ইউজার লগইন

একটি আংটি এবং ভালবাসা!

হঠাত্‍ করেই লোডশেডিং। গতবছর গরমের চাইতে এবার ঢাকা শহরে লোডশেডিং এর প্রবনতা বেশ কোম। কিন্তু লোডশেডিং এর এই দেশে লোডশেডিং ছাড়াও যেন কেমন, কেমন লাগে! তারপরও প্রায় ঘন্টা দুয়েক হবে বিদুত্‍ গেছে। বেশ অনেকদিন পরে লোডশেডিং বলেই কি আসার আর নামই নাই? পরে শুনতে পেলাম ট্রান্সফরমার নষ্ট হওয়াতে এই দশা! রাত সাড়ে এগারোটা মত ঘড়িতে। কিছুক্ষণ আগে ঝুম করে একটা বৃষ্টি হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হলেও প্রকৃতি কিন্তু এখন বেশ চুপচাপ। হঠাত্‍ করেই ছাদে যেতে ইচ্ছে হলো, প্রকৃতির এই চুপচাপ মায়াজালটা দেখার জন্য আর হাজার বার না পারা একটি কাজ সম্পূর্ন করার জন্য।

কালো টি শার্টটি পরে নিলাম। বামের পকেটে আংটিটা ঠিকঠাক ভাবেই আছে। সেলফোনটা বুক পকেটে গুজে সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠে এলাম। কলাবাগানের এই বাড়ীটি আটতলা। ছাদে কিছু টবে ফুল গাছ গুলো বৃষ্টিতে ভিজে যেন স্নান হয়ে গেছে। এমনিতেই বৃষ্টি তার পর আবার লোডশেডিং, এক অদ্ভুত ভালো লাগা পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। আধো আধো আলোতে দুরের শহরটাকে খুব নিশ্চুপ আর মায়াপুরি, মায়াপুরি মনে হচ্ছে। আস্তে আস্তে পা বাড়িয়ে ছাদের রেলিং ঘেসে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালাম। যখন অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে ছিলাম তখন আমার এক ম্যাডাম ক্লাসে এসে বলেছিল- 'তোমার যখন খুব মন খারাপ হবে তখন আকাশের দিকে তাকাবে, দেখবে মনটা ভালো হয়ে যাবে।' ম্যাডাম তাঁরাদের কথাও বলেছিল। কিন্তু আজ আকাশে কোন তাঁরা দেখা যাচ্ছেনা। তবে মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে আধ ফাঁলি চাঁদটাকে। মেঘগুলো এক অপূর্ব সুন্দর্য্যে ঘিরে রেখেছে তাকে। যেন মেঘের ভেলায় চড়ে চাঁদটা ভেসে যাচ্ছে কোন এক দুর দেশে। খুব শুনশান পরিবেশ আর ঠান্ডা বাতাসগুলো আমাকে যেমন ছুঁয়ে যাচ্ছে, ঠিক চাঁদকেও যেন ছুঁয়ে যাচ্ছে।

বুকপকেটে ধুপ করে মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। দিপ্তীর ফোন। আমার খুবই ক্লোজ একটা বন্ধু। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। পড়তাম একই সাথেই। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে ও রাজশাহীতে আর আমি ঢাকাতে। ভাবতে ভাবতে ফোনটা দুইবার বেঁজে গেছে খেয়ালই করিনি। হ্যালো দীপ্তি... তোর কি খবর বল...
তারপর একথা সেকথা করে প্রায় পনেরো মিনিট। আমের দাওয়াত দিল রাজশাহীতে। অবশ্য এখন থেকে নয়, সেই গরমের শুরু থেকেই ও রাজশাহীতে আসতে বলে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত যাওয়া হয়ে ওঠেনি। যাক ফোন পকেটে রাখবো এমন সময় পকেটে হাত দিয়ে দেখি আংটিটা নেই। আমি তো ছাদে আসার আগেই ওটা পকেটে চেক করে এসেছি। দেখেছি বুক পকেটের এক কোনায় ঠিকঠাক ভাবেই লুকিয়ে রয়েছে। এমনকি ছাদে আসার পরেও একটু পর পর আমি দেখেছি, আংটিটা ঠিকঠাক ভাবেই রয়েছে। কিন্তু এখন নেই কেন? তাহলে কি ফোনটা বের করার সময় ছাদে পড়ে গেল? উঃ মাথায় যেন কাজ করছেনা। ফোনটা পকেট থেকে বের করে ওর আলো দিয়ে খুজতে থাকি। যদি পড়েই যায় তবে কি নিচে পড়ে গেল? এই স্যাতসেতে ভেজা ছাদের উপরেই যদি পড়ে তবুও কি আমি পাবো? কিচ্ছু ভালো লাগছেনা আমার। সব দোষ ঐ দিপ্তীর, কেন যে ফোনটা এখন করতে গেল। অসহ্য!

