ইদানিংকালের ভারতীয় সিনেমা নিয়ে অযথা পোষ্ট!
অনেক দিন সিনেমা নিয়ে কিছুই লেখা হয় না। হলে গিয়েও দেখাও হয় না। দেখেছিলাম শেষ, অনন্ত জলিলের মোষ্ট ওয়েলকাম টু। দেখে এত মেজাজ খারাপ হয়েছিল তা নিয়ে আর লেখতে ইচ্ছে করে নাই। চার বন্ধু মিলে সিনেমা দেখার উসিলায় চলে গেছে ১৫০০ টাকা। এই দুঃখে গত মাসে আমরা তেমন বাইরে খেতেও যাই নি। জীবনে প্রতিজ্ঞা করছি, জলিলের সিনেমা আর দেখবো না। সে হাসতে হাসতে মেরে ফেলাক তাও না। যে সিনেমায় চারটা গান জলিল আকাশে বাতাসে ফুলের বাগানে গ্রামে গঞ্জের বিয়ের সিডির মতো ব্যাকগ্রাঊন্ডে ভেসে বেড়ায় তা দেখার আমার ইচ্ছে নাই। অনেক হয়েছে ছাগলের সিনেমা টাকা দিয়ে দেখা আর না। মাহী বাপ্পীর সিনেমা 'হানিমুন' ইচ্ছে করেই দেখি নাই। নামটাই পছন্দ না, তেমন পছন্দ না পোষ্টার টাও। সানিয়াত ভাইয়ার 'অল্প অল্প প্রেমের গল্প' দেখবো সামনেই। টাইমিং মিলছে না। আমি একা একা সিনেমা দেখতে পারি না। সিনেমা নিয়ে বন্ধু বান্ধবরে দু চারটা ডায়লগ না দিলে আর সিনেমা দেখার মজা কই? সবচেয়ে মজা হচ্ছিলো 'আমি শুধু চেয়েছি তোমায়' দেখার সময়। 'আরিয়া টু' আগেই দেখা তাই সব সিন আগেই বলে দিচ্ছিলাম। আমার সামনের লোকের ধারনা হলো আমরা মনে হয় এই সিনেমা আগেও দেখেছি। তিনি সইতে না পেরে জিজ্ঞাসা করেই ফেললেন, ভাই এই সিনেমা এতবার দেখলেন কেন? আমি বললাম 'ভাই এই ফার্স্ট আসলাম, যেখান থেকে টুকেছে তা দেখাতো- তাই আগে থেকেই বলছি। যান আর বলবো না।' কলকাতার কপি পেষ্টের বাজার এখন মন্দা। গেইম, বিন্দাস ভালো ব্যাবসা করতে পারে নি। খুব টাকা খরচ করে বানিয়েছে দক্ষিনী 'মাগাধিরা' রিমেক 'যোদ্ধা'। আশা করি ইহাও ফ্লপ খাবে। কারন বিভিন্ন হিন্দি চ্যানেলে এইসবের ডাবিং দেখে দেখে মানুষ টায়ার্ড, নতুন করে বাংলায় আর কি থাকবে? তাই রিলায়েন্স এখন ভালো বুদ্ধি বের করেছে। তারা কানাড়া সিনেমা রিমেক করছে, জিতকে দিয়ে। কারন কানাড়া সিনেমা ডাব হয় না হিন্দিতে। সামনে মালায়লাম, উড়িষ্যা, অসমী অনেক ভাষাই বাকী, সিনেমা টুকার জন্য!
