রিস্টকাটার্স: আ লাভ স্টোরি
মৃত্যুর পরের জগতটা কেমন হতে পারে?
এটা আলোচনার বিষয় হিসাবে আকর্ষণীয় কিন্তু অনেক বড়। তারচেয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর কথা ভাবি। সেই মৃত্যুর পরের জগতটা কেমন হতে পারে? সেদিন রাজধানীর হাতিরঝিলে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে ঝাপ দিয়েছিলো একটি যুগল। তাদের মাঝে ছেলেটা মারা গেছে। সাঁতার জানতো না কেউই। প্রেমে বাঁধা পেয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছিলো দু'জন। নিশ্চই খুব কষ্ট হচ্ছিলো তাদের। প্রেমিকার বাগদান হয়ে গেলে প্রেমিকদের কি এমন কষ্টই হয়? পৃথিবীর সব কষ্ট কি তখন তুচ্ছ মনে হয়? কোথায় যেন পড়েছিলাম, সবচেয়ে কষ্টের মৃত্যু হলো আগুনে পুড়ে মরা। শরীরের প্রতিটি কোষ পুড়তে থাকে এবং আলাদা আলাদা যন্ত্রণার জন্ম দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভিকটিম কয়েকদিন যন্ত্রণা ভোগের পর মরে। দ্বিতীয় কষ্টের মৃত্যু হচ্ছে পানিতে ডুবে মরা। ফুসফুস পানিপূর্ণ হয়ে যাবার পর সেটা ফেটে যায়। সেই কষ্ট বুকের মধ্যে নিয়ে মানুষ বাধ্য হয় মারা যেতে, কেননা একবার পানিতে তলিয়ে গেলে আর ফিরে আসার উপায় থাকে না। এসব জানা আজকাল কঠিন কোনো বিষয় না। কঠিন হচ্ছে এসব জানার পরও স্বেচ্ছামৃত্যুকে আহ্বান করা। বুঝে হোক বা না বুঝে, সেই কঠিন কাজটি মানুষ কখন করে? কতটা নিরূপায় হলে?
মাঝে মাঝে আমারও একই ধরনের ইচ্ছে করে। কেন করে জানি না। হয়তো মৃত্যুর পরের জগতটাকে জানার আগ্রহ জন্ম নিচ্ছে মাথার ভেতরে। আগ্রহ যত তীব্র হবে, তত আমি মৃত্যুর পথে এগিয়ে যাবো। স্বাভাবিক নিয়মে এটাই হওয়ার কথা। কোনো এক তীব্রতম আগ্রহী মানসিক পরিস্থিতিতে আমি হয়তো স্বেচ্ছামৃত্যুকে আহ্বান জানাবো। তার আগে নিজের মনকে বোঝানোর চেষ্টা চালাবো, প্রাণনাশের সময়টাতে যত কষ্টই হোক না কেন, তা সাময়িক। কয়েক মুহূর্ত পর, পড়ে থাকবে শুধুই একটি নিথর শরীর।
তারপর হয়তো এমন কোথাও উপস্থিত হবো, যেখানে সব স্বেচ্ছামৃত্যু বরণকারী উপস্থিত হয়। ঠিক যেভাবে একদিন সেখানে চলে গিয়েছিলো জিয়া। ওর একটা বন্ধুও জুটে গিয়েছিলো। রাশান ছেলে, নাম ইউজিন। ইউজিন বিশ্বাস করতো কোনো প্রাইভেট কারে যদি একটি মেয়ে আর দুইটি ছেলে থাকে, তাহলে যে পেছনে বসে তার পুরুষাঙ্গ নেই। এ ধরনের উদ্ভট বিশ্বাস, টিপিক্যাল রাশান বিশ্বাস কিনা আমার জানা নেই। তবে এ ধরনের বিশ্বাসগুলো সবসময়ই খানিকের হাস্যরস জন্ম দেয়। পৃথিবীতে হাসিখুশিভাবে বেঁচে থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় স্বার্থকতা।
ইউজিনের একটা প্রাইভেট কার ছিলো, যেটার সামনের প্যাসেঞ্জার সিটের নিচে ছিলো একটা ব্ল্যাক হোল। সেখানে সানগ্লাস, ক্যাসেট, লাইটার, ফুলের তোড়া, এমনকি মানুষ পড়লে মানুষও; চিরতরে হারিয়ে যেতো।
