তখন থাকবে পরে এক ফালি এই দিন!
দিন যাচ্ছে যত বাঙ্গালী মধ্যবিত্তের যত স্মৃতিময় সময়ের গল্পগুলো ছিল, সেই গল্পের মানুষগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। সুচিত্রা সেন তো সেই কবেই সিনেমার সোনালী দুনিয়া থেকে চলে গেছেন, থাকতেন একেবারেই অন্তরালে। এবার সেই অন্তরাল থেকেও হারিয়ে গেলেন। আমার অবশ্য তাতে খুব একটা কষ্ট নাই, অনেস্টলি স্পিকিং আমি সুচিত্রা সেনকে আমার সময়ের সঙ্গে রিলেট করতেও ফেইল করেছি। তাঁর সপ্তপদী কিংবা হারানো সুর আমিও টিভিতে দেখছি কিন্তু আগের মানুষদের মত সেরকম মুগ্ধ হই নাই। ফ্যান্টাসীও জাগে নাই। তার চেয়ে রাজ্জাক ববিতার সিনেমা কম্পারেটিভলি আমার বেশী স্টানিং লাগছে টিভিতে। আর আমরা এমন এক নষ্ট প্রজন্মে জন্ম নিছি যারা সিনেমা হলের চেয়ে টেলিভিশন কিংবা কমিকস বইকে বেশী আপন করে পেয়েছে। তাই সিনেমার যে চার্ম তা আমি খুব বেশী ফিল করতে পারেন না। তাই সুচিত্রা সেনের গ্ল্যামারের বর্ননা আমার মুরুব্বীদের মুখেই শুনতে হয় আর পত্রিকাতেই পড়তে হয়। এরকম একটা গল্প আছে- জানি না সত্য মিথ্যা, পাকিস্তান আমলে একবার নাকি বোর্ডের কোন পরীক্ষায় আসছিলো বাংলায় উত্তমের বিপরীত শব্দ, সবাই নিঃসংকোচে লেখে আসছে- সুচিত্রা। আসলে সময় মানুষকে নানান ভাবে ভাবায় ও নানান কিছুতে আচ্ছন্ন করে, রশীদ করীমদের আমলে তিনি ছিলেন নায়ক প্রমথেশ বড়ুয়ার ফ্যান, সুনীলের আমলে সুনীল ছিলেন মেরিলিন মনরোর ভক্ত, এরকম যে সময়ের যারা স্টার। তবে ফান করে আমি বলতে পারি- আমরা বেঁচে ছিলাম অনন্ত জলিলের সময়ে!
সুচিত্রা সেনের বয়সী কাউকে যে আমি পছন্দ করি না এমন না। আমার অন্যতম প্রিয় শিল্পী জোয়ান বায়েজ যিনি সুচিত্রা সেনের ১০ বছরের ছোট, উনার সিক্সটিজ সেভেনটিজের গান গুলার ভীষন ভক্ত আমি। একটু আগেও ক্লাস করে ফিরছিলাম বাসে বসে বসে ডোনাভান আর জোয়ান বায়েজের ইয়েলো ইজ দ্যা কালার গানটা শুনছিলাম টানা। তবে সুচিত্রা সেনকে নিয়ে আমি আজ ভালো রিপোর্টটা পড়েছি কালেরকন্ঠে। সেখানেই বলা আছে দীননাথ সেনের পুত্র বধু সুচিত্রা সেন। দীননাথ সেনের নাম শুনেই মাথাটা চক্কর মারলো, মনে পড়ে গেলো সব হুবহু। গেন্ডারিয়ার পত্তন করেছিলেন তিনি, মুনতাসীর মামুনের বইতে পড়েছিলাম। আগে গেন্ডারিয়া ছিল ঘন জঙ্গল, বন্য জীব জন্তুতে পরিপুর্ন। পুর্ববঙ্গের স্কুল পরিদর্শক ও একজন প্রভাবশালী