বইমেলা থেকে পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ প্রিয় লেখক আহমাদ মোস্তফা কামালের 'প্রেম-অপ্রেমের গল্প'
আবারও লিখতে বসলাম, কারন না লিখলেও রাতটা চলে যায় আর লিখলেও চলে যায় রীতি মেনে। তাই লেখা শেষের অনুভুতিটাই ভালো, রাতে ভালো ঘুম আসে। সকালটাও আনন্দময় কাটে। যদিও শরীরের অবস্থা বিশেষ ভালো না। টুকটাক শরীর খারাপ, গলা ভেঙ্গে কাঠ, নিজের কন্ঠস্বর নিজেরই অচেনা লাগে। বলি টিএসসি, শুনে রিকশাওয়ালা কেএফসি। কী যে বিপদময় অবস্থা তাও আমার তাফালিং কমে না দৈনন্দিনের। সোমবারে এক বন্ধুর বাসায় গেলাম সন্ধ্যের দিকে। আড্ডা জমলো, দারুণ নাস্তা হলো, ফেরার সময় তিনটা বইও ধার আনলাম। ধার করে ও বই কিনতে কিনতে টেবিলে অপঠিত বইয়ের স্তুপ। এত বই আমার পড়ার অপেক্ষায় বসে আছে তা ভাবতেও অনেক শান্তির। তবে শান্তি নাই মানুষের, বিভিন্ন কাছের দুরের মানুষ সমন্ধে আমার কিছু উচ্চ উচ্চ ধারনা থাকে, নানান ঘটনার কারনে সেই উচ্চ ধারনার কাচ গুলো ভেঙ্গে পড়ে হুট করে, তখন নিজের উপর তীব্র মেজাজ খারাপ হয়। আমি না হয় সুবিধের লোক না, কিন্তু সবাই কেন আমার মতই হবে? তাই আজ সিদ্ধান্ত নিলাম কারোর ব্যাপারে উত্তম মতামত পোষন করবো না, সবাই আমার মতো ডাবল স্ট্যান্ডার্ড- এই ধরে মানুষের সাথে মিশলে আর হতাশ হতে হবে না। আমার এক বন্ধু স্ট্যাটাস দিয়েছিলো, মানুষ দেখতে দুর পাহাড়ের মত, কাছে গেলেই বোঝা যায় কত গভীর সব খাদ আর গর্ত।
কাল মেলায় যাই নি, তাই আজ মেলায় যাওয়া ফরজ ছিল। দারুণ ভাবেই ফরজ আদায় করলাম। তার ভিতরে আজ ছিল মঙ্গলবার, ধানমন্ডী থেকে শুরু করে নিউমার্কেট সব বন্ধ। রাস্তা ফাকা, তাই রিকশায় যেতে মাত্র ২৫ মিনিটের মামলা। তবে আমি যে রিকশা পেলাম বাসা থেকে নেমেই- সেই রিকশা চালক মুরুব্বী মানুষ। তাই আস্তে ধীরে সুস্থে তিনি প্যাডাল মেরে সামনে চলেন , দেরী হয়ে গেল এইজন্যে। এইসব বুড়ো মানুষদের রিকশা চালাতে দেখলে, এবং সেই রিকশায় বসে ভ্রমন করলে, নিজের খুব গিল্টি ফিল হয়। জানি না এর কারন কী? অনেক কাল আগে ব্লগার বড়ভাই লালদরজা বলেছিলেন আমাকে 'যে উনি রিকশাওয়ালার ঘামে ভেজা জামার দিকে