ইউজার লগইন

এভাবে চলে যেতে দিতে নেই!

প্রতিটি বস্তু কিংবা প্রাণী যায় বলি না কেন, সব কিছুতেই একটা ভাল আর মন্দ দিক আছে। কখনো কথনো এই মন্দ দিক গুলো আমরা একান্ত ভাবে কাছে ডেকে নিয়ে আসি। এর প্রভাবে ভেসে যায় আনন্দ, ক্লান্ত হয় সুখ। প্রায় প্রতিটা পরীক্ষার রেজাল্টগুলো প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর জীবনে যেন এক একটা অধ্যায় বয়ে নিয়ে আসে। এই অধ্যায়ের সমাপ্তিগুলো হয় খুব আনন্দের আর নয়তো বিষাদের। ২০১১ সালের এইচ,এস,সি পরীক্ষার রেজাল্টেও এই সকল বিষয়ের ব্যাতিক্রম কোন কিছু ঘটেনি। আনন্দে ভেসে গেছে সারা দেশ আবার কেঁদেছে অনেকেই। এবার সারা দেশে এইচ,এস,সি পরীক্ষার্থীর সংখ্যার তুলনাই সারাদেশে পাসের হার ছিল ৭৫.০৮। যা গত বছরের তুলনাই ০.৫৪ হার বেশী। এ বছরই রেকর্ড সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়ে সারা দেশকে আনন্দের বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছে আরো একবার। ফলাফল প্রকাশের পর আনন্দে উল্লাসে মেতেছে সবাই। বাবা, মার বুকটা যেমন বড় হয়েছে তেমনি কলেজগুলোও। এই গৌরব যেমন একদিকে বাড়তি অনুপ্রেরনা যোগায় তেমনি অনুপ্রেরনার ফলশ্রুতিতে মুছে দিয়ে যায় সব দুঃখ গুলো। কিন্তু ঘটনা গুলো যদি একটু ব্যাতিক্রম হয়? সারাদেশের সবাইতো আর জিপিএ ৫ পাইনি। এমনকি অনেক ছাত্র-ছাত্রীতো পাশই করতে পারেনি। তাদের সুখগুলো আবার কেমন?

১।রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের এক ছাত্র পরীক্ষার রেজাল্টের একদিন আগেই বিষপানে আত্নহত্যা করে।

২।নরায়নগন্জে 'আদিবা' নামে এক ছাত্রী নিজের বাবার বন্দক বুকে ধরে মায়ের সামনে আত্নহত্যা করে। পরে চিরকুট লিখে যায়, তার পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হবে বলেই সে আত্নহত্যা করেছে।

৩। যশোরে আব্দুর রাজ্জাক কলেজের 'প্রিন্স' নামক এক ছাত্র পরিবারের অকথ্য ভাষা শুনতে না পেরে আত্নহত্যা করেছে। পরে দেখা গেছে সে জিপিএ ৪ পেয়েছে। এছাড়াও গাজীপুরে, ময়মনসিংহেও পরীক্ষার রেজাল্টের জন্য আত্নহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

পরীক্ষার রেজাল্টের জন্য দশাটা যদি এই হয় তাহলে আমরা কোন সমাজে বসবাস করি বলতে পারেন? একজন ছাত্র হয়তো কখনোই চাইনা সে পরীক্ষায় ফেল করুক। তারপরো যদি হয়ে যায় তখন কি বাবা-মায়ের একটু পাশে থাকা উচিত নয়। যশোরে 'প্রিন্স' যে ছেলেটা আত্নহত্যা করেছে তার বাবা-মা নাকি তাকে প্রতিটা দিন বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেখাত। একটা পরিবারে সন্তান যদি তার নিজের নিরাপত্তারই অভাববোধ করে, তখন তো আর এ ধরনের ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু না। আমাদের বাংলাদেশের সমাজ ব্যাবস্থায় এখনো কিছু কিছু রক্ষনশীল পরিবার দেখা যায়। রক্ষনশীলতার প্রভাব এতটাই সন্তানের উপর এসে যায়, যখন সন্তান তার নিজের প্রতি বিশ্বাসটুকু হারিয়ে ফেলে। আজকাল এমনো কিছু পরিবার আছে, যারা তাদের সন্তানের মোবাইল ফোনে যদি একটা ম্যাসেজের শব্দ পান তবুও মা-বাবাকে সেটা দেখাতে হয়। হয়তো সেটা কোন মোবাইল কোম্পানীর ম্যাসেজ হবে। তবুও যেন বাবা-মায়ের মনে সন্দেহটা কাজ করতেই থাকে।

