আমরা পরাজয় মানবো না
একটা খুব হালকা হলুদ রঙএর জামা পরেছিলো মেয়েটি। অনেক স্বচ্ছ। সুন্দর দেহবল্লীর কল্যাণে টানটান। সঙ্গে শাদা ওড়না। সালোয়ারটা ছিলো শাদা। আর স্যন্ডেলটা ছিলো শাদা-হলুদ। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েছিলাম। দেখে সে অবিশ্বাস্যভাবে উঠে এসে, গোড়ালির ওপর উঁচু হয়ে আমাকে একটা হাগ দিয়ে বসলো। মানুষজনের তোয়াক্কা না করেই!
ফ্লেক্সিবিলিটি শব্দটা কি শিশুদের জন্য প্রযোজ্য? অফিসে কাজ ছিলো না বলে বসে বসে রিমোট টিপছিলাম। ডান্স বাংলা ডান্স নামে একটা অনুষ্ঠান চোখে পড়লো। বস্'কে প্রায়ই এটা দেখতে দেখি। এ্যংকর হচ্ছে মিঠুন চক্রবর্তী। আছে অর্পিতা আন্টি আর বোধহয় যীশু আংকেল। অতিথি হয়ে এসেছে একজন। একটা ভুত আছে। ভুতটা খুবই ফানি। পুরো প্যকেজটা টিভি অনুষ্ঠান হিসেবে বেশ।
অফিসে বেশিক্ষণ লোডশেডিং পাই না। কারেন্ট গেলেই বরকন্দাজগুলো দৌড় লাগায় জেনারেটর রুমের দিকে। ওরা সেখানে গিয়ে পৌঁছুবার সঙ্গে সঙ্গেই লাইট-ফ্যান-তাপনিয়ন্ত্রক আবার চলে ওঠে। এমন যদি হতো যে, একবার বিদ্যূৎ গেলে ২০-২৫ মিনিট সবার বসে থাকা লাগে; তাহলে আমি খুশি হতাম।
নিউজপ্রিন্টের ফর্মাখাতাটি একদিন পকেটের ভেতরে রয়ে গিয়েছিলো। এতে করে লাভজনক যে কাজটি হয়েছে, তা হলো কয়েকটি বিক্ষিপ্ত প্যারা।
দুপুর পৌনে তিনটায় মোহাম্মদপুর কলেজের সামনে দিনের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো চাকায় হাওয়া দিতে দাঁড়িয়েছি। মনে হয় ৯০% লিক হয়ে গেছে টিউবটা। ৯০% লিক কিন্তু একটা টার্ম। এর মানে তারকাঁটা বা চোখা কোনোকিছু ঢুকে টিউবটাকে পুরো বরবাদ করে দেয় নি, কিন্তু ছোট ছোট ফুটো হয়েছে ওর ভেতর। দ্রুত না সারালে ফুটোগুলো অচিরেই টিউবটা বরবাদ করে দেবে।
মাঝে মাঝে ওস্তাদের বিট্রে সব ধরনের সীমা ছাড়িয়ে যায়। তখন সবচে' বেশি মজা লাগে। অপেক্ষায় থাকি সুতো টানাটানির খেলায় শেষ পর্যন্ত কে জেতে সেটি দেখার জন্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমিই হারি। খুব মেজাজ গরম হয়। কখনো যদি সকালবেলা সিঁড়ি দিয়ে নেমেই দেখি পাংচার হয়ে আছে টায়ার; আমি বুঝতে পারি, তিনি স্পোর্টিং মুডে আছেন।
সকালে ইয়া বিশাল এক কেক দেখেছি। সেগুনবাগিচার মানুষজন খাচ্ছিলো। কিন্তু কেকটা একেবারে পাড়ার ময়রা দোকান থেকে কেনা। এরচে' দু'চার পাউন্টের মিস্টার বেকার বা সুইসের কেক আনলেও হতো। আমি অবশ্য কাড়াকাড়িতে যাই নি।
