গল্প: একটা সাধারণ ছেলের গল্প
১.
মধ্যরাত আজকাল এত দ্রুত পার হয়ে যায় যে, পুরো রাতটাকেই কিঞ্চিৎ একটা সময়ের গণ্ডির মতো লাগে আমার কাছে। মানুষ বাস করে একটা দ্বিধার ভেতর। ভালো-খারাপের দ্বন্দ। এর কোনোটাই গ্রহণের ক্ষমতা তার নেই। খারাপ ও ভালো কোনোটাই ধারণ করতে পারে না সে। তাই যখন মানুষের ভালো সময় যায়, তখন সে শঙ্কিত থাকে। আবার যখন খারাপ সময় চলে, তখন তার মনের একটা অংশ সান্তনাস্বরূপ এই ভেবে খুশি হয় যে, মেঘ দেখে কেউ করিস নে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে। মানুষ শুধু সবসময় চায় একটা ভিন্ন কোনোকিছু। কিন্তু সেই ভিন্ন কোনোকিছুটা কি, সেটা সে জানে না।
রাত সাড়ে তিনটার দিকে আমি ব্লগের পাতাটা একবার রিফ্রেশ দিয়ে দেখলাম, নতুন অনেকগুলো মন্তব্য এসেছে। আজ একটু তাড়াতাড়িই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। মন্তব্যগুলো পোস্টে পোস্টে গিয়ে খুটিয়ে দেখতে ইচ্ছে করলো না। যদিও কাজটা আমার করা দরকার। প্রত্যেকটা পোস্টের প্রত্যেকটা মন্তব্য খুটিয়ে না পড়া পর্যন্ত আমার দিনের ব্লগিং অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আমি ইয়াহু মেইলে একবার ইনবক্স রিফ্রেশ করলাম। জিমেইলের গোলমতো রিফ্রেশ বাটনটায় চাপ দিয়ে সেটাকে কিছুক্ষণ ঘুরতে বাধ্য করলাম। অচেনা ই-মেইলগুলো আমাকে শুধু দ্বিধান্বিত করে তোলে আরো খানিকটা। আমি বুঝি না, কেন এত এত মেইল প্রতিদিন এই ল্যপটপটার ইনবক্সে এসে জমা হয়।
অন্ধকার খচমচে ঘরটায় আমার আর বিশেষ কোনো কাজ নেই। ঘরের কোনার দিকে বুকশেল্ফ আর দরজার মাঝখানের চিপা জায়গাটায় একটা ফাইভ স্টার চকলেটের প্যাকেট আটকা পড়েছে। ফ্যানের বাতাসের সঙ্গে সেটা ক্রমাগত ঘুরছে ওই একটু জায়গার ভেতরে। খচমচ শব্দটা আসছে ওখান থেকে। এই মনস্তাত্তিক শব্দটা আমাকে কোনো স্পর্শই করছে না। অথচ আমি জানি, এ ধরনের একটা শব্দ সারারাতের জন্য হিমশীতল ভয়ের ভেতর ডুবিয়ে দিতে পারে মানুষকে। আমি একবার অনেক আগে, যখন আমাদের বাসায় একটা আলনা ছিলো, সেই আলনায় ঝুলন্ত শার্ট আবছা আবছা নড়তে দেখেছিলাম, রাতের ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে উঠে। আমার মনে হয়েছিলো কোনো আধিভৌতিক একটা কিছু ঢুকে পড়েছে আমার ঘরে এবং সেটা হাত দুলিয়ে দুলিয়ে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। আমার