সন্তানরা কতটুকু বিশ্বাস হারিয়ে ফেললে আত্নহত্যার মত পথ বেছে নেন, এটাই যদি বাবা-মা বুঝতে না পারে তাহলে ঐ ছাত্র পাশ করবে কি করে? 'তানবীরা'পুর' লেখাটার মত করে যদি সব বাবা- মা এই কথাগুলো বুঝতো, তবে এ ধরনের ঘটনা হয়তো এদেশে ঘটতো না। ছেলে মেয়েদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্কটা যদি না গড়ে ওঠে বাবা-মায়ের ভিতর, তাহলে হয়তো ঐ সন্তান আবিস্কার করে আর একটি জগতকে। যেখানে সে বাড়তে থাকে নানা ধরনের সংকটের মধ্যে দিয়ে। এক পর্যায়ে এই সংকটগুলোই বড় হয়ে ধরা দেই। অহেতুক সন্দেহ কিংবা অহেতুক বকা ঝকা অতি বেশী শাসন অনেক সময় বিপরীত কিছু নিয়ে আসে। প্রতিটা মানুষের ভিতরেই একই প্রতিভা লুকিয়ে থাকেনা। তবে প্রতিটা মানুষই কোন না কোন প্রতিভা নিয়ে এই পৃথিবীতে আসে। বাবা-মায়ের অবশ্যই বোঝা উচিত তাদের সন্তানের ভিতরে কোন প্রতিভাটি বেশী দেখা যায়। একজন ছাত্র পড়ালেখা না পারলেও অন্য কিছু হতে পারে। বাবা-মাকে বুঝতে হবে সে কোনটিকে বেশী গুরুত্ব দেয়। টাকা পয়সা উপর্জন করার জন্য একজনকে যে শুধু পড়ালেখায় করতে হবে এর তো কোন ভিত্তি নাই। তবে পড়া লেখা একজন মানুষের জন্য সম্মান বয়ে নিয়ে আসে। সেটা সন্তানকে ভাল ভাবে বোঝাতে হবে। তার সাথে এমন একটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, যাতে সে বাবা-মাকে বিশ্বাস করতে শেখে। কোন সময়ই হুমকি ধামকি দিয়ে সন্তানকে বিশ্বাস এনে দেওয়া যায়না। কবি বলে গেছেন- 'একবার না পারিলে দেখো শতবার'। আমি শতবার দেখতে বলবোনা, কয়েকবার কি দেখা যায়না? সন্তানের পাশে এসে বাবা-মা যদি একবার এই ধরনের কথা বলে তবে ঐ সন্তানের ভিতরে অবশ্যই একটা পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনটা ভালো কিছুও তো বয়ে নিয়ে আসতে পারে।

