একটা দিন চলে যায়, শুধু দিন কাটিয়ে দেয়ায়!
আজ শরীরটা কেন জানি ভালো নাই। বুঝতেছি না এর কারন কি? হয়তো ঘুমের ঘাটতিতেই। আজ প্রথম রোজার দিন - যেদিন আমি সকাল নটায় ঘুম থেকে উঠছি। উঠেই দেখি চোখ লাল টকটকে। মাথা ঝিম ঝিম করে এই হুট করে উঠার কারনে। তাও জোর করে হলেও উঠলাম। আর কত কাল ঘুমিয়ে কাটাবো? বের হলাম কাজ ছিলো ধানমন্ডীতে। ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে দেখি রাস্তা জুড়ে অগনিত ফাকা রিকশা। এতো ফাকা রিকশা কেনো ঢাকা শহরে? আধা ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে তার হিসাব মেলাতে থাকি কেনো এতো রিকশা! হিসাব পানির মতো সহজ। ঈদের কারনে। বাকি ৬৩ জেলা থেকে মানুষ প্রতিদিন ঢুকছে তো ঢুকছেই। তাই ফাকা ও রাস্তা চেনে না এরকম রিকশাওয়ালার সংখ্যা এখন খুব বেশি। এদের দাবী একটাই চিনায়া নিয়া যান, যা ভাড়া তাই দিবেন। আমি এরকম চুক্তি পছন্দ করি না। কারন দেখা যায় গন্তব্যে আসার পরে এরা আবদার জানায় বলে মামা কম হয়ে গেলো না? আমি বলি তুমি তো রাস্তাই চিনো না, তাহলে কম বেশীর কি বুঝলা? আমাকে উত্তর দেয় মামা আপনি বিবেক করে বাড়ায়া দেন। প্রতিদিন নিজের এই ধরনের বিবেকের এক্সাম দিতে আমার ভালো লাগে না। তাই তর্ক না করে দিয়ে দেই ভাড়া। তাই এইসব অচেনা ড্রাইভার আমি একা কখনোই পছন্দ করি না। পুলক থাকলে সমস্যা নাই। তার ছয়ফুটি শরীর আর ৯২ কেজি ওজনের জন্য সবাই কেমন জানি সমীহ করে। তবে পুলক তো বাস্তব জীবনে আমার চেয়েও নরম মনের ছেলে। একবার পুলক গেছিলো এক নেতাকে দেখতে ডিএমসিতে। সবাই দেখা গেলো সমানে সালাম দিচ্ছে। ডাক্তার পর্যন্ত পুলককে স্যার স্যার বলতেছে। পুলক বুঝে না কাহিনী কি। পরে বুঝলো কাহিনী, ও দেখতে আসছিলো একজন আত্মীয়কে যিনি সাবেক সংসদ সদস্য। ওর এটিচিউড ও বডি লেংগুয়েজ দেখে মনে করছে সংসদের ডানহাত টানহাত আসছে, ষন্ডা টাইপের ছাত্র নেতা কেউ, তাই এতো খাতির। তাই পুলকের সাথে রিক্সায় ঘুরে সব চাইতে শান্তি আর পুলক কখনো দর দাম করে রিক্সায় উঠে না। তবে আমি দাম ছাড়া রিক্সায় উঠি না। আমার দামাদামি ব্যাপারটা ওতো আসে না। দেখে যায় নিজেই ঠকি। কি আর করা। জেতার অভ্যাস নাই কখনো।
