মৃত্যুমুখর দিন
১.
প্রায়ই আমার বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হতো। আর আব্বার ছিলো রাত জাগার ব্যামো। টানা লম্বা বারান্দায় হাঁটতেন অন্ধকারে। আমি ফিরে দরজায় টোকা দিলেই খুলে দিতেন। তারপর বেশিরভাগ রাতেই শুরু হতো দুজনের আড্ডা আর তর্ক।
তো এক রাতে কীসের যেন একটা সেলিব্রেশন ছিলো। আমরা বন্ধুরা সব ব্যাপক পরিমান তরল খেয়ে অনেক রাত করে ফেললাম। একটা মাইক্রো ছিলো, সেটা নিয়ে বের হলাম, সবাইকে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে। শুরুতেই নামার পালা আমার। বাড়ির সামনে গাড়ি থামলো, আমি নেমে ডাক দিলাম আব্বা বলে... গাড়ি ভর্তি এক দঙ্গল মাতাল... তারা খুব মজা পেয়ে গেলো। তারাও সমস্বরে শুরু করলো আব্বা ডাক। পুরো মহল্লা কাঁপিয়ে। আব্বা দরজা খুলে তো অবাক।
আজকে খুব ইচ্ছা করছে আব্বা বলে আবার একটা ডাক দিতে, মহল্লা কাঁপিয়ে। কিন্তু এখন আর দরজা খুলে দেওয়ার কেউ নেই আমার...
আব্বুকে মনে পড়ে
২.
বিরিশিরি আমার খুব প্রিয় জায়গা। সময় পেলেই বিরিশিরি চলে যেতাম। খুব ইচ্ছে ছিলো সেখানেই একটা পাহাড় ইজারা নিয়ে থাকবো। আমারটা শুধু স্বপ্নই। একবার মনির বিরিশিরি যাত্রায় আমার সঙ্গী হলো মিমি আপা আর মনির ভাই। তারাও বিরিশিরিতে মুগ্ধ। সিদ্ধান্ত হলো স্বপ্ন মনে রেখে দিলে চলবে না। বাস্তবায়ন করতে হবে। আমি আর মনির ভাই সিদ্ধান্ত নিলাম দুজনে মিলে একাধিক ধারাবাহিক নাটক যৌথভাবে লিখবো আর বানাবো। সেগুলো থেকে যে ব্যাবসা হবে, সেই টাকায় আমরা পাহাড় ইজারা নিবো। একটা ধারাবাহিক লেখা শুরুও করে দিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজটা করা হলো না।
পাহাড়বাসী হওয়ার স্বপ্নটা আমার এখনো আছে, কিন্তু মনির ভাই আর কখনোই সেই স্বপ্নের অংশীদার হতে পারবে না...
ভালো থাকবেন মনির ভাই...
৩.
২৩ মার্চ তারিখটা এলেই আমার খুব ভয় হয়। কেবলই মনে হয় কোনো প্রিয় মানুষের মৃত্যু সংবাদ শুনতে হবে না তো আজকেও? এই তারিখটায় আমি হারিয়েছি সবচেয়ে প্রিয় মানুষ... বন্ধুর মতো বাপকে, হারিয়েছি বাপের মতো বন্ধু মনির ভাইকে। মনির ভাই-ই আমাকে প্রথম পড়িয়েছিলো শহীদুল জহির। সেই থেকে শহীদুল জহিরের প্রতি মুগ্ধতা। আমরা যখন মনির ভাইয়ের স্মরণসভা করবার প্রস্তুতি নিচ্ছি, ঠিক তখন খবর পেলাম শহীদুল জহিরও নেই। সেই ২৩ মার্চেই...
আর প্রিয় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়... তিনিও একই দিনে...
৪.
২৩ মার্চে আমি আক্ষরিক অর্থেই গুটিয়ে থাকি। তীব্র ভয় নিয়ে বসে থাকি। কোনো ফোনকল এলে ভয় পাই। আবার কোনো প্রিয় মানুষের মৃত্যুর খবর শুনতে হবে না তো!
আজকে সারাটা দিন তীব্র ভয় নিয়েই কাটলো...





আশা করি আর কোনো ২৩ মার্চেই আপনাকে খারাপ খবর শুনতে হবেনা (দোয়া করি কখনোই যেন শুনতে না হয়)
আর যেন কোন ২৩ শে মার্চ খারাপ খবর নিয়ে না আসে।ভালো থাকেন সবসময়।দোয়া করি।
পোস্ট পড়ে দ্যা নাম্বার টুয়েনটি থ্রি ম্যুভিটার কথা মনে পড়ে গেল ।
মাঝে মাঝে মনে হয় ব্যাপারগুলো আসলেই পুরোপুরি কাকতাল কিনা...