নড়ার মতো শক্তি ছিলো না। মুখ দিয়ে চিৎকার দেয়ার জো ছিলো না। জমে গিয়েছিলাম নিজের জায়গায়। অথচ আজ হয়তো কার্যকারণ জানা থাকার কারণেই, ভয় পাচ্ছি না কিংবা মনের অসারতা ভয়কে কাছে-পিঠে ঘেষতে দিচ্ছে না। মানুষের মস্তিষ্ক যে কত বিচিত্র হতে পারে, তার একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছি আমি। প্রয়োজনীয় কোনো তথ্যই আমার মনে থাকে না, দরকারের সময় কিংবা আর কখনোই মনে পড়ে না; অথচ এহেন অপ্রয়োজনীয় একটা তথ্য মস্তিষ্ক যত্ন করে তুলে রেখেছে মনিকোঠায়। যখন-তখন মনে করিয়ে দিচ্ছে আমাকে।
ধীরে ধীরে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। চকলেটের প্যাকেটটাকে ওখান থেকে সরিয়ে রেখে ঘর থেকে বের হলাম। রাতের শেষ টয়লেটটা সেরে আবার ঘরে এসে ঢুকলাম। এ্যরোসলের বোতলটা ফ্যানের দিকে তাক করে অনেকক্ষণ ওটার টুঁটি টিপে ধরে রাখলাম। একগাদা বিষ আমার ঘরের ভেতর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়লো। আমি সে বিষের মধ্যেই কাঁথাটা বিষম ভাবে শরীরের প্রতিটি অঙ্গের সঙ্গে পেচিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। পুরোনো অনেক ক্ষমতাই লোপ পেয়েছে। যেগুলো পায় নি, তার মধ্যে একটি হচ্ছে ইচ্ছেঘুমের ক্ষমতা। চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলাম। সঙ্গে সঙ্গে ইচ্ছা পূরণ হলো।
ঘুমের ভেতর খাপছাড়া বিভিন্ন স্বপ্ন দেখলাম। মির্জা আব্বাসের বাড়িটাকে আমার মনে হলো কোনো ভুতুড়ে বাড়ি। সেখানে একটা পুকুর আছে। পুকুরের মধ্যে শ্যওলা ধরা পানি। শাপলা পাতাগুলোও ময়লাটে। ঘাটখানি এত পিচ্ছিল যে, সেখানে জীবিত কোনো মানুষ যাবে না। মরা বিকেলের আলোয় সেই পুকুরের পানিতে আমি নিজেকে দেখতে পেলাম। ব্যঙয়ের মতো উবু হয়ে বসে আছি একটা শাপলা পাতার উপর। কিন্তু আমি মানুষই আছি। একটা ব্যঙকে মনে হলো আমাদের নেতা। তার সঙ্গে আমার খুব বন্ধুত্ব হলো। অলৌকিক ক্ষমতাধর ব্যঙটা জানালো, সে আমাকে মানুষের স্মৃতির ভেতরে ঘুরতে পাঠাতে পারে। আমি বললাম, আমার প্রিয় নায়কের স্মৃতিতে পাঠাও। সে আমাকে লিওনার্দো বানিয়ে জর্দানে পাঠিয়ে দিলো। সেখানে সত্যি সত্যি জর্দান ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান হানি সালামের সঙ্গে আমি বৈঠক করতে যাচ্ছিলাম। মনে মনে বেশ মজা পেলাম। কারণ আমি জানি, হানিকে