে...

৩১

সন্ধ্যা প্রদীপ's picture


ভালো লাগছে সেই রকম। Laughing out loud

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

মীর's picture

নিজের সম্পর্কে

স্বাগতম। আমার নাম মীর রাকীব-উন-নবী। জীবিকার তাগিদে পরবাসী। মাঝে মাঝে টুকটাক গল্প-কবিতা-আত্মজীবনী ইত্যাদি লিখি। সেসব প্রধানত এই ব্লগেই প্রকাশ করে থাকি। এই ব্লগে আমার সব লেখার কপিরাইট আমার নিজেরই। অনুগ্রহ করে সূ্ত্র উল্লেখ না করে লেখাগুলো কেউ ব্যবহার করবেন না। যেকোন যোগাযোগের জন্য ই-মেইল করুন: bd.mir13@gmail.com.
ধন্যবাদ। হ্যাপি রিডিং!