ইউজার লগইন

চিঠি

মৌরী,
সোন্ধ্যার মায়াময় হাতছানি যখন আমাকে ছুঁয়ে যেতে পারেনা, তখন ভাবি এ গোধুলী বেলাটা বুঝি আমার জন্য নয়। বিকেলের সোনাঝরা রোদ গুলো যখন উঁকি দিয়ে আমাকে বলে কাছে আসতে, আমি যেন আমার শরীরের প্রতিটি ভাজে তখনো রোদের তীব্রতা অনুভব করি। অথচ তুমি দেখ, এই সে দিনের কথা যখন চৈত্রের প্রখরতা গুলোও আমার কাছে মনে হত বৃষ্টির ফোঁটার মত। এখন রোদ ভিষণ ভাবে পোড়ায় আমাকে। তাই আর বাইরে যায়না সেই দিনের মত করে। ছয় তলার এই ঘরের পূর্ব দিকেই আমার বাস। তুমি হয়তো সেটা জানতেও। কিন্তু জানালাটা খুলে দেখা হয়না অনেক দিন। ধুলো আর মরিচীকাই ভরেগেছে সব।

কাক ডাকা ভোরে যখন তুমি আমার বাড়ীর নীচে দাড়িয়ে থাকতে, আমি তখন দু চোঁখ মুছতে মুছতে তোমাকে দেখতাম জানালাটা খুলে। তোমার মনে পড়ে, আমি এক দৌড়ে নীচে নেমে আসতাম আর তুমি মুখ ফুলিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে। আমি আমার দু হাত দিয়ে তোমার মুখটা ছুঁয়ে দিতাম। তুমি হেসে ফেলতে। যখন তোমার সাথে হাটতাম তখন মনে হতো সারা পৃথিবীর পথ পাড়ি দিতে পারবো। আমার বাম হাতের আঙ্গুল গুলো ধরে তুমি গাইতে... এই পথ যদি না শেষ হয়... এখন কেমন করে হাটো তুমি? পৃথিবীর পথটা আমার কাছে এখন অনেক বড় মনে হয়। ধূসর আর ভাংগা গর্তের মত নষ্ট মনে হয় রাস্তা গুলো। হাটতে শুরু করলেই যেন আঘাত পাই। তোমার মনে আছে, একবার তুমি ভিষণ বকেছিলে আমাকে।আমি মাত্র তিন দিনের জন্য তোমাকে রেখে রংপুর গিয়েছিলাম। কেঁদে কেঁদে চোঁখ জোড়া ফুলে গিয়েছিল। এখনো আমার চোঁখে ভাসে। রাতে এস, এম, এসে লিখেছিলে-'আমি তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারবো না জান'। সেই সিমকার্ডটা এখনো আমার কাছে রয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হলেও বুক চেপে বসে থাকি।

রাতে যখন আমি খাবার খেতে যেতাম তুমি ঠিক তার আগে আমাকে ফোন দিতে। আমার খাবার খাওয়ার কথা শুনে তারপর তুমি খেতে। জানো, এখন আর কেও আমাকে ফোন দিয়ে খেতে বলে না। যা একটু বাবা-মা বলতো তাও এখন বলেনা। আর বলবেই বা কি জন্য বলো? তোমাকে নিয়েই তো তাদেরকে আঘাত করে ছিলাম। জানো, আমার বাবা-মা শুধু আমার জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছে। তখন বুঝতে পারেনি কষ্টের কি তীব্রতা। হ্রদয় জুড়ে অনুভূত স্বপ্ন গুলোকে তখন শুধু বাস্তব মনে হতো। মনে হতো তোমার মাঝেই আমি সব কিছু পেয়েছি। একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। আমিতো আর ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য নই। আমার শাস্তি হোক। মৌরি, যখন তুমি পড়াশোনা করতে ঠিক তোমার সাথে তো আমিও পড়তাম। পার্থক্য শুধু এতটুকুই ছিল। তুমি আলাদা বিষয়ে আর আমি আলাদা বিষয়ে পড়তাম। জানো, তোমার পড়ালেখার খরচ বহন করতে যেয়ে আমি চরম আর্থিক সংকটে পড়েছিলাম। বাবা-মা যখন বুঝতে পারলো তোমাকেই আমি ধরে রেখেছি, তারপর থেকে আমাকে আর টাকা পয়সা পাঠাতো না। তবে ভাগ্যকে ধন্যবাদ যে আমি খুব কষ্ট করে হলেও অনার্সটা শেষ করেছি। এখন ছোটখাটো যে চাকুরীটা করি তাতে বেশ ভালো ভাবেই আমার চলে যায়।

