ইউজার লগইন

বিস্রস্ত জর্নাল থেকে কিছু জার্নাল!

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ লিখিত সব বই পড়া না হলেও মোটামুটি ভালোই পড়া। উনার লেখা পড়লে কেমন জানি শান্তি লাগে। সেই শান্তির উৎস খুজতে গেলে প্রথমেই পাই তার বর্নাঢ্য টেলিভিশন উপস্থাপনার কারনে চেনাজানার ইতিহাস। আমার এক বন্ধু ছিলো নাম নাসরীন। সে থাকতো আমাদের বাসার উপরের তালা। মেয়েটা অসাধারণ পরিশ্রমী ছিলো। কাক ডাকা ভোরে উঠতো তখন থেকেই এই ক্লাস নাইন টেনের বই গিলে খেতো। আমার আম্মু তার চেয়ারের আওয়াজ শুনে চিন্তায় পড়ে যেতো যে মেয়েটা কতো ভোরে উঠে আর তুই ঘুমাস। আমাকেও উঠিয়ে দিতো। কলোনীতে উপর নিচে বাসা থাকার কারনে যাতায়াত ছিলো না চাইতেই। ফেসবুকের কল্যানে কিছুদিন আগে দেখলাম এক প্রাইভেট ভার্সিটিতে জয়েন করছে লেকচারার হিসেবে। বিয়েও করছে। বন্ধুদের সফল জীবন দেখলে কেমন কেমন জানি লাগে। যাই হোক ও আমার কাছ থেকে প্রচুর বই নিতো। আমার বাসা তখন হুমায়ুন, মানিক, শরতের বইয়ের ফ্যাক্টরী। ধার দিতাম অকাতরে। আমাদের এক টিচার ছিলো নাম ভুলে গেছি। চেহারা ছিলো পুরো নায়ক আলেকজেন্ডার বো এর মতো। সেই নামেই ডাকতাম স্যারকে। প্রাইভেটে নাসরীন সব সময় ফার্স্ট হতো, আর পেতো বই। একবার পেলো আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের আমার উপস্থাপক জীবন। স্যারের কাছ থেকেই গিফট পেয়েই ওর হাত থেকে বইটার দখল নিলাম আমি। গোগ্রাসে গিলছি, আর মুগ্ধ হয়ে বারবার পড়ছি। একটা টেলিভিশন সেন্টারকে কিভাবে আবেগ দিয়ে ভালোবেসে দর্শক জয় করতে হয় তার দারুন বর্ননা। আমার এখন যে এতো টেলিভিশন প্রেম তার কারন হয়তো ঐ বইটাই। তারপর দিন গেছে আমি আরো অনেক বই উনার শেষ করলাম। উনার গল্প উপন্যাস আমাকে টানে না। টানে উনার চিন্তা আর আত্মজীবনী মুলক বই গুলো। "ভালোবাসার সাম্পান" পড়ে যে কি ভালো লাগছে তার গল্প তো আগে কোন পোস্টে বললামই। উনার ভ্রমন রচনা গুলোও সুখপাঠ্য। বিদেশের এতো কিছুর ভিতরেও তিনি দেশকে ভুলে থাকতে পারেন না তার লেখায়। এইবারের বই মেলায় আমার এক প্রিয় বন্ধু উনার একটা বই গিফট করছিলো। বইয়ের নাম বিস্রস্ত জর্নাল। সিরিয়াল মেইনটেন করে বই পড়তে হয়। তাই পড়তে পড়তে মার্চ মাসে গিয়ে শুরু করলাম। দুইদিনেই পড়া শেষ। তারপর বিভিন্ন সময় পড়েই যাচ্ছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উনার বানী চিরন্তনীর মতো একেকটা জার্নাল। পড়তে পড়তে বইটার পেজ করে ফেললাম আলগা। উনার চিন্তার এতো অসাধারণত্ব দেখে বারবার অবাক হইছি। আমাদের নাগরিক জীবনের বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন যে ভাবনা, জীবন নিয়ে দার্শনিকতা, স্বদেশ ভাবনা, বাঙ্গালী হিসেবে আত্মসমালনা, লেখকের ব্যাক্তি জীবনের হিসাব নিকেশ সব আছে দারুন সুচারুভাবে। সেই বই থেকেই কয়েকটা পছন্দের লাইন বা জার্নাল এই পোস্টে তুলে দিচ্ছি। সামনে হয়তো আরো তুলে আনতে পারি।

৩। হে আমার বিচ্ছেদেরা, বুকের ভেতর মাতৃহীন শিশুর মতো ডুকরে ডুকরে কেন শুধু কাদ? ১২-৩-৮৪

৫। ছেলেরা মেয়েদের শরীরের ভেতর দিয়ে তাদের আত্মায় পৌছোয় আর মেয়েরা ছেলেদের হৃদয়ের ভেতর দিয়ে তাদের শরীরকে ছোঁয় । ১৭-৩-৮৪