তাকালে, রিকশায় যাবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। আমার ওতোটা না হলেও, মনটা খারাপ হয়। আমি এত সহানুভুতিশীল যাদের প্রতি তারাই আমাকে বুঝে না। অযোক্তিক ভাড়া চায়, মন চায় গালি দিতে। নিজেকে সান্তনা দেই এই বলে যে প্রফিট ম্যাক্সিমাইজেশনের এই আমলে সবাই তো চায় কিছু বাড়তি টাকা আসুক পকেটে। যাই হোক টিএসসি পর্যন্ত আসলাম, এসে রং চা খাচ্ছিলাম, কোত্থেকে পুলকের বড়বোন এসে হাজির, শান্ত এখানে কি করো? তুমি না বইমেলার লোক। আমি চুপচাপ বসে থাকলাম বর্ণের অপেক্ষায়। এমন সময় দুই দল ছেলের ভেতর প্রায় হাতাহাতি অবস্থা। কাহিনী হলো এক পক্ষের মেয়েকে আরেক পক্ষের ছেলে কি জানি কি বলেছে! তাতেই মেয়ে সেন্টু খেয়ে কাদো কাঁদো ভাব। দুই পক্ষই অশ্লীল বাক্যবিনিময় করতে থাকলো, আমি লোকজনের ছোলা মুড়ি খাওয়ার হিড়িক দেখতে থাকলাম বসে বসে। আমার ইফতারী ছাড়া আর কোথাও ছোলা দেখলে ঢের বিরক্তি লাগে। বর্ণ আসলো, মেলায় ঢুকলাম। ঢূকেই বর্ণকে কামাল ভাইয়ের বইটা গিফট দিলাম। কামাল ভাইয়ের গতকাল মেলায় আসা প্রবন্ধের বইটা কিনলাম, শুদ্ধস্বর থেকে। দাম কিছুটা বেশী মনে হলো, আর বাধাই ও মেক আপটাও কেমন জানি মনে ধরলো না। তাও বইয়ের কন্টেন্ট ও সূচী দেখে মুগ্ধ হলাম, আর কী চাই। মনজুর ভাইয়ের একটা বই আসছিলো, ঐতিয্য থেকে, তা কিনলাম। হিসেব করে দেখলাম মনজুর ভাইয়ের সব বই ই আমার কেনা ও পড়া। সংহতির বই গুলো নেড়ে চেড়ে দেখলাম, কিনলাম নুরুল কবীরের সাক্ষাৎকারের একটা বই। বইটার লুকটা দারুণ, দেখলেই ধরতে ইচ্ছা করে। বের হলাম বেরিয়ে দুইজনে মিলে চা খেলাম, বিষণ্ণ আবার মেলায় গেল আমি বসে বসে পাশের লোকের গল্প শুনছিলাম, লাইব্রেরীর জন্য বই কিনতে আসছে, তার এক বন্ধু তাকে খুব খাতির করে চা সিগারেট খাওয়াচ্ছে। ছবির হাটে গেলাম, ইমনের চা খেতে খেতে দারুণ আড্ডা জমলো। আটটার দিকে বের হয়ে রিকশায় চায়ের দোকান ফিরলাম পাক্কা নয়টায়। কোনো জায়গায় জ্যাম নাই, জ্যাম সব মোহাম্মদপু্রে। মন্ত্রী হতে পারে নাই নানক ভাই, এই শোকেই হয়তো নানান উন্নয়নে এক সাথে বেশীর ভাগ রাস্তা কাটা, মনে হয় যুদ্ধের বাঙ্কার!