মায়াবিনী আমাকে আংটিটা দিয়েছিল খুব কষ্ট করে। আজিমপুরের পৌষ মেলা থেকে সেদিন সে একটি মাটির টাকা জমানো পাত্র কিনেছিল। বলেছিল- এই পাত্রে যা টাকা জমবে তার সবটুকু দিয়ে তোমাকে আমি একটি আংটি তৈরি করে দেব। তুমি তো আমাকে অনেক কিছুই দিয়েছো। কিন্তু আমিতো তোমাকে আজ পর্যন্ত কিছুই দিতে পারিনি। আমি ঐ পাগলীটার কথা শুনে হাসিতেই মরে যেতাম। মায়াবিনী আমার হাসি দেখে ওর দু হাত মুঠো করে আমার বাম হাতের কনুয়ের উপর মারতো আর দুষ্টুমির সুরে বলতো- তুমি খুবই পঁচা। আরো বেশী করে হাসি পেত সেসময়। ইডেনের সামনের দোকানের কফির গন্ধ গুলো এখনো ওর কথাগুলো মনে করিয়ে দেয়। খুনসুটি আর ভালোবাসার আড্ডায় পপকোন আর বাদাম গুলো নিমেষেয় কখন যে শেষ হয়ে যেত বুঝতেই পারতামনা। সোহরাওয়ার্দির লেকে হাতে হাত রেখে বসে থাকা আর রোকিয়া হলের গেটের পাশে ফিরে মায়াবিনীকে বিদায় বলতে বড্ড কষ্ট হতো। এই তো একটু সময়ের জন্য বিরতি, তবুও যেন অনেকটা সময়। সারারাত ফোনে কথা তারপর কাঁকডাকা ভোরে ঘুম চোঁখে উঠে মায়াবিনীকে দেখতে যাওয়া। এক মুহূর্ত ভালো লাগতো না মায়াবিনীকে ছাড়া। শুধু আলাদা ডিপার্টমেন্ট বলে খুবই মিস্ করতাম ওকে। ক্লাসটুকু সেরেই আবার খুনসুটি, আবার সারাদিন এদিক সেদিক।

মায়াবিনী প্রায়ই আমাকে ফোনে বলতো তোমার জন্য আমার পাত্রে এতগুলো টাকা জমা হয়েছে। এবার বৈশাখের প্রথম দিনে তোমাকে আমি আংটিটা তৈরি করে দিবো। আমি শুধু ওর কথা শুনে হাসতাম। ও বার বার বলতো- আমাকে এভাবে অবহেলা করবেনা। আস্তে আস্তে দিনগুলো যেতে যেতে হঠাত্‍ করেই পহেলা বৈশাখে মায়াবিনী আমাকে আংটিটা দিয়েছিল। সবচেয়ে মজার বিষয় আমি কিন্তু সেদিন হেসেছিলাম না। শুধু দু চোঁখ ভরে মায়াবিনীকে দেখছিলাম। ওর ছল ছল চোঁখের জল গুলো আমাকে ভিজিয়ে দিয়েছিল সেসময়। বুকের মাঝখানে মাথা লুকানোর ঠাই আর অপলক দৃষ্টিতে আমাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনা ভালবাসা। ভালবাসাটা যেন এমন ওকে না পেলে আমি বুঝতেই পারতাম না।