বাবা-মাকে বোঝা উচিত আত্নহত্যা কোন সমাধান হতে পারেনা। এটি শুধু সাময়িক কান্না নয়, সারা জীবনের কান্না। আজ থেকে ৫০ বছর আগে বাবা মায়েরা যেমন ছিল এখনো কি তেমনি থাকা উচিত? বুঝতে হবে পৃথিবী বদলেছে, বদলেছে তার সন্তানও। পরিবার কেন্দ্রিক আত্নহত্যার দিনতো কবেই শেষ। 'ডূর্খেইম' এর পরার্থমূলক আত্নহত্যা এখনো কেন সমাজে ঘটবে? কেও যদি চলে যায় তাকে আটকানো যায়না, কিন্তু কাওকে যদি চলে যেতে বলা হয় তার কষ্টটা কতটুকু হয়, তা কি কেও দেখে? তাই রেজাল্টের এই আনন্দ যতটুকু না খুশি করছে তার চেয়েও বেশী কষ্ট দিচ্ছে এভাবে চলে যেতে বলার কারনে। আমরা আর এধরনের কোন ঘটনা চাইনা। পৃথিবীটাকে বদলে দিতে চাই, বিশ্বাস আর ভালবাসা দিয়ে।

পোস্টটি ৮ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

প্রিয়'s picture


পড়ালেখাটাকে বাবা- মা অনেক সময় নির্যাতনের পর্যায়ে নিয়ে যায়। এটা ঠিক না। অনেক সময় বাবা- মা'দের মধ্যে ছেলে- মেয়ের রেজাল্ট নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। যার কারনে ভিকটিম হয় এইসমস্ত ছেলে- মেয়েগুলা।

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


ঠিকি বলেছেন। এই বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত।

অতিথি's picture


আপনি ঠিকি বলেছেন। কথাগুলোর সাথে সম্পূর্ন একমত।

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


ধন্যবাদ।

টুটুল's picture


কবি বলে গেছেন- 'একবার না পারিলে দেখো শতবার'। আমি শতবার দেখতে বলবোনা, কয়েকবার কি দেখা যায়না? সন্তানের পাশে এসে বাবা-মা যদি একবার এই ধরনের কথা বলে তবে ঐ সন্তানের ভিতরে অবশ্যই একটা পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনটা ভালো কিছুও তো বয়ে নিয়ে আসতে পারে।

কেউ যদি চলে যায় তাকে আটকানো যায়না, কিন্তু কাউকে যদি চলে যেতে বলা হয় তার কষ্টটা কতটুকু হয়, তা কি কেউ দেখে? তাই রেজাল্টের এই আনন্দ যতটুকু না খুশি করছে তার চেয়েও বেশী কষ্ট দিচ্ছে এভাবে চলে যেতে বলার কারনে। আমরা আর এধরনের কোন ঘটনা চাইনা। পৃথিবীটাকে বদলে দিতে চাই, বিশ্বাস আর ভালবাসা দিয়ে।

একদম সত্যি ... সব্বাইকে প্রথম হতে হবে... এই ভাবনা থেকে বের হয়ে আসাটা জরুরী এখন...

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


ঠিক তাই।

তানবীরা's picture


কলোনীয়ান মেন্টালিটি থেকে এখনো বের হতে পারিনি আমরা কেউই আবার দেশের যা অবস্থা, পড়াশোনা করেই সারভাইভ করা যায় না আর ফেল করে, বাবা মাও জিম্মি সমাজ ব্যবস্থার কাছে

প্রিয়'s picture


খুব খারাপ লাগে যখন দেখি ক্লাস ওয়ানের বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তির জন্য ক্লাস ফোরের পড়াও পড়তে হচ্ছে। অনেক স্কুলে নাকি আবার প্যারেন্টসের ও ইন্টারভ্যু হয়। Shock Shock

মাহবুব সুমন's picture


Sad

১০

শামান সাত্ত্বিক's picture


একটা অন্ধ আবদ্ধতার নিগড়ে বাংলাদেশটা চলছে।

১১

প্রিয়'s picture


এই আপনি কই গেসেন? ক্যামন আসেন? দেখিনা ক্যান এখন আর?

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture

নিজের সম্পর্কে

ভালবাসি দেশকে, যারা এনে দিয়েছে আমার স্বাধীণতাকে, ভালবাসি সকলকে