দেখে প্রথমেই বলতে হবে- হানি পাশা। রগচটা ও অবিশ্বাসী হানি সালাম এই সম্বোধনটা শুনে মুগ্ধ হবে। কারণ এটা একটা অটোমান টার্ম। হানির খুব পছন্দ। সে কেবলমাত্র আরব ছাড়া বিশ্বাস করে আর তাদেরকেই, যাদেরকে সে পছন্দ করে। আমি জানি ওই একটা টার্ম ব্যবহার করে আমি তার পছন্দের পাত্রে পরিণত হবো। একটা সিনেমার ভেতর একটা নায়কের চরিত্রে এত জ্যন্তভাবে এর আগে আমি কখনো ঢুকে যাই নি। ঘুমের ভেতরেই অব্যক্ত আনন্দ অনুভূত হচ্ছিলো। আমি ধীরে ধীরে ভাগ্যহত যুবকটির কথা ভুলে যাচ্ছিলাম, যে ঘুমুনোর আগে সারা ঘরে কীটনাশক ছিটিয়ে তার ভেতরে নিজেই ঢুকে শুয়ে পড়েছিলো। জীবন যাকে একাধিকবার মানসিকভাবে নিয়ার ডেথ এক্সপেরিয়েন্স- এনডিই দিয়েছে।
কিন্তু স্বপ্নের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আমাকে খুব বেশিদূর নিয়ে যেতে পারে না। হানি সালামের সঙ্গে দেখা হয় না আমার। তাকে বলা হয় না, হানি পাশা। তার আগেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। সকাল আটটার ব্যস্ত জীবনে আমি জেগে উঠি। দূরে কোনো রেডিওতে বাজছে সুর করে কোরআন তেলাওয়াতের শব্দ। আমার বাসার রান্নাঘরে রুটি বেলা হচ্ছে। তা ঠক-তা ঠক লয়ে। বাবা প্রাতঃকৃত্য সারছেন। তার থু থু ফেলার পরিচিত শব্দ পাচ্ছি। আমি জানি, এখন আবার ঘুমিয়ে পড়বে আমার শরীর। ক্লান্তি আর অবসাদের কাছে ঘটবে দিনের দ্বিতীয় পরাজয়। এবার আর কোনো স্বপ্ন দেখবো না আমি। তবে যখন জাগবো তখন থেকে শুরু হবে একটা দুঃস্বপ্ন দেখা। আমাকে মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে দৈনন্দিন পোড়ামাটির জীবনের।
২.
দেড়টার দিকে এই পৃথিবীতে একটা আনন্দদায়ক ঘটনা ঘটে আমার জন্য। আজ অনেকদিন ধরে এই আনন্দটুকুই শুধু আমার ভাগে বরাদ্দ করেছেন ওস্তাদ। আমার মা এসে আমাকে ঘুমে থেকে ডেকে তোলেন। আমি তার অনিন্দ্য সুন্দর মুখখানি দেখে ঘুম থেকে জাগি। উঠে নিয়মিত কাজগুলো সারি। ভাত খাই। কাপড় পরি। বাইরে বেরিয়ে যাই।
যদিও বাইরে আমার যাবার কোনো জায়গা নেই। এককালে বড় চাকুরী করতাম। সেখান থেকে ছাটাই করে দিয়েছে। রঙিন প্রেয়সী ছিলো। চাকুরীর ব্যস্ততায় তার সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ মিলতো না। এখন যখন চাকুরীর ব্যস্ততা নেই তখন, প্রেয়সীকেও ধারে-কাছে দেখি না। তার হয়তো অনিশ্চিত জীবনের হাতছানি ভালো লাগে নি। কিংবা সমাজ হয়তো তাকে সেই অনিশ্চয়তা বরণ করে নিতে দেয় নি নিজের জন্য। আমি জানি না, কোনটা সঠিক।
