প্রিয়'এর ব্লগ
কথপোকথন
সকাল থেকেই তাথৈ এর মন ভাল নেই। মাঝে মাঝে দিনটা এত বিষণ্ণভাবে শুরু হয় যে ঘুম থেকে উঠেই রাজ্যের ভাল না লাগা এসে মনকে আচ্ছন্ন করে রাখার জন্য যথেষ্ট। একটানা শুনে চলছে লিওনেল রিচির সেই বিখ্যাত গান-
হ্যালো, ইজ ইট মি ইউ লুকিং ফর
কজ আই ওন্ডার হোয়্যার ইউ আর
এ্যান্ড আই ওন্ডার হোয়াট ইউ ডু
আর ইউ সামহোয়্যার ফিলিং লোনলি
অর ইজ সামওয়ান লভিং ইউ
টেল মি হাউ টু উইন ইওর হার্ট
ফর আই হ্যাভন্ট গট আ ক্লু
বাট লে মি স্টার্ট বাই সেয়িং
আই লভ ইউ।
আমি রাতের আকাশ শীতের বাতাস তোমার চুলের গন্ধ
আমাদের পুরানো বাড়িটা একতলা ছিল। চারদিকে দেয়াল এবং উপরে টিনের চালা দেয়া বাড়িটার প্যাটার্ন ছিল বাংলোর মতো। চারদিকে বাগানে ঘেরা বাড়িটার নামও ছিল “বাগান বাড়ি”। এমন কোন গাছ নেই যা সেই বাগানে ছিলনা। ফুল-ফল থেকে শুরু করে নানারকম পাতাবাহার, শাক-সবজি এমনকি ঔষধি গাছ পর্যন্ত বাতাসে দুলে দুলে তার অস্তিত্ব জানান দিত। গেটের উপর ছিল একটা মাধবীলতার গাছ। সেটা তার ফুলের ভারে নুয়ে পড়ে পুরো গেটটাকে ঢেকে রাখতো। প্রতিটা ঋতুই বাড়িটাতে আলাদাভাবে ধরা দিত। যখন খুব গরম পড়তো, একটা গাছেরও পাতা নড়তোনা। সজনে গাছ আর নিম গাছটা ছিল পাশাপাশি। আমরা এই গাছ দুটোর নিচে মাদুর বিছিয়ে, হ্যারিকেন জ্বালিয়ে, হাত পাখায় বাতাস করতাম আর শুয়ে শুয়ে আকাশের তারা দেখতাম। যখন বর্ষা নামতো, ঝমঝম বৃষ্টিতে ভেঙ্গে যেতো আমাদের টিনের চালা। সে কি শো শো বাতাসের শব্দ!
সম্পর্ক
আজকে অফিসে যখন প্রচণ্ড ব্যস্ততায় খাওয়ার সময়টুকুও পাচ্ছিলাম না ঠিক তখন তিথির ফোন এলো। এতদিন বাদে হঠাত করে ও কি মনে করে ফোন করলো চিন্তা করতে করতেই ফোনটা ধরে বুঝতে পারলাম যে মেয়েটা কাঁদছে। হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো,
- আপু, সামির না বিয়ে করে ফেলেছে।
- মানে কি?
