ইউজার লগইন

তুমি দয়াময়ী হইও রে বন্ধু, ছাড়িয়া না যাইও

আসমানে যাইও না বন্ধু
ছুঁ'তে পারবো না
পাতালে যাইও না বন্ধু
ধরতে পারবো না

বন্ধু যখন একবার চলেই যায়, তখন সে কোথায় গেল সেটার কি আর কোন গুরুত্ব থাকে? হয়তো ভাল আছে কিনা ইত্যাদি জানার একটা তাগিদ থেকে খানিকটা গুরুত্ব থাকে। সেটাও মানুষ ও অবস্থাভেদে। কিছু কিছু সময় বন্ধু এমনভাবে চলে যায় বা যেতে বাধ্য হয় যখন আর সেই তাগিদ মেটানোরও কোন উপায় থাকে না।

জীবনটা যে শরীরের ভেতর বন্দি, সে শরীরের ভেতর বিশাল একটা ব্যাথার দলা জমে থাকে শুধু। ব্যাথাটা যে ঠিক কোথায় থাকে কেউ বলতে পারে না। বুকে, না মাথায়, না শরীরের অন্য কোনখানে- তা বোঝা যায় না। বিজ্ঞানীরা বলেন, সবই মস্তিষ্কের খেল! তাই হবে। বিজ্ঞানীরা তো না জেনে শুনে, কিংবা গবেষণা না করে কিছু বলেন না।

আচ্ছা, সেই জানার ফলে কি ব্যাথা কমানো যায় কখনো? মানুষ তো জানেই কোন ব্যাথার কি কারণ আর কি ওষুধ। তাতে লাভ কি হয়? আমরা সবাই কি জানি না- মনের ব্যাথার কি ওষুধ, কোথায় পাওয়া যায় এবং কি করে সেবন করতে হয়? জানি তো বটেই। দু'একজন না জানলেও, তার চারপাশে শুভাকাঙ্ক্ষীধরনের অসংখ্য মানুষের অভাব হওয়ার কোন কারণই নেই, যে তাকে সঠিক পথ দেখাতে সক্ষম। তাতেও কি মনের ব্যাথার হাত থেকে রেহাই পেয়েছেন কেউ?

এটা এমন এক ব্যাথা যার বিরুদ্ধে কোন ওষুধ কাজ করে না। সময়ই একমাত্র সেই ব্যাথার ওপর প্রলেপ দিয়ে যেতে পারে। যে প্রলেপে হয়তো ভুক্তভোগীর বেদনা ধীরলয়ে লাঘব হয় কিন্তু ভরাট হয় না সহজে। মনের ভেতর সেই শূন্যতা থেকে যায় বহুদিন।

এইসব কথায় পুরোনো বন্ধুত্ব (যা ঠিকমতো কাজ করছিল না কোনভাবেই, বিষের অনলে পুড়িয়ে যাচ্ছিলো জীবন) ভুলে যারা নতুন বন্ধুত্ব সৃষ্টি করার কথা ভাবছেন কিংবা নতুন বন্ধুত্ব সৃষ্টি করতে না চাইলেও পুরোনো বন্ধুত্ব পরিত্যাগের কথা ভাবছেন, তাদেরকে নিরুৎসাহিত করতে চাইছি- এমন নয় মোটেও!

তবে ভালবাসা এমন যে আপনি যদি কাউকে একবার সত্যিই ভালবেসে থাকেন, তার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন, জীবন যতো কষ্টই তার মাধ্যমে আপনাকে দিক না কেন, আপনি সহসাই তাকে নিয়ে সবকিছু ভাবাভাবি কিংবা কষ্ট পাওয়া বন্ধ করে দিতে পারবেন না। সময় লাগবে। দীর্ঘদিন সময় লাগবে। অনেক রকমের সহযোগিতা লাগবে। তারপর হয়তো কোন একদিন শরীরের ভেতর ব্যাথাটা খুব বেশি আর থাকবে না। কিন্তু শূন্যতাটা পুরোপুরি আর কোনদিনই পূর্ণ হবে না। চূড়ান্ত অত্যাচারীর দেয়া শত আঘাতের পরও তার জন্যই আপনার এই অনুভূতি হবে যদি সত্যিকারের ভালবেসে থাকেন।

ইদানীং পাগল হাসানের গান শুনছি একটানা। একটাই গান। "আসমানে যাইও না বন্ধু"। গানের কথাগুলো মর্মস্পর্শী। একটানা শুনতে থাকলে শরীরের যে ব্যাথার কথা লিখলাম একটু আগে, তা খানিকটা ভোঁতা হয়ে আসে। মনে হয় পাগল হাসান একই গান বারবার গেয়ে খানিকটা 'কনভিন্স' করে ফেলে যে, আমার মতো কষ্টে আরও অনেকে আছে।

