গল্প: পেশাজীবী মীমের ঝিক ঝিক টাইপের আত্মকাহিনী (৩)
আমি গুলশানে কয়েকটা বড় বড় পার্টি অ্যারেঞ্জ করতেই সবাই চিনে ফেললো। সেই সুবাদে হাতে এসে গেলো এই ফ্ল্যাটটার চাবি। টুকটাক বিদেশ ভ্রমণও শুরু হয়ে গেলো সেইসময় থেকে। আর ভ্রমণের সময় পেয়ে গেলাম আরেকটা টাকার খনির সন্ধান। বিদেশে প্রচুর কনজারভেটিভ বাঙালি পরিবার আছে। যারা থাকে ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডে আর চিন্তা করে থার্ড ওয়ার্ল্ডের নাগরিকদের মতো করে। পরিবারের মেয়েকে দেশের ছেলে ছাড়া বিয়ে দিতে তাদের অনেক আপত্তি। হাহ্ আমার জন্য তো ব্যপারটা সোনায় সোহাগা হয়ে গেলো। বুঝতে পারছেন এখন আমার ব্যবসাটা?
আমি মাথা ঝাকালাম। বুঝতে পেরেছি। সে কথা বলেই গেলো।
ডিভোর্স হয়ে যাবার পর আমার আসলে কোনো পিছুটানই ছিলো না। পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক নেই অনেক দিন ধরে। নিজের মতো করে চলতাম। ব্যবসাও নিজের মতো করে চলছিলো। আমার যা দরকার তা সহজেই আয় করে ফেলতাম। ছেলেদের সঙ্গে প্রচুর মিশতাম। সবাই ছিলো ব্যবসায়িক সূত্রে পরিচিত। কোনো ফ্রেন্ড সার্কেল মেইনটেইন করতাম না। ফ্রেন্ড সার্কেল মানেই বাইন্ডিংস্। ভালো লাগে না আমার একদম।
প্রথম প্রথম ছেলেদের সঙ্গে মিশতে গিয়ে একটা বিষয় দেখে অবাক লাগতো। আগে থেকে বলা না হলে, ছেলেরা কমিটমেন্ট বলে যে একটা জিনিস আছে সেটা স্বীকারই করতে চায় না। একটু একসঙ্গে ঘোরাফেরা করা আর চামে দুই-তিনবার কোর্স করে ফেলতে পারলেই ব্যস্, ফুট্টুশ! অল্প বয়সে প্রেম করার একটা সুবিধা আছে। তখন ছেলেদেরকে একটা দীর্ঘ পর্যায় পার করতে হয় মেয়েদেরকে নিজের ব্যপারে বিশ্বাস করাতেই।
আমি অবশ্য কারো কাছ থেকে কমিটমেন্ট চাইওনি। কেউ কমিটমেন্ট অফার করলে আমি বরং তাকে নিশ্চিন্তই করতাম, সেটা না নিয়ে। কিন্তু বজ্জাতগুলোর অতোটুকু কার্টেসী দেখানোর মতো শিক্ষা নেই। আমি অন্তত তেমন কাউকে পাই নি। তবে আমি বলবো, এতে আমার সুবিধে হয়েছে। আমি লুচ্চাগুলাকে আরো লুচ্চামি করার সুযোগ দিয়েছি। বলেছি, পার্সনাল কাজে আমার ব্যবসায়িক সেল নাম্বারটায় নিজেদের ফোন থেকে যোগাযোগ না করতে। অন্য কোনো অচেনা নাম্বার থেকে ফোন করতে। এটা করার পর ব্যবসায়ী আমি আর ব্যক্তিগত আমি'র ভেতর একটা স্পষ্ট বিভেদরেখা তৈরি হয়ে গেলো। ব্যবসায়ী আমাকে ট্রেস করা সহজ হলেও, ব্যক্তিগত আমাকে আক্ষরিক অর্থে পাওয়া খুব সহজ থাকলো না। এই কাজটা আমি কেন করেছিলাম মনে নেই। হয়তো উটকো ঝামেলা থেকে নিজেকে সেফ রাখার জন্য করেছিলাম, কিন্তু পরে এটা আমার খুবই কাজে লেগেছিলো।
আমি ফোঁড়ন কাটার ছলে বললাম, আপনার তো দেখা যায় জেমস বন্ডের জীবন! মেয়েটি হাসলো। হেসে বললো, আপনার হালকা রসিকতাটা খুব বেশি মজার হয় নাই।