- হুম, সত্যিই সামির গতকাল বিয়ে করেছে। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
যে গল্পের কোন নাম থাকে না
ওয়াজ মাহফিল চলছে-
“নারী তুমি থাকবা খালি পর্দার আড়ালে
কামড়াইয়া দেবে লোকে বাইরে বেরোলে।”
দয়াল বাবা ক্যাবলা কাবা আয়নার কারিগর- গানের সুরে গাওয়া হচ্ছে। আমার বারান্দার ঠিক সামনে একটা মাইক লাগানো হয়েছে। মেজাজ ভীষণ খারাপ হচ্ছে।
ভাবনা পড়ে আছে খুচরো হয়ে, কুড়িয়ে নেবে সময়
শরীরটা কিছুদিন যাবৎ ভাল না। পিঠের ব্যাথাটা বড্ড ভোগাচ্ছে। মেরুদণ্ডের ভেতর চিনচিনে এই ব্যাথাটা আমার সবসময়ের সংগী। কখনো কম কখনো বা বেশী। ইদানীং ব্যাথা বেশী। তাই শারীরিক কষ্ট থেকে আক্রান্ত হচ্ছে মন আর মন থেকে মস্তিষ্ক। “মন” বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব মানব শরীরে নাই, “মন” নামক যন্ত্রের সব কাজ করে মস্তিষ্ক। অথচ এই অস্তিত্বহীন বস্তুটির কাছেই আমরা সবসময় পরাজিত হই। কোন কারণে কষ্ট পেলে মনে হয় বুকের ভেতরে কেউ মন নামক বস্তুটিকে চিপড়ে ধরে আছে যার কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মন ভাল না থাকলে মানুষ বিষণ্ণতায় ভোগে আর খুব বেশিদিন এই বিষণ্ণতা চলতে থাকলে অনেক সময় জীবনের কাছে আত্নসমর্পণ করে। সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি নামী- দামী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে “জেণ্ডার কো-অর্ডিনেটর” হিসেবে আমার নামে অফার লেটার এসেছে। তারা চাচ্ছে, আমি আগামী ছয় বছর তাদের সাথে কাজ করি। নিঃসন্দেহে লোভনীয় একটি প্রস্তাব এবং আমি আগ-পাশ কিছু
সভ্যতা Vs বর্বরতা
মেয়েটার নাম পরী। দেখতে সুন্দর বলে তার মা খুব শখ করে এই নাম রেখেছিলেন। কিন্তু গরীব ঘরে জন্মানো মেয়েদের রূপ থাকতে নেই। এই রূপই তার কাল হয়ে দাড়াঁলো। দিনের পর দিন অভাবের তাড়ণায় ভুগতে থাকা হতভাগ্য এই পরিবারটি সিদ্ধান্ত নিল মেয়েকে ঢাকায় কাজে পাঠাবে। তার বাবা গ্রামের এক প্রতিবেশী মহিলার সাথে কথা বললেন পরীকে ঢাকায় কাজ খুঁজে দেয়ার ব্যপারে। এই মহিলা নাকি এর আগে আরো অনেক মেয়েকে ঢাকায় কাজ দিয়েছে। সেই মেয়েদের পাঠানো টাকাতে গ্রামে তাদের পরিবার এখন ভালভাবে খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারছে। পরী ঢাকায় যাবে শুনে মহিলা খুব খুশী হয়ে বললো, ও যে মেয়ে তাতে ও আরো অনেক বেশী টাকা পাঠাতে পারবে। পরীর বাবা এই কথা শুনে খুশী হয়ে বাড়ি ফিরলো।
তোমাদের জন্য ভালবাসা.........
বড় হয়ে যাওয়ার জন্য মাঝে- মধ্যে নিজেকে অভিশাপ দেই। মনে হয়, কেন বড় হলাম? অথচ ছোটবেলায় এই আমার মধ্যেই বড় হওয়ার জন্য কি চরম আকুতি কাজ করতো! ছোটবেলায় আম্মু যখন মারতো তখন মনে মনে বলতাম, “মেরে নাও। যত খুশী মেরে নাও। আমি যখন বড় হব তখনতো তুমি আর আমাকে মারতে পারবানা। তখন আমি তোমার কোন কথাই শুনবোনা”। খালামণি যখন আঙ্কেলের হাত ধরে ঈদের দিন বেড়াতে বের হতো তখন দেখতাম আর ভাবতাম, “বড় হই। তখন ঘোড়ায় চেপে একটা রাজপুত্র এসে আমাকেও এভাবে নিয়ে যাবে। আমি তার প্রিন্সেস হব আর সে আমাকে অনেক অনেক ভালবাসবে। আমি সারা পৃথিবী দেখবো তার হাত ধরে”। আর এখন যত বড় হচ্ছি জটিলতাগুলো ততোই আষ্টেপৃষ্টে বাধঁছে।
কি অসহায় আমি একবার ভাবো
“আমি বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে, তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে, বুঝতে পারলাম যে, তুমি আসো নাই”- সুন্দর একটা লাইন। বৃষ্টি নিয়ে আজ আর কোন ফ্যান্টাসি করবো না। আমার মতো সরকটওয়ালা মানুষের বৃষ্টি নিয়ে অতো পাগলামী মানায় না। তবে একটা মজার গল্প করার লোভ সামলাতে পারছিনা। গেল রবিবার সকাল থেকে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। ড্রাইভার না আসার কারনে গাড়ি বের করতে পারছিলাম না কিন্তু আমার অফিসে যেতে হবে। বাসা থেকে কারওয়ানবাজার পর্যন্ত একটা রিকশা নিলাম। রিকশা নেয়ার উদ্দেশ্য হল, প্রচন্ড বৃষ্টিতে হুড তুলে, গান শুনতে শুনতে এবং খানিকটা ভিজতে ভিজতে অফিস যাব। ঢং আর কী!
