দৈনন্দিন সুখ দুঃখ!
দেশের অবস্থা খুব একটা যুতের কিছুতে না, পঞ্চম কিস্তির অবরোধ চলছে কিন্তু মনে হচ্ছে কেয়ামত পর্যন্ত এইভাবেই অবরোধ চলবে। এক বন্ধুর মুখে শুনলাম আস্তে আস্তে নাকি মানুষ অবরোধ মানিয়ে নিচ্ছে, মনে মনে ভাবছিলাম মানানোর আর জিনিস নাই দেশে শেষমেষ অবরোধ দাঙ্গা হাঙ্গামা এইসবও মানিয়ে চলতে হবে। মানাতে মানাতে আর সবুর করতে করতে জানা নাই আর কত? এদিকে তো আমাদের পিঠের চামড়ার আর কিছুই বাকী নাই, তবুও আমরা ঝিনুকের মত নীরবে সয়ে যাচ্ছি। এর বাইরে মনে হয় না আমাদের তেমন কিছু করার আছে! আমার দোড় সমন্ধে আমি অবশ্য সচেতন- ল্যাপটপে বসে ফেসবুকে জ্বালাময়ী স্টেটাস লেখা আর চায়ের দোকানে বসে চাপা পিটানো। তার ভেতরে আব্বু খালি ফোন দিবে আর জিগেষ করে বলবে বাসায় যা-বাসায় থাক- এত বাইরে কি? ঢাকায় গন্ডগোল, জামালপুরে এসে পড়!
কিন্তু ফেসবুকে বা আশেপাশে সবাইকে দেখি সুখে শান্তিতেই আছে, নির্বিকার চিত্তে আনন্দময় সময় উদযাপনে ব্যাস্ত, সবাই ভালো খাচ্ছে ঘুমাচ্ছে, আড্ডা মারছে কেটে যাচ্ছে দিন। আমিও কোনও না কোনো ভাবে হয়তো সেই সার্কেলেরই মানুষ। যার বাসায় বই, বাইরে আড্ডা আর রাতে ল্যাপটপ চালানো ছাড়া কাজ নাই। অবশ্য আরেকটা কাজ আমি করি সারাদিন মন খারাপের ভাব নিয়ে বসে থাকা। যদিও সবারই বিষণ্ণ লাগে কিন্তু আমার তেমন অনিবার্য কারন নেই এমন থাকার- তাও থাকি নিত্তদিন। শত সহস্র কথা বলি, নানা শ্লীল অশ্লীল টপিকসে আড্ডা জমাই তারপরও রাতে বাসায় ফিরি বিষণ্ণতা নিয়ে। নিজের এই ডাবলস্ট্যান্ডার্ডে নিজেই কিছুটা বিরক্ত, মনকে প্রবোদ দেই দেশ ঠিক হয়ে গেল আমিও হয়তো আবার ঠিক আনন্দেই ঘরে ফিরবো!
বাজারে যাই না আমি কখনোই, রান্নাও করি না। বুয়া আর মামা ঐ দুই ডিপার্টমেন্ট দেখে। তবে মাঝে মাঝে পুলকের সাথে শখের বসে হাটতে হাটতে বাজারে যাই। দেখি কৃষিমার্কেটের বাজারে খালি মানুষ আর মানুষ। একেকটা সব্জীর দাম শুনে অবাক হই, ভাবি মানুষ কী খেয়ে বাঁচে তাহলে? নিজের নরমাল কমন্সেন্স বলে এই সময়ে সব্জীর দাম থাকে কম- কিন্তু এখন যা দাম তখন নিজেকে সান্তনা দেই এই বলে তেমন সব্জি খেতে পছন্দ করি। আলু, বেগুন, সীম, টমেটো, ফুলকপি ঢেড়শ এইগুলাই একটু খেতে পারি। আবার এর বাইরেও অনেক সব্জী আছে যা জোর করে খাই। তবে সব চেয়ে বেশী খেতে হয় ডিম। আমি যে ডিম খাইছি এই তিন বছরে তা বাপের জন্মে মানুষ এক জীবনে খায় না। সেইদিন এক বন্ধুর বাসায় খাচ্ছিলাম, ডাল ভাতের কথা