শহরে মরিচীকা দুর্লভ নয়। রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিন মানেই মানিক মিয়া এভিনিউ বা সার্ক ফোয়ারার দুই পাশের প্রশস্ত পীচকার্পেটে মরিচীকার খেলা। নেভী চীফের বাসার সামনের রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া খুব একটা থাকে না। একটা ছেলে আর একটা মেয়েকে রিকশা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম, পেছন থেকে ষন্ডামতো দু'টো লোক ছুটে এসে রিকশা থামিয়ে ছেলেটাকে টেনে নামালো। নামিয়ে ওর উপর চটাশ-পটাশ চড়চপেটা চালানো শুরু করলো। দেখে সব দৌড়ে গেলাম। ছিনতাই হচ্ছে নাকি? কিন্তু সেটা ছিলো ছ্যাঁকাকাহিনী। মেয়েটা কেঁদে-টেদে নাকের ডগা ফুলিয়ে ফেলেছে অল্প সময়ের মধ্যে। পুলিশ আশপাশেই ছিলো, হয়তো নেভী'র প্রটোকল অফিসার। এসে ষন্ডা দু'টোকে ঠান্ডা করলো। তবে ওরা সহজে ঠান্ডা হচ্ছিলো না। ছেলে-মেয়ে দু'টো চলে যাওয়ার সময়ও পেছন থেকে এক ষন্ডা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছিলো, আমার কাছে সবকিছু ভিডিও করা আছে। দেখি কদ্দুর তুই যাইতে পারোস। শুনে অন্তরের ভেতর দুঃখ পেলাম। মানুষের মাঝে নিষ্ঠুরতা কি ভয়ানকভাবে বাড়ছে।
হিজিবিজি লিখে পাতা ভরাচ্ছি কেন? কারণ কাগজে-কলমে লিখছি। এই লেখালেখি কী-বোর্ড টেপার চেয়ে অনেক আনন্দের। এজন্য বোধহয় আগে যেমন মানুষ লিখতো, এখনে তেমন মানসম্পন্ন লেখা আনুপাতিক হারে কমে এসেছে। তবে মনে হয় এটাই একমাত্র কারণ নয়।
জরুরি একটা বিষয় হচ্ছে এখন অনেক মানুষ লেখালেখি করছেন। এতে করে একটা লাভ হচ্ছে, লেখালেখির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় একটা উন্নতি এসেছে। কিন্তু যদি বলা হয়, ভালো লিখিয়ে তৈরী হচ্ছেন ক'জন? তাহলে কিন্তু একটা শূন্যতা তৈরী হয়। মানুষের মনের ভেতর পৌঁছুতে পেরেছেন ক'জন? আরেকটা বিষয় হলো, একজন মানুষের প্রিয় লেখক সর্বোচ্চ ক'জন হতে পারে? কারণ প্রচুর পরিমাণ প্রিয় লেখক হয়ে গেলে, সবার নাম মনে রাখাই তো একটা সমস্যা।
পাঠক একটা জরুরি বিষয়। ইদানীংকালে লেখালেখির একপিঠে যদি থাকেন লেখক, তো অপর পিঠে থাকেন পাঠকেরা। কারণ শিক্ষিত পাঠকের একটা বড় অংশই এখন লেখকের জীবনে পরোক্ষ থেকে প্রত্যক্ষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন। আজকাল তাই সবাই পাঠকের কথা মাথায় রেখেই লিখেন। এমনকি যারা অন্য মাধ্যমে লেখালেখি করেন তারাও।
আগে হয়তো নন্দিত নরকে পড়ে একজন পাঠক তার প্রতিক্রিয়া কিভাবে লেখককে জানাবে দিশে পেতো না। এখন সে সমস্যা নেই। ব্লগ আছে। ফেসবুক কি আছে কি না নিশ্চিত না, তবে থাকতে পারে; সমাজ খুবই আঁটোসাটো। আর ব্লগ মানে তো একটা সত্যিকারের ভার্চুয়াল দুনিয়া। যেখানে মানুষ তার নিজের অপূর্ণ ইচ্ছেগুলোকে পূর্ণতা দিতে পারে।