শুধু জানি, আমার মাথার ওপর ঝুলছে সামাজিক মৃত্যূর পরোয়ানা। অনেক কষ্টে তিল তিল করে গড়ে তোলা লুম্পেন স্বপ্নগুলো ভেঙ্গেছে এক অসাবধান ঝটকায়। আমার মধ্যবিত্ত বাবা তা দেখে বুড়িয়ে গেছেন। ছেলেকে নিয়ে তার হয়তো অনেক আশা ছিলো। আজ যখন দেখেন, সেসব আশার কিছুই অবশিষ্ট নেই আর তখন তিনি ঊর্ধ্বপানে চেয়ে হতাশভাবে একবার অনিশ্চিত কাউকে দোষারোপ ছাড়া আর কিছুই করতে পারেন না। আমি সবই জানি। আর তাই আমার গলার স্বরটা সবসময় ভিজে থাকে। তারপরেও দাঁতে দাঁত কষে আমি নগরীর পথে পথে হাঁটি। কোনো দুঃখকেই দেবো না আমায় পরাজিত করতে। যত বঞ্চনা আসে তত প্রতিজ্ঞায় শক্ত হই। হয়তো প্রতিজ্ঞার নামে একটা বর্ম গড়েছি। যার আড়ালে লুকিয়ে আমি নিজেকে বাঁচাই। মানুষের প্রথম প্রবৃত্তিইতো বাঁচার তাড়না। তা যেকোন ভাবেই হোক।
আমি হাঁটতে হাঁটতে বইমেলায় চলে যাই। বাংলা একাডেমীর উল্টোদিকের ফুটপাথে বসে দেখি মানুষের আনন্দযজ্ঞ। তাদের দলবেঁধে ঘোরাফেরা করা। হাসি-ঠাট্টা-তামাশায় সময় কাটানো। বই কেনার মহাসমরে অংশ নেয়া। আমার নিজেকে এসবের একটা অংশ মনে হয়। আমার হঠাৎ করে মনে পড়ে যায়, এককালে এই বইমেলাটাকে অপছন্দ করতাম। তখন কারণে-অকারণে আমাকে এই মেলার অংশ হয়ে পড়তে হতো। এখন যখন অপছন্দ করি না, তখন চাইলেও নিজে এর অংশ হতে পারি না। দূর থেকে মানুষের আনন্দ দেখে আনন্দিত হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালাতে হয়। তাতে করে আনন্দিত হই না একবিন্দুও, বরং খানিকটা আক্ষেপ আমার পুড়ে যাওয়া অন্তরকে কয়েকটা বাড়তি কষাঘাত করে যায়। আমার আবারো সেই প্রেয়সীর কথা মনে পড়ে। যার হাত ধরে কোনো এক বিগত ফেব্রুয়ারিতে সারাদিন বইমেলায় হেঁটেছিলাম। প্রতিটা স্টলে ঘুরে বেড়িয়েছিলাম। লেখক-প্রকাশকদের সঙ্গে আলাপ করেছিলাম। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ফুচকা-চা-সিগারেট খেয়েছিলাম। যার সঙ্গে অনেকগুলো ফেব্রুয়ারি আমি ঘুরপথে ঢাকা মেডিক্যাল-চানখাঁর পুল হয়ে বাড়ি ফিরেছিলাম। শুধু তার মুখখানি মনে করতে পারি না অনেক চেষ্টা করেও।
আমি খানিকটা আপ্লুত মনে ফুটপাথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে এক সময় ভিড়ের সঙ্গে মিশে যাই।
৩.