বলে তিনি অনেক আইটেমের ব্যাবস্থা করেছেন, আমি ডিম খাইই না কারন ডিম ভুনার তরকারীতে এখন আমার সবচেয়ে মেজাজ খারাপ হয়। এই পোষ্টও লিখছি ডিমের তরকারী দিয়ে ভাত খেয়ে দেয়ে বসে। বেঁচে থাকতে হলে কত অপছন্দের খাবার গিলতে হয় তা কেবল আমার মত দরিদ্র ছাত্ররাই জানে। যাই হোক বাজারে এত দাম তাও দেখি মানুষের কেনা থেমে নাই। সমানে কিনে চলছে। কেউ কেউ অবশ্য ৫০০ গ্রাম ও ২৫০ গ্রাম করে কিনছে। এইসব ক্রেতাদের দেখলে মনটা কেমন জানি করে, মনে হয় আহারে বেচারার বাজার করার টাকাটুকা নাই! আর অনেকে বাজার করেই যাচ্ছে এতই বেখেয়াল যে ৫০০ টাকার নোটও পড়ে গেলেও দেখছে না। কেউ তুলে দিলে বলে উঠে ও আমার টাকা পড়ে গেল কিভাবে? তখন বলতে ইচ্ছা করে তোর বাপে ফালাইছিল তাই! আমার অবশ্য পুলকের সাথে বাজারে গেলে ফায়দা আছে । নাহার হোটেলের সিঙ্গারা আর চা খাওয়া যায়, দুটাই আগুন গরম। জিহবা টিব্বা পুড়িয়ে এইসব গিলতে হয়!
খানাখাদ্যের মিথস্ক্রিয়ায় ভুড়ি খালি বেড়েই চলছে। সকালে হাটতে বের হই না ও ব্যায়ামও করি না। যেভাবে আছে সেভাবেই চলছে। বন্ধু আবীর কিছু ব্যায়াম দেখিয়ে ছিল তাও করি না।ব্যায়াম না করলে নাকি পেটের ভুড়ি কাটে না। কিন্তু ব্যায়ামেই আমার এলার্জি, ইচ্ছাই জাগে না। খালি বসে থাকি নয়তো দাঁড়িয়ে থাকি এর বাইরে কিছু করার নেই। তবে ইদানিং আগের ফর্মে হাটতেছি, তবে তেমন হাটার জায়গা নাই। আগের মত উদাস হয়ে হাটতে আর ভালো লাগে না বরং প্রয়োজনে হাটি! যেমন শুক্রবারে ধানমন্ডী ৮ য়ে হেটে গেছি ও হেটে আসছি। শিমুল মোস্তফার আবৃত্তি, দারুণ হইছে অনুষ্ঠানটা। পেছনে বসে ছিলাম আর লোকজন খালি এসে জিগেষ করে 'ভাই গানবাজনা নাই'। আমি তো আর লোকজনরে বুঝাতে যাইনা যে গানবাজনার চেয়ে মহৎ কাজ হচ্ছে এখানে। সাধারনত আবৃত্তির কবিতা গুলো আমি চিনি- ঘুরে ফিরে একই সার্কেলে চলে সবাই।কিন্তু এখানে দেখলাম অজানা অনেক কবিতাই পড়া হলো। বইটা কিনে এনেছি- মাঝে মাঝেই চোখ বুলাই। সুবোধ সরকার নামের এক কবি এবার সাহিত্য একাডেমী পদকে ভুষিত তার দু তিনটা কবিতা মনে ধরছে, আরেকটা কবি আছে অরনী বসু নাকি কি নাম তার 'জলতরঙ' কবিতাটা ভালো লাগলো। সুভাষ মুখ্যোপাধ্যায়ের কবিতা গুলাও খুব সুখপাঠ্য। হাটতে হাটতে যখন সে রাতে ফিরছিলাম সে রাতে তখন খুব আনন্দ লাগছিল। তবে হাটা শেষে এখন ক্লান্ত লাগে খুব আগে যা অল্পই লাগতো। মনে হয় যেন যাত্রাবাড়ী থেকে হেটে আসলাম চার ঘন্টায় তাতে শরীর ভেঙ্গে পড়েছে!
