ঘুরে ফিরে আসার গল্প!
অনেক দিনের পর লিখছি। এত লম্বা বিরতিতে আমার লিখতে মোটেও ভালো লাগে না। তাও উপায় ছিল না। কারন প্রথমত, প্রিয় মোবাইল সেটটা নষ্ট আগে যে মোবাইলে লিখতাম তা বন্ধ এবার। দ্বিতীয়ত ল্যাপটপ নিয়ে গিয়েছিলাম তাতে লেখা যেত, কিন্তু বিধি বাম মামা এক্টার্নাল ইউএসবি কিবোর্ড নিয়ে যায় নি আর আমি ল্যাপটপের কীবোর্ডে লিখতেই পারি না। চেষ্টা করলাম বাড়ীতে কত- হয় না, বারবার এফএন টিপে লেখা আমার কম্ম নয়। তাই ল্যাপটপ দিয়ে খালি চার পাঁচটা সিনেমাই দেখলাম। ভেবেছিলাম এন্ড্রয়েড সেট দিয়ে লিখবো- কিছু দূর লিখে মনে হলো এর চেয়ে মাটি কাটার কাজে কম পরিশ্রম, তাই আর লেখা হলো না। ব্লগে নতুন দুয়েকজন ব্লগার দেখলাম। দেখে ভালো লাগলো। কিন্তু এবির যা সমস্যা তাই থেকে যায়- পোষ্ট পড়ার লোক নাই। যখনই দেখছি বারবার- লোকজন নাই তখনই মন চায় একটা পোষ্ট লিখে ফেলি যা ইচ্ছে তাই। কিন্তু নিরুপায় তাই শুয়ে বসে দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। তাই ঢাকায় বিকেলে নেমেই রাতের বেলা এই পোষ্ট লিখছি, নিজের ঘুরাঘুরির ফিরিস্তি জানাতে!
চিটাগাং থেকে ফিরেছিলাম সাতাশ তারিখে তার পাঁচ দিন পরেই তিনদিন ক্লাস করেই চিটাগাংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম হুট করেই। কাজ ছিল আর দুই তিনদিন পরে কিন্তু ঝোকের মাথায় হানিফের রাতের টিকেট কেটে ফেললাম। ঝোকের মাথায় কাজ কখনই ভালো হয় না এই কাজটাও ভালো হয় নি। কলাবাগান বাসস্ট্যান্ড থেকে সাড়ে এগারোটায় বাস ছাড়ার কথা। আমি এগারোটায় এসে ভাব নিয়ে বসে আছি, ওমা বাস আর দেখি আসে না। সকল ভাবের হলো অবসান, বাস আসলো পাক্কা তিন ঘন্টা লেটে। পুরা কাউন্টারে আমরা ছাড়া আর কেউ নাই। তাও উঠলাম সবার শেষে সিট। আই ফোর। এত ভালো সিট বাপের জন্মে পাই নি। বাস ছাড়তে না ছাড়তেই মাথায় খেলাম বারি, কষে ব্রেক করার কারনে। ব্যাথা পেলাম তীব্র কিন্তু কোনো শব্দ করলাম না। আমার পাশের ছেলেটা কোন ব্যাথাই পেল না, কিন্তু সে অভিনয়ে সেরা। আমাকে বলে উঠলো ভাইয়া বাস থামান। আমি তো অস্থির মানুষ চেচিয়ে সুপারভাইজারকে ডাকলাম। লাইট জ্বালিয়ে দেখলাম কিছুই হয় নি। তাও সে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। সেভলন এনে দিল সুপারভাইজার। আমি যে লাগাবো কোথাই তাই ভাবছিলাম, কাটেই তো নাই কোথাও। পরে বেচারাকে সান্তনা দিলাম, ড্রাইভারকে গালিগালাজ করলাম আর মনে মনে হাসলাম ব্যাথা পেলাম আমি কপাল ফুললো আমার আর চেচায় ও! বলদ গাছে ধরে! এরপর থেকে আমার ঘুম উধাও, ড্রাইভার হানিফ সুলভ তুমুল টানছে, আমি খালি বাউন্স খেলার মতো লাফাচ্ছি। শক্ত