অনেক সিনেমাই দেখলাম। অনলাইনে অফলাইনে কিংবা টিভিতে, সব নিয়ে বলা যাবে না। কিছু নিয়ে বলি। যেমন ভালো লাগা থেকে শুরু করে। 'বম্বে টকিজ' দেখলাম দেরী করেই একটু। দারুন মুভি। চারটা গল্পই আমার ভালো লাগছে। মনেই হয় না হিন্দি সিনেমা। এরকম সিনেমা নেয়ার মতো দর্শকও নাই ভারতে। সিনেমাটা ট্রিবিউট মুভির পরেও ভালো চলে নি। এত ভালো পরিচালকদের এত ভালো কাজ তেমন কেউ দেখলো না। তেমন 'চার' নামের কলকাতার সিনেমাটা। বাংলা ক্লাসিক চারটা গল্প নিয়ে বানানো। সন্দীপ রায়ের মেকিং যদি আহামরি কিছু না, তাও সিনেমাটা আমার ভালোই লাগছে। যেহেতু গল্পগুলা আমার পড়া, তাই তার চিত্রায়ন দেখতে মন্দ কি। কিন্তু সিনেমাটা চললোই না পশ্চিমবঙ্গে। এত প্রচার সব মাঠে মারা গেল। চললো কোন সিনেমা? 'গল্প হলেও সত্যি' তামিল 'পিজ্জা' রিমেক। যদিও প্রিন্ট ভালোটা দেখি নাই। বিরসা দাসগুপ্ত ভালো এডপ্ট করেছে গল্প, তাও সিনেমাটা আমার ভালো লাগে নাই। গান একটাই খালি ভালো, 'এই ভালো এই খারাপ'। তাও সেই গান এখন আর শোনা হয় না। 'টেকওয়ান' দেখলাম চার পাঁচ দিন আগে। খুব ভালো না, আবার খারাপও না। মৈনাক ভৌমিকের ডিরেকশন স্টাইলটা আমি সিনেমা দেখতে দেখতে বুঝে গেছি। তিনি কি দেখাতে চান তাও আমার মুখস্থ হয়ে গেছে। মোটামুটি লাগলো। স্বস্তিকা কিছুদিন আগেই আত্মহত্যা করার এটেম্ট নিয়ে ছিল। এই সিনেমার সাথে কিভাবে জানি স্বস্তিকার জীবন রিলেট হয়ে যায়। হলপ্রিন্টে 'বরবাদ' দেখলাম। ধনুষের এক তামিল সিনেমা থেকে নেয়া। টাইমপাস মুভি। একটা পাশের বাড়ীর ছেলের প্রেমের গল্প বলার চেষ্টা। রাজ চক্রবর্তীর এই প্রবনতা আমার ভালো লাগে। তবে আমার খারাপ লাগে, কলকাতায় মুসলমান চরিত্রে এত ডাম্ব দেখায় কেন? কেমন জানি স্টেরিওটাইপ। উর্দুতে কথা বলবে, চোখে থেবড়ানো সুরমা দিবে, অনেক বাচ্চাকাচ্চা থাকবে, ইলিগ্যাল কাজ করবে কিন্তু অন্তরে খুব ইমানদারির ভাব নিবে। এইসব দেখতে দেখতে টায়ার্ড। খুব ভালো লাগছে 'হাইওয়ে' সিনেমাটা। ভালো প্রিন্ট পেয়েছিলাম কিভাবে জানি এরপর আর সেই ওয়েব পেজে সেই প্রিন্ট নাই। দারুন লোকেশন, দারুন সব গান, যুতসই গল্প। খারাপ লাগে না। পরম-কোয়েল-শিলাজিত- দীপংকর দের ক্যামেষ্ট্রি ভালোই লেগেছে। এই সিনেমাটাও কলকাতায় চলে নি। স্মার্ট গল্প হজম করার ক্ষমতা ওদের এখনো হয়ে উঠে নি। তবে ফারুকী আজ থেকে প্রায় তের বছর আগেই এর কাছাকাছি কনসেপ্টে নাটক বানিয়ে ছিল। তবে দার্জেলিংকে সেই ভাবে এই সিনেমায় দেখানো হয়েছে। অঞ্জন দত্তের গানগুলো শুধু মনে পড়ে তা দেখে দেখে।