আজকে অবশ্য জিতলাম, একজন একপিরিয়েন্সড রিকশা চালক পেয়ে গেলাম ১০ টাকা কমেই। মনে শুধু আনন্দ আর আনন্দ। ১০ টাকার জন্য না অনেকদিন পর কোথাও জিতলাম সেই আনন্দে। রোজার সকাল তাই রাস্তা ঘাট কেমন জানি ফাঁকাফাঁকা। ফাকা রাস্তা ঘাট কড়া রোদে আমার খুব পছন্দ। আরো পছন্দ হতো যদি এক কাপ চা খাওয়া যেতো। কিন্তু ইচ্ছা করে রোজা ভাঙ্গার অভ্যাস নাই প্রায় দশ বছর ধরে। তাই লোভ সংবরন করতে হলো। চলে গেলাম বন্ধুর বাসায়। বন্ধুর সাথে যে কাজ তা কমপ্লিট করলাম। সেই কাজ শেষে দেখি বাজে মাত্র ১১ টা। এখন কি করবো। ১০ মিনিট হেটে গেলাম আরেক বন্ধুর বাসায়। বন্ধু যে অফিসে যায় নাই তা মোবাইলেই খোজ নিলাম। আমার আগমনের খবর পেয়েই দেখি সে ডিম ভাজি আর পরোটা দিয়ে নাস্তা করে। আমি রোজা তা নিয়ে ওর জেনেও খুব একটা টেনশন নাই। গুনে গুনে চারটা পরোটা খেলো। আলাপ আড্ডা হলো। আমি আগের দিনগুলোর কথা মনে করে ভাবলাম, দুই বছর আগেও ও রোজা রাখতো। রোজা রেখে দুইজন সকালে মিডটার্ম এক্সাম দিছি। এখন বাপের ব্যাবসা দেখে তাই হয়তো রোজা রাখার উপরে মন নাই। এইটা তেমন একটা ব্যাপার না। যার যেমন খুশী কাটাক দিন। বন্ধুদের খোজ নিলাম ওর কাছ থেকে। সেও খুব একটা খোজ জানে না। ওর লেটেস্ট গার্লফ্রেন্ডের ছবি দেখলাম। আমি বললাম মারহাবা। বললাম এই কালাকুলা চেহারা নিয়াও তোদের কতো ব্রাইট দিন যাপন। ও হেসে বললো কালাকুলা ঘটনা না আমি ধান্দায় থাকি এগুলার তাই পেয়ে যাই। তোর লাগলে বল একটা যোগাড় করে দেই। আমি বলে উঠি এমনিতেই আমি নানান কিছু নিয়ে পেরেশান। আর পেরেশানে পড়তে চাই না। দুপুর একটায় বিদায় নিলাম। এখানেও দেখি অনেক রিকশা। জেতার মানসিকতা আমার আজ পেয়ে বসলো। এবার জিতলাম ৫ টাকা। আসলাম চায়ের দোকানে। চারিপাশে বোরখাওয়ালা সব দোকান। তার ফাকে আমি আর পুলক নান্নুর বন্ধ দোকানের ফেলে রাখা বেঞ্চে বসলাম। বোরখাওয়ালা দোকানে এতো মানুষ দেখে আমি অবাক। যারা হেফাজতের ফ্যান, আড়াই হাজার শহীদ দাবী করনেওয়ালা, শফী হুজুরের গায়েবী মুরিদ সব দেখি চা সিগারেট খায়। আমি অবাক এরাই করবে নাকি ইসলামের হেফাজত! এক ভাইরে জিগেষ করলাম ভাইয়া রোজা রাখেন না কেন? উনি বলে উঠলো শরীর অসুস্থ। আমি অবাক হলাম মিথ্যে কথার ধরন দেখে। রোজা না রাখলে বীরদর্পে বলে দিবে রাখি না। এতো মিথ্যা বলার কি দরকার? উনি যে অসুস্থ তা উনি নিজেই বিশ্বাস করবে না। যাই হোক আমি আর পুলক এশেজ নিয়া আলাপ সালাপ করলাম। দুইটার দিকে বাসায় ফিরলাম। নামায পড়ে ঘুমানোর প্ল্যান করলাম। কিন্তু ঘুম আর আসে না। আব্বু ফোন দেয় জানতে চায় আসবি কবে? আমি জানাই দেরী আছে ক্লাস শেষ হোক বিশ রোজার পরের দিকে যাওয়ার প্ল্যান করি। গেলেই তো সব মিস। আবার ঈদের ১০-১২ দিন পরে ঢাকায় আসবো। তাই যতোদিন থাকবো থেকে যাই। বাড়ীতে গেলে অবশ্য আরেক রকমের মজা। আম্মুর দারুন রান্না খাওয়া, টিভি হজম করা, আব্বু আম্মুর সাথে আড্ডা মারার আনন্দ। কিন্তু সেই আনন্দের জন্য এতো আগে ভাগে ঢাকা ছাড়তে ইচ্ছা করে না।
