শীত বার্তা ২
খেয়াল করে দেখলাম শীতের কাপড় সংগ্রহ ও বিতরণ প্রক্রিয়াটা বিষদভাবে লেখা তেমনভাবে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ ব্যাপারটা জানলে অনেকেই নিজেরা কাপড় সংগ্রহ করে বিতরণ করতে পারেন। আমি সংগ্রহ প্রক্রিয়া জানি। বিতরণের জন্য পরিচিত মানুষ খুজে বের করতে হয়। আমি সংগ্রহ প্রক্রিয়াটা বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বিষদভাবে জানাচ্ছি। বিতরণ প্রক্রিয়া জন জনে আলাদা হতে পারে।
সবচেয়ে ভালো হয় ব্যাপারটা দুই ভাগে ভাগ করলে।
১। সংগ্রহকারীরা এবং ২। বিতরণকারীরা।
সংগ্রহকারীরা যা করতে পারেন
ধাপ ১ (চিঠি লেখা)-
*এলাকাবাসীদের উদ্দেশ্যে একটা ছোট্ট চিঠি লিখুন যেখানে সংক্ষেপে লেখা থাকবে আপনারা এই এলাকাবাসী, আপনারা বন্ধুরা শীতের কাপড় সংগ্রহ করছেন, বিতরণের জায়গার নাম, কাদের বিতরণ করা হচ্ছে।
*তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কাছে কাপড় না থাকলে তারা যে কোন পরিমাণ টাকা দিয়ে অংশ নিতে পারেন সেটাও জানিয়ে দিন।
*চিঠির শেষে একটি ভালো কাজে অংশ নেওয়ার জন্য তাদের শুভেচ্ছা দিয়ে, ধণ্যবাদ দিয়ে চিঠি শেষ করুন।
*চিঠি প্রিন্ট করুন এবং প্রাথমিকভাবে ২০ কপি ফটোকপি করতে পারেন।
মনে রাখা দরকারঃ
*যোগাযোগ নম্বর না চাইলে চিঠিতে না দেওয়া ভালো। চাইলে হাতে লিখে দেওয়া যায়।
*চিঠিতে ছাত্রদল বা এই জাতীয় দল-যুক্ত শব্দ ব্যবহার না করা ভালো। এতে রাজনীতির দল কিনা এ জাতীয় অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এক্ষেত্রে “বন্ধুরা” জাতীয় শব্দ ব্যবহার করা যায়।
ধাপ ২ (সংগ্রহকারী দল বানানো)-
*সংগ্রহকারীরা নিজেদের এলাকার বন্ধু নিয়ে বা কাছের এলাকায় থাকা বন্ধুকে ডেকে এনে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে যেতে পারে।
*ছেলেদের এক একটা দলে ২ জন ছেলে থাকলেই চলে।
*মেয়েদের এক একটা দলে ২ জন মেয়ে এবং ১ ছেলে থাকতে পারে। অথবা, ৩ জন মেয়ে নিয়েও মেয়েদের একটা সংগ্রহদল বানানো যায়।
* অনুগ্রহ করে যেসব শিক্ষার্থীদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা আছে বা মেডিকেলে পড়ছে তাদের নিয়ে সংগ্রহ বা বিতরণ দল বানাবেন না। তারা একটা কাপড় দিয়ে বা কিছু টাকা দিয়ে অংশ নিতে পারে। এর বাইরে আর কোন কাজে নয়।
ধাপ ৩ (সংগ্রহ পদ্ধতি)-
*সংগ্রহকারী ছোট ছোট দল নিজেদের প্রতিবেশীদের বাসায় গিয়ে ফটোকপি করা চিঠিটা প্রথমে দিয়ে তারপর সংগ্রহকারীরা কোথা থেকে এসেছেন, কেন এসেছেন সংক্ষেপে সুন্দর করে বলতে পারেন।
*তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কাছে কাপড় না থাকলে তারা যে কোন পরিমাণ টাকা দিয়ে অংশ নিতে পারেন সেটাও জানিয়ে দিন। সাথে কাপড়ের সংগ্রহের জন্য থলে নিতে ভুলবেন না।
*পেশাজীবিরা শুক্র ও শুনিবার এলাকায় মাইকিং করে এবং ভ্যান ভাড়া করে কাপড় সংগ্রহে নেমে যেতে পারেন। (এলাকায় মাইকিং করার কোন নিয়মকানুন থাকলে আগে থেকে জেনে নেবেন।)
মনে রাখা দরকারঃ