কথায় বলে, দু'জন মানুষের মানসিক অবস্থা যদি একই রকম হয় তাহলে তারা কাছাকাছি আসলেই স্পার্ক করে। আমি দূর থেকে মেয়েটিকে দেখে বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলাম। এই ব্যথাটা ক'দিন থেকেই হচ্ছিলো। হুট করে আসে, আবার হুট করে চলে যায়। এর আগে কারো চোখে চোখ পড়ে ব্যথাটা করে নি। এমনিই করেছে। এর আগে চলন্ত অবস্থাতেও এমন অনুভূত হয় নি। আজ হয়েছে।
টিএসসি'র বটতলায় একলা বসে থাকা মেয়েটিকে দেখে কেন এমন মনে হলো, সেটা নিয়ে আমি কিছুক্ষণ ভাবলাম। হতে পারে, এটাও আমার এক ধরনের বাঁচার তাড়না। হতাশায় নিমজ্জিত হতে হতে, কাউকে দেখে হয়তো একটা অবচেতন আশা মনে জেগে উঠেছে। আমি জানি, মানুষ দুঃখের দিনে কেবল আরেকজন দুঃখী মানুষকে দেখেই খুশি হয়। আবার এমনও হতে পারে, যাকে দেখে আমি দুঃখিত মেয়ে বলে ভাবছি, সে মনে মনে বসে তার অনাগত সুখের দিনের স্বপ্ন বুনছে। কিংবা হতে পারে, এসবের কিছুই না, একটা মেয়ে স্রেফ অকারণেই হয়তো একা একা ঘুরতে বেড়িয়েছে। তার জীবনে আর সাতটা মেয়ের মতোই সুখ-দুঃখের ঘনঘটা লেগে আছে। ছেলেরা যেচে পড়ে কথা বলতে গেলে সে হয়তো ভাবে, এই রে ফ্লার্টিং শুরু হয়ে গেলো।
এসবের যেকোনটাই হতে পারে। কিন্তু গভীর চিন্তার মাধ্যমে সেটা বিচার করে দেখার মতো ক্ষমতা তখন আমার ছিলো না। আমি মেয়েটির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমাকে হয়তো উদ্বাস্তুদের মতো দেখাচ্ছিলো। কোনো এক বিচিত্র কারণে সে আমাকে দেখে হেসে ফেললো। ঝকঝকে হাসি। আমার নিজের পুরোনো কথাটাই আবার মনে হলো, মানুষ দুঃখের দিনে কেবল আরেকজন দুঃখী মানুষকে দেখেই খুশি হয়। আমিও তাকে দেখে হাসলাম।
হাসির মধ্যে আমরা দু'জনেই অনেক না-বলা কথা বিনিময় করলাম। মেয়েটি আমাকে হাসতে দেখে নিচের দিকে তাকিয়েছে। আমি তার বসার ভঙ্গি খেয়াল করে দেখলাম। দুই পা আড়াআড়ি করে ঝুলিয়ে রেখে নিচের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। দুই হাতে ধরে আছে বেঞ্চির কিনারা। ঘাড়ের ওপর ঝুঁকে শরীরের ভরটা একটু সামনের দিকে ছেড়ে দিয়ে। আমি তার বসার ভঙ্গিতে বুঝতে পারলাম, সে একজন দুঃখী মেয়ে। সে যখন নিচে থেকে চোখ তুললো, তখন দেখলাম নিচের ঠোঁট আলতো করে কামড়ে ধরে আছে মেয়েটি। চোখের দুই কোণে চিকচিকে অশ্রুবিন্দু।
স্মৃতিভ্রংশ আমার আবছা আবছা মনে পড়ছিলো, এই মেয়েটিকে হয়তো আমি চিনি। হয়তো আমি চিনি। হয়তো আমি চিনি।
মেয়েটি উঠে দাঁড়িয়ে বললো, বসো আকাশ। আমি জানি তুমি আমায় চিনতে পারছো না। তুমি মাথায় সেই আঘাতটি পাওয়ার পর থেকে নিজের বাবা-মা ছাড়া আর কাউকে চিনতে পারো না। আমায় তুমি প্রেয়সী বলে ডাকতে, মনে আছে? চিনতে পারছো কি আমাকে? বসবে একটু?
৪.
আমার হঠাৎ সব এলোমেলো হয়ে যায় এবং সবকিছু ফেলে ছুটতে শুরু করি নিজের যেকোন পরিচিত ডেরার দিকে। ভীষণ এক অনিশ্চয়তা আমাকে গ্রাস করে। এতক্ষণ যা কিছু মনে পড়ছিলো সব গুলিয়ে যেতে শুরু করে আর আমি একটা ইল্যূশন দেখতে থাকি চোখের সামনে। আশপাশের রাস্তা, বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট, যানবাহন সবকিছু ঘুরতে ঘুরতে একটা অপসৃয়মান বিন্দুর দিকে এগোতে থাকে। মিলিয়ে যাওয়া জন্য। আর আমি রুদ্ধশ্বাসে ছুটতে থাকি। সবকিছু শূন্যে মিলিয়ে যাওয়ার আগে আমাকে পৌঁছুতে হবে নিজের পরিচিত ডেরায়।
---
(লেখাটা লীনা আপুর জন্য। অনুপ্রেরণা লীনা আপুর। তার একটি সাধারণ মেয়ের গল্প পড়ার পর এই লেখাটা তীব্র গতিতে কী-বোর্ড দিয়ে বের হয়ে আসলো। তাই অনেকানেকগুলো ধন্যবাদ উনার প্রাপ্য )
বাহ, ছেলেটিকে এবং মেয়েটিকে মোটামুটি জানলাম...
