পথ চলা - ২
গত পর্বের লেখা পড়ে আমার বেশ কিছু শুভানুধ্যায়ী প্রশ্ন করেছেন যে শিক্ষকতার শুরুতে আমাকে অতটা বেগ পেতে হল কেন? আমাকে তো তারা ভাল ছাত্র বলেই জানেন। আর জেনারেল এরশাদের কল্যাণে চার বছরকে আট বছর বানিয়ে ফেলায় লেখাপড়ার জন্য যথেষ্ট সময় পাই নি এমন অভিযোগ ধোপে টেকে না। তাহলে কেন এই দুরবস্থা?
সত্যি এটি একটি মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। তবে উত্তর খুব সহজ। পরিসংখ্যান মোটেই আমার পছন্দের বিষয় ছিল না। আমার আজন্ম লালিত স্বপ্ন ছিল সাংবাদিক হওয়া। এটা যে আমার কাছে কী একটা প্যাশন ছিল, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। বাসায় সবাই এটা জানত। এমন কি এসএসসি তে যখন আমি মানবিক বিভাগ থেকে মেধা তালিকায় প্রথম হই, সেদিন যেসব সাংবাদিক আমার সাক্ষাতকার নিতে এসেছিলেন তাঁদেরও আমি বলেছিলাম,
আমি সাংবাদিকতায় লেখাপড়া করে সাংবাদিক হতে চাই।
তখন আমার মা বলে ওঠেন তুই পাগল না কি? শরীরের এই অবস্থায় তুই ছোটাছুটির কাজ করবি কী করে? সাংবাদিকদের বললেন আপনারা লিখেন যে ও অর্থনীতিতে পড়তে চায়।
অধিকাংশ পত্রিকা এমন খবর ছাপলেও রাজশাহী থেকে প্রকাশিত একমাত্র জাতীয় দৈনিক ‘দৈনিক বার্তা’ সঠিক ঘটনা উল্লেখ করে শিরোনাম করেছিল ‘ইমনের স্বপ্ন হয়তো কোনদিন পূরন হবে না’।
আমার এইচএসসির পর আমি মালয়েশিয়াতে সাংবাদিকতার ওপর লেখাপড়ার জন্য খুবই আকর্ষণীয় একটি বৃত্তি পাই। মায়ের এক কথা, তোকে ঢাকায় যেতে দিচ্ছি না, রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ি চাপা পড়বি সেই ভয়ে, আর তুই যাবি মালয়েশিয়া? কোন ভাবেই না। আজ যখন মালয়েশিয়া আমার কাছে হয়ে গেছে সেকেন্ড হোমের মত, তখন মায়ের এই কথা মনে হলে খুব হাসি পায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ নেই। অতঃপর মায়ের পছন্দের বিষয় অর্থনীতি, আর বিশ্ববিদ্যালয় তো অবশ্যই রাজশাহী, বাসায় থেকে লেখাপড়া করা যাবে এটা তো বিশাল সুযোগ। সব ঠিক। এর মধ্যে একদিন বাবা বাজার থেকে ফিরে বললেন, আজ মন্যোয়ার সাহেবের সাথে দেখা হয়েছিল, উনার খুব ইচ্ছা তুই পরিসংখ্যান পড়। উনি বাবাকে বলছেন যে আমার স্ত্রী (প্রফেসর হোসনেয়ারা হোসেন) ওদের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় এক্সটার্নাল হয়ে গিয়েছিল। ও প্রাইভেট না পড়ে যেভাবে বিষয়টি শিখেছে তাতে সে মুগ্ধ। আমার বিভাগে ভাল ছাত্রছাত্রী তেমন একটা আসে না, আপনি ওকে আমার বিভাগে পড়ান। মা তো শুনেই রেগে আগুন। পরিসংখ্যানও একটি বিভাগ আর চামচিকাও একটি পাখি! বললেন,
না, না, ওই পাগলের ডিপার্টমেন্টে পড়ার কোন দরকার নেই। তার থেকে মাঠে যেয়ে হাল চাষ করাও ভাল।
আমার পরিসংখ্যান খুব ভালই লাগত, তার মূল কারণই হল এইচএসসি লেভেল এর সিলেবাসটি ছিল খুব সহজ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান পড়ব এটা স্বপ্নেও ভাবি নি। এর মাঝে ঘটলা দুটি বিশেষ ঘটনা।
