ছোটগল্প : ঠোঁটবাঁকা লুৎফরের জীবনচরিত
এক
লুৎফরের ভোর যেখানটাতে রাত্রিতে গড়ায় সেখানটায় ফুল কিশোরী জোবেদা ফুল বিক্রি করে মায়ের পথ্য যোগায়, সেখানটায় গঞ্জিকাসেবী দু'জন তরুণকে দু'টো গাঁজাভর্তি সিগারেট মুখে পুড়ে লাল চোখে ফুটপাথে বসে থাকতে দেখা যায়, সেখানটায় সুগন্ধি তরুণীদের চলার ছন্দে তাদের বুকের যুগল নৃত্য সুবেশী সাহেবদের জৈবিক চোখগুলোকে লোভাতুর করে তোলে, সেখানটায় রিক্সাচালক রইসুদ্দিনও ওঁতপেতে থাকে, সাহেবদের পরিপাটি বেশ-ভূষার সঙ্গে তার ফারাক বিস্তর হলেও, সেই একই লোভাতুর জৈবিক চোখ রইসুদ্দিনেরও; সেখানটায় তরুণীরা ওড়না জড়িয়ে বুক ঢাকার প্রবণতাকে পশ্চাদপদ ফ্যাশন বলে চিহ্নিত করে আঁটসাঁট জামায় দিব্যি আধুনিক হয়ে ওঠবার পাশাপাশি তরুণদের তালিযুক্ত জিন্সের ফ্যাশন পশ্চাৎ বেয়ে নেমে পড়তে চায়লে, সেটাকে টেনে তুলে তরুণরা হাল ফ্যাশনের পতন ঠেকায় ; সেখানটায় স্থুল রমণীরা থপথপ কষ্টে সিঁড়ি ভেঙ্গে শপিং মলে প্রবেশ করলে তাদের গা থেকে ডিওডোরান্ট এর গোলাপ গন্ধ কিম্বা টকটক ঘামের গন্ধ পেছনে পড়ে থাকলে, এদোকান-সেদোকান ঘুরে শেষে নয় হাজার নয়শত নিরান্নবই টাকায় মোটামুটি পছন্দসই একখানা শাড়ি কিনে তারা নিজেদের প্রাইভেট গাড়িতে ফিরে এলে, গাড়ি চালক যতো দ্রুত সম্ভব যথাযথ সম্মানে হাতের জ্বলন্ত ক্যান্সারের মায়া ত্যাগ করেন, বিনয়ে গদগদ হয়ে গাড়ির দরোজা খুলে ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন, গাড়িতে ওঠবার ঠিক আগে আগে যখন সেইসব ভদ্রমহিলাগণের পুষ্ট সাদা পায়ের প্রায় আধখানা প্রদর্শিত হয়, তখন রোজ রোজ একই দৃশ্য দেখবার ক্লান্তিতে লুৎফরের হায় ওঠে, তখন পাশ থেকে লুৎফরের একই পেশার সহকর্মী ভিক্ষুক মজনু মামা আওয়াজ তোলেন, -
-ভাইগ্না ; ওই খোদার খাসীটার কয়মন ওজন হইতে পারে, কওতো ?
-কোন খোদার খাসী, মামা ?
-আরে, ওই যে এইমাত্র গাড়িতে ওইঠা গেল !
-ও...! বলে লুৎফরের বাঁকা ঠোটের অন্য প্রান্তে এক ঝলক হাসির মতো কিছু একটা মিলিয়ে যেতে থাকলে মজনু মামা বলেন,
- হাইসোনা ভাইগ্না; একটা অনুমান দেওতো দেখি !
-আমি খিয়াল করি নাই , মামা !
- খিয়াল করবানা ক্যান ? আমগো গরীবের হক মাইরা খাইয়া এইগুলানের পেটে কেমন চর্বি জমছে, খিয়াল করণ দরকার না ?