হঠাত্‍ করেই কেন জানি বাইরে মেঘ করলো। মেঘলা আকাশ আর বৃষ্টিগুলো আমাকে সাগরের জলের মত ভিজিয়ে দিয়ে যায়। তবে সেই বর্ষা দিনের মত করে নয়। বর্ষার প্রথম ফোটা কদমের ঘ্রানে যখন তুমি হারিয়ে যেতে, ভীষণ মধুর লাগতো সে সময়। পূব আকাশের কালো মেঘের ভেলায় যখন বৃষ্টি নামতো, দুজনে ভিজে একাকার হয়ে যেতাম। তোমার ভেজা চুলগুলো যখন উড়তে পারতো না, আমার ভীষণ হিংসে হতো বৃষ্টির প্রতি। তোমার উড়ে আসা চুল মুখের উপর এসে যেত। আমি দুহাত দিয়ে তা সরাতাম। তুমি অপলক চোঁখে চেয়ে দেখতে আমার। জানো এখন মাঝে মাঝেই দু হাতের পাতার দিকে তাঁকায়। দেখি অসংখ্য রেখা ছড়ানো। সব গুলোই আঁকাবাঁকা। মাঝে মাঝে যখন বৃষ্টি নামে তখন খুব বৃষ্টি ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু পারিনা। আমার হাতের আঁকাবাঁকা রেখাই বৃষ্টি পড়লেই যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে যায়।
শরত্‍ এর কাঁশফুলের মাঝে দাড়িয়ে যখন তুমি হাসতে তখন মনে হতো ঠিক যেন সাদা পরী। তোমার মনে আছে মৌরী, তুমি যখন শেষের সময়টাতে আসতে তখন আমাকে একটা ছবি দিয়েছিলে। কাঁশফুল ঘেরা বনে তুমি দাড়িয়ে আছো। ছবির পিছনে লেখা ছিল এটা আমার জানুর জন্য। ছবিটা দেখা হয়না অনেক দিন, এখনো আমার চোঁখে ভাসে। ইচ্ছে করেই খোলা হয়না। মৌরী, তোমার কি মনে পড়ে প্রচন্ড শীতের দিনেও তুমি যখন আমার রুমের নীচে সকালে এসে দাড়াতে, তখন তোমার হাতে একটি চাদর থাকতো। তুমি এসে প্রতিদিন সকালে সেটি আমার শরীরে জড়িয়ে দিতে। আমি শুধু নির্বাক হয়ে তোমার ভালোবাসাকে দেখতাম। তুমি একবার পহেলা ফাল্গুনে শাড়ী পরে এসেছিলে। চোঁখে অনেক স্বপ্ন নিয়ে তুমি বলেছিলে আমার ঘরে যখন তুমি যাবে তারপর থেকে তুমি সবসময় শাড়ী পরে থাকবে। এখন শুধু মনে হলেই মনের অজান্তেই হেসে ফেলি।

