পাআআআআআআআআআআআ
বাসায় পৌঁছে কলিংবেল বাজাতেই সবচেয়ে কাংখিত যে শব্দটা ভেতর থেকে ভেসে আসে সেটা হলো “বাবা এসেছেএএএএএএ………..”।
.
বলাই বাহুল্য ওটা কার গলা। সদ্য চতুবর্ষ পেরুনো ওশিন। ছুটে এসে ছোট ছোট দুহাতে জড়িয়ে ধরবে কিংবা এক লাফে গলায় ঝুলে পড়বে। ইদানীং তার পেছন পেছন আরেকজনও আসার চেষ্টা করে। ইনি এখনো হাঁটতে পারেন না, কিন্তু ওয়াকারে করে সারা ঘর দাপিয়ে বেড়ান সাই সাই করে। তিনিও কলিং বেল শোনামাত্র হৈ হৈ শব্দ করা শুরু করবে, দুহাত বাড়িয়ে যদ্দুর সম্ভব ছুটে আসবে। তারপর আলতো করে বলবে, ‘পা…’। কয়েক সেকেন্ড বিরতি দিয়ে আরেকটু জোর দিয়ে “পাআআ…..”। কেউ শেখায়নি, এই শব্দ নিজে নিজে তৈরী করেছে। তার নিজস্ব তিন চারটে শব্দের ভান্ডার তৈরী করেছে ১৩ মাস পেরুনো ড.শিহান রিশাদ।
.
আমাকে ‘পা’ কিংবা 'পাপা' ডাকে শিহান। ইংরেজের বাচ্চা হলে বুঝতাম যে পাপার সংক্ষিপ্ত রূপ পা, কিন্তু বাঙালের পোলা হয়ে কোত্থেকে পা আবিষ্কার করলো ভেবে পাই না। আগে হালকা ধমকে দিয়ে বলতাম, কিরে ব্যাটা আমি ‘পা’ মানে ট্যাং হলাম কেমনে? কিন্তু আজকাল অজান্তে আমিও এই ‘পা’ ডাকের ভক্ত হয়ে গেছি এবং চিন্তায় আছি কখন 'পা' ডাকের মেয়াদ শেষ হয়ে 'বাবা' কিংবা 'আব্বা'র যুগ চলে আসে।
.
কেবল ‘পা’ নয়। আমি বাসায় ঢোকামাত্র বিশেষ চিত্তচাঞ্চল্য দেখা যাবে তার মধ্যে। বোধহয় সারাদিনের না বলা কথাগুলো হড়বড় করে বলতে থাকে এবং শব্দের বাজেট দুটো। ‘পা’ আর ‘কা’ এই দুই শব্দ দিয়ে সব বকবকানি। ফোন কিংবা কলিংবেল বাজলে বলবে, ‘কে’? আর শিক্ষাদীক্ষা বিষয়ক তাবৎ বস্তুকে 'ক-খ' দিয়েই সামলাবে। এমনকি আমার ল্যাপিকে দেখলেও বলবে ‘ক-খ’।
.
গতকাল থেকে নতুন এক রসিকতা যুক্ত হয়েছে। আমার হাতটা টেনে নিয়ে উপরে আর নীচের মিলিয়ে পাঁচটা দাতের কামড় দেবার মতলবে থাকে। ব্যাথা পাচ্ছি বলে মৃদু ধমকে দিলে চোখ পিট পিট করে হাসে। যেন বলতে চায় “হালকাই তো দিলাম, এতেই ব্যাথা পাও?”
.
আসলে যে কথা বলার জন্য 'ক-খ' করলাম এতক্ষণ তা হলো, আমি বুড়ো হইতেছি আর পোলা ফাজিল হইতেছে দিন দিন।
দারুণ লিখেছেন দাদা। আমি বুড়ো হইতেছি আর পোলা ফাজিল হইতেছে দিন দিন।
ওশিন-শিহানের জন্য শুভকামনা।
এইসব নিয়া আমাদের দিনরাত্রি.....
সুখের কথা শুনতেও সুখ নীড়দা। সুখ অক্ষয় হোক এই কামনা রইলো
আপনার শুভকামনার জন্য অনেক ধন্যাপাতা।
আপনি কি এখনো বাংলাদেশে নাকি?