এই ভেজা ছাদের উপর আংটিটা এখনো খুজে পাচ্ছিনা কেন আমি? এক দৌড়ে নিচে নেমে এসে টর্চটা নিয়ে ছাদে যায়। তন্ন তন্ন করে খুজেও পাইনা। এক সময় ছাদের রেলিং এর এক কোনায় দেখি লুকিয়ে আছে। অভিমানী দৃষ্টি নিয়ে চোঁখের সামনে ধরি আংটিটাকে। হঠাত্‍ করেই আমার বাম হাতটা চোঁখের পাতাকে স্পর্শ করে। কখন যে চোঁখের দু পাতা ভিজে গেছে টেরই পাইনি। ভাবতে থাকি তুই কেন আমার অস্থিত্বের সাথে মিশে গেলি? আমি তো তোকে আমার পকেটে লুকিয়ে রাখি ছুড়ে ফেলে দিবো বলে, হাজার বার চেষ্টা করেও কেন পারিনা ছুড়ে ফেলতে? প্রচন্ড অভিমান হয়। মায়াবিনী আমাকে ছুড়ে ফেলতে পারলে আমি কেন সামান্য আংটিটাকে ছুড়ে ফেলে দিতে পারবোনা? দু হাতের মুঠোয় আকড়ে ধরে রেলিং এর পাশে দাড়ায় আমি। দু হাত ভরে যতবারই চেষ্টা করি ছুড়ে ফেলতে, ততবারই হাতের পাঁচটি আঙ্গুল তাকে আকড়ে ধরে। মায়াবিনী যেন চাঁদের আড়াল থেকে হাসতে থাকে। হাজার বার বলার পরেও প্রচন্ড সাহসে বলি- শুধু আজকেই এই শেষ বারের মত বুক পকেটে রাখলাম, কাল দেখে নিও ঠিকি ছুড়ে ফেলে দিবো তোমাকে!

পোস্টটি ৭ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

লীনা দিলরুবা's picture


শুধু আজকেই এই শেষ বারের মত বুক পকেটে রাখলাম, কাল দেখে নিও ঠিকি ছুড়ে ফেলে দিবো তোমাকে!

ছুড়ে ফেলে দিবো তোমাকে! এই লাইনটা নির্মম Sad

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


অ ! আর যখন পুরো মানুষকে ছুড়ে ফেলে দেই তখন? মেয়েদের পক্ষ নেওয়া হচ্ছে, না?

মেসবাহ য়াযাদ's picture


মায়াবিনী আমাকে ছুড়ে ফেলতে পারলে আমি কেন সামান্য আংটিটাকে ছুড়ে ফেলে দিতে পারবোনা?

মায়াবিনী ভুলে গেলে তাকেও ভুলে যান। শোধ-বোধ। ল্যাঠা চুকে যাবে। আংটিতো শুধু একটা উপলক্ষ মাত্র। কমডে ফেলে ফ্ল্যাশ করে দিন, ব্যস ! এনিয়ে এত ভাবনার কী আছে ?

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


চেষ্টায় আছি, অনেক দিন থেকেই। এবার দেখি য়াযাদ ভাইয়ের বুদ্ধিটা কাজে লাগানো যায় কিনা।

একজন মায়াবতী's picture


একটা কথা শুনেছিলাম এমন -
প্রেম আইবে, প্রেম যাইবে
পুরাতন গেলে নতুন পাইবে। Tongue
যে গেছে তাকে যেতে দেন। পুরাতন গেলে নতুন পাইবেন। Big smile

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


নতুনডা লাসটিং করবো তো?

সামছা আকিদা জাহান's picture


বৃষ্টি নামল যখন আমি উঠোন পানে একা /দৌড়ে গিয়ে ভেবেছিলাম তোমার পার দেখা----

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


তারপর থেকে আমি একা...

শওকত মাসুম's picture


ধুর, গেছে তো বাইচা গেছেন। সামনে কত কী আছে

১০

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


হ্যা কত কি যে আছে Smile

১১

তানবীরা's picture


প্রথমে ভাবছিলাম গল্প এখন দেখি আত্মকাহিনী, এর পরের পর্বে আপনে কি করছিলেন, কেনো সে আংটি দিয়ে পালিয়ে গেলো সেইটা লিখে জানায়েন আমাদেরকে Tongue

১২

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


আসলে প্রথমেরটাই, গল্প। Tongue

১৩

প্রিয়'s picture


হাজার বার বলার পরেও প্রচন্ড সাহসে বলি- শুধু আজকেই এই শেষ বারের মত বুক পকেটে রাখলাম, কাল দেখে নিও ঠিকি ছুড়ে ফেলে দিবো তোমাকে!

এই রকমই হয়।

১৪

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture


আপনারো কি হইছে?! Tongue

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

ফিরোজ শাহরিয়ার's picture

নিজের সম্পর্কে

ভালবাসি দেশকে, যারা এনে দিয়েছে আমার স্বাধীণতাকে, ভালবাসি সকলকে