বাবা আমার হাতের অবস্থা নিয়ে খুব চিন্তিত থাকতেন। যেহেতু আমার লেখার গতি একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের থেকে অনেক কম, তিনি সবসময় চাইতেন আমি এমন কিছু বিষয় নেই যাতে গণিতের পরিমান বেশি থাকে, অর্থাৎ কম লিখে বেশি নম্বর পাবার সুযোগ থাকে। অর্থনীতিতে অঙ্কের অনুপাত কতটা তা জানতে তিনি একদিন গেলেন তাঁরই ছাত্রতুল্য এক সহকর্মীর বাসায়। ফিরে এলেন মুখ গম্ভীর করে। আমাকে কিছুই বললেন না। কেবল বললেন অর্থনীতির পাশাপাশি আমি যেন অন্তত আরেকটি বিভাগের ফর্ম তুলে রাখি। কেন? সেদিন তা বললেন না। বলেছিলেন কিছুদিন পরে।
দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটল ভর্তি ফর্ম পূরণ করার সময়। বাবা যেহেতু শিক্ষক, আমার সুযোগ ছিল পোষ্য কোটায় আবেদন করার। কিন্তু আমার কাছে এটা ভাল লাগল না। আমি স্রেফ বলে দিলাম আমি এই কোটার ঘরে টিক দেব না। মা প্রচন্ড রেগে গেলেন।
তা কেন করবি? চান্স না পেলে কাজলার বাজারে যেয়ে তরকারি বিক্রি করিস গিয়ে।
বাবা বললেন, তুমি ছেলে মেয়েদের এত আন্ডার এস্টিমেট কর কেন? তোমার চিন্তা থাকবে ও ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হবে কি না, আমার ছেলে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাবে না এটা হয় না কি? আমার বাবা হালচাষ করত, সেই পরিবেশ থেকে উঠে এসে আমি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার হতে পারি, তাহলে এই পরিবেশে বড় হয়ে যদি কোটা ছাড়া ভর্তি হতে না পারে, তবে ওর লেখাপড়া না করাই ভাল।
তোমার প্রশ্রয় পেয়েই ছেলেটা আমার বখে যাবে বলে রাগে গজ গজ করতে করতে মা চলে গেলেন।
আমি অর্থনীতি ও পরিসংখ্যানের ফরম তুললাম। অর্থনীতির ফল বেরোল আগে, আমি মেধা তালিকায় প্রথম হলাম, মায়ের চিন্তা কমল, কিন্তু বাবার চিন্তা বেড়ে গেল। আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন, একজন শিক্ষক হিসেবে এই কথাটা বলতে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। সেদিন যে আমি অর্থনীতিতে অংকের পরিমান কত খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম, আমি কিন্তু বাসায় না ঢুকেই ফিরে এসেছিলাম।
কেন?
যার কাছে খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম তিনি বৈঠক ঘরের দরজা খোলা রেখেই তার এক সহকর্মীর সাথে অট্টহাস্যে কথা বলছিলেন। এক ‘বেয়াড়া’ ছাত্রকে কী করে তার পেপারে ও ভাইভাতে কম নম্বর দিয়ে প্রথম শ্রেনী বঞ্চিত করলেন গর্ব করে সেই গল্প করছিলেন আর অট্টহাস্যে ফেটে পড়ছিলেন।
আমাকে বললেন, তোকে যতই বলি, তুই তো রাজনীতি ছাড়বি না। তোর কেরিয়ার ওরা শেষ করে দেবে, তুই ওখানে পড়িস না বাবা।
এবার সত্যিই আশাভঙ্গের বেদনা! সাংবাদিকতায় পড়া হল না, রাজশাহীতে এই বিভাগ নেই বলে। আবার অর্থনীতিও পড়া হবে না!