অনেক দিন যাপনের ফিরিস্তি দিলাম, এবার কাজের কথায় আসা যাক। আসলে তেমন অজানা কোনো কথা না। আহমাদ মোস্তফা কামালের এবারের মেলায় আসা গল্পগ্রন্থ ‘প্রেম-অপ্রেমের গল্প’ নিয়ে কয়েক লাইন কথা বলবো শুধু। কামাল ভাই যে আমার খুব প্রিয় লেখক, তা এই ব্লগের সবাই কম বেশী জানে। তিনিও আমাকে স্নেহের প্রাচুর্য বিলিয়ে দিতে কার্পণ্য করেন নি। সবচেয়ে বড় কথা উনি এই ব্লগের এক কালের ব্লগার। আমরা উনাকে যেখানেই পাই, সেখানেই আবদার করি ব্লগে লিখেন না কেন ভাইয়া? লিখেন প্লিজ। উনি সম্ভবত এত অমনোযোগী ব্লগ ও ব্লগারদের জন্যই এখানে আর লিখেন না। তাতে অবশ্য আমাদেরই দুঃখ, উনি তো প্রখ্যাত লেখক, কত জায়গায় লেখার দাবী থাকে উনার প্রতি তাতেই হিমশিম খান। আর এইসব ব্লগ টগ তো সামান্য জিনিস। উনার এবারের গল্পগ্রন্থ বের করেছে নান্দনিক থেকে। দামটা খুবই কম, মাত্র ২০০ টাকা। তবে বইটার প্রোডাকশন কোয়ালিটি, ছাপা ও বাধাই অসাধারণ, সব মিলিয়ে দেখতে দারুণ। কার বাসায় জানিই টিভি দেখছিলাম, নান্দনিকের স্টলে যখন ক্যামেরা ঘুরাচ্ছে তখন দেখলাম এক লোক কামাল ভাইয়ের বই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বড় মজার ব্যাপার। তবে আমার সমস্যা হলো আমি কামাল ভাইয়ের অতি উৎসাহী পাঠক, যেখানে যা পেয়েছি সবই আগ্রহ নিয়ে পড়া। তাই এই গল্প গ্রন্থের বেশীর ভাগ গল্পই আমার আগের পড়া ও চেনা জানা। তাও আস্তে আস্তে যখন পড়া শুরু করেছি তখন শুধু মুগ্ধ হয়েছি। কামাল ভাইয়ের লেখার ধরনটাই এত অসাধারণ যে একি জিনিস আগে পড়ে থাকলেও আপনি আবার নতুন করে মুগ্ধ হবেন। কামাল ভাইয়ের লেখা পরিশীলিত ভাষায় একদম ঝরঝরে, পড়তে এত আরাম মনে হয় নিজেই কোনও মোহময় বক্তার জাদুময় সব গল্প শুনছি আর আমার সব চাইতে বেশী ভালো লাগে উনার বিষাদগ্রস্থ, অসামাজিক ও একাকী মানুষের নিরুত্তাপ গল্প গুলো। এইটা এই বই থেকে না, যখন থেকে আহমাদ মোস্তফা কামাল ভাইয়ের গল্প পড়ি সেদিন থেকে এইসব গল্প গুলোর আমি বিশাল ফ্যান। উনার একটা গল্প গ্রন্থ আছে ‘ একলা থাকার গল্প’ সেটা আমি জামালপুরে রেখে আসছি। প্রতিবার যেয়েই রিভাইস দিয়ে আসি। বিষণ্ণতা কিংবা একাকীত্বের যে সৌন্দর্য তা উনার গল্প পড়লেই উপলব্ধি করি। যদিও আমি তেমন প্রেমিক পুরুষ না, তবুও উনার প্রেমের গল্প গুলোও সাধারণ নয়, কেমন যেন অপ্রেমের। মেলায় শত শত প্রেমের উপন্যাস কিংবা গল্পের বই বিকোয়, তবে এই গল্পগ্রন্থের গল্পগুলো এত বেশী বিচিত্র ও অসাধারণ যে পড়তে বসে অবাক হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না পাঠকের। যদিও তুলনা করাটা খুব একটা সুবিবেচনা প্রসুত না, তবুও দুই প্রিয় গল্পকারের পাঠক হিসেবে আমি শাহাদুজ্জামানের চেয়ে আহমাদ মোস্তফা কামালের গল্প গুলোকে বেশী গুরুত্ববহ ও আকর্ষণীয় বলে মনে করবো। এইটা আমার একান্তই নিজের সিদ্ধান্ত , পাঠক হিসেবে। বাইশটি গল্প আছে বইতে, কোনো গল্পকেই আপনি সাদামাটা গল্প বলতে পারবেন না। মনে হবে না যে লেখার জন্যই লিখে যাওয়া, তবে আমার মতো সিরিয়াস ভক্তদের অভিযোগ হলো নতুন গল্পের সংখ্যা খুব কম বইতে। আরেকটা অনুযোগ হলো তিনি এবার কেন কোনো উপন্যাস লিখেন নি? উপন্যাসিক হিসেবে তো উনার সফলতা তো সবার কাছে ঈর্ষনীয়। উনি মাঝে মধ্যেই বলে বসেন ‘লিখতে ইচ্ছে করে না,’ কিন্তু আমাদের তো বাঁধভাঙা উচ্ছাস নিয়ে উনার লেখা পড়তে ইচ্ছা করে। যেমন আজ কিনেই উনার প্রবন্ধগ্রন্থ পড়া শুরু করে দিলাম। প্রেম-অপ্রেমের গল্পের মুগ্ধতায় এই ঢাউস সাইজের প্রবন্ধের বই শেষ করতেও বেশী সময় লাগবে না আশা করি। উনার লেখক জীবন আরো দারুণ হোক, আরো নানান ভাবে লেখায় মুগ্ধ করুক পাঠকদের!