দুপুরে না ঘুমিয়ে এক প্রিয় বন্ধুর সাথে অনেকক্ষণ ফোনে আলাপ হলো। মোবাইল জিনিসটায় আমার কথা বলতে খুব একটা ভালো লাগে না। কিন্তু এই বন্ধুর সাথে কথা বলতে অনেক আনন্দ। এতো আনন্দ যে ঘুম উঠে গেলো। আসরের নামায পড়লাম। ইফতারী কিনতে বের হলাম। প্রিয় রেস্টুরেন্ট আল মাহবুবেই গেলাম। আমাকে পেয়ে মামারা ব্যাপক খুশী। একটা দুইটা করে সব কয়টা আইটেমই কিনলাম তাতেই টাকা দেড়শো ক্রস করলো। আমি ভাবলাম এর চেয়ে চিড়া ভিজা আর কলা খাইলে তো ভালো হতো। দেড়শো টাকা নিখুঁত সেইভ করা যেতো। কি আর করা বাঁশ খেলাম। ইফতারী আনলাম। হাতে নিয়ে বসলাম সৈয়দ শামসুল হকের বই 'কথা সামান্যই'। পড়তে পড়তেই ইফতারীর সময় হয়ে গেলো। তার আগে কিছু সময় রেডিও শুনলাম। সারাদিন কতো আজাইরা গান চলে এমন রেডিও তে হুজুরদের উদ্ভট সব বানী শুনলে কার না মেজাজ খারাপ হয়। তবে রেডিও ফুর্তি ভালো জিনিস। তাদের ওতো রমজান প্রেম নাই। দুইটা গজল আর আযান শুনিয়েই তারা চলে গেলো হিন্দী গানে। এইটাই ভালো। এতো ইফতারী খেতেও অনেক কস্ট। তাও সমানে খেলাম। অনেক সময় নিয়ে। খাবার খেয়ে দেখি নড়তে চড়তে পারি না। তাও নামায পড়ে রিক্সায় গেলাম চায়ের দোকান। নান্নুর দোকান বন্ধ। সারাদিনের মুখের সংযম নান্নুরে গালি দিতে দিতেই শেষ হয়ে গেলো। এই নিয়ে দুদিন টানা বন্ধ ভাবা যায়! বারেক সাহেবের পচা চা খেলাম। উনার দোকানে বসে আমি চা খেতে পারি না কারন উনার পারসোনাল হাইজিনের অবস্থা বড়োই নিম্ন মানের। মাথা চুলকায়, গলা চুলকায়, পেট নাভী চুলকানো দেখলেই ঘেন্নায় আর চা খাওয়া যায় না। তাই উনারে চা বানাতে বলে আমি আরেকদিকে তাকায় থাকি। তবে উনার ব্যাবহার ভালো। উনার প্রিয় বিষয় খুলনা যশোহরের রাজনীতি আর শরীয়ত মারফত নিয়ে বাহাস। খারাপ না উনার কথা শুনতে। তবে উনার দাতের যে অবস্থা তা দেখে মায়া লাগে। পান সুপারী খেতে খেতে দাঁতগুলান এখন সব কালা পাথরের মতো। পুলক আদনান শান্ত ভাইরা উনার চা খেতে পারে না। উনারে গেলো সামনে গোপালের চা খেতে। আমি বসে বসে রায়ের বাজারের চিতায় কিভাবে হিন্দুদের মরার পরে পোড়ায় তার আলাপ শুনলাম। আমি কোনো সময় শশ্মানে পোড়ানো দেখি নাই তাই