রং এর বৈশাখ
বৈশাখ বলতেই স্মুতির ভেলায় চড়ে মন ছুটে যায় ব্রম্মপুত্র নদীর পাড়ের হাতিরদিয়া বাজারের বৈশাখের মেলায়। শুকনো নদী, দুই পাড়ে গাছপালায় ঘেরা শান্ত স্নিগ্ধ গ্রাম। একপারে নদীর কোল ঘেঁষে বিশাল এক বাজার। সারাটা চৈত্র মাস টান টান উত্তেজনায় কাটতো আমাদের দিন । কবে আসবে পহেলা বৈশাখ! চৈত্র সংক্রান্তিতে সারাদিন- রাত জুড়ে সে কি আনন্দ! ঈদের আনন্দকেও ছাপিয়ে যেত নতুন বছর বরণের আনন্দ। প্রতি পহেলা বৈশাখে মেলা থেকে আমরা একটা মাটির ব্যাংক কিনতাম আর সারা বছর ধরে সেই ব্যাংকে টাকা জমাতাম। পহেলা বৈশাখের সকালে মাটির ব্যাংক ভেঙ্গে দেখতাম সব ভাই বোনদের কার কত টাকা হলো। সেই টাকা আনন্দকে বাড়িয়ে দিতো হাজারগুণ। সকাল বেলায় মামা এসে মেলায় নিয়ে যেত। বাবার দেয়া নতুন লাল জামা পড়ে রওনা হতাম। আহ্ কি আনন্দ। যা দেখি তাই ভালো লাগে। চোখে মুখে আনন্দের ছটা। সব কিনতে ইচ্ছা করে। সারি সারি দোকান----খেলনা, চুড়ি, ফিতে, বাহারি সরঞ্জামে ভরা বাজারের এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত। নদীর ওইপাড় থেকে কুমোরেরা নৌকা বোঝাই করে মাটির জিনিসপত্র নিয়ে আসত---নানা ধরনের হাঁড়িপাতিল, পুতুল, পশু পাখি জাতীয় খেলনা। মামা বলতো-”কি রে কিনবি? ” কি যে একটা হাসি দিতাম! ভাবতেই চোখ ভরে গেলো। হাত ভরে চুড়ি পড়ে, রাজ্যের খেলনা, পুতুল নিয়ে ব্যাগ ভরে আর রাজ্যের সব হাসি ঠোঁটে ধরে মামার মোটর বাইকে মামাকে জড়িয়ে ধরে বাড়ি ফিরতাম। দৃপুর পর্যন্ত সেসব সবাইকে দেখানোই ছিলো আরেক উৎসব। ভাই বোন দের সাথে মিলানো কারো থেকে কিছু কম হলো কিনা। দুপুরে ঈদের দিনের মত রান্না হতো। সবাই একসাথে খেয়ে আস্থির থাকতাম বিকেল হলেই বাবার সাথে আবার মেলায় যাব। বাবার হাত ধরে প্রত্যেকটা দোকান ঘুরতাম। নাগরদোলায় চড়তাম। কি কিনতে চাইনি মনে পড়ে না। মার খুব রাগ ছিলো কেন এত হাবিজাবি কেনা? বাবা হয়ত ভাবত এই শৈশব হারিয়ে যাবে। ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে বাবা-মেয়ে রাতে বাড়ি ফিরতাম। ক্লান্তি , আর বৈশাখের অপার আনন্দ ঠোঁটে ধরে ঘুমিয়ে পড়তাম। যতদিন শৈশব ছিলো একইভাবে লাল রং নিয়ে , আনন্দ নিয়ে প্রতিটা বৈশাখ এসেছে। সেই হাতিরদিয়া বাজার আছে, নদী আছে। নদীর পাড়ে গাছপালায় ঘেরা গ্রাম আছে। এখনও বৈশাখ আসে। আমার শৈশব আসে না। মামার সেই আদর মাখা মুখটা দেখি না কতকাল! ভুড়িটা জড়িয়ে ধরে বাইকে বসে মেলায় যাই না। মাইল জুড়ে এখন আর মেলাও বসে না। এখন মেলার নামে খেলা হয়। সেই খেলা খেলে কেউ হাসি নিয়ে ফিরে যায়, কেউ নিঃশ্ব হাতে রাতের আঁধারে মিলিয়ে যায়।
লিখতে বসে ফিরে গেলাম সেই নদীর পাড়ে। বুকের ভিতর মায়া, মমতা, ভালোবাসা দিয়ে লালন করা স্মৃতি। বৈশাখের সকালে ঘুম ভেঙ্গে বারান্দায় দাঁড়াই, ফিরে যাই আমার ছোটবেলায়। পাটভাঙ্গা নতুন শাড়ীটায় হাত বুলাতে গিয়ে বাবার দেয়া লাল জামাটাকে দেখি। স্মৃতিতে হাত বুলাই। শাড়ীর কুঁচি ঠিক করতে করতে সেই দিনগুলোর সবগুলোকে মুহুর্তকে সাজাই। আয়নায় তাকিয়ে কপালে লাল টিপটা দিতে গিয়ে ছোটবেলার লাল জামা পড়া আমাকে দেখি। বাবার