দরকার কি দরকার না, সে বিষয়টা পরিস্কার হবার আগে 'গরীবের হক মাইরা খাওনের' এই ব্যাপারটা সবে কৈশোর উত্তীর্ণ লুৎফরের অনুচ্চ এন্টেনায় পুরোপুরি ধরা না পড়া হেতু, এ বিষয়ক মন্তব্য দানে সে নিজেকে বিরত রাখা সমীচীন মনে করলে মজনু মামা বলে উঠেন,- মাশাল্লাহ ! যা দেখলাম ভাইগ্না; গা থেইকা মাংস ফাইটা পড়নের দশা !
তৃতীয় পক্ষের কোন শ্রোতা যেমন আমি, এ আলাপচারীতা শুনে ফেললে দ্রুত একটি রেখা টেনে ফেলতে সমর্থ হই, ধনী-দরিদ্রের সেই চিরাকালীন বৈষম্য থেকে জন্ম নেয়া ঘৃণার সহজাত প্রকাশ, গুরুত্বহীন মানুষদের এই কথাগুলোকে অধিক গুরুত্ব দেবার কিছু নেই !
কিন্তু যখন, লুৎফরের নাসিকা রন্ধ্রে বেলী ফুলের সুবাস হামাগুড়ি দিতে থাকে, যখন দোর্দান্ড প্রতাপে জেসমিনের সৌরভ বাতাসকে দখল করে নেয়, সুগন্ধি সেইসব তরুণীরা যখন উচ্ছল আমোদে তরুণ বন্ধুদের গায়ে ছলকে পড়তে পড়তে হাসির ফোয়ারা ছোটায়, দু'জন তরুণ-তরুণীর দু'টি প্রিয় হাত যখন আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে পরস্পরের সঙ্গে লতিয়ে যেতে চায়, তখন যখন ফুল কিশোরী জোবেদা বাহারি ফুলের সৌন্দর্য সাজিয়ে তরুণ সংঘের সমুখে নিজের অস্তিত্ব ফুটিয়ে তোলে, তখন যখন এক গোছা হরিৎ শুভ্র রজনীগন্ধার সৌন্দর্য তরুণীর চুলে গুঁজে দেয় তরুণ, বৈদ্যুতিক তারের কাকের এ দৃশ্য অবলোকনে উৎফুল্ল হয়ে ওঠলে, কা কা রবের তারস্বরে বিমুগ্ধ আনন্দের প্রকাশ ঘটালে যখন অদূরে উৎকট রং-চঙ্গা কথিত পতিত নারীরা 'পক্ষী' শিকারে বের হয়, তখন লুৎফরের মুখ তুলে তাকাতে ইচ্ছা করে, মাথা তুলে দাঁড়াতে ইচ্ছা করে, খুব ইচ্ছা করে যেমন,- উন্নত শিরে দাঁড়িয়ে থাকে সাম্রাজ্যসম বিশাল এই শপিং মল, তার লাঠিয়াল গার্ডরা, এমনকি যেমন বুক চেতিয়ে মাথা উচুঁ করে দোকানগুলোতে দাঁড়িয়ে থাকে সুবর্ণ পরিচ্ছদে আচ্ছাদিত প্রাণহীন মেনিকিন এবং মলের সামনের জড় ল্যাম্পপোস্টগুলো, তেমন বুক চেতিয়ে দাঁড়াতে গেলে ঠোঁটবাঁকা লুৎফরের এবড়ো-থেবড়ো মুখ আর বিসদৃশ মস্তক মাটির কি এক অদ্ভূত মধ্যাকর্ষণ টানে আরো বেশী অবনত হয়ে গেলে লুৎফরের মনে পড়ে, ঈশ্বর সৃষ্ট কুৎসিত চেহারা আর প্রতিবন্ধী শরীরের অপরাধে, লুৎফর নামের মাতৃহারা সন্তানটিকে শৈশবেই এক রাতে তার পিতা জনতার ভিড়ে নির্বাসন দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন !
দুই
সে রাতের আকাশটি উজ্জ্বল ছিল, জ্বলজ্বলে তারকারা জ্বলছিল, চাঁদের বুড়ি জেগেছিল রূপালী চাঁদের গায় ! সে দীর্ঘ যাত্রাপথের পাশে জল টলটল ঝিল ছিল, ঝিলের হাওয়ায় জলতরঙ্গ ছিল, ঝিলের জলে চাঁদ ডুবেছিল, এমনকি জলতরঙ্গে একটা চাঁদ মুহূর্তেই একশ'টা চাঁদ হয়ে গিয়েছিল, এমনকি একশ'টা চাঁদ দীর্ঘ সার বেঁধে ঝিলের জলে ডুব সাতার খেলায় মেতেছিল, এমনকি আকাশের চাঁদটা ততোক্ষণ পর্যন্ত লুৎফরদের সঙ্গে সঙ্গে গিয়েছিলো, যতোক্ষণ পায়ে হেঁটে তারা সে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছিল !
সে রাতে লুৎফর তার বাপজানের হাত ধরে, কতোখানি বা বাপজানের ঘাড়ে চড়ে, আবার কতোখানি পায়ে হেঁটে, আবার বাপজানের ঘাড়ে চড়ে..এভাবে ক্রমান্বয়ে যখন বাসন্তিপুর থেকে নয়মাইল দূরের গন্তব্য, লাল চাদরে ঘেরা সামিয়ানা টানানো সার্কাস মাঠে গিয়ে পৌঁছেছিল, তারও আগে সেই সন্ধ্যায়, যখন একটু একটু রাত নেমেছিল বাসন্তিপুর, একটু একটু জমে ওঠছিল মোড়ের দোকান, জমে ওঠছিল দুই টাকায় গরুর খাঁটি দুধের সর ভাসা দুধ চা; যখন বাসন্তিপুরের প্রাচীন শিমুল গাছে একটু একটু বাজছিল সমবেত পাখিদের সূর, তখন যখন লুৎফরদের পেয়ারা বাগানে ঝিঁ ঝিঁ পোকারা ডাকছিল, জোনাক পোকারা তাদের প্রাকৃতিক বাতির জ্বলা-নেভা, নেভা -জ্বলার স্বয়ংক্রিয় সুইচটি চালু করেছিল, তখন যখন লুৎফরদের পাশের বাড়ির আবুল মুন্সির গোয়াল ঘর থেকে সন্ধ্যাগত সদ্যজাত গো-বাচুরটি করেছিল হাম্বা রব, বাড়ির পেছন দিককার মজা পুকুর পারে লুৎফর তখন তার বাপজানের সঙ্গে বসেছিল, জোটবদ্ধ মশাদের হুল ফুটানো উৎপাত সইতে না পেরে লুৎফর বলেছিলো,-
- বাপজান; ঘরে যামু !
- ঘরে যামু নারে বেটা !
- ক্যান, বাপজান ?
- তোরে আইজ এক আচানক জিনিস দেখাইতে নিয়া যামু !
- কি জিনিস , বাপজন ?
- সার্কাস !
- সার্কাস কি ?
- না দেখলে এই জিনিস তোরে বুঝান যায়বো না রে, বাপ ! শূন্যে ঝুলাইন্যা দরির উর্পে দিয়া তোর মতন ছোড পোলাপাইন হাঁইটা যায় !
- আমিও কি দরির উর্পে দিয়া হাঁটুম, বাপজান ?
- না রে বাপ; তুই দরির উর্পে হাঁটতে পারবি নাতো !
- পারুম না ক্যান, বাপজান ?
- তোর কি তাগো মতন 'পেকটিস' আছে রে বেটা !'
- বাপজান; পেকটিস থাকলে কি অয় ?
- তাগো মতন আচানক খেইল দেখান যায় !
- আমিও তাইলে পেকটিস করুম ,বাপজান !
- তোরে দিয়া অয়বোনা রে , বাপ !
- ক্যান অয়বোনা ?
- তোর যে একটা পা ছোড ! ডান পার চায়তে বাম পাডা ছোডতো...!