৭।এদেশে কারো উপকার করতে যাওয়াই ভোগান্তি।
কারো জন্যে যে কিছু করে না, সে এদেশে জনপ্রিয়।
যে ক্ষতি ছাড়া আর কিছু করে না সে প্রাতঃস্মরণীয়। ১৪-১০-৮৯

৮। বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা পৌঁছে যায়। ১৩-৩-৮৪

৯। প্রত্যেকটা বিদায় কেন শুধু চিরবিদায়ের মতো শুনায় (শেষ লাইন) ২৬-৭-৮৪

১১। আলস্যের মতো ব্যস্ত কেউ নেই। ১৬-৪-৮৪

১২। সুবিধা একবার দিয়ে ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। বুঝতে পারছ না কি নিদারুন যন্ত্রণার মধ্যে রেখেছ? ১৭-৪-৮৪

১৩। যে উপদেশ দেয় আর শোনে, দুজনেই সমান অপরাধী
যে উপদেশ দেয় তার মধ্যে খুঁত নিশ্চয়ই আছে, নইলে সে উপদেশ খুজবে কেন?
উপদেশদাতার অপরাধ এখানে যে, উপদেশ সে শোনায় অন্যকে, কিন্তু দেয় নিজেকে। ১৫-৪-৮৪

১৫। যে মানুষ একের বেশী জীবনে যৌতুক পেয়েছে, একের বেশি মৃত্যুও তার বিধিলিপি। ১১-৩-৮৪

২২। এত বেশি কেনো দিয়ে দাও যে দেবার পরে নিজের জন্য কিছুই না।... ১১-১০-৮৫

২৬। চোরকে চুরির মুহূর্তে হাতেনাতে যে ধরে ফেলতে পারে, সে কবি; চোর পালাবার পর যার বুদ্ধি বাড়ে, সে সমালোচক। ১৪-৬-৮৫

৩০। অজ্ঞনতার চেয়ে ধর্মহীনতা আর কিসে? অশিক্ষিত মানুষের আল্লাহও অশিক্ষিত। ২৮-৬-৮৫

৩৯। যার ভালোবাসার মানুষ অনেক সে-ই বলতে পারে- তার কেউ নেই।
যার 'প্রেম' থাকে, তার থাকে কেবল একজন। ১৮-১২-৮৬

৪০। আমাদের সবচেয়ে গভীরতম ভাবে পাওয়া জিনিসটাকেই কি আমরা 'অসম্ভব' নামে ডাকি? ২০-১২-৮৬

৪৫। আজকের জন্য যা মর্মান্তিক, কালকের জন্য তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা। ২৮-১২-৮৬

৪৬। প্রেম এমন এক ব্যাপার যা নির্বিবেক পাশবতাকেও মধুর করে তোলে। ২৮-১২-৮৬

৫০। ছোট্ট এক ফোটা অমৃতের জন্য কি অভদ্র রকম মুল্যই না দিতে হয় জীবনে! ২-১-৮৭

৫৩। সাধারণ মানুষ ঝগড়া করে ব্যাক্তিগত পর্যায়ে, আলোকিত মানুষ মতবাদ স্তরে। ২-২-৮৭

৫৫। সবাই স্থুলতার খোঁজে বেরিয়েই প্রথমে একসঙ্গে হয়, তারপর যে যার অনির্বচনীয়ের দিকে হেঁটে যায়। ১০-২-৮৭

৫৬। প্রত্যেকটা বিদায় কি একেকটা প্রত্যাবর্তন? ৬-৭-৮৭

৫৭। নিজের প্রবনতার সপক্ষে থাকাটা উন্নতি, প্রতিকুলে এগোতে পারাটা ঋদ্ধি। ৭-৮-৮৭

৬১। মতবাদ ছাড়া বাঙ্গালি নেই। ২০-১১-৮৭

৬৩। একেকটা ক্ষেত্র আছে যেখানে সমস্ত যুগের মধ্যে আমি হয়তো একমাত্র মানুষ। ৩০-৯-৮৮

৬৪। বাঙ্গালির স্বপ্ন গনতন্ত্রের, কিন্তু সে স্বস্তি বোধ করে একনায়কতন্ত্রে। ৩০-৯-৮৮

৬৫। বিজয় মানে শত্রুর শক্তি আর নিজের দুর্বলতা সমন্ধে স্বচ্ছতম ধারণা। ৯-১০-৮৮

৬৭। ছেলেদের চরিত্র আর মেয়েদের সতীত্ব একই জিনিস- একবার গেলে আর ফেরে না। ১-৭-৮৯

৬৮। মহৎ লেখকদের শ্রেষ্ঠত্ব বুঝতে হলে তাঁদের 'রচনাসমগ্র' পড়তে হয়; আর সাধারণ লেখকদের শক্তি বুঝতে হলে তাঁদের 'শ্রেষ্ঠরচনা'।

৭০। একজন কবির শ্রেষ্ঠ কবিতার মাঝে পাওযা যায় তাঁর ভেতরকার 'কবি'কে,ব্যর্থ কবিতাগুলোর মধ্যে তাঁর ভেতরকার 'মানুষ'কে। ৮-১০-৮৯

