জোয়ান অফ আর্ক
ইতিহাস ঘাঁটাঘাটি করলে যে কয়জন সাহসী, যোদ্ধা, রাজনীতিবিদ এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নারী পাওয়া যায় তাদের মধ্যে জোয়ান অফ আর্ক ছিলেন অন্যতম। তিনি ছিলেন পরাধীন ফ্রান্সের মুক্তিদাত্রী বীরকন্যা এবং রূপকথাতুল্য এক নেত্রী। মিউজ নদীর তীরে দঁরেমি গ্রামের এক সাধারণ কৃষক পরিবারে ১৪৪২ সালের ৬ই জানুয়ারী এই বীর নারীর জন্ম। ফ্রান্স তখন ইংরেজদের শাসনাধীন ছিল। ইংল্যান্ডের রাজপুত্র ষষ্ঠ হেনরি ফ্রান্সের সিংহাসনে আরোহন করলে ফ্রান্সের রাজা সপ্তম চার্লস পালিয়ে যান। মাত্র তের বছর বয়সে মাঠে ভেড়ার পাল চড়াবার সময় জোয়ান দৈববাণী শুনতে পান যে তাকে মাতৃভূমির স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার ও ফ্রান্সের প্রকৃত রাজাকে ক্ষমতায় পূনর্বহাল করার জন্য প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে। দৈববাণী শুনামাত্রই জোয়ান অনেক চেষ্টার মাধ্যমে ফ্রান্সের পলাতক রাজা সপ্তম চার্লসের সঙ্গে দেখা করেন এবং দেশের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের জন্য তার কাছে সৈন্য প্রার্থনা করেন। রাজা তার কথা শুনে হেসেই অস্থির হয়ে যান। প্রথমে অবজ্ঞা প্রদর্শন করলেও যাজক সম্প্রদায়ের পরামর্শে পরবর্তীতে তিনি জোয়ানকে সৈন্য সাহায্য দিতে সম্মত হন। এর পরে জোয়ান সাদা পোশাক পরিধান করে একটি সাদা ঘোড়ায় চড়ে পঞ্চক্রুশধারী তরবারি হাতে ৪০০০ সৈন্য নিয়ে ১৪২৯ সালের ২৮শে এপ্রিল অবরুদ্ধ নগরী অরলেয়াঁয় প্রবেশ করেন। প্রথম আক্রমণেই তারা জয়লাভ করেন এবং এরপর তাদের একের পর এক সাফল্য আসতে থাকে। কিছুদিনের মধ্যেই তারা ইংরেজ সৈন্যদের কবল থেকে তুরেলবুরুজ শহর উদ্ধার করেন। এর পর পাতে'র যুদ্ধেও ইংরেজরা পরাজিত হয়। জুন মাসে জোয়ান তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে শত্রুদের ব্যূহ ভেদ করে রীমস নগরী অধিকার করেন। এরপর ১৬ই জুলাই সপ্তম চার্লস ফ্রান্সের রাজা হিসেবে আবার সিংহাসনে অভিষিক্ত হন এবং জোয়ানকে তার অসামান্য সাহসিকতা এবং বুদ্ধিমত্তার জন্য ফ্রান্সের রাজসভায় একটি বিশেষ সম্মানিত পদ দেয়া হয়। যদিও জোয়ান শিক্ষিত ছিলেননা তদুপরি তার মেধা এবং অসম্ভব বীরত্বের জন্য ফ্রান্স রাজসভার অন্যান্য পুরুষ সদস্যগণ তাকে মনে মনে হিংসা ও অপছন্দ করতে শুরু করলো। তারা তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভয় পেয়ে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলো কেননা রাজা সপ্তম চার্লস জোয়ানকে ভীষন পছন্দ এবং বিশ্বাস করতেন। পরবর্তীতে জোয়ান ইংরেজদের সাথে এক ধর্মযুদ্ধে লিপ্ত হলে রাজসভার সদস্যরা রাজাকে বোঝান যে জোয়ানের এই ধর্মযুদ্ধ রাজাকে ফরাসিদের কাছে ডেভিল (শয়তান) এ পরিণত করবে এবং