নিদারুন সত্য
আমিও কামাল ভাইয়ের একজন মুগ্ধ ভক্ত পাঠিকা
ঢাকা গিয়ে লেখকের কাছ থেকে বই নিয়ে আসবো
হ লেখকের বই যা পাইছেন গতবার, তা নিয়ে রিভিউ লিখেন!
বইটা কিনব।
কিনছেন আশা করি!
আমি এক সময় জাফর ইকবালের ভক্ত ছিলাম, গ্রামে থাকি তাই বইমেলাই যাইতে পারিনা।
জাফর ইকবাল এর - ক্রুগো, মেতসিস, নিঃসংগ গ্রহচারী, পৃ, এই বই গুলো পড়লে বুঝতে পারবেন তাঁর কল্পনা শক্তি কত প্রখর । অথচ সেই সময় বর্তমানের মত এতো প্রযুক্তি বিস্তার লাভ করেনি।
নাইস!
বইমেলায় গিয়ে প্রথমেই কিনেছিলাম ‘প্রেম-অপ্রেমের গল্প’। লেখকের অটোগ্রাফ পাওয়াই হয় না।
বইটা পড়া শুরু করেছি, শেষ করিনি এখনও। ভালোবাসা, মায়ায় ভরা কামাল ভাইয়ের লেখায় ।
এবার বর্ণর সাথে দেখা হলো না একবারও। অবশ্য শান্ত ছাড়া আর কারো সাথেই দেখা হয়নি এবার মেলায়।
কামাল ভাই অসাধারণ, কি লেখায় আর কি মানুষ হিসেবে!
ভালো থাকেন আপু!
ভাল লাগে তোমার সহজ সরল অভিব্যক্তি, বইমেলার বর্ননা। বইমেলা নিয়ে তোমার লেখাগুলো পড়লেই মেলার একটা চিত্র পেয়ে যাবে পাঠক।
কাল সুযোগ পেলে বইমেলায় যাব একবার। ‘প্রেম-অপ্রেমের গল্প’ কেনার ইচ্ছা আছে।
পড়ে মুগ্ধ হবেন ভাইয়া, আপনার সাথে আর দেখা হলো না!
কত বছর বই মেলায় যাই না! ? সাত বছর। বেচেতো আছি। একসময় ভাবতাম বইমেলায়য় না গেলে হয়ত বাচবই না কি আশ্চর্য। রকমারি. কম এখন আমার চাহিদামত বই পাঠায়। কামাল ভাই আমার প্রিয় লেখকদের একজন।
আহারে!
প্রতিদিন আমি ইউনিভার্সিটির উপর দিয়ে অফিসে যাওয়া আসা করি কিন্তু এক দিনও মেলায় যাইনি।
যান নাই কেন? কে মানা করেছিল?
মন্তব্য করুন