নাগরিক হিসেবে তিনি ও তাঁর আরো কিছু বন্ধুবান্ধব মিলে এখানে বাড়ী করা শুরু করেন। তারপর থেকে গেন্ডারিয়া ঢাকার মধ্যবিত্তদের আবাসিক এলাকা হিসেবে বসবাস শুরু হয়। সেই বিখ্যাত বাড়ীর পুত্রবধু তিনি। গেন্ডারিয়ার কোন এক লোক নাকি আশির দশকে সুচিত্রা সেনের বাড়ীতেও গিয়ে ছিলেন। গেন্ডারিয়া থেকে এসেছেন শুনে তাকে খুব আদর আপ্যায়ন করা হয়। ইতিহাসের এই সব জিনিসে আমি খুব মুগ্ধ হই। কতো কিছু এক সাথে রিলেটেড করে দেয় সময়ের ব্যাবধানেও।
অনেক কথা বলে ফেললাম, এবার এক এই যুগের নায়িকা নিয়ে কথা বলি। প্রতিমাসে আমার দুই খানা করে কলকাতার 'আনন্দলোক' পড়ার অভ্যাস। পত্রিকার দোকানদার আলাউদ্দীন আমার জন্যই আনে শুধু আনন্দলোক একটা। না নিলেও পড়ে থাকবে- আমি কবে নিবো এই জন্য। টাকা না থাকলেও নেয়া মিস নাই। এই কারনে বলিউড টালিউড নিয়ে আমার ভালো জানা শোনা হয়ে গেছে। যদিও আনন্দলোক খুব একটা যুতের পত্রিকা না। সলিমুল্লাহ খানের ভাষায় বলতে হয় 'অরুচিকর ও অশ্লীল'। তাও পড়ি কারন আমরা কেউই সাধু সন্নাসী না, হুমায়ূন আহমেদ পড়লে যেমন পাবলিকেরা শান্তি পায়- আমারও তেমন শান্তি লাগে বলিউড হলিউডের গসিপ পড়তে। চান্স পেলেই ঝেড়ে দেই সেই পড়াশুনা, তাতে পাবলিক খুব খুশী। যাই হোক কলকাতার এক নায়িকা আছে নাম শ্রাবন্তী। অনেকেই চিনবেন, কমার্শিয়াল নায়িকা, 'গয়নার বাক্সে' ছিল। তার ডিভোর্স হয়েছে পরিচালক রাজীবের সাথে। দীর্ঘদিনের সংসার। আনন্দলোকে ইন্টারভিউ দিতে যেয়ে বেচারী নায়িকা কেঁদে কেটে অস্থির। রাজীব নাকি তাকে মারতো। আনন্দলোকের সাংবাদিক যেনো গোয়েন্দা কর্মকর্তা সমানে প্রশ্ন করছে-- এক মাসের ব্যাবধানে এত দামী গাড়ী ফ্ল্যাট কিভাবে কিনলেন? নতুন নাকি কোন এক ব্যাবসায়ীর সাথে আপনার প্রেম চলছে? ছেলেকে এত দামী স্কুলে ভর্তি করলেন? আমি উত্তর পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম তারকাদের জীবন কেমন যেন, সব কিছুই তাদের সিনেমার মতোই ড্রামাটিক ব্যাপার স্যাপার। আমাদের সাধারন মানুষদের জীবনটাই অসাধারণ।