এই ধর্মযুদ্ধ নাস্তিকতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তৎক্ষনাৎ রাজা জোয়ানকে ডেকে যুদ্ধ বন্ধ করার নির্দেশ দেন এবং ইংরেজদের সাথে সমঝোতায় আসতে বলেন। কিন্তু একরোখা এবং জেদী জোয়ান রাজার আদেশ অমান্য করেই যুদ্ধ চালিয়ে যান। ফ্রান্স স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ইংরেজরা জোয়ানকে জব্দ করার জন্য ফন্দি আঁটতে থাকে। তারা এই সুযোগটা কাজে লাগায়। তারা যখন জানতে পারে রাজার কথা অমান্য করে জোয়ান যুদ্ধ করছে তখন রাজসভার অন্যান্য সদস্যদের সাথে হাত মিলিয়ে তারা জোয়ানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। কঁপিএন শহরের বহির্ভাগে শত্রুসৈন্যদের ওপর আক্রমণকালে ফ্রান্সের রাজনৈতিক দল বার্গেন্ডি-কর্মীদের বিশ্বাসঘাতকতার সুযোগ নিয়ে ইংরেজরা জোয়ানকে আটক করতে সক্ষম হয়। তারপর এক ইংরেজ পাদ্রির অধীনে তার বিচারকাজ চলে। বিচারে তার কার্যকলাপকে প্রচলিত ধর্মমতের বিরোধী আখ্যা দিয়ে তাকে 'ডাইনি' (Witch) সাব্যস্ত করা হয়। আইনে এর শাস্তির বিধান ছিল জীবন্ত পুড়িয়ে মারা। এই রায় অনুসারে জোয়ানকেও তাই ১৪৩১ খ্রিষ্টাব্দে ৩০ মে, মাত্র ১৯ বছর বয়সে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। তার মৃত্যুর ২৫ বছর পর পোপ ক্যালিক্সটাস-৩ তার এই হত্যাকান্ডের বিচারকাজ নতুন করে শুরু করেন এবং সেই বিচারে জোয়ান নিষ্পাপ ও সন্ত (Saint) প্রমাণিত হয়। ইংরেজদের বিরুদ্ধে শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধে (১৩৩৭-১৪৫৩) ফ্রান্সের সেনাবাহিনীকে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে নেতৃত্ব দিয়ে হারানো সাম্রাজ্য ফিরিয়ে দেন যে নারী তাকে মৃত্যুর পরও ফ্রান্সের মাটিতেই দীর্ঘ পচিঁশ বছর "ডাইনী" নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। পরবর্তী বিচারে জোয়ান নির্দোষ প্রমানিত হলে তাকে সন্ত বা সেইন্ট ঘোষণার সাথে সাথে তার নির্মম হত্যাকাণ্ডের সূত্র ধরে ফরাসিরা ফ্রান্স থেকে চিরতরে ইংরেজদের সকল অধিকার ও চিহ্ন মুছে দেয়ার প্রয়াস পায়। তার স্মরণে পরে ফ্রান্সে অনেক স্মৃতিসৌধও নির্মিত হয়েছে।
সামনে
আপনার কাছে প্রীতিলতা কে নিয়ে একটা লেখার আবদার রইল।
লেখা ভাল হইছে।
ভাল থাকুন।
থ্যাঙ্ক ইউ।
আপনিও ভাল থাকবেন।
জোন অব আর্কের উপর মুভি দেখেছিলাম। এখন আপনার লেখা পড়ে ভাল লাগলো। ভাল থাকুন প্রিয়।
আমার অবশ্য মুভিটা এখনো দেখা হয়নাই। ধন্যবাদ পড়ার জন্য। আপনিও ভাল থাকবেন।
যুগে যুগে এই হয়ে যায়
ক্যামন আসেন আপু?

ইতিহাস আমার প্রিয় বিষয়। খুব ভালো লাগল। নিয়মিত এরকম লিখুন। অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকেও পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

মন্তব্য করুন