সাধাসিধে ছেলেদের কষ্টের কথা
শরতের মাঝামাঝি সময়ে আশুলিয়া ব্রীজের ঢালের পাড়ে- নদীতে পড়ন্ত সূর্য্যের ছায়াটা দেখতে যেমন সাধাসিধা, ঠিক তেমনি সাধাসিধা একটা ছেলে একবার বসবফরাসের গাঢ় নীল জলের ঢেউগুলোর গায়ে ঠিকরে পড়া গ্রীষ্মের রুপালি রোদের ঝিকিমিকি'র মতো চোখ ধাঁধাঁনো একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে- হাটু-গোড়ালি ভেঙ্গে এবং কনুই-কপাল ছিলে কোনমতে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বাঁচতে পেরেছিল। তাকে অপরাধীর মতো কেঁদে কেঁদে ফিরতে হয়েছিল নিজের আঠেরো বর্গমিটারের ছোট্ট খুপড়িটাতে।
ভিনদেশি এক গেকো ছিল ছেলেটার একমাত্র সঙ্গী। তারা দু'জনে মিলে বহু সন্ধ্যায় মিখাইল গর্বাচেভের নামাঙ্কিত নীল রঙয়ের লম্বাটে ভদকার বোতল পূর্ণ থেকে শুন্য, শুন্য থেকে পূর্ণ এবং আবার পূর্ণ থেকে শুন্য করে করে কাটিয়েছে। গেকোটি যতো না টানতে পারতো, তারচেয়ে বেশি পারতো ছড়াতে-ছিটাতে। তারপরও একটা গেকো আর কতইবা মদ খায়, কতইবা ছড়ায়! সিংহভাগ তরল অনল ওই সাধাসিধে ছেলেটার ছোট্ট শরীরটাকে অসংখ্যবার আশ্রয় দিয়েছে শুধু এই আশায় যে ওই আশ্রয়ই হবে শেষ আশ্রয়। কিন্তু তা হয় নি কোনবারই। প্রত্যেকবার প্রথমে গেকোটি মাতাল হয়ে ঘন্টা দু'য়েক হেড়ে গলায় টিকটিকি সম্প্রদায়ের বীরত্বের ইতিহাস নিয়ে রচিত যুগ যুগের পুরোনো গান গেয়ে-টেয়ে, বমিতে টিউব লাইটের চারপাশটা চিত্র-বিচিত্র অসংখ্য নকশা তৈরি করে, যখন পায়ের সব শক্তি হারিয়েছে- তখন টুপ করে দেয়াল থেকে অজ্ঞান হয়ে খসে পড়ে গেছে।
গেকোটার ঘুমিয়ে পড়ার পরও অনেকটা সময় পর্যন্ত ছেলেটা জেগে জেগে ভদকা গর্বাচেভ গলায় ঢেলেছে।। তারপর যখন শরীরের সব ক্লান্তিকে অবসাদ এসে ছুটি দিয়েছে, তখন সে হাত-পা ছড়িয়ে ওই মেঝেটার ওপরেই, গেকোটার পাশে আধো ঘুম আধো জাগরণে নিজের ঘোলাটে চোখের মনিটাকে ঘুরিয়েছে, চোখের উপরের আর নিচের পাতা দু'টোতে কৃত্রিম এবং যথাক্রমে ঊর্ধ্ব আর নিম্নমুখী টান সৃষ্টি করে রেখে। এভাবে পাতা টান টান করে রেখে চোখের মনি ঘোরালে নাকি মনি দু'টোর স্পর্শ অনুভব করা যায়। চোখের চারপাশের চামড়ার ভেতরটাতে। তাতে করে নাকি বেরিয়ে আসে চোখের গভীরে লুকিয়ে থাকা সেই স্বচ্ছ-ছোট্ট-দুর্বল জলকণাটাও, যেটার স্মৃতিকে হৃদয় সন্তপর্ণে আগলে রেখেছিল তার সবচেয়ে গোপন কুঠুরিটাতে।
সাধাসিধে ছেলেটার সেই কষ্টের কথাগুলোর কোনো মূল্য নেই। পৃথিবীতে প্রতিদিন এরকম কত যে অসংখ্য সাধাসিধে ছেলের কষ্ট বাস্তবতার কষাঘাতে হারিয়ে যায়- তার কোনো হিসেব নেই।
---
দারুণ !
মন্তব্য করুন