সামনে বুধ বিষুদে, কিছুদিনের জন্য বাড়ীতে যাবো ভাবছি। ক্লাস বাদে কাজ কাম তেমন নাই ঢাকাতে। অবরোধ হরতালে তো বাড়ীতে যাবার নামই মুখে আনা যায় নাই, এখন যাওয়া যায়। পরিস্থিতি মনে হচ্ছে আস্তে আস্তে স্থির ও নরমাল হচ্ছে। বাড়ীতে অবশ্য যেতে ভালো লাগে মা বাবার কারনেই। এছাড়া ঢাকাতেই ভালো আছি কিন্তু সেখানে মা বাবা নাই। আগেও মেলা পোষ্টে বলেছি যে আম্মু ছাড়া আমি থাকবো এইটা ভাবতে গেলেই আমার চোখে পানি এসে পড়তো এক সময়। এখন কেমন জানি সব সয়ে যাচ্ছি, আগের মতো মা নিয়ে গান শুনলে কান্না পায় না। বরং সান্তনা পাই আমি তো দেশে থাকি, চাইলেই যেতে পারি বাড়ী, কথা বলতে পারি কিন্তু আমার ভাইয়ার তো ফোনে কথা বলা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। অবশ্য এইসব মা ভক্তি বাঙ্গালীর মজ্জাগত জিনিস, এইটারে মহান বানানোর কিছু নাই। কারন সত্যি সবার যদি এত মাতৃভক্তি থাকতো তাহলে দেশটার অবস্থা নিশ্চয় এরকম হতো না। তবে আমার এক বান্ধবী ছিল ইউনির সে সব সময় তাঁর মায়ের উপরে বিরক্ত ছিল বলতো বাপ আছে বলেই আছি নয়তো কবেই মরে যেতাম। একেক মানুষের একেক ধরনের চিন্তা।
প্রিয় মোবাইলটা নাই, ল্যাপটপ নিবো কিনা জানি না। ব্লগ লেখার একধরনের অসাধারণ শান্তি আছে তা না পেলে শত আরামেও বিরক্ত লাগে। তেমন কেউ পড়ে না, আমার এইসব সাধারন ত্যানাপ্যাচানো দিনলিপি গুলো। তাও নিজের জন্যই লিখি। একটা হলিউড রোমান্টিক কমেডী সিনেমা দেখতে সময় লাগে দুই ঘন্টা, আমি তা দেখা বাদ দিয়ে লিখে ফেলি দিনলিপি। বয়স যখন আরো বাড়বে তখন এই অযথা দিনলিপি গুলো রিভাইস দিয়েই হয়তো আনন্দ পাবো। যত বেদনাই থাক মনে মনে শান্তি পাবো- জীবনটা নেহায়েত মন্দ ছিলো না। সাক্ষী হয়ে পড়ে থাকবে এই দিনলিপি গুলো!
সুচিত্রা সেনের জন্য শ্রদ্ধান্জ্ঞলী
শ্রদ্ধা জানাই
তোমাকে কে বলে যে তোমার লেখা তেন কেউ পড়ে না!!! তোমার এই ভুল ধারণা বদলাও।বুঝছ?
কথা সত্যি।
সুচিত্রা সেন ভাবলেই মনটা খারাপ লাগছে খুবই। আবার আর সব সিনেমা দেখতে ইচ্ছে করছে। দেখি যদি কারও কাছে পাই।
ভালো থাকেন আপু!
পুরোনো লেখা পড়তে অনেক মজা।
হ
ঠিক বলছেন!
আমার লেখার কিছুই থাকেনা তোমার লেখার উপরে। আমি শুধু প্রতিবারই পরিপূর্ন লেখা পাই।
থ্যাঙ্কস এ লট আপু, আপ্নেরা পড়েন বলেই তো লিখি!
মোবাইল কি হইছে?
খুব প্রিয় নোকিয়া সিটু ডাবল জিরোটা নষ্ট, আর এন্ড্রয়েডের অবস্থাও আশংকাজনক, টেকা টুকা নাই!
আপনারা তো ভালোই কপালী, সব স্টাররেই কম বেশী পাইছেন অন্তত রিলেট করতে পারেন!
আমি পেট থেকে পড়ার পর পরই সুচিত্রা বাইরে বেড়োন বনধ করে দে্য। আমারে হয়ত কমপিটিটর ভাবছে

আপনার শেষ কমেন্ট পড়ে হাসি আর থামছে না!
মন্তব্য করুন