কলকাতার এক নতুন সিনেমা আসবে নাম 'জাতিস্মর'। সৃজিতের বানানো ও কবীর সুমনের মিউজিক ডিরেকশনে। সেই সিনেমার গান গুলো খুব মনে ধরেছে সারাদিন কম বেশী শুনি। ঘুম থেকে দেরী করে উঠি ও ঘুমোতে যাইও দেরীতে। ভোরের বেলা আধ অচেতনেই বিবিসি বাংলা শুনি। ৬০ শতাংশ খবর মনে থাকে না তবে ৪০ ভাগ মনে রাখি! এই জিনিস টা খুব ভালো লাগে যে গভীর ঘুমেও আমি সাড়ে ৬ টায় উঠে মোবাইলে বিবিসি বাংলা শুনে আবার ঘুমিয়ে পড়ি। লোকজন আজ দেখলাম সাউথ আফ্রিকা আর ভারতের খেলা নিয়ে খুব উত্তেজিত। শেষমেশ টেস্ট ড্র, খেলা দেখি নি মোটেও তাও টেস্ট ক্রিকেটের এই অসাধারণত্ব আমাকে বিমোহিত করে। খালেদ খান মারা গেল, উনার জন্যেও মনটা খারাপ হয়। সিরিয়ালে আস্তে আস্তে খ্যাত অখ্যাত সবাইকেই মরতে হবে এইটা ভাবলে একধরণের নিরাসক্তি জাগে জীবনের প্রতি। কোন এক সিনেমায় গান আছে বেঁচে থেকে লাভ কি বল? আমার মনে হয় যেভাবেই হোক বেঁচে থাকাটাই লাভ এখানে লসের বালাই নেই!
এই হইলো আমার বাবা-মার অবস্থা। ফোনের এই যন্ত্রণার জন্য আমি বাসায়ই বসে থাকি।
ডাল -ভাতের আইটেমগুলি বললা না!
অসময়ে আনেকে চলে যাচ্ছেন, এটা খুব মন খারাপ করে দেয়।
আইটেমের নাম বলে আর লোকজনের মুখে জল আনতে চাই না, তবে যে খেলাম পেট উপচিয়ে পুরাই অস্থির!
এই জীবনের ডিম আর পাউরুটির কোটা শেষ হয়ে গেছে। আর না খেলেও চলবে
ভাবী এসে পড়েছে এখন আর কোনো ভাবনা নাই, খালি খাবেন আর রাঁধতেই হবে না!
ভালোই বলেছ।
কী অদ্ভুত অদ্ভুত বিষয়গুলো আমাদেরকে মানিয়ে নিতে হচ্ছে ভাবতেই অবাক লাগে।
থ্যাঙ্কস আপু:)
আমরা কি আতংকে আছি?আছি। বড় অস্থির সময় যাচ্ছে। তারউপর শুরু হইছে বৈদেশী দেশ দরদীদের আহা উহা। অসহ্য। কথায় কথায় দেশে থেকে কত ভুল করছি। আমি দৃপ্তকণ্ঠে আমার আশাবাদ ব্যাক্ত করি ওরা হাসে। শেষে বলি তোমাদের বাপের দেশে তোমরা ভাল থাক আমার মায়ের মত দেশে আমি সংগ্রাম করেই থাকব তবুও আমার দেশ। মেনে নেই নাই কিছুই অপেক্ষায় আছি ভাল সময়ের।
দেখা যাক আপু কী হয়, ভালো থাকেন আর সাবধানে থাকেন!
ভালো লাগলো জীবনের কথকতা। মন খারাপ হয় প্রতিনিয়ত।
এইটাই এইদেশের জীবন, কি আর করবেন!
ডিম সংক্রান্ত আলোচনাটা বেশি মজার
তাই নাকি? আগে জানলে আরো কিছু কথা লিখতাম এ নিয়ে
আমি যখন এখানে পড়তাম লাগাতাম ডিম ভুনা আর ডাল খেয়েছি খাইয়েছি
সাবাশ!
তাহলে এখন রান্নাবান্না করতে বোর লাগে কেন?
পুলাপানের সাথে কথা কওয়াও বোর
(
আমি আবার কি করলাম, আমি তো আপনারে কতো ভালো পাই!
মন্তব্য করুন