হিন্দি সিনেমা দেখেছি বেশুমার সব নিয়ে বলার ইচ্ছা নাই। এখন হিন্দি সিনেমায় চলছে সত্যের সুপথের জয়গান। 'সিঙ্গাম- কিক- মরদানী' সব সিনেমাই মুলত সেভেনটিজের সেই স্টাইল। তবে এদের ভেতর সিঙ্গাম আর কিক দুটোই ফালতু লেগেছে। সিনেমা শেষে মনে হয়েছে সময় নষ্ট। মরদানী সিনেমাটাই যুতের। রানী মুখার্জীর লিয়াম নিসন মার্কা কাজকারবারে মুগ্ধ আমি। ভারতীয় একজন মেইনস্ট্রীম নায়িকা এরকম রাফ এন্ড টাফ পুলিশ অফিসারের রোল করবে ভাবাই যায় না। সিনেমাটার একশন আর ডায়লগ দুটোই আমার খুব ভালো লেগেছে। এই সিনেমার জন্য রানীকে মার্শাল আর্ট শিখতে হইছে, সেই সাময়িক শিক্ষার চেয়েও ভালো হয়েছে তার স্ক্রীনে প্রেজেন্স। যদিও এইটাও গৎবাঁধা গল্প, তাও দারুন লেগেছে। অনেক দিন পর প্রদীপ সরকার ভালো কিছু বানাতে পারছে, দর্শকরাও সিনেমাটা ভালোভাবেই নিয়েছে। ইমরান হাশমির সিনেমা 'রাজা নটবরলাল' দেখলাম। এক্সপেকটেশনের চেয়ে ভালো সিনেমা। কমেডি থ্রিলারটাকে জমাতে পেরেছেন কুনাল দেশমুখ। সবাই ইমরান হাশমীর সিরিয়াল কিসিং নিয়ে বিদ্রুপ করেন। আমি বলি, কিস বিহীন সিনেমা এখন খুবই কম। দোষ কেন সব হাশমীর ঘাড়ে পড়বে? অনেকদিন পর দীপক তেজোরীকে দেখে ভালো লাগছে। নায়করা পেট মোটা মধ্যবয়স পেরোলে কেমন লাগে, উনি তার প্রমান। ভালো লাগলো আরেকটা রোমান্টিক কমেডি- অমিত সাহনি কি লিষ্ট। গড়পরতা হলিউডি রোমান্টিক কমেডি যেমন হয় তেমন মুভি। আমি অভ্যস্ত এইসবে, তাই খারাপ লাগে নাই। তবে সিনেমাটা চলেই নাই বাজারে। নায়ক যদি বিখ্যাত কেউ হতো, তাহলে বোধ হয় উতরে যেত বাজারে এ যাত্রায়। এক ধরনের ফ্রেশ লুক ও ফিল গুড মুভি বানানোর চেষ্টা হয়েছে। আমি বলবো পরিচালক তাতে সফল। 'ইক ভিলেন' দেখলাম। কোরিয়ান সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত। ভালোই গান গুলো। সিদ্ধার্থ- রীতেশের অভিনয় গল্পের চেয়েও ভালো ছিল। ব্যাপক ব্যাবসা করছে সিনেমাটা। দেখলাম আলিয়া ভাটের সিনেমা, 'হাম্পটি শর্মা কি দুলহানিয়া'। ডিডিএলজের একটা আপগ্রেড নিউএজ ভার্শন। টাইমপাস মুভি। মন্দ নয়। ইহাও প্রচার প্রসার কম হলেও ভালো ব্যাবসা করছে। কিন্তু এই সিনেমায় আলিয়া ভাটকে আমার ভালো লাগে নাই। কেমন জানি রুহু উঠে গেছে এই মেয়ের উপর থেকে। বিদ্যা ব্যালনের 'ববি জাসুস' ভালো লাগছে। কেমন যেন শিশুতোষ সহজ গোয়েন্দা গল্প। আই লাইক ইট। আরো চার পাঁচটা সিনেমা নিয়ে বলা যেত। ইচ্ছে করছে না আজ!
সিনেমা দেখা এবং সিনেমালোচনা দু'টিই চলুক।

থ্যাঙ্কস ভাইয়া, অনেক অনেক শুভকামনা!
ভালইতো সিনেমা দেখে সময় নষ্ট পয়সা নষ্ট আর সমালোচনা লিখে হাত পাকানো। কেমন চলছে ভাই? ভাল থাক।
চলে আপা দিন, টেনেটুনে!
আপনের লেখা গল্প পড়তে মন চায়। আপনে ইন্টারেস্টিং কিছু একটা দিতে পারবেন বইলা মনে হয় মাঝে মাঝেই।
আমাকে দিয়ে হবি নানে ওসব গল্প লেখা!
অনন্ত জলিলের মাতামাতি শুনে এবারে খুব আগ্রহ নিয়ে গেলাম মোস্ট ওয়েল্কাম টু দেখতে। এক্কেবারে বোগাস। হাইওয়ে দেখতে চাই। আমারে দিও।
অবশ্যই দিবো। ভালো থাকো দোস্ত!
মন্তব্য করুন