আজকাল গরমের ভেতরেও মাঝে মাঝে আকাশ কালো করে মেঘ জমে। জার্মানির আকাশে মেঘ সবচেয়ে সুলভ বস্তুগুলোর একটি। তবে ঝুম বৃষ্টি সুলভ না। সেটা কখনও ঘটেও না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয়। বরফঠান্ডা বৃষ্টির ফোঁটা সুঁচের মতো চামড়ায় ফোটে। কাপড়, জুতা, ক্ষেত্রবিশেষে রেইনকোটও ভেদ করে শরীরের ভেতর ঢুকে পড়ে।

মানুষের অনেক রকম ব্যাথাই আছে, যাতে পানি দিলে, বিশেষ করে ঠান্ডা পানি; ব্যাথার উপশম হয়। তবে সব ব্যাথা যে ঠান্ডা পানিতে উপশম হয় না, তাও ঠিক। এই যেমন শরীরের যে ব্যাথার কথা এই লেখায় বলা হচ্ছে।

বৃষ্টির ঠান্ডা পানি গিয়ে শরীরে সেই ব্যাথার স্থানটা খুঁজে পায় কি না জানিনা, কারণ খুঁজে পেলেও কখনো ব্যাথার লোকেশন ওরা শেয়ার করে না। তবে খেয়াল করে দেখেছি, ব্যাথার উপশমের বদলে সেটা যেন বেড়ে যায় খানিকটা। তারপর চোখ দিয়ে জল গড়াতে শুরু করে।

বৃষ্টির ভেতর চোখের জল খুব বেশি বড় কোন সমস্যা না। বরং বৃষ্টি না থাকলে এই ৪০-এর ঘরের বুড়োর চোখে জল দেখে অনেকেই হয়তো ভ্রু কুচকে তাকাতো। কিন্তু যারা সেভাবে তাকায় কিংবা তাকায় না, তারা কিংবা অন্যরা, কেউ কি জানে, বয়স যতো বাড়ে আমরা ততো সংবেদনশীল হয়ে উঠি?

অবশ্য এর মানে এই না যে, যতো বয়স বাড়ে, ততো আমাদের সবার বেশি কান্না পায়। তবে কারো করো পায়। জীবনের এই পর্যায়ে এসে উপলব্ধি করলাম আমিও সেই কারো কারোদের দলে। আমার অনেক বেশি কান্না পায়। ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে চৌরাস্তায়।

তাইতো আজকাল পাগল হাসানের গানের আবেগের আড়ালে লুকিয়ে আছি। কাঁদতে ইচ্ছে করলে গানটা গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকি। অন্তরের ভেতর ক্ষরণ হয়। রক্তের না অন্তর্জলের, তা অন্তরই জানে আমার।

বাইরের আমি, যে আমি পথে-ঘাটে চড়ে বেড়াই, মানুষের সঙ্গে মিশি, পাই, হারাই; সে বড় অসহায়ের মতো সবকিছুর পরও জানালা দিয়ে শুধু পথপানে চেয়ে থাকে। হয়তো বন্ধুত্বের সৌন্দর্যের খাতিরেই মানুষ ভুলত্রুটি ক্ষমা করে। ভুলের আকার ছোট-বড় যাই হোক, ক্ষমা করে। শততমবার করা একই ভুলও ক্ষমা করে। হয়তো!

জীবনে যা কিছু জানতাম, প্রায় সবই তো ভুল প্রমাণিত হয়েছে। যে যায় আর ফিরে আসে না- কথাটাও একদিন ভুল প্রমাণ হোক। এই আশাটা, চোখের ঝরণাটা, অন্তরের ক্ষরণটা- এগুলোর বাইরে একটা মুহূর্তও কাটছে না আজকাল আর।

তুমি দয়াময়ী হইও রে বন্ধু
ছাড়িয়া না যাইও
অন্তরে অন্তর মিশাইয়া
পিরীতের গান গাইও।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

মীর's picture

নিজের সম্পর্কে

স্বাগতম। আমার নাম মীর রাকীব-উন-নবী। জীবিকার তাগিদে পরবাসী। মাঝে মাঝে টুকটাক গল্প-কবিতা-আত্মজীবনী ইত্যাদি লিখি। সেসব প্রধানত এই ব্লগেই প্রকাশ করে থাকি। এই ব্লগে আমার সব লেখার কপিরাইট আমার নিজেরই। অনুগ্রহ করে সূ্ত্র উল্লেখ না করে লেখাগুলো কেউ ব্যবহার করবেন না। যেকোন যোগাযোগের জন্য ই-মেইল করুন: bd.mir13@gmail.com.
ধন্যবাদ। হ্যাপি রিডিং!