শেষ পর্যন্ত পরিসংখ্যান বিভাগেই ভর্তি হলাম। কয় মাস যেতে না যেতেই চোখে শর্ষে ফুল দেখা। উচ্চমাধ্যমিকের সিলেবাস ছিল যেমন সহজ অনার্সের সিলেবাস তেমনি কঠিন। তার সাথে যুক্ত হয়েছিল সিলেবাসের মান আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত করার জন্য মনোয়ার স্যারের অক্লান্ত প্রয়াস। বেশির ভাগ কোর্সেই নাজেহাল অবস্থা। বছরের মাঝামাঝি যেয়ে মনে হল ছেড়ে দিয়ে পালাই। কিন্তু অনেক কিছু ভেবে নিবৃত্ত হলাম।
বাবা বললেন ব্রেক অফ স্টাডি সাংঘাতিক বদনামের বিষয়, সারাজীবন এর বোঝা বইতে হবে।
একটা ভাল মেধা বৃত্তি পাচ্ছিলাম, সেটা হাতছাড়া হবে। সামাজিক বদনাম তো আছেই। আর বাবার তো এক কথা, অন্যেরা পারলে তুই কেন পারবি না? শেষ পর্যন্ত রয়েই গেলাম।
মনোয়ার স্যার Probability পড়াতেন, কিছুই বুঝতাম না। আর অন্য কোন কোর্সে কোন আগ্রহই পেতাম না। ব্যতিক্রম ছিল শুধু নাসের স্যারের কোর্স। স্যার সবে জাহাঙ্গীরনগর থেকে পাশ করে শিক্ষকতা শুরু করেছেন, আমরাই তাঁর প্রথম গিনিপিগ। স্যার পড়াতেন খুব কঠিন করে। বন্ধুরা বলত, স্যার যদি বাবার নামও জিজ্ঞাসা করেন তাও এমন কঠিন করে বলবেন যেন ফাংশনের সংজ্ঞা জিজ্ঞেস করছেন। তবে একথা সত্যি, পরিসংখ্যানের প্রতি যদি সামান্যতম আগ্রহও কেউ সৃষ্টি করাতে পারেন, তার পুরো কৃতিত্ব নাসের স্যারের। পরবর্তী বছরগুলোতেও এই ধারা অব্যাহত থাকল। নাসের স্যার যেই কোর্স পড়ান সেটা একটু মজা পাই। ম্যাডামের পড়ানো খুব ভাল লাগত। কোরবান স্যার খুব ভাল পড়াতেন, কিন্তু ওই বিষয়টি আমাকে আকৃষ্ট করত না। আমার যা ভাল লাগত সেই Regression এ বরং আমার সময় কাটত স্যারদের সাথে নানা তর্ক বিতর্ক করেই।
প্রথম বর্ষে ভাল করলাম না। কানের গোড়া দিয়ে প্রথম হলাম বটে, কিন্তু আমার পারফরমেন্সে আমি নিজেই সন্তুষ্ট হতে পারলাম না। বিষয়ের প্রতি আগ্রহ ক্রমেই হারিয়ে ফেলতে লাগলাম। সময় কাটত রাজনীতি আর আমার প্রাণ ‘মুক্তিযুদ্ধ চর্চা কেন্দ্র’ এর পেছনে। যদিও পড়ার প্রতি যে ঝোঁক ছিল তা কিন্তু কমে নি। আমাকে সারাদিন লাইব্রেরিতেই পাওয়া যেত। গ্রীষ্মের ছুটিতে তো সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৫ টা ম্যারাথন লাইব্রেরি। মাঝে চা, নাশতা আর নামাজের জন্য বড়জোর ১ ঘন্টা বিরতি। কিন্তু কী পড়তাম? পরিসংখ্যান বাদে আর সব কিছুই। বই কেনার নেশাও ছিল খুব। সাহেব বাজারের বই বিক্রেতাদের খুব প্রিয়পাত্র ছিলাম আমি। একদিন দেখি সমবায় সুপার মার্কেটের বই বিক্রেতারা আমি কোন বিভাগে পড়ি তা নিয়ে তুমুল বিতর্কে লিপ্ত। সম্ভাব্য বিষয়গুলোর মাঝে বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, দর্শন, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস, ইসলামিক স্টাডিজ সব আছে… নেই কেবল পরিসংখ্যান।
মাস্টার হবার পর সেই ম্যারাথন লাইব্রেরি করার অভ্যেসটা দারুন কাজে দিল। প্রাণের দায়ে পরিসংখ্যান পড়া শুরু করলাম আর বিস্মিত হয়ে লক্ষ করলাম কী আকর্ষণীয় বইয়ের সম্ভারই না সাজিয়েছেন মনোয়ার স্যার। চমতকার সব বই। আর কোথাও কিছু বুঝতে অসুবিধা হলেই ছুট নাসের স্যারের কাছে।