করে ধরে বসে আছি যেন ব্যাথা না পাই। প্রতি মিনিটে মনে হচ্ছে এই গেল জানটা। পুরো রাস্তা জান হাতে নিয়ে বাসে ছিলাম। বিরতি যখন দিল বিশ মিনিটের ভালো করে চিকেন ঝাল ফ্রাই দিয়ে পরোটা খেলাম, মনে হচ্ছিলো এটাই শেষ খানা জীবনের। দুই কাপ চা খেলাম কারন জেগে থেকেই এই মরন যাত্রাটা আবার করতে হবে। বাসে উঠেই আয়তুল কুরসী থেকে শুরু করে যত দোয়া জানি সব পড়লাম। ভোর হয়ে গেল। তখন উপভোগ করা শুরু করলাম এই লেনস্পিটারের মতো খেলা। ভালোই লাগে ঝাকিতে। নয়টায় পোঁছে ছোট বাসে উঠলাম। এই বাস নামিয়ে দিবে জিইসি। সেখান থেকে সিএঞ্জি খুজি, প্রমিত উচ্চারন শুনে ভাড়া চায় পঞ্চাশ টাকা বেশী। শেষে পাওয়া গেল। গিয়ে দেখি আমি আসবো বলে সোহেল অফিস যায় নি, দাঁড়িয়ে আছে ওর বিল্ডিংয়ের সামনে। আমি তো তা জানি না। জানলে বলতাম একে খান আয়, রিসিভ করে নিয়ে যা।
পাঁচ দিনের ব্যাবধানে আবার চিটাগাং গিয়ে খারাপ লাগলো না মোটেও। দারুণ কাটে সবসময় তেমনি কাটলো। খালি আবীর ছিল না। খুব মিস করছি। শুক্রবারের দিন গেলাম স্টেডিয়াম দলবেঁধে। কড়া রোদে বসে বসে মমিনুলের সেঞ্চুরী দেখলাম। ভালোই লাগে, একটা চার হলেই যে চিল্লানিটা দেই মনে হয় খেলায় জিতে গেছি। বেলিসিমো আইসক্রিম খেলাম মেলা। আমার আইসক্রিম ভালো লাগে না তাও সেইদিন আইসক্রীমের চেয়ে মজার খাবার আর নাই। একেকটা চায়ের দোকানের বার্গার বেচতেছে চল্লিশটাকায় তাও খেলাম তিনটা করে। ধারনা ছিল কঠিন পেট খারাপ কিংবা জ্বর হবে যে গরমে ছিলাম। কিন্তু আল্লাহর রহমতে কিচ্ছু হলো না। আড্ডাবাজি করেই দিন কাটলো। আমার আসার খবর কাউকে দেই নি। চারজনই জানে আমরা আমরাই আড্ডা দেই। এর ভেতরে দুইজন অফিস করে তখন আমরা তিনজন আড্ডা দেই। পুজা তখন মাত্র শুরু এলাকার চার পাঁচটা প্যান্ডেলে ঘুরলাম। বীভৎস শব্দ দুষন তাও ভালো লাগে মানুষের উৎসব দেখতে। চিটাগাং নাকি হেফাজতের শহর, আমি তো গিয়ে দেখি ব্যাপক মানুষ পুরা মেলা মেলা ফ্লেভার। ধারনা করি তার ভেতরে আট আনা মানুষই মুসলিম। দারুন লাগছিল। বইপড়ুয়া গ্রুপে নতুন দোকান বাতিঘরের অনেক গল্প শুনা হয়েছিল। তাই দূরে হলেও চলে গেলাম একদিন বাতিঘরে। শালার কি কপাল! সেইদিনই প্রাইমিনিস্টার প্রেস ক্লাবে আসবে তাই বাতিঘর বন্ধ। প্রথমাতে গেলাম পাশেই, দুই বন্ধুকে দুটা বই কিনে দিলাম। পুরানো যে বাতিঘর রাস্তার ওপাসে সেখানে গেলাম। ছোট্ট দোকান কিন্তু অনেক চমৎকার রেয়ার রেয়ার সব বই, আমার টেকাওয়ালা বন্ধু আসে নাই থাকলে চার পাঁচ হাজার টাকার বই কিনতাম ধার নিয়ে। চা খেলাম গাছের নিচের এক দোকানে সাথে কুয়া। ভালোই লাগলো পরিবেশ। চুটিয়ে আড্ডা জমলো। অফিস