আর যাই হোক, ২৩ মার্চে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো সবাই বেশ দারুণ ছিল!
...দু:খের ঘটনা তো জীবনে আসতেই থাকবে, দোয়া করি, আপনি যেনো সবল ভাবে মোকাবেলা করতে পারেন, সেই সময় গুলা...
সন্তান হিসেবে আপনার ভাগ্য হিংসা করার মত ! এরকম বাবা পাওয়ার সৌভাগ্য আমাদের মত কালচারে বেশিজনের হয় না ।
ভালো থাকবেন ।
নজরুল ভাই, আপনার পোষ্ট পড়ার পর থেকে শুধু নিজের বাবাকে মনে পড়ছে।জীবন গড়ে উঠেছে বাবাকে ঘিরে।বাবার চেয়ে ভালো বন্ধু কি কেউ কখনও হয়?
ভালো থাকুন
আমি এর লাইগ্গা আজ আপানরে কোন ফোন দেই নাই

কমেন্টস ও করলাম ১ দিন পর
ভালো থাইকেন
ভাল থাকবেন, ২৩শে মার্চ যেন বদলে দেয় তার আমূল।
স্কুল লাইফে নূরানী খোয়াবনামা ঘাইটা বাইর করছিলাম আমার রাশি কুম্ভ, বুধবার অশুভ, শুক্রবার শুভ। তখন থাইকা সব অঘটন গুলা ঘটত বুধবার এ। তাই বুধবার আইলেই আমি ভয়ে ভয়ে থাকতাম।
কিন্তু পরবর্তী কালে হিসাব কইরা দেখি আমার রাশি কুম্ভ না তুলা !!!! কিন্তু কেন জানিনা এখনও বুধবার আসলে আমার কলিজা শুকায়া যায়। আজকেও বুধবার !!!
ভাল কথা... লেখাটা হৃদয় ছুয়ে গেল।
ভালো থাকবেন , এটাই কামনা করি।
... ভালো থাকেন...
তো এক রাতে কীসের যেন একটা সেলিব্রেশন ছিলো। আমরা বন্ধুরা সব ব্যাপক পরিমান তরল খেয়ে অনেক রাত করে ফেললাম। একটা মাইক্রো ছিলো, সেটা নিয়ে বের হলাম, সবাইকে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে। শুরুতেই নামার পালা আমার। বাড়ির সামনে গাড়ি থামলো, আমি নেমে ডাক দিলাম আব্বা বলে... গাড়ি ভর্তি এক দঙ্গল মাতাল... তারা খুব মজা পেয়ে গেলো। তারাও সমস্বরে শুরু করলো আব্বা ডাক। পুরো মহল্লা কাঁপিয়ে। আব্বা দরজা খুলে তো অবাক।
আজকে খুব ইচ্ছা করছে আব্বা বলে আবার একটা ডাক দিতে, মহল্লা কাঁপিয়ে। কিন্তু এখন আর দরজা খুলে দেওয়ার কেউ নেই আমার...
এমন একটা ঘটণা বাস্তবে কেমন করে ঘটেছিল সেটি ভিস্যুয়ালাইজ করছিলাম, মারাত্মক হাসি পাচ্ছিলো, কিন্তু বাবাটি আর নেই এই উপলব্ধীর পর কেমন কান্না কান্না পাচ্ছে।
গতকালই কাকতাল নিয়ে একটা পোস্ট দিলাম, আপনিও পড়েছেন দেখলাম
তবে আপনার এই ২৩শে মার্চের ব্যাপারটা তো আসলেই বিস্ময়কর।
আপনার হারানো প্রিয়জনদের আত্মার শান্তি কামনায়
আর যেন এমন না হয় ।
লেখাটা ভালো লেগেছে , মন খারাপ করা ভালো ।
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ
দুর.... আপনিও মিয়া কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন ? ২৩ মার্চ .... ওইটা একটা কাকতালীয় ঘটনা.... বাবার জন্য মনটা খারাপ হলো.... নিজেরও বাবা নেইতো !!
মনির ভাইয়ের গল্পটা আমার জানা নজরুল ভাই। আর আব্বু? সে তো আমার ও নাই, আমি তারে প্রতি মুহূর্ত ডাকি, কোনো সাড়া মিলে না...!!
কিছু বলার নেই
ভালো থাকেন বস
মন্তব্য করুন