যা কিছু হয় কিংবা হয় না
ঘুরেফিরেই এমির কথা আসছে মনে হয়, তাই না? যখনই আমি বাসায় থাকি, তখনই কোনো এক ব্যাকগ্রাউন্ডে ওর গান চলতে থাকে। এ ধরনের ঘটনা ঘটতো, যখন ছোট ছিলাম। একই গানের লুপে আটকে থাকতাম দিনের পর দিন। এমি'র বেশিরভাগ গানের কথা এমন যে, প্রথমবার শুনলে মনে হয়, এটা কি শুনলাম? তারপর ব্যপারটা ভাল করে বোঝার জন্য শুনতে হয় আবার।
সেদিন ঘরে বসে বসে গবেষণাকাজ করছিলাম। ব্যাকগ্রাউন্ডে যথারীতি এমি চলছিল। এক সময় শুনি অদ্ভুত এক প্রেমিকা গানে গানে বলছে, যদি তার প্রেমিক কোনো অপবিত্র যুদ্ধে যেতো, তাহলে সে তার সাথে থাকতো। সেই প্রেমিক যার জন্য মৃত্যুকে বরণ করে নিতো, সেও তার জন্য মৃত্যুকে বরণ করে নিতো।
কোথা থেকে আসে এসব আইডিয়া মানুষের মাথায়? আমি ভাল বোধ করি যখন নিজের আশপাশে এই মাত্রার ক্রিয়েটিভিটি দেখতে পাই। যখন জানতে পারি, এখনও পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে যারা ভাবে, ছোট ছোট প্রত্যেকটা কাজ, যেগুলো করা হয়েছে কেউ একজনের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করতে; সেগুলোর প্রত্যেকটার আলাদা আলাদা প্রাণ আছে। সেদিন এক শর্ট এনিমে'তে দেখেছি গল্পটা।
যদিও একটা ছোট্ট প্রশ্ন ঢুকেছে তারপর মাথায়। আজকালকার যুগে 'প্রেম' বিষয়টাই কি একটা বিলুপ্তপ্রায় ধারণা নয়? আমার তো তাই মনে হয়। আর স্টুপিড এনিমে'টায় দেখানো হলো একেবারে প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে যাওয়ার মতো একটা প্রাগৈতিহাসিক টপিক। হাস্যকর।
তবে সত্যি যদি অমন হতো, ব্যপারটা নেহায়েত খারাপ হতো না। কোনো এক চমৎকার কর্মব্যস্ত দিনের শুরুতে, একবার দেখেই কারও প্রেমে পড়ে যাওয়া, তারপর তার চোখে পড়ার জন্য সারাদিন ব্যর্থ চেষ্টা চালানো, ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফেরা, ব্যর্থ চেষ্টারা এক সময় নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে দু'জনকে মিলিয়ে দেয়া- মস্তিষ্কে এইসব চমৎকার ভাবনার জন্ম দিতে হলে কতোখানি প্যাশনেট আর পরিশ্রমী, আর পরিচ্ছন্ন হতে হয়?
আজ দুপুরে ঘাসের বুকে ফুটে থাকা হলুদ, শাদা, আর লাল রঙয়ের ফুল দেখেছি। ফুলের কিউটনেস লেভেল এতো হাই যে, আমি কখনোই ব্যপারটা পুরোপুরি উপভোগ করতে পারি না। সবসময়ই মনে হয়, আমি ওই সৌন্দর্য্যের সিংহভাগই দেখতে পাচ্ছি না। এটা অবশ্য প্রায় সব সুন্দরের সামনে গিয়ে আমি ফিল করি। প্লাস আমি মনে করি, পৃথিবীর সবকিছুরই একটা নিজস্ব সৌন্দর্য্য আছে। যার অর্থ হলো, সকালে ঘুম থেকে জেগে ওঠা মাত্র আমার অন্ধ অন্ধ লাগতে থাকে। যাই দেখি, মনে হয় পুরোটা দেখছি না। অনেকখানি রয়ে যাচ্ছে দেখার বাইরে। এজন্য সবকিছুকে গভীরভাবে দেখতে চাই এবং সবসময় গড় হিসেবের চেয়ে বেশি সময় নিয়ে ফেলি।
ঘুমুলে আবার দৃষ্টিশক্তি প্রখর হয়ে ওঠে। স্বপ্নে ঘটমান কোনো দৃশ্যই কখনও আমার চোখ এড়ায় না। এড়ায় না কোনো ডিটেইল, কোনো রঙ, কোনো সৌন্দর্য্য। যতো অল্প সময়ই হোক না কেন স্বপ্নের অস্তিত্ব, যতো গভীরই হোক না কেন তার বিস্তৃতি; আমার কখনো স্বপ্নের মধ্যে, কোনো কিছু দেখতে বা বুঝতে গিয়ে, সেই উইয়ার্ড ফিলটা হয় না, যেটা বাস্তবে কোনো কিছু দেখতে বা বুঝতে গিয়ে অন্যদের চেয়ে একটু বেশি সময় নিয়ে ফেললেই হওয়া শুরু হয়।
সমস্যা হলো, স্বপ্নগুলোকে ব্যাখ্যা করার যে ক্ষমতা প্রয়োজন ছিল, সেটাও আবার আমার নেই। তাই আমি সত্যিকার অর্থে যা কিছু দেখি, তার কিছুই কাউকে; বলে কিংবা লিখে, কোনোভাবেই বুঝাতে পারি না। কথাবার্তা বা লেখালেখির মাধ্যমে আমি যা বোঝানোর চেষ্টা করি, সেটা আসলে খুব ভাসাভাসাভাবে দেখা আমাদের চিরচেনা বাস্তবজগতের একেকটা দৃশ্যপট।
যদিও সবার কাছে যেটা চিরচেনা, সেটাকে কেন আমি আরেকবার তাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা চালাই- তা আমার জানা নেই; তবে তার চেয়েও বড় যেটা দুঃখের, সেটা হচ্ছে- সেই চেষ্টাটাও বেশিরভাগ সময় পুরোপুরি সফল হয় না। একটা ভুল কসমিক বাবলে আটকে পড়া ইউনিভার্স হয়ে অনিশ্চিত অসীমের পানে সফল ভাবে ভেসে বেড়ানোই আমার দ্বারা হয় কেবল, আর কিছু না।
---
ডিজনির একটা শর্ট আছে 'পেপারম্যান', দেইখো তো।
একদম পারফেক্ট হইসে তোমার অনুমান। ওইটার কথাই বলসি
আমার খুব খুব প্রিয় একটা শর্ট।
হাহাহ, আমারও (:
এই লেখার প্রথমদিকে যে গানটার কথা বলা হয়েছে, সেটা কোন গান বলো তো।
কি জানি, ওর গান খুব একটা শোনা হয়নাই আসলে।
সাম আনহোলি ওয়ার
ঠিকই বলেছেন মনের কথাগুলোকে পুরোপুরিভাবে প্রকাশ করা যায় না কোনভাবেই।
মন্তব্য করুন