দিকে, মামার দিকে তাকিয়ে যেন হাসি। চোখ ভরে যায় আমার। কাচের চুড়ির টুং টাং শব্দ সেই আনন্দকে আমার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। আবারো রং নিয়ে খুব প্রিয় একজনের হাত ধরে, পাশে থেকে মনের রং ছড়াতে, হাজার মানুষের মনের রং কে ছুঁতে পা বাড়াই। হাজার হাজার মানুষের চোখে মুখে আনন্দ দেখে মন ভরে উঠে। আমার জন্ম জন্মান্তরের চাওয়া আমার দেশের মানুষগুলো বছরের প্রথম দিনের মতো রঙ্গীন করতে পারুক জীবনের সব মুহুর্তকে।
(এই লেখাটা গতবছরের ই বুকে প্রকাশিত। আজ কাজিনরা সব পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে যাচ্ছে নরসিংদী। আমার যাওয়া হবে না কিন্তু মনটা ছুটে গেছে আগেই। তাই পুরোনো লেখাটা পড়ে পোষ্ট করতে ইচ্ছে করলো।)
তুমিতো দেখি বৃদ্ধ হইয়া যাইতাছো
শুভ নববর্ষ
হ রে। বৃদ্ধ হয়ে গেছি। ৩ কাল গিয়ে এককালে ঠেকছে। (দীর্ঘশ্বাস)
শুভ নববর্ষ।
মনে হল আপনার সাথেই ঘুরে আসলাম আপনার সেই স্মৃতির গ্রামে, প্রিয় মেলায় । কত কিছু যে হারিয়ে গেছে জীবন থেকে । লেখাটা পড়ে সাজুগুজু করতে মঞ্চাইতাছে
মন বড্ড খারাপ লাগে।
সাজুগুজু করো ইচ্ছামতো।
মনটা খারাপ ছিলো। এখন মেজাজটা খারাপ করে দিলে।তাই মডুর কাছে বিচার দিলাম।
দিলে= দিলেন
আমিও কনফিউজড হয়েই পোষ্টটা দিলাম। এটা তো এবির ই বুকে দেয়া হয়েছে। পোষ্ট আকারে না। ই বুকের লেখা আগেও পোষ্ট আকারে এসেছে , তাই ভেবেই আবার দেওয়া। তুবও যদি নিয়ম ভাঙ্গা হয়ে থাকে প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দেবো।
আপনার মন আরো খারাপ হোক। দোয়া দিলাম। ফু
লেখা পড়ে আমি ও ঘুরে এলাম আপনার সাথে। আপনার পোস্ট পড়তে পড়তেই -----
এই এখনই আকাশটা কালো হয়ে উঠলো। আপনার সাথে আপনার স্মৃতিতে ঘুরতে ঘুরতে বিদ্যুৎ চমকের মত একটি স্মৃতি মনে ভেসে উঠলো। অন্ধকার ঘরে বাতি জ্বালিয়ে ভাবনায় ডুব দিলাম। ভাল থাকুন।
শুভ নববর্ষ ছায়াপা
সেদিন সবাই বললাম আমাদের নিয়ে চলো তোমার বাড়ি, নিলা না। আর আইজ লোভ দেখাও।
বৈশাখের কোনো স্মৃতি মাথায় নাই। তবে ক্যম্পাসে ভীড় একটা পর্যায়ে চূড়ান্ত অস্থির করে তোলে। ক্যামেরা নিয়ে বের হওয়ার ইচ্ছা আছে। রাতে মনে হয় বেশি ভালো লাগবে। এখন সকালটা পেইনলেস্ কাটলেই হয়। নতুন বছরের প্রথম সকাল কেমন কাটলো জানায়েন জয়িতা'পু। শুভ নববর্ষ।
লেখাটা স্মৃতিকাতর করে দিলো। একটা উপহার দিই- নববর্ষের। আমার প্রিয় লেখক মাহমুদুল হকের লেখা থেকে কয়েকটি লাইন-
'পানির উপরে হাওয়ার নাচন শুরু হয়েছে। বাংলা কবিতার একটি বিড়াল অন্ধকারকে ছোট ছোট বলের মতো থাবা দিয়ে লুকিয়ে আনছে, ছড়িয়ে দিচ্ছে, আর 'চলো নামি আষাঢ় আসিয়াছে' ধরনের ঝাঁপ দিয়ে উদ্যানের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত ছোটাছুটি করে নৃত্যরত জিপসী তা কুড়িয়ে নিচ্ছে, যেন শিলকুড়ুনি শৈশব। শৈশব জীবনে বারবার আসে না কেন? আসলে জীবন মানেই শৈশব; জীবনভর মানুষ এই একটা ঐশ্বর্যই ভাঙিয়ে খায়, আর কোনো পুঁজিপাট্টা নেই তার। এই এক অদ্ভুত জীব, ধাপে ধাপে এরা নিজেদেরকে ছোট করে তোলে, রক্তে মিশে আছে এদের নিজেদের পতন।'
আহা মধুর শৈশব.......