কিন্তু একদিন এক ক্লায়েন্ট যখন তার অফিসরুমে ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার পেছন দিকে ওটা জোর করে ঢুকিয়ে দিলেন- সেদিন আমার সহ্য হয় নি। কথা শুনে আঁৎকে উঠলেন নাকি? তা অবশ্য আপনে উঠতেই পারেন। আমাদের কপট সমাজ! তারা ঢোকাতে ভীষণ আগ্রহী, কিন্তু শুনলে ঠিকই আঁতকায়।
আমার মনে হলো মেয়েটি আহতবোধ করছে। আমি তার হাত স্পর্শ করলাম এবং কিছুটা রিলাক্স ফীল করাতে চেষ্টা চালালাম। সাথে সাথে মুখেও বললাম, আমাকে যেকোন কিছুই আপনি বলতে পারেন। আমার কোনোকিছুতেই খুব বেশি অসুবিধা নাই, যতক্ষণ না সেটা নিজের গায়ে এসে লাগছে।
মেয়েটি বললো, এমনকি ওই লোকটাকে আমি শেষ পর্যন্ত ওকে পেছন দিয়ে না ঢুকিয়ে সামনে দিয়ে ঢোকাতে অনুরোধও করেছিলাম। কিন্তু পারভার্টটা শোনে নাই। ওই একটা ঘটনা আমাকে আমূল চেঞ্জ করে দিলো, জানেন? আমি আর আগের মতো ঝিক ঝিক টাইপের সিস্টেমে লাইফ লীড করতে পারতেসিলাম না তারপর থেকে। সবসময় মনের মধ্যে কি জানি একটা জ্বলতো।
নিজেকে শান্ত করার জন্য প্রচুর পড়াশোনা আর গান শোনা শুরু করলাম। ব্যবসা কিছুদিন বন্ধ রাখলাম। সারাদিন গান শুনতাম। টোয়েন্টি সেভেন ক্লাবের মেম্বারদের গান। কোনো এক বিচিত্র কারণে আমি শুধু ওদের গানই শুনতাম। আর কারো গান শুনতাম না। আমার গান শোনার কোনো ওরিয়েন্টেশন ছিলো না। কোথাও হয়তো টোয়েন্টি সেভেন ক্লাবের নাম শুনেছিলাম। একদিন মার্কেট থেকে জিম মরিসন, কার্ট কোবেইন এবং ওদের ক্লাবের আরো কয়েকজনের অ্যালবাম কিনে নিয়ে আসলাম। ওগুলোই সারাদিন বাজতো সিডি প্লেয়ারটায়। পড়ার ক্ষেত্রে অবশ্য এমন কোনো কাহিনী ছিলো না। রহস্য পত্রিকা, কিশোর ক্লাসিক, হুমায়ুন, জাফর ইকবাল, সুনীল, জলদাস, আবদুশ শাকুর, কামু, পামুক যা হাতের কাছে পেয়েছি পড়েছি। ব্রিক লেন নামের একটা বই কিনে এনেছিলাম ২ নম্বর গোলচক্করের সিগন্যাল থেকে। সেটাও অনেকদূর পর্যন্ত পড়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু মনটা শান্ত হচ্ছিলো না। এই অশান্তি দূর করার এক চমৎকার সুযোগ একদিন হাতে চলে আসলো। ডিসিসি মার্কেটের দোতলায় এই কাঁচিটা যেদিন আমার চোখে পড়ে সেদিন, ঠিক সেদিন আমি হঠাৎ যেন দিবাস্বপ্নের ভেতর পেয়ে গেলাম- আমাকে কি করতে হবে।
কথাবার্তার এ পর্যায়ে টি-টেবিলের নিচের তাকের পেপারের বোঁচকা-গাইটের ভেতর থেকে মীম যে চকচকে বিশাল আকৃতির কাঁচিটা বের করলো, সেটা দেখে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো প্রায়। এ ধররেন কাঁচি সচরাচর যখন টেইলার্সে কাপড় বানাতে দিতে যাই, তখন চোখে পড়ে। ওটার পারপল রঙয়ের বাঁটটার একটা কেমন যেন ছমছমে এ্যপ্রোচ ছিলো। কিংবা সে সময়ের পরিবেশ দায়ী থাকতে পারে, ওই কাঁচিটাকে ভীতিকর মনে হবার পেছনের কারণ হিসাবে। আর টি-টেবিলের নিচ থেকেই ওটা বের হওয়ায়, আমার মনে হলো জিনিসটাকে মেয়েটি অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে। তাই ওটা হাতের নাগালের মধ্যে রাখা ছিলো।