এদিকেই বিভাগেও ঘটতে থাকল নানা ধরনের বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। মনোয়ার স্যারের খামখেয়ালিপনার নানা পরিচয় তো ছাত্রজীবনেই পেয়েছি (পরে আলাদাভাবে এই বিষয়ে কিছু লেখার ইচ্ছে রইল), মাস্টার হবার পর বুঝলাম আরো কত বিস্ময়ই না অপেক্ষা করছিল আমার জন্য! স্যার বিভাগ চালাতেন একদম স্বৈরাচারী কায়দায়। কারো মতামতের কোন তোয়াক্কা করতেন না, নিজে যা ভাল বুঝতেন তাই। কোরবান স্যার ছিলেন নামে মাত্র সভাপতি। শিক্ষা কমিটির সভায় দেখতাম কোরবান স্যার কলম খুলে মনোয়ার স্যারকে বলতেন, স্যার, কি লিখব। স্যার ডিক্টেশন দিতেন, সেই টাই সভার সিদ্ধান্ত। একবার সভা শেষে ঘরে ফিরে এসেছি। এক পিওন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এল। স্যার, মিটিং এর কি সিদ্ধান্ত নাকি ভুল হয়েছিল, এই যে নতুন সিদ্ধান্ত, সই দেন।
পরীক্ষা নিয়েও হত সব মজার কান্ড। একবার এক ছাত্র নকল করতে যেয়ে ধরা পড়ল। মরহুম সাত্তার স্যার তাকে বহিষ্কার করার উদ্যোগ নেয়া মাত্রই সে ছুটে গিয়ে মেইন সুইচের কাট আউট খুলে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। অনেক কষ্টে তাকে নিবৃত্ত করে হলে বসানো হয়। খবর পেয়েই মনোয়ার স্যার ছুটে আসেন। তাঁর পায়ের স্যন্ডেল হাতে উঁচিয়ে ধরে খুঁজতে থাকেন সে দুষ্কৃতিকে… আর বলতে থাকেন
কে মরতে চাস? কে মরত চাস? মেইন সুইচে হাত দিবি কেন? আমার স্যান্ডেলের কয়েকটা বাড়িই যথেষ্ট।
আত্মহত্যার প্রয়াসী ছাত্রটিও তখন নিশ্চুপ। এমন বেদনাদায়ক মৃত্যুর জন্য সেও নিশ্চয় প্রস্ত্রুত ছিল না।
আরেকবার সুলতান আহমেদ স্যার এসেছেন এক্সটার্নাল হয়ে। স্যারকে উনি খুব শ্রদ্ধা করেন। সুলতান স্যার আমাকে জোর করে ভাইভা বোর্ডে বসালেন। একটি ছেলে কিছুই বলতে পারছিল না। এক পর্যায়ে সুলতান স্যার রেগে গিয়ে বললেন তুমি বোর্ডে গিয়ে Statistics শব্দটি লেখ। ছেলেটি এতটা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল যে এই সহজ বানানটিও ঠিক করে লিখতে পারল না। ছেলেটি বেরিয়ে যেতেই সুলতান স্যার মনোয়ার স্যারকে বললেন,
স্যার, আপনি যাই বলেন আমি এরে পাশ করাব না।
আমি মনোয়ার স্যারের এমন করুণ চেহারা জীবনে আর কোনদিন প্রত্যক্ষ করি নি। বিনয়ের সুরে বললেন,
সুলতান, তুমি তো জান আমি অসুস্থ। এই গাধাটা আমার সামনে দিয়া যত ঘুরব আমি তত অসুস্থ হইয়া পড়ব। তুমি কি আমারে মাইরা ফেলতে চাও? গাধাটারে পাশ মার্ক দিয়া আমার সামনে থেইকা তাড়াও।
আমি বেশ কয়েকটি কোর্স পড়ালেও কোন পরীক্ষার সাথে যুক্ত হই নি। সাধারণত আমাদের বিভাগে নতুন কেউ জয়েন করার পর অন্তত ৩ বছর প্রশ্ন করা বা খাতা দেখার দায়িত্ব পেত না। তবে স্যার একবার আমাকে তৃতীয় বর্ষের প্র্যক্টিক্যাল খাতা দেখার দায়িত্ব দিলেন। এই বর্ষেই ছিল আমাদের বিভাগের সর্বকালের অন্যতম সেরা ছাত্র বাবু (ড মেসবাউল আলম) যে অনার্স ও মাস্টার্স উভয় পরীক্ষাতেই ফ্যাকাল্টি ফার্স্ট হয়েছিল। খাতার নম্বর জমা দেবার ক’দিন পর স্যারের দরবারে ডাক পড়ল। যথারীতি রেগে অগ্নিশর্মা! আমাকে বললেন,
এইগুলা কি নম্বর দিছস? এমনভাবে নম্বর দিলে কি তুই ফার্স্ট ক্লাস পাইতি?