দারুণ লিখেছিস
আহা শৈশব!
ব্যবসায়ী পরিবারে আরো একটি মজা থাকে হালখাতা। মিষ্টি খাওয়া। ছোট বেলায় আব্বু হাড়ি দিয়ে বসিয়ে দিতেন কয়টা খেতে পারি। অর্ডার দিয়ে বানানো সেসব মিষ্টি। দুটা খেলে সারাদিনে আর ভাত খেতে পারতাম না। আমিও আমাদের ঢাকাতে হওয়া বৈশাখী মেলা থেকে দুনিয়ার হাবিজাবি কিনতাম, যেগুলো তারপর আর একদিনও ধরে দেখতাম না। মাটির পুতুল, ছোট কাঠের ঢেঁকি ইত্যাদি। অথচ দোকানে দেখলেই কি মায়া লাগতো কিনে ফেলতাম।
শুভ নববর্ষ জয়িতা
শুভ নববর্ষ আপু। আমি কখনো গ্রামে পহেলা বৈশাখ উদযাপন দেখি নি
আপনার পোষ্টে যে ভাবে আপনার গ্রামের বর্ণনাগুলা আসে তাতে যে কেউই একবার বা একবার যেতে চাইবেই। আমিতো অবশ্যই ব্যতিক্রম নই। দাবী জানাইয়া গেলাম। যদি কোনদিন সফল হয় ......
ভদ্রমহিলা গেল কৈ?
@সামছা আকিদা,আপনিও ভালো থাকুন আপু। শুভ নববর্ষ।
@সুমন ভাই , শুভ নববর্ষ। কি সব নাম বলেন!
@ মাসুম ভাই, শুভ নববর্ষ। চলেন যাই একদিন। যেতে তো চান নাই। হুদাই চাপা মারেন।
@মীর, শুভ নববর্ষ । কেমন আছেন? কেমন কাটলো কাল দিনটা? মনে রাখেন বলে, মনে করেন বলে খুব ভালো লাগে। কাল সকালটা প্রতিদিনের মতোই কাটলো, দুপুর থেকে সন্ধ্যা জোশ টাইম ছিলো। ব্লগ মোটামুটি সারাক্ষণই দেখি। মন পড়ে থাকে ব্লগে। লগ ইন করে কমেন্টানো হয় না। আম্মাকে ফিজিওথেরাপি সেন্টার থেকে হাতের এক্সারসাইজ করিয়ে ১০ টায় আসলাম বাসায়, এখন কালকের রান্না করি। এভাবেই কাটছে প্রতিটাদিন। ঠিক হবে সব আবার ইনশাল্লাহ। ভালো থাকবেন।
@ কামাল ভাই, শুভ নববর্ষ।
@লীনাপা,
@ জুলিয়ান, শৈশব মিস করি।
@ তাতাপু, শুভনববর্ষ সুইটু। পোষ্ট দেন না কেন নতুন?
@ আরিশ, শুভনববর্ষ ভাইয়া।
@ নাহিদ ভাই, একদিন নিয়ে যাব আমার গ্রামে।
বহুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ফার্স্ট ইয়ারের কথা মনে পড়ে গেল।
পুরোনো দিন মনে পড়ে কেমন লাগে? কেনইবা মনে পড়লো?
পুরোনো দিনের কথা মনে পড়লে সবসময় যে মজা লাগে এমন না। ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হওয়ার পর হলের পলিটিক্যাল লীডারগুলো নিয়ে গিয়ে ঢুকিয়ে দিলো গণরুমে। এক রুমে গাদা করে ২৫ জন একসঙ্গে থাকা। তো আপনেও যে এই গণকমেন্ট-রুমে ঢুকিয়ে দিলেন, সেটা দেখে ফার্স্ট ইয়ারের কথা মনে পড়ে গিয়েছিলো, আর কি।
আছেন কেমন আপু? মহান মে দিবসের বিপ্লবী শুভেচ্ছা।
অনেক আগেই পড়েছিলাম, কিন্তু দৌড়ের উপরে আছি বলে কমেন্ট করা হয় নি।
ইয়ে মানে জিজ্ঞাস করতে চাচ্ছিলাম, মাইনষে এত সুন্দর করে মনের ভাব প্রকাশ করে কেম্নে? আমার ক্ষেত্রে তো মনের ভাব প্রকাশ করা আর সোজা প্যাচাল পারা একই হইয়া যায়
আসো আমরা মীরকে জিজ্ঞেস করি ......মাইনষে এত সুন্দর করে মনের ভাব প্রকাশ করে কেম্নে?
"মেলা থেকে তালপাতার এক বাঁশী কিনে এনেছি
বাঁশী কই আগের মতো বাজেনা--------------"
সুন্দর লেখা! চমৎকার লেখা!
অনেক শুভেচ্ছা ।ভাল থেকো।
মন্তব্য করুন