*মধ্যবিত্ত এলাকার মানুষই মূলত সাহায্য করে থাকেন। তাই মধ্যবিত্ত এলাকা দিয়েই শুরু করা ভালো। উচ্চবিত্ত এলাকায় দারোয়ান সাহেবের সাথে কথা বলেই বিদায় হতে হয় বেশীরভাগ সময়।
* মানুষ শীতের কাপড়ের চেয়ে সাধারণ কাপড় দিতে বেশি আগ্রহী হয়। তাদের শুধু শীতের কাপড় দিতে অনুরোধ করা ভালো। সাধারণ কাপড় গুছিয়ে পাঠানো ঝামেলার কাজ বেশ।
ধাপ ৩ (সংরক্ষণ)-
*কাপড় সংগ্রহ করে নিজের বাসায় এনে রাখতে পারেন। বা কোন বড় ভাই বা বোনের বাসায় (যার বাসায় রাখলে সমস্যা হবে না) তার বাসায় এনে রাখতে পারেন।
*শিক্ষার্থীরা মা-বাবার কাছ থেকে আগে থেকে জিজ্ঞাস করে নিলে ভালো হয় যে বাড়িতে কাপড় রাখলে তাদের মা বাবার কোন আপত্তি আছে কিনা। মা বাবারা সবসময় সাথ দেবেন এমন কোন কথা নেই। সেক্ষেত্রে বড় ভাই বোন বা বন্ধুর বাসায় কাপড় রাখুন।
*পাশ্ববর্তী বিদ্যালয়ে যোগাযোগ করেও দেখতে পারেন নিরাপদে কাপড় রাখার সুযোগ দেয় কিনা।
ধাপ ৪ (বিতরণ দলের কাছে পাঠানোর পদ্ধতি)-
*এবার বাসার কাছের কোন কুরিয়ার সার্ভিসে কাপড়গুলি নিয়ে বিতরণকারীদের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে পারেন। বাসা থেকে কুরিয়ারে কাপড় পৌছাতে ভ্যান ভাড়া করতে পারেন।
*সংগ্রহ করা টাকা থেকে এই খরচ দেওয়া যেতে পারে। বাকী টাকা আরো কিছু শীতের কম্বল/শাল কিনে দিতে পারেন। কম মূল্যে শীতের কাপড় কোথায় পাওয়া যায় সেটা বন্ধুদের, আত্মীয়দের জিজ্ঞাস করে জানতে পারেন। জায়গা ভেদে কাপড়ের মূল্য ভিন্ন হয়।
সংগ্রহ দলের আন্তঃযোগাযোগ পদ্ধতি
* একজন নির্দিষ্ট মানুষ ঠিক করুন যিনি বিতরণ দলের সাথে যোগাযোগ রাখবেন।
* কুরিয়ার পাঠানোর আগে প্রতিটা ছোট সংগ্রহ দল সেই নির্দিষ্ট মানুষটিকে জানান যে কাপড় সংগ্রহ হয়েছে।
*নির্দিষ্ট মানুষের ঠিক করা যে কোন একটি দিনে সবগুলি ক্ষুদ্র সংগ্রহদল তাদের এলাকা থেকে কাপড়গুলি কুরিয়ারে পাঠাতে পারেন।
বিতরণ পদ্ধতি অন্যদিন লিখছি। আপনাদের কার্যকরী কোন বিতরণ পদ্ধতিও জানাতে পারেন।
কোথায় যেন শুনেছি, হাত হও যাদের হাত নেই, দৃষ্টি হও যাদের চোখ নেই। পূর্ণতা হও যেখানে অপূর্ণতা ছেয়ে আছে। স্রস্টা তোমায় শত আলো দিয়ে পূর্ণ করে দেবেন। শান্তির আলো কি? হতে পারে। আলোর সংগ্রামে তাহলে নেমে পড়া যাক?
সবার জন্য শুভকামনা।
অর্গানাইজড সিস্টেম
ধণ্যবাদ বন্ধু।
প্রকৃতির অমোঘ নিয়মের কাছে।
ব্যাপারটা বুঝলাম না
আসলে বন্ধু, দুইজন মানবী বাইরে শীত কাপড় সংগ্রহ করতে যাচ্ছে শুনে অনেক মা-বাবা আদরের কণ্যাকে যেতে দিতে দুঃশ্চিন্তা করেন। তাদেরকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখতে সংখ্যাটা ৩ জন মানবী করা হয়েছে। মেয়েদের স্বাচ্ছন্দের দিকে খেয়াল রেখে মেয়েদের দলে ছেলেদের আধিক্য রাখা হয়নি। তবে বলে রাখা ভালো, ৩ জন মেয়ে কেন, ২ জন মেয়েই যোগাড় করা কঠিন হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে কাজিন ভাই-বোনদের আমন্ত্রণ জানিয়ে এক সাথে যেতে পারেন। সবাই মিলে ভালো কিছু করার আনন্দই আলাদা।
মন্তব্য করুন