আমি একটু অবাক। যেহেতু প্রথম খাতা দেখছি, আমি বরং নম্বর একটু বেশিই দিয়েছি। সর্বোচ্চ ৪০ এর মধ্যে ৩৮… আমার বরং ভয় ছিল ওভার মার্কিং করলাম কি না?
স্যার একটি খাতা বের করে বললেন তুই এরে জিরো দিছস কেন? ১৬ (৪০ এ ওটা পাশ মার্ক) দে।
তাইতো ০ দিলাম কেন? নিজেই ধন্ধে পড়ে গেলাম। খাতায় কিছু লেখা তো আছে! পরে ভালো করে পড়ে দেখি যে সে হুবহু প্রশ্নটাই তুলে দিয়েছে। আমি হালে পানি পেয়ে বললাম,
স্যার ও তো কিছুই লেখে নি, শুধু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
স্যার এবার আমার দিকে প্রশ্ন এগিয়ে দিয়ে বললেন, দ্যাখ, ঠিকমত লিখসে কি না?
আমি বললাম জ্বী স্যার।
তার মানে পকেটে নকল থাকলে এই ছেলে ঠিক উত্তর দিতে পারত। ও দেখে লিখতে পারে। তোরা তো আজকাল সব নকল কইরা ফার্স্ট ক্লাস পাস। আমার এই ছেলেডা ভাল। সৎ… ও নকল করে নাই। ওরে ২০ নম্বর দে, সততার জন্য আরো ৪ নম্বর বেশি।
আমি তো হতভম্ব। স্যার কি আমাকে পরীক্ষা করছেন? আমি চুপ করে বসে রইলাম। স্যার ধমক দিয়ে বললেন,
কই দে।
জানি না, স্যারের মনে হয়তো এই ধারনা জন্মেছিল যে স্যারের প্রবল ব্যক্তিত্বের কাছে আমার মত একজন ছোট মানুষ খড়কুটোর মত উড়ে যাবে। কিন্তু যা আমি নীতি বিরুদ্ধ বলে মনে করি তা যেই করুক না কেন এমন কি তিনি যদি হন আমার বাবা তবেও তা বর্জন করার শিক্ষাটি খুব ছোটবেলা থেকেই পেয়ে এসেছি।
তাই শান্তকন্ঠে বললাম, সরি, স্যার। এটা আমি করতে পারব না।
এবার স্যারের হতভম্ব হবার পালা। আমি আশঙ্কা করছিলাম যে স্যার হয়তো রেগে গিয়ে খুব গাল মন্দ করবেন।
উনি শুধু বললেন, তুই তো আবার ভাল মানুষের পোলা, আচ্ছা, যা।
একটু পরে আবার ডাক পড়ল স্যারের ঘরে। দেখি যে স্যার একটি মার্কশিটে প্রতিটি রোলনম্বরের পাশে নিজ হাতে ২০+ লিখে রেখেছেন। মার্কশিটটি আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন
এবার তোর যা দেবার দে।
হায় আল্লাহ, তার মানে আমি ০ দিলেও সে পাবে ২০।
বললাম স্যার, তাহলে যে ৩৮ পেল তার নম্বর তো হয়ে যাব ৪০ এর ভেতর ৫৮!
স্যার একটু মুচকি হাসলেন, ভাবখানা এমন যে কেমন দিলাম?
বললেন, তুই তো কুয়ার ব্যাঙ, সারাজীবন এক বাড়িতেই কাটায় দিলি, দুনিয়ার কিছুই দেখস নাই… সারা দুনিয়ায় ভাল ছাত্রদের জন্য এক্সট্রা ক্রেডিট থাকে। ভালো ছাত্ররা ১০০ তে ১১০ বা ১২০ পর্যন্ত পায়। ধরে নে এইডা একস্ট্রা ক্রেডিট।
আমি অবিশ্বাসের ভঙ্গীতে স্যারের মুখের দিকে চেয়ে রইলাম। সত্যি, এমন হয় নাকি?
আজ যখন বল স্টেটে এই আমার হাতেই ছাত্ররা ১০০ তে ১০৫, ১১০ পেয়ে যায় তখনই মনোয়ার স্যারের মুখটা মনের পর্দায় ভেসে ওঠে।
পড়ছি ... চলুক
~
সাথে আছি আপনার পথ চলাতে।
চলছে চলুক।
পড়ছি ... চলুক
ঢাবির আইএসআরটিতে ফলিত পরিসংখ্যানে পড়তেছি।মাথা খারাপ অবস্থা,মাঝে মাঝে মনে হয় ছেড়ে দেই সব
মন্তব্য করুন