সেই চেনা মুখ কতদিন দেখিনি….
গতকাল একটা গান শুনতে শুনতে অফিসে যাচ্ছিলাম, “সে হারালো কোথায় কোন দূর অজানায়………সেই চেনা মুখ কতদিন দেখিনি……………”। এর পর থেকেই গানটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বসের সাথে ব্যস্ত মিটিং করার সময় দেখলাম গুনগুন করছি, সে হারালো কোথায় কোন দূর অজানায়………। কি অদ্ভুত!
লাভ ইউ এত্তগুলা
প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে খুব আদরের একটা স্পর্শে। প্রথমে কিছুক্ষন হাত দিয়ে ডেকে তোলার চেষ্টা এবং তারপরও ঘুম না ভাঙ্গলে গালের মধ্যে চেটে চেটে ঘুম ভাঙ্গানো। চোখ মেলে দেখি আমার মুখের উপর খুব আগ্রহ নিয়ে একজন তাকিয়ে আছে আমি ঘুম থেকে উঠেছি কিনে দেখার জন্য। আমি এক মিনিটও সময় নষ্ট না করে ওকে জড়িয়ে ধরি। আমি জানি, এই আলিঙ্গনটা পাবার জন্যই তার এতক্ষণের এই ঘুম ভাঙ্গানোর আপ্রাণ চেষ্টা।
মন মন মন সে তো পাল ছেড়া তরী
পেইনফুল এক অফিসে বসে পেইনফুল কিছু কাজ করার সময় বাইরে তাকিয়ে দেখলাম ঝমঝম বৃষ্টি ঝরছে। পিপাসার্ত এক প্রাণীর মত অফিসের কাঁচেঘেরা দেয়ালের মধ্য দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমার আর কিছু করার ছিলনা। এরকম একটা দিনে কি আর অফিসের কাজ করতে ভাল লাগে? ইচ্ছে হচ্ছিল এক ছুটে ক্যাম্পাসে চলে যাই। আমার প্রিয় ক্যাম্পাস। ঝুম বর্ষায় মল চত্বরের ভেজা সবুজ ঘাসে বৃষ্টির গন্ধ গায়ে মেখে হেঁটে চলা আর আমার একটানা কথা বলে যাওয়া।
আমার উঠোনে তোমার এক টুকরো রোদ
আজ অনেক দিন পর ক্যাম্পাস গেলাম। আশে পাশে যেখানে তাকাই সব জুনিয়র। নাই কোন পরিচিত মুখ। নিজেকে বুড়ো ভাম বলে মনে হচ্ছিলো। ছোট থেকে একদম হঠাত করে বুড়ো হয়ে গেলাম। মাঝে আর কিছুইতো নাই দেখা যায়। স্ট্রাগল!! কবে শেষ হবে আমার!!