মেয়েটি বলে চললো, আগেই বলেছি আমার সঙ্গে কেউ ব্যক্তিগত যোগাযোগ করতে চাইলে তাকে সেটা গোপনে করতে হতো। আমি সেসব গোপন যোগাযোগ আসলে কতটুকু গোপন, তা গোপনে ক্রসচেক করতাম। মেয়ে হওয়ার অনেক সুবিধা আছে জানেন। একটা মেয়ে যদি কোনো আননোন নাম্বারে ফোন করে ছেলেদের মতো করে কিছুক্ষণ ছোঁক ছোঁক করে, তাহলে অপরপাশ থেকে রাজ্য জয় করে আনা সম্ভব। আমি শুধু খোঁজ করতাম, আমার শিকারগুলাকে সেইসব নম্বরের মালিকেরা কতটুকু চেনে বা আদৌ চেনে কিনা। তবে প্রচুর ইনিয়ে-বিনিয়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নাম্বারগুলো হতো ফ্লেক্সিলোডের দোকানের নাম্বার। তাই আমার কাজ অনেক সহজ হয়ে যেতো। আমি কোনো ছেলের কাছ থেকে টাকা চাই না, বিয়ে করার চাপ দিই না, কখনো ফোন করি না, টেক্সট্ করি না; কিন্তু আমার কাছে এলেই ইচ্ছামতো সেক্স করতে দিই- এ যেন এক কাল্পনিক রাজ্য! একটা লুচ্চা পুরুষ এরচেয়ে বেশি কিছু চায় না। আমি সেই কল্পনার রাজ্যে অনেক যত্ন নিয়ে ওই ক্লায়েন্টটাকে ঢোকালাম। সে হয়ে পড়লো একটা পোষা কুকুরের মতো। যখন একটু আদর দরকার হয়, মনিবের আশপাশে এসে ঘুরঘুর করে। আর মনিব খুব কষে আদর করে দেয়। ক্লায়েন্ট লুচিয়াটা একসময় এতই আজ্ঞাবহ হয়ে পড়লো যে, ও যেদিন ডানহাত দিয়ে আমার ডোরবেলটা বাজাতো, সেদিন ওর বামহাতও জানতো না সেই খবর।
মেয়েটি এই পর্যায়ে উঠে ভেতরে চলে গেলো। আমার কাছেও পুরো পরিবেশটা তখন কাল্পনিক মনে হচ্ছিলো।
(চলবে)
---
পড়লাম।
সাথে আছি।
ফার্স্ট কমেন্ট সবসময় একটা বিশেষ কিছু। আমার কাছে এটাকে উপহারের মতো লাগে। আপনের উপহার পাইসি অনিমেষ ভাই।
ধন্যবাদ, অসংখ্য ধন্যবাদ।
লিখে যান; সাথে আছি।
খাইছে এ দেখি পুরাই ঝিকি ঝি্কি।
চলছে চলুক
ইয়েস্ ঝিক ঝিক বাবু, পুরাই ঝিকি ঝিকি।
ঠিকাসে চলুক।
চলুক । পরের পর্বের অপেক্ষায়
পুরাই ঝিক ঝিক ।
আমিও আপনের পরের স্যাটায়ারের অপেক্ষায় সাঈদ ভাই।
সব্বোনাষ !
... পাগলা ঘোড়ারে, কৈ থেইকা কৈ লৈয়া যায়...
চলছে গাড়ি ....
রায়হান সাহেবের আশীর্বাদে।
সবগুলি পর্ব পড়ে এলাম এবং পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
আপনারে বেশিদিন অপেক্ষায় রাখবো না প্রিয় রুনা'পু।
তারপর? দেরী হয় কেন এত? ব্যাপক হচ্ছে।
পুরা গল্পটা জানে, তাও শুধু শুধু ভান করে
পইড়া গেলাম কিন্তু...
চেয়ার, টেবিল, খাট- কিসের উপর থিকা টুটুল ভাই?
ঠিকাছে
চলুক
চলুক।
ধন্যবাদ নিভৃত পথচারী। মন্তব্য পেয়ে আনন্দিত।
পরের পর্ব কবে দিবেন?
খুব দ্রুতই দিবো রাজন ভাই।
আপনে কেমন আছেন ভাইজান? ভাবী কেমন আছে?
ব্যাপক!
তাই নাকি? আমার কিন্তু এখনো কোনো পর্ব লিখেই মন ভরে নাই।
পরের পার্ট কবে?
শেষ পার্ট বের হয়ে গেছে।
মন্তব্য করুন