না, জেলখানায় ফেরত
সেদিন কাজিনের বাসায় গেলাম, পিচ্চি ভাগনিটা একটু আধটু কথা বলা শিখেছে। কাজিনের সাথে আমার খালি ক্যাঁচাল লাগে। সেটাই শুরু হল, পিচ্চিকে আমার কোলে তুলে দিয়ে আপু বলে,
"দে ত সোনা মা হিসু করে দে মামার প্যান্টে।" এই করে মিনিট পাঁচেক চলল। পিচ্চি হিসু করে না আর। নতুন চ্যালেঞ্জ শুরু হল, পিচ্চির মুখ দিয়ে শব্দ বের করাতে পারে কে সবার আগে।
এরপর শুরু হল ধানাই পানাই,
"বল সোনা "মা" বল দেখি। বল, মা-আ-আ-আ-আ।" পিচ্চি এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরায়ে কি মনে করে বলে,
"মা-মা।"
আমি চেঁচাইলাম,
"আই উইন! "
আপনার সন্তানের জন্য কোটি কোটি শুভকামনা থাকলো।
নাইস্ নিক! অদ্ভুত।
এই নিকেই সব ব্লগে থাকি, শামসুর রাহমানের কবিতার নাম।
দারুণ ব্যাপার তো! পিচ্চিগুলা চাইলে কিন্তু দুয়েকটা শব্দ বলতে পারে, কিন্তু এমুন কিপটা, কথা বের করা মুশকিল। আপনি পেরেছেন, স্বার্থক মামা!
গুলটুশ ফুলটুশ দুইটার ছবি ছাড়া এইসব লেখা পড়ি না.------ছবি দেন, মন ভইরা দেখি।
যেই কথাটা লিখবো ভেবে মন্তব্য টাইপ করা শুরু করেছিলাম, তারপরে কি কারণে ভুলে গেছি জানি না; সেটা শাপলা'পু বলে দিয়েছেন।
ছবি দেবার চেষ্টা করছি, কিন্তু কাজ করছে না কেন জানি
প-বর্গীয় ধ্বনিগুলা উচ্চারণে সহজ... এর মধ্যে ব কিংবা ভ এর চাইতে প আরো বেশি সহজ মনে হয়
আমারো তাই মনে হয়
নীড়দা, পোষ্ট পড়ে মায়ায় মন ভরে গেলো।
তাইলে আমার লেখা স্বার্থক হলো
অক্ষয় হোক এইসব সুখের দিন। শব্দে শব্দে কেমন মায়া ছড়াইলেন গো নীড়ুদা! ডঃ শিহান আর ওশিনের জন্য এক পৃথিবী ভালোবাসা এই শুভক্ষণে পিয় একখান কবিতার কিছুটা শুনাইতে চাই ( বুড়া হয়ে যাচ্ছেন, কইলেন তো তাই কইলাম, কই স্বান্তনা দিপো..কিন্তু দেখেনদি কি দিলাম দুষ আমার না, এই বিষয়ের কুনু কবিতা পাইনাই..খুঁজলে না )
" এতটা বয়স চলে গেলো, তবুও কি আশ্চর্য আজো কি জানলাম,
চড়ুইয়ের ঠোঁটে কেন এত তৃষ্ণা? খড়ের আত্নায় কেন এত অগ্নি, এতটা দহন?
গোলাপ নিজেই কেন এত কীট, এত মলিনতা নিয়ে তবুও গোলাপ?
এতটা বয়স চলে গেলো, তবুও কি আশ্চর্য আজো কি জানলাম,
একটি শিশুর কেন এত নিদ্রা, এত গাঢ় ঘুম আর
তখন আমরা কেন তার মতো ঘুমুতে পারি না?"
...........কিন্তু আমি বলি অন্য কথা, এমন মায়ায় যার ঘর ভরে থাকে, তার চোখে ভারী মমতায় নেমে আসতে বাধ্য শান্তির ঘুম। ঠিক কইছি কিনা কনদি?
এরাম পুষ্ট আরো চাই বস ওশিন আর শিহানের ফটুক দেখতে চাইইইইইইই..। ভালো থাকা হোক।
এই না হলে আমাদের বাতিঘর! বাতির রাজা ফিলিপস, কমেন্টের রাজা বাতিঘর।
কমেন্টে পাঁচতারা!