চলো আরেকবার উড়ি
খুব একটা বৃষ্টি হলো কিছুদিন আগে। বৃষ্টি আমার বরাবরই ভীষণ প্রিয়। বৃষ্টির গন্ধ গায়ে মেখে ঘুরতে আমার খুব ভালো লাগে। আগে বৃষ্টি হলেই ভিজতাম। রিক্সা একটা নিয়ে হুড খুলে বৃষ্টিতে পুরা ক্যাম্পাস চক্কর দেয়ার মতো মজা আর কিচ্ছুতেই নাই। আরো বেশি মজা লাগতো বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে চা খাওয়া। বৃষ্টির পানি চায়ের মধ্যে টুপ করে পড়তো আর আমার মজা লাগতো। একবার বৃষ্টিতে ভেজার একটা গল্প বলি। সন্ধ্যার দিকে হঠাত করে পুরো ক্যাম্পাস কালো মেঘে ঢেকে গেলো। আমি হই চই শুরু করে দিলাম বৃষ্টিতে ভিজবো। কেউ রাজি হয়না। কিন্তু অনেক কষ্টে যন্ত্রণা করে করে সবাইকে রাজি করালাম। যন্ত্রণা করতে আমি আবার বিশেষ পারদর্শী ছিলাম। পরে ঠিক হল যখন বৃষ্টি নামবে আমরা সবাই ফুটবল খেলবো। আমি, মলয়দা, অপুদা, অতনুদা আমরা সবাই মিলে। ক্যাম্পাসে বন্ধু বলতে তখন আমার ওরাই ছিল। তো যথারীতি বৃষ্টি নামলো আর আমরা ফুটবল খেলা শুরু করলাম। হঠাত দেখি মলয়দা সেলিম চত্বর
না হয় পকেটে খুচরো পাথর রাখলাম
বড্ড পরিশ্রম যায় ইদানীং। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই অফিসের জন্য দৌঁড়ানো লাগে। অফিসে পৌঁছানোর পর কুকুরের মতো কাজ শুরু হয়। সেই কাজ শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। আর বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা শেষে রাত। রাতে বাসায় ফিরে এতো বেশী ক্লান্ত লাগে যে বেশীরভাগ দিনই আমি নয়টা সাড়ে নয়টা থেকে পড়ে পড়ে ঘুমাতে থাকি। আমি অবশ্য এরকম ব্যস্ততাই চাই, এক মিনিটও অবসর চাইনা। অবসর থাকাটাকে আমি প্রচন্ড ভয় পাই। অবসর হলেই মাথায় নানারকম চিন্তা ভর করে আর আমার খুব অস্থির লাগে। আব্বু- আম্মুর সাথে, পিচ্চি বোনদুইটার সাথে সবসময় খুব বাজে ব্যবহার করি। কেন করি জানিনা, কিন্তু করে ফেলি। এবং খুব আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করি যে ওরা আমার উপর কোন রাগ করেনা। ফেসবুকে যাইনা। ঐখানে গেলেই দেখি সব সুখী সুখী মানুষদের সুখী সুখী ছবি, স্ট্যাটাস। দেখলেই রাগ লাগে। এতো আনন্দ কোত্থেকে আসে এদের জীবনে কে জানে?
ভালোবাসা কারে কয়
টেনশন হচ্ছে?
- হুম
কেন?
- জানিনা
এতো বছর প্রেম করে, এতো চিন্তা ভাবনা করে একটা ডিসিশান নিলাম। আর তুই টেনশানে আধমরা হয়ে যাচ্ছিস। কেন? আমার উপর বিশ্বাস পাচ্ছিসনা?
- না
কেন? কি মনে হচ্ছে? বিয়ের পর আমি তোকে ফেলে চম্পট দিব?
- হুম
হা হা করে হেসে উঠলো রাতুল। তিতলী অবাক হয়ে ওর হাসির দিকে তাকিয়ে আছে। একটা মানুষের হাসি এতো সুন্দর হয় কিভাবে কে জানে?
- আমার মনে হচ্ছে বিয়ের পর তুই আমাকে আর ভালোবাসবি না। তখন শুধু অন্য মেয়েদের দিকে কুতকুত করে তাকায় থাকবি। আর সত্যিই যদি তাই হয় আমি কিন্তু তোকে জ্যান্ত মাটিতে পুঁতে ফেলবো।
এই কথা শুনে রাতুল আবারো তার ভুবন কাঁপানো হাসি হাসলো। আর তিতলী বিরক্ত হলো। এতো টেনশানের সময়ে একটা মানুষ এতো রিল্যাক্স থাকে কিভাবে কে জানে?