লেখালেখি ও ফিডব্যাক চলে সমান্তরালে। আমি যে ভাবনাটা ভাবি, তা হলো ত্রিশের দশকে যদি ব্লগ থাকতো, তখন রবীঠাকুর-পঞ্চপান্ডবের দ্বৈরথটা কেমন হতো? ভালো হয়েছে ত্রিশে ব্লগ ছিলো না। কারণ, আমি তো জন্মালাম প্রায় পঞ্চাশ বছর পর। একটা অসাধারণ লড়াই স্বচক্ষে না দেখতে পারার তাড়নায় প্রচুর পোড়া লাগে নি।
তবে মুঘল আমলে বাংলা ব্লগের অপরিহার্যতা সম্পর্কে আমি দিন দিন নিঃসন্দেহ হয়ে উঠছি। শুনেছি মুঘল বাদশাহরা সবাই অল্পবিস্তর সাহিত্যচর্চায় যুক্ত ছিলেন। সে সময় আমি আর বাংলা ব্লগ থাকলে, বাদশাহদের লেখাগুলোয় আরামসে কমেন্ট করতে পারতাম। তারা নিশ্চই ব্লগিং করতেন। একটা ভালো জিনিস নিজে না খেয়ে প্রজাদের খাওয়ানোর মতো লোক তারা ছিলেন না। সম্রাট আকবর বলেছিলেন, হাতির মাহুতের সঙ্গে দোস্তি করতে হলে দরোজা উঁচু করতে হয়। আমি নির্ঘাৎ দেশের সবচে' বড় হাতিটিতে চড়ে একদিন তার প্রাসাদে বেড়াতে যেতাম। আমার খুব দেখার ইচ্ছা; রাজার বাড়িতে হাতিসহ প্রবেশ করলে, রাজার কেমন লাগে।
টোকাইদের সারাদিন মুখে পলিথিন ফুলাতে ফুলাতে ঘুরতে দেখেন? একটা টোকাইও কি দেখেন, মুখে পলিথিন ছাড়া? যদি না দেখেন, তাহলে বুঝতে হবে এটা একটা সাংঘাতিক কথা! এই নেশাসক্ত প্রজন্মটা যখন বড় হবে, তখন সেটা আমাদের জাতীয় জীবনে কি অভিশাপ বয়ে নিয়ে আসবে; সরকার-বাহাদুর কি ভেবেছে? যদিও শহরের প্রতিটি গলিতে সমস্যার গাঁট এত বেড়েছে যে, বাহাদুরদের দৃষ্টি সেসব পেরিয়ে টোকাই পর্যন্ত আসে না। কিন্তু তাকানো দরকার। একটা পুরো প্রজন্মের এখনই চিকিৎসা দরকার। ওরা ভীষণ বিপদের মধ্যে আছে।
প্রসঙ্গত, আমাদের দুই খানম কাজটা কি করলেন? বিদেশে গিয়ে এমন কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি? ভাগ্যিস বিদেশীরা বাংলা বোঝে না, আর দুই খানমও ভালো ইংলিশ পারে না। নাহলে যেভাবে দুইজন একে অপরের কুৎসা গেয়েছেন, তাতে এ দফায় জাতি হিসেবে আমাদের ইজ্জত গিয়েছিলো প্রায়। এমনটা করা, আর যারই হোক নেতার কাজ নয়।
যাক্ ম্যংগোপিপল নামকরণের স্বার্থকতা প্রমাণ করতেই এবার পিপল ম্যংগো খাবে প্রচুর। উত্তরাঞ্চলে নাকি বরাবরের মতোই বাম্পার ফলন হয়েছে ম্যংগোর। উচ্চ আদালত কীটনাশকের হাত থেকে সেসব সংরক্ষণে মাঠে নামতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসটিআই'কে। খারাপ না বিষয়টা। কিন্তু আমি একটা বিষয় বুঝি না। বাঙালি তো এমনিতেও প্রচুর আম খায়। জাম, কলা, লিচু কোনোকিছুই বাদ দেয় না। তাহলে এসবে রাসায়নিক মিশিয়ে বেশিদিন তরতাজা রাখার দরকারটা কি? বাঙালি কি খেতে ভুলে গেল যে, আজকাল ফল পঁচে যায় ফরমালিন না দিলে?
