অযথা প্রলাপ!
ভালো লাগছে না কিছুই। এমন কি এই ব্লগটা লিখতেও না। তাও কেনো লিখছি জানি না! লিখে হালকা হবার চেষ্টা। তবে চাইলেই কি আর হালকা হওয়া যায়, এইটাতো আর রোজা না যে কিছু কিছু কাজ কাম করলেই রোজা হালকা হবে, ঘুমালে টিভি দেখলেই কাজ সারা রোজা হালকা । মন হালকা করা খুব কঠিন কাজ। একবার সেখানে ক্লান্তি একঘেয়েমী ভর করলে সহজে মুক্তি নাই। অবশ্য আজ অনেকেরই সুখী সুখী মন খারাপ ছিলো। সবাই দুঃখ বিলাস করেই কাটালো। আমি শিউর এদের অনেকেই হূমায়ুন আহমেদ বেচে থাকলে কষে শুধু গালি দিতো, এখন তারাই ভক্তিবাদে আচ্ছন্ন করে রাখছে পাড়া মহল্লা থেকে শুরু করে ফেসবুক। হুমায়ূন আহমেদ সবাই পড়ে। আমিও পড়ছি। অনেক লেখাই পড়ছি। কিনে পড়ছি, ধারে বই মেরে দিয়ে পড়ছি, টাইমের সাথে পাল্লা দিয়ে পড়ছি, সদ্য কিশোর পার হওয়া চোখ দিয়ে পড়ছি, সেই আমলে বেশীর ভাগই পড়ছি। কিন্তু তাই বলে সেই পড়াকে মহান কিছু মনে করি না কখনও। এবং আজকে এসে আমি তাকে মহান প্রমান করতে চাইও না। যখন পড়ছি তখন সময়ের প্রয়োজন ছিল, এখন পড়ি না কারন এখন সময়ের প্রয়োজন নাই। পড়ার মতো অনেক কিছু আছে তাই পড়ি না আর। ব্যাস এতোটুকুই।
তিনি মানুষ, আমি তাকে দোষে গুনের মানুষ হিসেবেই ট্রিট করি।দেবতা, মাইজভান্ডারী পীর মনে করি না আবার পিতাও মনে করি না। ছফার কথাতেই আস্থা রাখি। তিনি বলে গেছেন “অল্পবয়সে হুমায়ূন পাঠ দোষের কিছু না। কিন্তু পড়ার পর পরই যে তীব্র সময় ও অর্থ নষ্টের জন্য মনোবেদনা হয় তাই দোষের। সস্তা পারফিউম তো গায়ে লাগালে সবারই ভালো লাগে কিন্তু দিনশেষে মনে হয় এ কি লাগালাম!” আমি যেমন হিন্দী সিনেমা দেখতে ভালো লাগে তেমন টাইম পাসের জন্য হূমায়ুন আহমেদ পাঠ ভালো জিনিস হতে পারে। আর সারা জীবন তিনি ইন্টারভিউতে বলেই গেছেন তিনি বাজার, ফর্মা, বিক্রি, পাঠক, জনপ্রিয়তা এসবের জন্যই লিখতে বসেন। আমরা কি হনু যে তাকে ক্লাসিক লেখক প্রমান করতে মাঠে নামবো? প্রতিভাবান মানুষ উনি- উনার জীবন উনারই। এখন শাওন কি করলো, উনার কবরের ডিজাইনের কি হলো, কে কি বললো তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। কারন উনি বাঙ্গালী আর সেই কারনে তার ভেতরে বাহিরে আত্মীয় স্বজনে সেই রক্তের টান থাকবেই। সবাই মারা যায়, উনিও তাই মারা গেছে। না মরলে দুনিয়ায় নতুন কেউ আসবে না। ছফা বেচে থাকলে উনার বন্ধু মযাহারের মতো যদি ছাগু হতেন তবে উনাকে আমার ভালো লাগতো না মোটেও। উনি হুট করেই মরে গেছেন, তার দোষ গুন মিশিয়ে ইরান-জার্মান-লিবিয়া কানেকশন মিলিয়েই উনাকে আমার ভালো লাগে। তাই কারো যদি ছফা ভালো না লাগে আমার কিছু করার নাই। যেমন কেউ হুমায়ুনকে পীর মুরশিদ বানাইলেও আমার কিছু করার নাই। সবার উপরে মানুষ সত্য। কিন্তু পীর বানিয়ে তাকে তমঘায়ে বাংলাদেশ বানালে আমি তা মানবো না। কারন তার লেখার বিচার করবে আগামীর সময়। বালখিল্য আবেগ মানা যেতে পারে, তবে সেই আবেগকে প্রমান করার কিছু নাই। কারন দিন শেষে হুমায়ুন আহমেদ জনপ্রিয় লেখকের তকমা নিয়েই বেচে থাকবেন।