এই পর্যায়ে কথোপকথনের এই জায়গায়, অকস্মাৎ অপ্রস্তুত নীরবতা নেমে এলে লুৎফর এবং তার বাপজানের মনোঃজগতে দিগন্ত রোখার অস্পষ্ট, অস্পৃশ্য অন্ধকারের মতো একটা বিষাদ রেখা দাগ বসাতে চায়লে লুৎফরের বাপজান তাগাদা লাগান,-
- বেটা চল যাই !
- আমরা কি অক্ষণই যামু ?
- হ; অক্ষণই !
রাত দুপুরে লুৎফররা যখন সার্কাস মাঠে গিয়ে পৌঁছেছিল, লুৎফরের বাপজান যখন লুৎফরকে বাঁশি কিনে দিয়েছিল,-বেলুন বাঁশি, যে বাঁশিতে ফুঁ দিলে বেলুন ফুলতে থাকে, ফুঁ বন্ধ করলে হাওয়া সরে বেলুন চুপসে যেতে যেতে বাঁশি বাজতে থাকে, সেই বাঁশি হাতে ধরে চিড়ার মোয়া খেতে খেতে লুৎফর যখন সার্কাস দেখছিল, দেখছিল- লোহার রিং এর ভেতর জ্বলন্ত আগুন, লাল আগুনের ভেতর দুরন্ত লাল কুকুর দশ সেকেন্ডে লাফায় দশবার, যখন দেখছিল এক চাকার চলন্ত সাইকেলে পরস্পরের কাঁধে চড়ে অনন্য ক্ষিপ্রতায় বারো দফায় উঠে পড়ে বারোজন মানুষ বারোবার চোখের পলক ফেলবার আগেই; তারপর যখন মানুষের দলটি মুহূর্তেই মূর্তিমান এক মিনারে পরিণত হয়, তা দেখে লুৎফরের দৃষ্টি বাসন্তিপুর হাইস্কুল মাঠের শহীদ মিনারটির সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজে পেলে দর্শক সারির সব মানুষের সঙ্গে লুৎফরও দাঁড়িয়ে সম্মান জানায়, তখন স্থির মানুষদের মূর্তিমান মিনার শিখরে সমবয়সী শিশুটিকে দেখে বিস্ময়াভিভূত লুৎফর বাপজানের হাত ধরে কিছু বলতে গেলে আবিস্কার করে, তার ডান পাশে বাপজানের আসনটি শূন্য !
তারও অনেক পরে, সার্কাস মাঠটিও ধীরে ধীরে শূন্য হয়ে ওঠলে, শূন্য চেয়ারগুলো ছাড়া যখন আর কোন জনমানব অবশিষ্ট থাকেনা, তখনও যখন লুৎফরের বাপজান ফিরে না আর, ঠোঁটবাঁকা লুৎফরের দুঃখী হৃদয়টা যখন গলতে শুরু করে, গলে গলে চোখের নদী হয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে, তখনও যখন আকাশের তারারা জ্বলছিল, তখনও যখন লুৎফরের যাত্রাসঙ্গী চাঁদটা উঁকি মেরে মেরে লুৎফরকে দেখছিল, চোখের সামনে লুৎফর তখন একটি মুখ দেখতে পায়, মায়ের মুখের মতো মুখ, মায়ের অবয়বের মতো মুখটি লুৎফরের কাছে এলে, তার মাথায় হাত রাখলে সে বুঝতে পারে, মায়ের মতো দেখতে হলেও-এটি মা নয় ! জন্মদাত্রীকে সে হারিয়ে এসেছে আঁতুরঘরেই !
তবু, মমতাময়ী মুখটি যখন লুৎফরকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছিল, লুৎফরের কষ্ট উবে গিয়েছিল, লুৎফরের দুঃখী হৃদয় গলে গলে পড়া বন্ধ হয়েছিল, এমনকি শান্তি শান্তি অনুভব হয়েছিল !
তিন
শিশুরা খেলাঘর করে ।
তারা হাঁড়ি - পাতিল, বাসন- কোসন নিয়ে
বড়োদের মতো সংসার সংসার খেলে ।
তারপর ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে
ঘুম ভাঙ্গার পর শুরু হয় তাদের অন্য খেলা ।
এক্কা- দোক্কা, গোল্লাছুট কিংবা
কানামাছি ভোঁ ভোঁ !