জিয়া প্রেমে প্রতারিত হয়েই আত্মহত্যা করেছিলো। ইউজিন আত্মহত্যা করেছিলো অকারণে। তাদের বংশের সবাই আত্মহত্যা করতো। জিয়া একদিন পরজগতের এক নতুন বাসিন্দার কাছে খবর পায়, তার পৃথিবীর প্রেমিকা অল্প কিছুদিন আগে আত্মহত্যা করেছে।
সেই প্রেমিকাকে খুঁজতে বের হয়ে জিয়া আর ইউজিন খুঁজে পায় মিকাল'কে। মেয়েটি ড্রাগ অ্যাবিউজ করতে গিয়ে ওভারডোজড্ হয়ে চলে গিয়েছে সেই জগতে। বেচারী সেখানকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের খুঁজছিলো নিজের কথা বুঝিয়ে বলা আর তাকে পৃথিবীতে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানানোর জন্য। ভারপ্রাপ্তদের পাচ্ছিলো না, পেয়ে গেল জিয়া আর ইউজিনকে।
ইউজিনটা অবশ্য মিকালকে দেখার পর থেকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলো তার সঙ্গে একবার স্কোর করার সুযোগ। এ বিষয়ে একটা গোপন চক্রান্ত চালানোর সময় মিকালের হাতে ধরাও পড়েছিলো ওরা দু'জন। ঘটনায় জিয়ার খুব বেশি দোষ ছিলো না। এমনকি সে ইউজিনের দুষ্ট বুদ্ধিতে সায়ও দিচ্ছিলো না।
শেষ পর্যন্ত জিয়া, মিকাল আর ইউজিন তাদের কাঙ্ক্ষিত ব্যপারগুলো খুঁজে পায়। সুন্দর কাহিনীভিত্তিক একটি স্বেচ্ছামৃত্যু বিরোধী সিনেমা। দেখলে মন ভালো হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক। শেষ দৃশ্যটা দারুণ, জিয়া আর মিকালের কথোপকথনগুলো দূর্দান্ত আর ইউজিনের বিভিন্ন হাস্যরসাত্মক ধ্যান-ধারণা, কর্মকান্ড- অস্থির পুরা।
রিস্টকাটার্স: আ লাভ স্টোরি (২০০৬)। সিনেমাটা সাদামাটা কিন্তু পুরোটা দেখতে বেগ পেতে হয় না একবিন্দুও। একটা অদ্ভুত সুরিয়েলিস্টিক টোন আছে। মৃত্যুর পরের জগতকে অনেক উল্টাপাল্টা উপায়ে খুব বিশ্বাসযোগ্যভাবে তুলে ধরা হয়েছে। দেখলে মনে প্রশ্ন জাগতে পারে- মৃত্যুর পরও যদি মানুষের জন্য এত ভালো ভালো ঘটনা অপেক্ষা করে থাকে, তাহলে আর অসুবিধা কিসে?
তবে আমি যে সিনেমাটা বানাবো, সেটা রিস্টকাটার্সের মতো নির্বিষ হবে না। স্বেচ্ছামৃত্যু বরণকারী ব্যক্তির করুণ পরিণতি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হবে। তারচে' বেশি দেখানো হবে স্বেচ্ছামৃত্যু কিভাবে নষ্ট করে দিতে পারে অনেকগুলো সম্ভাবনার বীজকে এবং কিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় স্বেচ্ছামৃত্যু বরণকারী-সম্পৃক্ত মানুষরা।
তারপর বলা হবে, তবু আমরা স্বেচ্ছামৃত্যু চাই। কার কি হবে, সেসব ভেবে কি লাভ? যা হবার তাতো হবেই, তাই না?
---
দেখবো!
রিভিউ ভাল পাইলাম। ছবি দেখা হয়না তেমন
এইটাও দেখবো আর তুমি বানালে সেইটাও দেখবো
অনেক জটিল বিষয় নিয়ে লিখলেন।
সিনেমা যে বানাইবেন নায়ক নায়িকা ঠিক করছেন?
অনেক অজানাকে জানতে পারলাম ৷ ধন্যবাদ
বেশ জমাটি কাহিনী মনে হচ্ছে
মন্তব্য করুন