তবে সিজনাল হুমায়ুন ব্যাবসা চলছে দারুন ভাবে। আজ নাকি বিটিভির বিখ্যাত নিমফুল নাটকের রিমেক দেখালো কোন চ্যানেলে। পাভেল দেখে এসেই অভিযোগ করলো যা জঘন্য বানাইছে নাটকটা। কোথায় আবুল খায়ের, আবুল হায়াত, শিলা, আসাদুজ্জামান নুর, মোজাম্মেল হক, আমিরুল ইসলামদের কালজয়ী অভিনয়- আর কোথায় এই জয়ন্ত, চঞ্চল, নাম না জানা মেয়ে মডেলদের দিয়ে অভিনয়। উনি বেচে থাকতেই রেদোয়ান রনি দেশ টিভির জন্য উনার চরিত্রগুলো নিয়ে পাচ সাত এপিসোডের এক নাটক বানালো ঈদে। কি যে জঘন্য একটা প্রোডাকশন ছিলো। এতো চেনাজানা চরিত্রগুলোর টেলিভিশনে স্ক্রীনে এইভাবে কবরস্থান বানাতে দেখে মেজাজ খারাপ হয়েছিলো প্রচুর। পরে ধরে নিয়েছি এটাই তো নরমাল। উনার মরনের পরে যত বই বেরুলো উনাকে নিয়ে তার কিছু উল্টে পাল্টে দেখেছিলাম বিদিততে। সস্তা স্ট্যানটবাজী আর আজাইরা প্রলাপ ছাড়া কিছু নাই। তাও সেগুলা বইয়েরও নাকি ভালো বাজার। উনার মরে যাওয়ার পরে কতজন কতো বয়ানবাজী করলো ক্যামেরার সামনে, জিনিসটা নিয়ে জাহিদ হাসানের এক দারুন উক্তি ছিলো। “যে লাশ নিয়ে ক্যামেরাবাজী করার জন্য জাহিদ হাসানের জন্ম হয় নাই। আমি মরার পরে ওসিয়ত করে যাবো যেনো আমার লাশ নিয়ে কেউ ক্যামেরার সামনে বয়ান না দেয়, খুব শান্ত নির্মল ভাবে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে চাই, লোক দেখানো ভালোবাসার আর ভালো ভালো কথা শোনার কোনোই দরকার নাই“। উনারে এখন ব্যাবসার নামে পচাইতেছে সেই তথাকথিত কাছের মানুষেরাই। চামে দিয়া টুপাইস কামিয়ে নিচ্ছে। আসলে ভক্তিবাদ জিনিসটাই পচা। আমি ছফাকে নিয়ে অনেক কটু কথা অনেক বড় বড় মানুষদের মুখে শুনছি তা হাসিমুখে গিলে নিয়েছি। কিন্তু মানুষ এতোই পীরের মতো ভক্তি করে যে দু চারটা কথাও হজম করতে পারে না। আজ ফেসবুকে অনেক গ্রুপে অনেক ডিবেট দেখলাম শুধু এই সহ্য করতে পারে না এই নিয়েই। চারিদিকে বাদশাহ নামদারের নাম দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত। পরশু এই জন্য অনেক দিন ফেলে রাখার পর দেয়াল পড়ে শেষ করলাম। সিম্পলী ভোগাস লেগেছে। এরচেয়ে মাসকেরানহাসের বইটা আবার পড়লেই ভালো। আনিসুজ্জামানকে দিয়ে বইটার ভুমিকা লেখানো হইছে। কিভাবে জুটে যাই এরা। পড়তে সময় লাগলো আড়াই তিন ঘন্টা। আর মনে হলো অযথা তিনি মহান ব্যাক্তিদের টেনে এনে জলপাইদের সততার জয়গান গাইছেন। এরচেয়ে উনি সেই সময়ের দিনকাল নিয়েই তার স্টাইলে কিছু লিখতেন তাও ভালো হতো। ব্যাপক ব্যাবসা সফল এই বই। ওলরেডী ১১ টা মুদ্রন চলতেছে। এই বইয়ের ব্যাবসা দেখেই বুঝা যায় ভক্তিবাদের কি নমুনা!
