ইউজার লগইন

দিনলিপিতে দু'হাজার বাইশ - ৮

"রক্ত রাঙা গোলাপ রাঙা
রাঙা পায়ের আলতা
আলতার চেয়ে রাঙা কি
জানলে বল না তা"

বাংলা লোকগীতি শুনছিলাম। সেখান থেকে জানতে পারলাম, আলতার চেয়ে রাঙা হয় সোনা বন্ধুর ঠোঁটখানা। আমাদের লোকগীতিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জীবনের কথাগুলো অনেকাংশেই অভিজ্ঞতালব্ধ বচন। তবে জীবন যেহেতু আমাদের সবারটাই সবার থেকে ভিন্ন, তাই সব সোনাবন্ধুর ঠোঁট লাল হয় না। শিল্পী অবশ্য বুঝিয়েছেন মনের ভেতর কল্পনা করে নেয়া রংয়ের কথা। সে হিসেবেও সবসময় যে সঠিক মিল পাওয়া যায়, সে আশা বাতুলতা। মনে মনে যদি কেউ ঠোঁটের প্রিয় রং কমলা কল্পনা করে নেয়, তখন কি উপায়?

২০২২ চলে যাচ্ছে স্মৃতির গভীরে। আর দুটো দিন বোধহয় রয়েছে। তারপর এসে যাবে ২০২৩। ২০২২ সালটা শুরু হয়েছিল অসংখ্য আশাবাদের চষাক্ষেত বুকে নিয়ে। বছর শুরুর দিকেই যার প্রায় পুরোটাই উলট-পালট হয়ে গিয়েছিল। বছর শেষের বেলায় দেখা যাচ্ছে সে উলট-পালট জীবনের প্রয়োজনেই হয়েছিল। পরিবর্তন যে ভীষণ প্রয়োজন, সেটা জীবন নানাভাবেই বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিল। কোনভাবেই বোঝার চেষ্টা করতে রাজি না হওয়া আমাকে বশ করতে না পেরে, শেষে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দেয়া হলো যেন। বাস্তব জীবনে সাঁতার না জানলেও, শুরুর ওই গানের মতোই ঘটলো ব্যাপারটা আমার সঙ্গে। কল্পনায় সাঁতার কেটে পাড়ি দিয়ে ফেললাম উত্তাল সময়টা। যে কারণে বছর শেষে মনে হচ্ছে, যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে।

এই প্রক্রিয়াটার ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় নিজেকে খুব ক্ষুদ্র লেগেছে সময় সময়। কিন্তু হাল ছেড়ে দেয়ার কথা কখনো মন থেকে ভাবতে পারি নি। আমার জন্য ভয় পাওয়াটা যতো সহজ, হাল ছেড়ে দেয়াটা যদি ততোটা সহজ হতো, তাহলে হয়তো আমার কিছুই করা হতো না। ভীতি নিয়েই সারাজীবন অন্ধকারে পা বাড়িয়ে গেলাম। যতদিন পায়ের নিচে মাটি পড়বে, ততদিন সামনের দিকে এগোবো। তারপর একদিন পায়ের নিচে মাটি পড়বে না। শুন্যতায় পা বাড়িয়ে টুপ করে হারিয়ে যাবো মহারহস্যের কৃষ্ণগহ্বরে।

আজকাল বেশি মন খারাপ থাকে পরিচিত জনদের জন্য। মানুষের কষ্ট পাওয়া দেখলে নিজেও কষ্ট পাই। তাই সন্তপর্ণে নিজেকে একটু দুরে সরিয়ে রাখি। কিন্তু কাছের মানুষদের থেকে কতটুকুই বা আর দুরে থাকা যায়। নাটক, সিরিয়াল, সিনেমাগুলো সবকিছু ভুলভাল দেখিয়ে দেখিয়ে এমন অচল করে দিয়েছে মস্তিষ্কটাকে যে, এখন ওইসব ভুলকেই সঠিক মনে হয়। আমাদের সাধারণ জীবন সবসময় ওঠা-নামায় ভরপুর। এখানে একটা দিনও যদি সুন্দর কাটে, তো তাকে যত্ন করে মনের আলমিরায় উঠিয়ে রাখা দরকার। কিন্তু আমরা কি নিজেদের বর্তমান জীবনটাকে কখনো দেখতে পাই? আমরা শুধু মস্তিষ্কে সংরক্ষিত হয়ে থাকা ওই ভুলভাল দৃশ্যগুলোর সঙ্গে নিজেদের বর্তমানকে মিলাই আর হতাশ হই। সেই হতাশা বুকে নিয়ে এ জীবনের কুয়াশাভরা অনিশ্চিত পথটাকে, চেয়ে হোক আর না চেয়ে হোক পাড়ি দিয়ে দিই।

শুধু একটাবার যদি মস্তিষ্ক থেকে বের হয়ে নিজের চলার পথটা ঠিকঠাকমতো ঠাহর করে দেখে নেয়া যেতো! তাহলে অন্তত জীবনের অদৃশ্য পথটা আরেকটু পরিকল্পিতভাবে পাড়ি দেয়া যেতো। সমস্যা হয়তো সব শেষ হয়ে যেতো না, কিন্তু যেসব ছোটখাটো সমস্যাতেই মানবজীবনের ন্যায় অসীম একটা সম্ভাবনাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যতিব্যাস্ত থাকতে হলো, তা হতো না নিশ্চিত। আরও অনেক ভাল কিছু করতে পারতাম সবাই আমরা।

কিন্তু এই ভাবনাটাও সেই একই দোষে দুষ্ট, যে দোষে আমরা জীবনের প্রতিটা দিন, আমাদের প্রতিটা জেগে থাকা মুহূর্ত নিজের অজান্তেই হারিয়ে ফেলছি। আমাদের বর্তমান জীবনটাকে দেখতে না পাওয়ার দোষ।

কোন বিজ্ঞানি কি বলতে পারেন, এইরকম সাপের নিজের লেজ গিয়ে খাওয়ার মতো চিন্তাগুলোর নাম কি?

---

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

মীর's picture

নিজের সম্পর্কে

স্বাগতম। আমার নাম মীর রাকীব-উন-নবী। জীবিকার তাগিদে পরবাসী। মাঝে মাঝে টুকটাক গল্প-কবিতা-আত্মজীবনী ইত্যাদি লিখি। সেসব প্রধানত এই ব্লগেই প্রকাশ করে থাকি। এই ব্লগে আমার সব লেখার কপিরাইট আমার নিজেরই। অনুগ্রহ করে সূ্ত্র উল্লেখ না করে লেখাগুলো কেউ ব্যবহার করবেন না। যেকোন যোগাযোগের জন্য ই-মেইল করুন: bd.mir13@gmail.com.
ধন্যবাদ। হ্যাপি রিডিং!