আমাকে মামী বলেছিলো, কালো লেহেঙ্গা কিনে দিতে হবে। আমার যে কবে অতো টাকা হবে! তার আগে যদি বুড়োই হয়ে যাই, তাহলে কেমনে হয়? আমি যখন অনেক পিচ্চি সেভেনে পড়ি, তখন মামার সঙ্গে মামীর বিয়ে হয়েছিলো। মামী আমাকে ভীষন আদর করে তার বিয়ের দিন থেকেই।
আর কত লিখবো? বিদায় হই। ভালোবাসা পবিত্র জিনিস। তাই ভালোবাসা দিলাম সবাইকে। প্রাপ্তিস্বীকার বাধ্যতামূলক। শুভেচ্ছা নিরন্তর।
---
অনেক কিছু তুলে নিয়ে এসেছেন। শুভ কামনা।
হুমম। হাগ করে দিন দিলকে হাগু করে দিল শুনতে লাগে। জড়িয়ে ধরা শব্দটা কি ব্যাকডেটেড হয়ে গেল?
মানুষের মাঝে নিষ্ঠুরতা কি ভয়ানকভাবে বাড়ছে।
বোধের বড় অভাব। ...।
মাথাটা ঘুরে উঠলো, অল্পকিছু শব্দে কত বিষয় তুলে আনলেন! কীভাবে যে পারেন
একটা মাত্র ফ্রেমে কত্ত কত্ত রঙের খেলা...
আহ! এমন যদি পারতাম...
রাস্তাঘাটে কি সব দেখে! ছি ছি!
এইটা খুব ভাল বলেছেন
বিচিত্র মানুষ ! বিচিত্র দুনিয়া !
্বুঝলাম না !!
আমি কোট করলে সেটা আসে না কেন? কেউ কি দয়াকরে শিখাবেন ?
প্রাপ্তিস্বীকার করলাম।
ডান্স বাংলা ডান্স মাঝে মাঝে চোখে পড়ে, মিঠুনের কোলের কাছে ঘেঁসে থাকা গাবদু-গুবদু বাচ্চাটাকে দেখতে বড় ভালো লাগে।
আল্লাহরে কত কত বিষয় যে এনেছেন, আর পারলাম না সব বিষয়ে বলতে, বলার ইচ্ছা ছিল।
ধন্যবাদ।
জানালা দিয়ে আকাশ দেখি। এই টুকরো আকাশকে দেখেই দেখে ফেলি আকাশের সব সৌন্দর্য। পেয়ে যাই সব রং। ঠিক আপনার লেখার মত। এক পাতাতেই কত বৈচিত্র।
আচ্ছা মানুষ তাজা রাখার ফরমালিন পাওয়া যায় না?
্বাহ! কতকিছু তুলে আনলেন, একটা লেখায়
কি লেখলেন কিছুই তো পড়তে পারলাম না, প্রথম প্যারাতেই চোখদুটা ফেলে আসছি
আসলেই
প্রাপ্তিস্বীকার করলাম।
পলিথিনে ফুঁ দেয়ার রহস্য ধরতে পারলাম না। ওর মধ্যে কি নেশা জাতীয় কিছু আছে?
আমাদের যাদের হাতের লেখা পড়ার যোগ্য না, তাদের জন্যে কীবোর্ডই একমাত্র সমাধান। আগে বাসায় স্যার পড়াতে আসলে মনে মনে চাইতাম কারেন্ট চলে যাক, স্যার আর জুত করতে পারবে না। পোড়ার এই দেশে কারেন্ট যাওয়ার কোন সিস্টেম কেনো নাই, বুঝি না
পলিথিনের ভেতরে থাকে জুতায় লাগানোর গাম (সল্যুশোনও বলা হয়)। এইটা পলিথিনে ভরে কিছুক্ষণ রাখলে একটা ভ্যাপার মতন ওঠে, যেইটা নিশ্বাসের সাথে নিলে কিছুটা ঝিমঝিম ভাব আসে। মনেহয় গামের ইনগ্রিডিয়েন্ট হিসেবে থাকা মেথিলেটেড স্পিরিটের জন্য এরকম হয়।
হ... আম খাইতে হইবো... এইটাই জরুরী কথা
হ, আস্তে ধীরে হলেও আপনার অবয়বটা ফুটে উঠছে...
সাধু সাবধান !!
ওহ মীর, অভিনন্দন!!!
এক সাথে এতো কিছু না বলে ধীরে সুস্থে কয়েকটা আলাদা প্যারাতেও লিখতে পারতেন । এতো দ্রুত এক প্রসঙ্গের মধ্যে আর একটা সম্পূর্ণ আলাদা প্রসংঙ্গ . . অদ্ভুত লাগতেছে ।
মন্তব্য করুন