যাই হোক মন খারাপ তা বেড়েই চলছে। ভালো লাগছে না আজ। আজ দুইটা ইফতারী পার্টির দাওয়াত ছিলো একটাতেও যাই নি এই কারনে। একটা ছিলো ঢাকা নিবাসী স্কুল ফ্রেন্ডদের। না গিয়ে ভালোই মনে হয় করছি তাতে। ক্লাসমেট ছেলে মেয়েদের রংঢং দেখতে ইচ্ছে জাগে না। আর এইসবে গেলে খালি গীবতের আস্তানা। সবাই সবার মতো। অসামনে বন্ধুদের নিয়ে কটু অপবাদ দিতে দিতে দলবেধে ইফতারী করার কোনো মানে হয় না। তবে আবীর থাকলে শিউর যাইতাম। আবীর হলো কথার যাদুকর, এমন আলোচনা তুলতো যে সব ছেড়ে দে মা করতে করতে মিরপুর ছাড়তো। আরেকটা দাওয়াত ছিলো পরাগের বাসায়। ওর জন্মদিনের ইফতারী দাওয়াত। পরাগ আমার সবচাইতে আপন বন্ধু ভার্সিটির। তবে যাওয়া হয় নাই আর। তার বিশাল চাকরীর সামনে নিজেরে কেমন কেমন জানি লাগে। তবে যাবো সামনেই আজ না গেলেও। খুব দেখতে ইচ্ছা করে। আগে এমন একটা দিন নাই যে পরাগ আমি আড্ডা মারি নাই। ভার্সিটি না থাকলে ওর বাসায় গিয়ে জমিয়ে আড্ডা চলতোই। প্রায় আট মাস ধরে মনে হয় ওকে দেখি না। খালি ফোনে আলাপ। কি জন্যে জানি না! সম্পর্ক গুলো এমন কেন হয়ে যায়? কেনো কাছে থেকেও সবাই এতো দুরে জানি না। শেষ করি। অভ্রর আপডেট দেয়া না তাই এই পোস্টে আগের চেয়ে বেশি বানান ভুল হতে পারে। মাফ চাই সেই জন্যে। কেউ কোনো মতামতে কস্ট পাবেন না। আমার মতামত আমার মতোই যুক্তিহীন। তাও লিখে যাওয়া!
'মন হালকা করা খুব কঠিন কাজ।'
কথা কঠিন সইত্য!
পুরান দোস্তদের এত সহজে দুরে চলে যেতে দেওয়া ঠিক না,
পরে ব্যাপক পস্তাইতে হয়!
আমি যখন যা মনে করি তাই করি সব সময়। হুদেই পিরিতি দেখানোর মানে নাই?
যে যাই বলুক লেখক এবং পরিচালক হুমায়ুনকে আমি ভাল পাই। ,টিভি দেখা হয়না আজ ৪/৫দিন। গো আজমের রায়ের পর থেকে এখানে ডিশের কানেকশন নাই। প্রতিদিন বলে আজ ঠিক হবে হয়না। সম্ভবত বিহারী অধ্যুশিত এলাকা রাজাকার দের শোকে ডিশ বন্ধ।
তোমার মন খারাপের খবর শুনেই আমিও একটা নেগেটিভ খবর দিলাম।
বন্ধুদের কাছ থেকে একটা সময় এমনিতেই দূরে চলে আসতে হবে জীবনের প্রয়োজনে। তাই এখন তাদের থেকে দূরে থাকা ঠিক না। মন খারাপ দ্রুত ভাল হোক।
থ্যাঙ্কস আপু। আমিও আগে দেখছি পড়ছি ভালো লাগছে, এখন তা নিয়ে এতো বেশী দুঃখ বিলাস করার কিছু পাই না। আপনে কস্ট করে পড়ে যান লেখা তাতেই খুশী!
কেন জানি কারো প্রতিই অন্ধমোহ হয় না আমার, তবে এটা মানি শঙ্খ নীল কারাগারই হূমায়ুন আহমেদকে টিকিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট মনে হয়
অন্ধমোহ ভালো না!
ভালো লাগা, কম ভালো লাগা, খারাপ লাগা তো থাকবেই! শঙ্খ নীল কারাগার পড়তেই ভালো। সিনেমাটা ওতো ভালো না। আমার কাছে হিসেব করলে যখন ডুবে গেছে পঞ্চমীর চাঁদ, মন্দ্রসপ্তক, নন্দিত নরকে আরো কয়েকটা আছে এগুলাই ভালো লাগে!
থ্যাঙ্কস ফর টিপসই!
মন্তব্য করুন