৭৩। নিরপেক্ষ মানে সবার বিপক্ষ। ১৬-১০-৮৯

৭৭। মানুষের প্রকৃত সন্তান খুব কমই তাদের নিজের ঘরে জন্মায়। ২২-১০-৮৯

৮২। কেউ যখন ভালোবেসে কারোর শরীরকে স্পর্শ করে তখন সে আসলে তা নিজের ভালোবাসাকেই স্পর্শ করে। ১৯৮৯

৮৪। আমাদের ভালোবাসার মুহূর্তগুলো কী সুন্দর! আমাদের হাস্যকর বোকামীর সেই রঙ্গীন মুহূর্তগুলো ১৯৮৯

৮৭। হায় ব্যস্ততা! নিজের মৃত্যুর জন্য দুঃখ করার সময়টুকু পর্যন্ত নেই। ১৯৮৯

৮৮। নিজের জাতিটাকে নিয়ে একেক সময় হতাশায় ভুগি। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেই যার সব শক্তি শেষ হয়ে যায়, এগিয়ে গিয়ে সে আক্রমন করবে কী করে? ১৯৮৯

৮৯। প্রকৃ্তি আমাদের জানোয়ারের 'মানুষটাকে' বাইরে নিয়ে আসে, সভ্যতা জানোয়ারটাকে। ১৯৮৯

৯২। অতিরিক্ত চাওয়াই আজ আমাদের জাতিটাকে ভিক্ষুক করে ফেলল। ১৯৮৯

৯৫। টেলিভিশনের কৃপায় আজ কেউ শিশু নেই-- সবাই হয় যুবক নয় যুবতী। ১৯৮৯

৯৬। কী উষর আর দুঃখপূর্ণ এই জীবন। তবু কত জনের চেয়ে কত ভালো। ১৯৮৯

৯৭। আমি অন্ধ; দৃস্টিমান শুধু আমার অন্ধত্বের অবস্থানে। ১৯৮৯

৯৮। কেউ কিছু করতে না পারলে বোলো না, সে করে নি; বোলোঃ সে পারে নি। ১৫-১১-৮৯

১০০। মন দিয়ে অনেক কিছু করা যায়। শুরু করেও তো আমরা অনেক সময় মন দিই। ১২-১-৮৯

১০১। শ্রেষ্ট হতে হলে গানকে "জনপ্রিয়' হতেই হবে, যেমন নিকৃষ্ট হতে হলে সাহিত্যকে! ১২-১-৮৯

১০৮। কখনো দেখো না কি কাজ হচ্ছে। দেখো, কে করছে। ৩০-৫-৯০

আপাতত আজ থাক। মামা বাসায় নেই। সেহরী খাই। সেহরী ইফতাঁর ছাড়া আর কিছুই তো খাই না এখন!

পোস্টটি ৮ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


এই লেখাটা অনেক ভালো লাগছে। এমন আরো লেখা দিয়েন তো, একটা দিবেন এমন আহমদ ছফার কথাবার্তা নিয়া। ঠিকাছে?

আরাফাত শান্ত's picture


চেষ্টা করবো। সমস্যা ছফার অনেক কথাই আছে আসর গরম করার কথা। যা অনেকের ভালো লাগবে, অনেকের বিরক্ত লাগবে। আর অনেক গুলান এতো জনপ্রিয় যে নতুন করে বলার তেমন নাই। তাও দেখি!

নিয়মিত হও জলদি!

টোকাই's picture


চিরাচরিত সুন্দর লেখা

আরাফাত শান্ত's picture


থ্যাঙ্কস ভাইয়া!

লীনা দিলরুবা's picture


বইটা পড়েছি অনেক বছর আগে। অসাধারণ গ্রন্থ। তোমার বাছাইও মনের মত হয়েছে।

আরাফাত শান্ত's picture


থ্যাঙ্কস আপু! লিখবো আরেক পার্ট!

সামছা আকিদা জাহান's picture


গতকালের মন্তব্য টা কই গেল? কাল কি লিখেছি মনে নেই তবে আজ বলি একসময় কোটেশন সংগ্রহ আমারও নেশা ছিল।তার থেকে ধার নিয়ে বিভিন্ন মিটিং সেমিনারে খুব চাপা চালাই।

আরাফাত শান্ত's picture


গতকাল দিছিলেন নাকি পাইলাম না!
কোটেশন সংগ্রহের আলাপ শুনে মজা পেলাম Cool

নিভৃত স্বপ্নচারী's picture


বইটা পড়া ছিলনা, তোমার কল্যাণে চমৎকার কিছু 'কথামালা' পেলাম। দারুণ, প্রিয়তে রাখলাম।

১০

আরাফাত শান্ত's picture


থ্যাঙ্কস ভাইয়া!

১১

শওকত মাসুম's picture


দারুণ

১২

আরাফাত শান্ত's picture


ধন্যবাদ ভাইজান!

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আরাফাত শান্ত's picture

নিজের সম্পর্কে

দুই কলমের বিদ্যা লইয়া শরীরে আমার গরম নাই!