স্বপ্ন ব্যাচাকেনা করার মত হয়ে গেল কেন ভালোবাসাটা? বলতে পারো জীবনের বাকীটা পথ কি ভাবে পাড়ি দেবো আমি? তোমার বান্ধবীর কাছে শুনলাম তোমার একটা মেয়েও হয়েছে। নাম রেখেছো 'নেহা'। যখন শুনলাম তুমি আমার সাথে দেখা করার জন্য আগামিকাল সকালে আসছো। তখন দীর্ঘ পাঁচ বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আমার চোঁখে ছায়ার মত ভেসে আসতে লাগলো। বিস্বাস কর, আজ সারাদিন তোমাকে খুব বেশী মনে পড়েছে। তোমাকে ভালোবাসি তাই...। তোমার ব্যাগ ভর্তি চিঠিগুলো তোমার বান্ধবীকে দিয়ে গেলাম। তুমি যখন আগামীকাল সকালে আসবে তখন হয়তো আমি দেশ থেকে শত শত মাইল দূরে চলে যাবো। শুধু রেখে যাবো এই শেষ চিঠিটি। চাকুরীর সুবাদেই আমাকে আজ রাত সাড়ে বারোটার ফ্লাইটে কানাডা যেতে হচ্ছে। আর যাই হোক তোমার ছোট সঙ্গী যে তোমার সাথে আসছে, তার নামটি যে আমার দেওয়া সেই নামটিই হবে তা ভাবতে পারিনি। তোমাকে ধন্যবাদ। শুধু তোমার ভালোবাসা আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমি চাইনা আরো বেশী পেতে। বাইরে ভীষণ বৃষ্টি হচ্ছে। তবুও আমাকে ছুটতে হচ্ছে। এই মেঘবন্দী বেলাই শুধু আকাশের কান্নার সাথে আমার মনের মন্দীরেও বৃষ্টির ঘনঘটা। কিন্তু এই বৃষ্টি যে বড় বিরক্তির... তোমাকে ইচ্ছা থাকা সত্বেও আর লিখতে পারলাম না। আমাকে ক্ষমা কর।
ইতি
আর কেউ নই

পোস্টটি ১১ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

তৌহিদ উল্লাহ শাকিল's picture


ভাল লেগেছে চিঠিটি । কিছু শব্দ বেমানান । যেমন কেও/কেউ হলে ঠিক হত। শুভকামনা রইল ।

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


ঠিক করে দিলাম। ধন্যবাদ ভুল ধরিয়ে দেবার জন্য।

সামছা আকিদা জাহান's picture


এ ভাবে এখন আর চিঠি লেখা হয় না, এমন চিঠিও আর পরা হয় না।

এখন ন্সবাই আকাশ বার্তা পাঠায় খুব মিস করি চিঠি।

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


আমিও। ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

মিতুল's picture


চিঠি লিখি না কেন ? Sad Sad

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


আসলে সেই যুগটা এখন আর নেই।

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


মায়া মায়া চিঠি মন ছুঁয়ে গেল। Sad

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


Sad

রায়েহাত শুভ's picture


মন খারাপ মন খারাপ মেঘ ছড়িয়ে গেলো...

১০

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


দুঃখিত

১১

নরাধম's picture


ছ্যাকা খাওয়া কোনকিছু পড়তে ভাল লাগেনা। SmileSmile
আর কোন মেয়ের জন্য হাহাকার করা কিছু পড়তে বিরক্ত লাগে, ন্যাকামো মনে হয়।
তবুও পড়লাম, লেখাটার সাহিত্য মান আর বৃষ্টি-প্রকৃতির বর্ণনা ভাল লেগেছে।

১২

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


খারাপের ভিতরেও তাইলে ভালো কিছু খাকে Smile

১৩

তানবীরা's picture


নারুদা ছেলের জন্যেও হাহাকার করতে পারেন, এ্যামেরিকায়তো শুনেছি আজকাল আর সমস্যা করে না Wink Tongue

১৪

শওকত মাসুম's picture


মাইনষে এখনো চিঠিও লেখে?

১৫

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


কিবোর্ডের বোতাম টিপলাম তো। চিঠি হয়ে গেছে নাকি Tongue

১৬

প্রিয়'s picture


ভাল লাগল।

১৭

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


দ্রুত পোস্ট দেন।

১৮

মীর's picture


ভীষণ মুগ্ধ হলাম লেখাটা পড়ে।

১৯

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


আপনাকে দেখা যায় না কেন ভাই। এইটার আগে জবাব চাই

২০

জ্যোতি's picture


আহারে আহা। এই ভালোবাসা জিনিসটা আসলে ভালু না।ভীষন খ্রাপ!

২১

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


আমি বেশ সুখেই আছি Big smile

২২

তানবীরা's picture


নীচের ডিসক্লেমারটা কি একান্তই জরুরী? ভেবে দেখবেনতো ব্যাপারটা।

২৩

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


Tongue সরি। মুছে দিয়েছি তানবীরা'পু।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture

নিজের সম্পর্কে

ভালবাসি দেশকে, যারা এনে দিয়েছে আমার স্বাধীণতাকে, ভালবাসি সকলকে