একদম ঠিক। বাতিঘর ইজ সর্বশ্রেষ্ঠ। আমি মাঝখানে বাতিঘরের নকল করার চেষ্টা করছি। পরে দেখি এই এলেম আমার নাই। বাদে ক্ষেমা দিছি।
এই সবের জন্যই বেচে থাকা যায়।
ছবি দেবেন বাচ্চা দুইটার। লেখাটা পড়ে বুকটা মায়ায় ভরে গেল।
ছবি দেবো একদিন মনে করে
ডঃ শিহান আর ওশিনের জন্য অফুরন্ত আদর। তাদেরকে দেখার আগ্রহ প্রবল হচ্ছে
তাদেরকে দেখার জন্য কেবল ইচ্ছেটাই যথেষ্ট। চলে আসেন যে কোনদিন অপনাকে নিয়ে
ডঃ শিহানের জন্মানোর খবর সেদিন শুনলাম !!!
হ আমিও সেইদিন মাত্র শুনলাম
ছোটবেলায় আমিও বাবাকে পাপা বলতাম, আমাকেও কেউ শেখায়নি। কবে যেন পাপা ছেড়ে বাবা, বাবা ছেড়ে আব্বাতে এসে গেছি খেয়াল করিনি। আমরা তো সবাই লিখি, কিন্তু খুব সাধারণ করে একটা লেখা যখন ভালো লাগে তখন বুঝতে হয় তাতে শুধু শিহান-ওশিন নয় তাদের বাবার কলমেও কিছু একটা আছে।
পাপা ডাকা ওয়াকারের প্রফেসরকে কেন যেন দেখতে ইচ্ছে করছে খুব।
আপনিও তাহলে 'পা' বেবী ছিলেন?
সেরকমই তো মনে হয়।
বাতিঘর, আবুল হাসান এর এই কবিতা থেকে পারলে আরেকটু দেবেন প্লিজ।
বাতিঘরকে দেখছি না আজ, আমার কাছ থেকেই দিচ্ছি বাকীটা-
"এতটা বয়স চলে গেলো, তবু কী আশ্চর্য, আজো কী জানলাম
বনভূমি কেন এত ভিন্ন ভিন্ন বৃক্ষ তবে বনভূমি?
জল কেন এত স্বচ্ছ স্রোত নিয়ে তবে স্রোতস্বিনী?
রক্ত কেন এত রক্তপাত নিয়ে তবে স্বাধীনতা?
এতটা বয়স চলে গেলো, তবু কি আশ্চর্য, আজো কী জানলাম
বনভূমি লোকালয় থেকে কেন এত দূরে থাকে?
কিশোরীরা কেন এত উদাসীন, কেন এত নির্জনতাপ্রিয়?
আর নদী কেন গভীরতা ছাড়া ঠিক ধারামতো চলতে পারে না?
এতটা বয়স চলে গেলো, তবু কি আশ্চর্য, আজো কী জানলাম
চড়ুইয়ের ঠোঁটে কেন এত তৃষ্ণা?
খড়ের আত্নায় কেন এত অগ্নি, এতটা দহন?
গোলাপ নিজেই কেন এত কীট, এত মলিনতা নিয়ে তবুও গোলাপ?
এতটা বয়স চলে গেলো, তবু কি আশ্চর্য, আজো কী জানলাম
একটি শিশুর কেন এত নিদ্রা, এত গাঢ় ঘুম আর
তখন আমরা কেন তার মতো ঘুমুতে পারি না?
(আদিজ্ঞান / আবুল হাসান)
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আমিও
এত্তোবড়ো পা দেখে ঢুকলাম, পরে দেখি , আরে এটাতো এক পাপার পা !
হা হা হা ! মজা পেলাম ।
লেখাটা পড়ে মায়ায় বুক ভরে গেল। চাচ্চু আর আম্মুটার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
আমার মেয়েরাও টুকটাক শব্দ করা শিখেছে। তবে মা না বাবাও না, তাদের প্রথম শব্দ হচ্ছে দাদা। সারাদিন দা দা দা দা দা দা করতেই থাকে। সেদিন আব্বাকে ফোনে শোনালাম এই দাদা ডাক, বুড়া বাপ আমার পারলে তখনই প্লেনে চড়ে চলে আসে এখানে!
মন্তব্য করুন