থেকে আরেকজন আসলো। চারজন মিলে গেলাম জিইসি মেশিন রিকসায়। চিটাগাং ভর্তি এখন এগুলা রিকশায়। চলেও খুব দ্রুত। কিন্তু আমার কেন জানি এই বাহন ভালো লাগে না। ক্যান্ডিতে বিরিয়ানী খেলাম। ক্যান্ডির বিরিয়ানী ভালো কিন্তু পরিবেশটা ভালো লাগেনা কেন জানি! আবার জামালখান গেলাম। এবার দেখি বাতিঘর খুলছে। সত্যি কথা বলছি এত বিশাল বাংলা বইয়ের দোকান আমার ক্ষুদ্র জীবনে দেখি নাই। দারুণ স্পেস, দারুণ সব বই। পড়ার দারুণ ব্যাবস্থা। আমি যে আমলে চিটাগাং নিবাসী ছিলাম সেই সময় এরকম দোকান থাকলে এত বই কি আর অপঠিত থাকতো? পরিবেশ দেখে আমি পুরো মুগ্ধ। দুইটা বই কিনলাম, পড়া বই। বন্ধুদেরকে পড়ানোর জন্য। তারা খুব খুশী।
যেকাজে আসছিলাম সে কাজের সময় হয়ে গেল। ভাই ভাবীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু লালন ভাইয়ের বিয়ে। সেদিন কেবল গার্মেন্টস গুলো ঈদের বন্ধ দিছে। জ্যামে দিশেহারা সিএনজি পাই না। প্রায় তিন কিলোমিটার হাটলাম তারপর এক বাসে উঠলাম। সেখান থেকে নেমে আবার আরেক হাটা দিলাম তারপর নিলাম সিএঞ্জি। দাওয়াত খেলাম। তিন বন্ধু এক সাথে হাটলাম পথে পথে। প্রায় রাত তিনটার দিকে বাসায় ঢূকলাম। পুজা আর ঈদের ছুটি, রাতেও অনেক মানুষ রাস্তায়। তাই ভয় ছিল না। পরের দিন বিকালে বাসে উঠলাম। ডাইরেক্ট জামালপুর। খারাপ না বাসটা। তবে চারিদিকে লোক। মুরাতে বসা লোক, দাঁড়ানো লোক, ছাদের উপরে লোক তবে এবার টেনশনে ছিলাম না মোটেও কারন সাথে আছে মামা। নির্ভাবনায় ঘুমালাম। কারন জানি মামা ঘুমায় না জার্নিতে। বাড়ীতে এসে পড়লাম সকালেই। সকালের নাস্তা দিয়েই ব্যাপক খানাদানা অধ্যায় শুরু!
বাড়ীতে যেমন যায় তেমনই গেল। টিভি দেখা, খাওয়া ঘুম ও বই পড়া। মাঝে মাঝে আব্বু আম্মুর সাথে আড্ডা দেয়া। তবে এবার নানু বাড়ীতে ছিলাম তিনদিন। ভালোই লাগলো। নানু বাড়ী তো সুন্দর একটা গ্রামে। নদী পাড়ে বসে চা খাওয়া, টিভি দেখা, বিয়ে খাওয়া, মামার সাথে রাতে হাটা সব মিলিয়ে অসাধারণ। তাও বেশী দিন থাকতে ইচ্ছা করে না। কারন নিজের বাড়ী, নিজের রুম, নিজের প্রাইভেসী মেইনটেন করে নিজের মত করেই থাকতে মন চায়। তাই আম্মুর ইচ্ছা ছিল থাকার আমার কারনে এসে পড়লো। বাড়ীতে দুইদিন থাকতে না থাকতেই এসে পড়লাম ঢাকায়। কারন পচিশ তারিখে যদি ফ্যাসাদ হয় তবে আসা আরো পেছাবে। ক্লাস আছে তাই ফিরে আসলাম এই নষ্ট শহরে গেইটলক বাসে চেপে!
অফিসের কাজে মাঝে মাঝে চিটাগাং যাওয়া হয়। যে ক'টা দিন থাকা হয়, দিনের বেলা কাজ আর বিকাল থেকে অনেক রাত অবধি ঘুরে বেড়াই, দারুণ লাগে।
তাই নাকি? এরকম একটা অফিসে চাকরী পেলে আমার জন্য খুব মজা হইতো!