যেমন শিশুদের দেখে কবি নির্মলেন্দু গুণ এমন কবিতা লেখেন, যেমন শিশুরা বাবা-মায়ের হাত ধরে স্কুলে যায়, পথিমধ্যে বাবার আদরে ড. ইউনুসের শক্তি প্লাস খায়, স্কুলে সহপাঠীদের খেলাঘরের খেলার অংশীদারিত্ব পায়, এবং বাসায় ফিরে মায়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লে, কপালে মায়ের নরম আদর পায়, লুৎফর তেমন শিশু ছিলনা বলে, আশৈশব লুৎফরের ঠোঁটবাঁকা ছিল বলে, কিম্ভুত কিমাকার দর্শন ছিল বলে, খাটো বাম পায়ের দুর্বলতায় লুৎফর খুঁড়িয়ে চলতো বলে, সুপাঠ্য কোন কবিতা লুৎফরকে নিয়ে রচিত হয়নি বলে, যখন লুৎফরের পিতা তাকে অপ্রয়োজনীয় জঞ্জালের মতো ত্যাগ করে যান, এবং বাসন্তিপুরের বাতাসি বেগমকে বিবাহ করে সুখের সংসার সাজান, যখন সার্কাস মাঠের মমতাময়ী মুখটি লুৎফরের আশ্রয়দাত্রী হন, লুৎফর তাকে মা বলে ডাকতে শুরু করলে যখন তিনি তাকে নিয়ে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন, লুৎফরের স্কুল জীবনের তিন মাস তিন সপ্তাহ পার হবার পরও যখন তার তিনজন সহপাঠীও তার সঙ্গে মিশতে অপারগতা জানায় বরং তেত্রিশজন মিলে তার নাম ল্যাংরা লুৎফর প্রচলন করে দিলে যখন এক রোদ্র প্রখর দিনে স্কুল ঘর থেকে বেরিয়ে পান্থপথে পাঠ্যপুস্তক বিসর্জন দেয় লুৎফর, তখন স্কুলে যাবার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে লুৎফর প্রথমবারের মতো তার কুড়িয়ে পাওয়া মায়ের মতের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় !
চার
রাত গভীর হলে, নাগরিক কোলাহলে খানিক প্রশান্ত নীরবতার প্রলেপ জমলে যখন শপিং মলের সাত রঙ্গা সাত রকম দোকানগুলোর রূপসজ্জা সাটারাবদ্ধ হয়, এর মালিকরা পকেট ভারী করে নিজ নিজ সন্তানদের জন্য চকোলেট-ক্যান্ডি নিয়ে বাড়ি ফেরেন, তখনও যখন মলের সামনের ফোয়ারাটি নান্দিনকতা ঝরায়, তখনও যখন বিষন্ন বর্ণিল নিয়ন সাইনগুলো ঘুমন্ত শহর এবং রাতের,- রাত এবং শহরের শ্রী বৃদ্ধি ঘটিয়ে যায়, হুশ করে গাড়ি ছুটে যায়,-ভেতরে পেট্রল পুলিশের ঢুলুঢুলু চোখ, তখন যখন উৎকট রং-চঙ্গা কথিত পতিত নারীদের পক্ষী শিকারের ঘনত্ব বেড়ে যায়, কখনওবা এক জোড়া পুলিশের দুই জোড়া চোখ তাদের কাছে এসে প্রাপ্য হিস্যা বুঝে নেয়, কখনওবা সে দৃশ্যের দখলসত্ব টিভি ক্যামেরার চোখে চলে গেলে যখন হতচকিত পুলিশের দলকে পেছন ফেলে, লুৎফরের আশ্রয়দাত্রী মা তাকে নিয়ে যেতে আসেন, মায়ের হাত ধরে লুৎফর হেলেদুলে তাদের বস্তির বসতে ফিরে গেলে, তখন যখন লুৎফরের বাসনে গরম ভাত আর ডালের সঙ্গে মা তুলে দেন পোঁড়া মরিচ, সে খাবার লুৎফরের অমৃত লাগে, মা যখন সামনে বসে তার খাওয়া দেখেন, লুৎফরের আনন্দের মতো অনুভূতি হয়, ভিক্ষারত লুৎফরকে দেখে নীল চোখের এক নীলঞ্জনা যে আঁতকে উঠে পাশের ছেলে বন্ধুর গায়ে সেঁটে গিয়েছিল,-সে কষ্ট লুৎফর তখন ভুলতে পারে সহজেই !