শুধু জানলাম না, মেয়েটির কী হয়েছিল বা মেয়েটির জীবনে কী ঘটেছিল...
চালাইয়া যান, ভাই সাহেব
মেয়েটি হয়তো নিষ্ঠুর সমাজের শিকার ভাইসাহেব। আপনের কি মনে হয়?
ভাগ্যিস এলেবেলে একটি গল্প লিখেছিলাম, তাই একটি অসাধারণ গল্পের জন্ম হলো
এই কথাটিই মূলত মানুষের বেঁচে থাকার প্রেরণা। এটি মোটাদাগে বলতাম এতোদিন, আজ বাণী হিসেবে পেলাম।
আসেন। আসেন আাসেন আসেন
এখন বুঝছেন, তখন কেন বলতেসিলাম 'অতি উত্তম'?
মীর

একটা লেখা পড়ে কি দারুন গুছিয়ে নিজেরটা লিখে ফেললেন! তবে গতানুগতিক থেকে শেষের এসে অন্যরকম করে দিলেন গল্পটা!
কথা সত্য
শেষে অন্য রকম করে দেয়ার বিষয়টা কেমন লেগেছে বলেন তো?
কি দারুণ করে লিখলেন! কিছু কিছু কথা মিলে যায়, এগুলো এতদিন মনে হত একান্তই বুঝি নিজের অনুভূতি।
আপনের কাছ থেকে প্রশংসা পেতে আমার সবচাইতে ভালো লাগে জয়িতা'পু। কেমন আছেন? কোন কথাগুলো মিলে গেছে?
আররে! দিলখুশ হয়ে গেলো আপনার কথায়। আপনি আপনার লেখার মতই সুইট!
অনেক কথাই মিলেছে। সব কথা বলতে আছে নাকি!
অসাধারণ
আপনি মাসুম ভাই।
ভাল্লাগছে মীর্ভায়া।
ধন্যবাদ সার্জেই গ্রিফিনভ।
অপু্র্ব লাগলো গল্পটা!
ওরেব্বাবা, প্রশংসাটা বেশি হয়ে গেল না?
--- আহ্ দারুন বললেন ভাই।
ভাইজান কিরাম আছেন? আপনের লেখা কিন্তু পাই না অনেকদিন।
কেমনে লিখেন এরকম? আপনার লেখাযাদুর রহস্যটা জানতে ইচ্ছে করে।
এই যেমন এই লেখাটার অনুপ্রেরণা দিয়েছে লীনা আপু। এই আর কি
চমৎকার!
এক্টা গান মনে পর্লো...
তুলা রাশি ছেলে
কন্যা রাশি মেয়ে...
এক অংশ থেকে অন্য অংশে যাওয়ার ভেতর অদৃশ্য লিঙ্কিং টা খুব ভাল লাগছে।
অসাধারণ একটা গল্প। আমার সবচাইতে ভাল্লাগছে শুরুর কথাগুলি, শেষ টা কেন জানি বাকি অংশের সাথে একটু বেমানান লাগছে। বুঝতে পারছি না। তবুও অভারল গল্পটা খুব ভাল্লাগছে কেন জানি!
মন্তব্য করুন