আগ্রহ নিয়েই শুনলাম। শুনলাম নাভী নাকি ফুটে যায়। মুখাগ্নীর ব্যাপার স্যাপার জানলাম। শীর্ষেন্দু, গজেন্দ্রকুমার পড়লে হয়তো এই বিষয়ে অনেক জানা থাকতো। কিন্তু আমি সুচিত্রা মিত্র ছাড়া তেমন কিছুই পড়ি নাই। সুনীলও কম পড়া। তবে মিহির সেন গুপ্তরে আমার খুব ভালো লাগে। উনার বই ওতো প্রচলিত না। আমি বিদিততেই দুই তিনটা পড়ছি।
আবারও রিক্সা দিয়ে বাসায় আসা। সফল অফিসের ট্যুর দিয়ে মামার বাসায় ফেরা। এসেই কি খাইছি- না খাইছি তা খোজ নেয়া। তবে আজ খুব আনন্দের ঘটনা ঘটছে তা হলো ব্লগার মীরের আগমন। ব্লগের হোমপেজ দেখে তো আমি তাজ্জব। এতোদিন ছিলেন না, এতো অভিমান সব পানি হয়ে গেলো উনার প্রত্যাবর্তনে। ভেবেছিলাম উনি আর লিখবেন না এই বছরে। চুপিচুপি হয়তো পড়ে যেতে পারেন তার প্রিয় কমিউনিটি ব্লগে। তবে না লিখলে তার মুল্য কি? আমি যে ব্লগার মীরের সত্যি অনেক বড় ফ্যান। কোনো একদিন আমি শাপলা আপুর বাসায় গেছিলাম কাজে, উনি আমাকে মীর নিয়ে শত প্রশ্ন করলো। আমি তার লেখার ফ্যান, কি করে না করে তার খোজ রাখি না রাখতেও চাই না। কারন আমার কাছে উনার লেখাটাই বড়। পরিচয় থাকা না থাকা কোনো ঘটনাই না উনার এতো দারুন লেখার হাতের কাছে। নিয়মিত হোন ভাইয়া, আগের মতো ব্লগে লিখতে শুরু করেন, আপনাকে আমি অত্যন্ত ভালো পাই!
সুনীল শীর্ষেন্দু পড়েননাই কেন?!
মীর ভাইরে দেইখাই মন ভালো হইয়া গেছে। গত কয়দিন ব্যাপক মিস করছি লোকটারে। দেইখেন, এখন থিকা এবি আবার আস্তে অস্তে জমজমাট হইয়া যাইবো।
পড়া হয় নাই। সামনে পড়বো
ওতো আশাবাদী না আমি!
একদিনেই
টুটুল ভাই আর সাঈদ ভাই
এর নতুন লেখা!
আমি আশায় বাঁচি!
কী আশায় বাঁধি খেলাঘর, বেদনার বালুচরে!
শেষের প্যারাটা পাঠোদ্ধার করা গেলো না। স্যরি
যাই হোক, আপনার লেখা যে আমারও খুব প্রিয় এই পুরান কথাটা আজকে আবার শুইনা রাখেন।
হেহেহে
অনেকদিন বাদে আপনার কমেন্ট পায়া দিল খুশ। নিয়মিত লিখে যান ভাইয়া!
এমন দিন আরো কাটান!
সময় বড় অল্প। কাজ অনেক। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কিছুতেই কুলাতে পারছি না।
ভাইরে দেরি করো না। কাজ এখন থেকেই শুরু কর। পরে আর সময় থাকে না।
আপু কাজ তো করছি। এমবিএর ক্লাস ও এক্সাম চলছে। এমবিএ শেষ হলেই কোথাও ঢুকে যাবো!
মীর ভাই তো এই ব্লগের ই পোলা
আশি টাকা না হয় ওনার তোলা
ফিরে আসবেন, লিখবেন অবশ্যই।
হিহিহি
তোমার পোষট পড়তে পড়তে কি কমেনট করতে চেয়েছিলাম ভুলে গেছি

মন্তব্য করুন