শান্তর লেখা পড়ার অপেক্ষা করেছি ।
হিংসা লাগে তোমাদের। ক-ত-দি-ন যে কোথাও যাই না!! একবার কক্সবাজার থেকে ফেরার পথে হানিফ বাস দিয়ে ফিরলাম, সারারাত আমি চোথের পাতা এক করতে পারিনি। সারাক্ষণ দোয়া পড়েছি শুধু। বারবারই মনে হচ্ছিলো এই বুঝি গেলো!! এরা এমন বেপোরোয়া কেন?
এবার ভালোই ঘুরলা।
এইটা তাদের গ্র্যাভেটী হিসেবেই ধরে নেয়। ধারনা করে নেয় যাত্রীরা জেনে বুঝেই এই মরন যাত্রায় এসেছে। এক্সিডেন্ট হলে তো হলোই কিন্তু সেই আতংক যদি ৬-৭ ঘন্টার জার্নিজুড়ে থাকে তাহলে কি বিপদ!
থ্যাঙ্কস আপু আপনারা পড়েন বলেই তো লিখি। নিয়মিত কমেন্ট ও লেখা চাই!
ঈদের টিভির সিরিজটা কবে আসবে? সেটার কথাতো বললা না?
(
টিভি আগের মতো দেখি নাই তাও যে দেখছি অনেকের চেয়ে বেশী। লিখবো আপু। আপনাদের জন্যই তো লেখা!
ছোটবেলা ভাবতাম বড় হলে খালি বোহেমিয়ানের মতো ঘুরে ঘুরে বেড়াবো।
হয়নি।
তোমার সাথে একচক্কর আমিও ঘুরে এলাম ।
এভাবেই ঘুরে বেড়াও আর তার আনন্দের ভাগ আমাদেরও দাও।
শুভেচ্ছা।
থ্যাঙ্কস আপু, আপনিও বিদেশ থেকে ঘুরে আসেন। কি আর আছে জীবনে!
জয়িতা'পুর মতো অবস্থা আমারও হইছিলো। কক্সবাজার থেকে আসর সময়। সিট পেয়েছিলাম একেবারে শেষ লাইনে। প্রথম দিকে বলের মতো লাফ-ঝাপ, রোলার কোস্টারের মতো পিছলানি ভালোই লাগতেসিলো। তারপর একসময় আতঙ্ক চেপে ধরলো। আমি ভাবতাম আমার হয়তো মৃত্যুভয় নেই। কিন্তু দেখলাম বিষয়টা সত্যি না। বেঁচে থেকে কিছু পাওয়ার নেই জেনেও একজন মানুষ মরে যেতে ভয় পায়। যাই হোক, মাখনের মতো স্মুদ হয়েছে আপনার লেখা ভাইজান। পড়ে খুব মজা পেলাম
সেইম ফিলিং, মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনে বেঁচে থেকে কি আর করলাম তাও যখন এরকম পরিস্থিতি আসে তখন মনে হয় আকাঠ মূর্খের অলস জীবন হোক তাও এতো হেলায় ফেলায় জীবনটা চলে যাক চাই না!
প্রিয় লেখকদের কম্লিমেন্ট শুনতে ভালো লাগে। আপনার লেখা কই?
খুব ভাল সেই যে গেলা এতদিন পরে এলে। এসে আবার মজা করে বেড়ানোর কথা বলা হচ্ছে।?
কতদিন নিশ্চিন্তে ঝামেলাহীন ভাবে বেড়াইনা। খুব মিস করি ঐ জীবন।
এখনতো কোলে একটা কাখে একটা এয়াতার প্যা ওটার পো এর খুধা ওর টয়লেট এর ঘুম ওর মশা এর স্যান্ডেল ছিড়ছে ওর চুল
আপনার জীবনটাও ভালো আপু। কতো কি সামলাতে হচ্ছে প্রতিদিন, তার মধ্যেও ব্লগে আসেন, ফেসবুকে থাকেন সত্যি দারুণ!
পোলাপান কত্তো ঘুরে, কি নিশ্চিন্তে যায় আসে
আপনারা ছবি টবি তুলে ও রান্না বান্না করে ফাটায় ফেলতেছেন, আর আমি তো সামান্য চিটাগাং জামালপুর ঘোরা ফেরা করি
আহা! কতদিন কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় না।
বি বাড়িয়া থেকে ঘুরে আসো!
টাইম নাই!
বাসার ছোট ছেলেদের সহজে অবসর মিলে না!
মন্তব্য করুন