উৎকট রং-চঙ্গা কথিত পতিত নারীদের সঙ্গে লুৎফরের মাও একসময় পক্ষী শিকারে যেতো, এ খবরের সত্যতা জেনেও এই মহিলাকে মা ডাকতে লুৎফরের মন্দ লাগেনা, ভালো লাগে, তার ভিক্ষাবৃত্তিতে তাদের মা-ছেলের সংসার চলে,- বহুদিন এখন আর মা পক্ষী শিকারে যান না; বহুদিন এখন আর মাকে পক্ষী শিকারে যেতে হয় না !
উৎসর্গ : প্রতিবন্ধী সেইসব শিশুদের, নারীদের, মানুষদের !
প্রথম প্রকাশ 'ছলাৎ' লিটল ম্যাগ
বইমেলা ২০১০
সুন্দর এবং অসাধারন।
এইখানে স্বাগতম শিপন ভাই।
আমার মনে হয়, আমারই আপনাকে স্বাগতম জানানো উচিত
ধন্যবাদ জায়েদ ।
নির্মম তবু অসাধারণ সুন্দর গল্প। অসাধারণ!!
এক ফাঁকে বলি, কয়েকটা বাক্য জোড়া দিয়ে অনেক বড় বাক্য তৈরি করলে আমার মতো বোকা পাঠক খেই হারিয়ে ফেলি
নিজেকে বোকা পাঠক বলে, শরমিন্দা করলেন বস ।
আপনি কেবল ভালো পঠকই নন, ভালো লেখকও বটে ।
দীর্ঘ বাক্যের ব্যাপারে বলি, হঠাৎ করে যে কোন পাঠকেরই সমস্যা হবে, ঠিক । মুশকিল হলো, যেই ফরম্যাটে আমি লিখছি, তাতে বাক্যগুলো আপনাতেই দীর্ঘ হয়ে যায়, আমিও নেশাগ্রস্থের মতন লিখে যাই ।
মতামতের জন্য কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ রূপার পেন্সিল
এমনকি আকাশের চাঁদটা ততোক্ষণ পর্যন্ত লুৎফরদের সঙ্গে সঙ্গে গিয়েছিলো, যতোক্ষণ পায়ে হেঁটে তারা সে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছিল !
লেখকের ভিজুয়ালাইজ করার ক্ষমতা কত পোক্ত হতে পারে ,সেটা এরকম চকিত পাঞ্চলাইনের মাধ্যমেই বোঝা যায় ।মাঝেসাঝে আআমিও ভাবি ,আকাশের চাঁদটা যেন আমারই পিছু পিছু চলছে ,কিন্তু সেটাকে এমন ভাবে প্রকাশ করার কথা আমার কস্মিনকালেও মনে হয়নি ।এখানেই লেখকের অদ্ভুত কেরদানি ।
গল্পটি অনেকের কাছেই হয়তো সুখপাঠ্য ঠেকলেও সহজপাঠ্য ঠেকবেনা ,বোধকরি ঈষৎ প্রলম্বিত বাক্যগুলোর জন্যই ।তবে গল্পকারের গল্প নির্মাণের সহজাত ক্ষমতার কারণে আমার অন্তত এক্ষেত্রে খুব একটা বেগ পোহাতে হয়নি।
এমন গল্পের জন্য শিপন ভাইকে ধন্যবাদ না দিলেই নয় ।
আপনার চিন্তাশীল মন্তব্যে প্রাণীতবোধ করছি ।
কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ ।
নুশেরাবু, এই ইমোটা অনেক কিছুই কয়তেছে, মাগার আমার এন্টেনায় ধরেনা, ইহা কি বলে...একু কইয়া দিবেন ?
হিসেবের বাইরে থাকা মানুষগুলোকে নিয়ে গল্প লেখা যে কোন তৃতীয়পক্ষের জন্য কঠিন একটা কাজ। আপনি সেই কাজটা বেশ ভালোভাবেই পেরেছেন। গল্পে পাঁচতারা!!
ধন্যবাদ, ভাইডি !
নীড় সন্ধানী ভাইরে শেকর সন্ধানী বলে সম্বোধন করতে ইচ্ছে করে ।
ভাইয়া, কিছু কিছু জায়গায় অনেকগুলা বাক্য একসাথে যুক্ত করে ফেলায় একটু খেই হারিয়ে ফেলছি। কিন্তু, বাকি সময় কিছু বলার নেই। ছোট একটা প্লট মাত্র ২টা স্থানের মাঝেই গল্পের ঘোরাফেরা, তারপরও এইরকম সুনিপুণ বিস্তৃতি।
অসাধারণ।
অনেকগুলো বাক্য জোড়া লাগানোতে অনেকেরই সমস্যা হচ্ছে দেখা যাচ্ছে । অথচ, কাজটা করবার সময় আমি আনন্দ নিয়েই করেছিলাম । দ্বিতীয় পাঠে হয়তো আরো সহজবোধ্য হবে ।
মতামতের জন্য ধন্যবাদ, মুক্ত বয়ান । ভালো থাকুন ।
পাঠের জন্য কৃতজ্ঞতা ।
দোস্ত তোর অটোগ্রাফ নিতে আইতাছি .......
অটোগ্রাফ নামক বস্তুটির কুমারীত্ব হরণের সকল অপপ্রয়াস রুখে দেয়া হবে
আসলিনাতো !
দুস্ত টাইম কই ক তো..... ?
হ ! 'সময় নাই' নামক ঘোড়া আমগোরে ছুটায়া নিয়া চলতেছে; হায় !
বদ্দা, পড়ে বাকরুদ্ধ হয়েছি। অসম্ভব অসম্ভব ভাল লেগেছে।
নারুর অসম্ভব ভালো লাগা যে আমার জন্য খুশীর ব্যাপার সেটা কি বলে দিতে হবে ?
প্রিয়ত হান্দাইলাম।
এই সম্মানটুকু গল্পের ।
ধন্যবাদ, নারু ।
খোমাখাতায় হান্দাইলাম।
হুম, প্রিয়পোস্ট বিভাগটা এখন পর্যন্ত একটু ঝামেলাযুক্তই মনে হচ্ছে । আশা করছি, আমরাবন্ধুর উন্নয়ন কর্মী বন্ধুরা বিষয়টার দিকে দৃষ্টিপাত করবেন ।
ভাই ক্যামনে লিখেন এইসব ?
পুরাই বেড়াছেড়া লাগলো মাথার ভিতর। দীর্ঘ দীর্ঘ দৃশ্যপট গুলো এতো সোয়াদ হৈসে বলার মতো না ।
প্রিয়তে নিয়া ধন্য হৈলাম ।
আমি বস, 'লজ্জিস্ট' হইলাম !
আর অতি অবশ্যই কৃতার্থও যে হইলামা তাহা বলাই বাহুল্য ।
পড়ে যারপরনাই আনন্দ পেলাম।
যারপরনাই কৃতজ্ঞ হলাম মীর, গল্পটিকে খুঁজে -খুঁড়ে তুলে পড়বার জন্য ।
সুস্থ সুন্দরের সঙ্গে থাকুন । ধন্যবাদ ।
এই গল্পটা খুঁড়ে পেয়ে মনে হচ্ছিলো একটা মণি পেয়েছি। আপানাকেও ধন্যবাদ চমৎকার গল্প এবং ততোধিক চমৎকার প্রতিমন্তব্যের জন্য।
ভালো থাকবেন শিপন ভাই।
ভালো থাকুন , মীর ।
যতোটা ভালো থাকা যায়, তারচেও বেশী !
মন্তব্য করুন