হাল ছেড়ো না বন্ধু!
বাথরুম সিঙ্গার কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও, ব্যাপারটা অত খারাপ না। যাদের গলায় সুর আছে, গানের শখ আছে, অথচ শোনাবার মতো অডিয়েন্স নেই তাদের জন্য ওই জায়গার মতো ভালো অডিয়েন্স আর হয় না। তবে গলায় সুর না থাকলে বাথরুম অডিয়েন্সেও শ্রুতিমধুর কিছু বেরুবে না। আমার ধারণা ছিল যে কেউ চাইলেই সা রে গা মা পা ধা নি সা বলে সুর তুলতে পারে। সেই ভুলটা ভাঙ্গলো যেদিন সুবীরের কন্ঠে সারেগামা শুনলাম রিহার্সালে।
খুব বেশী আগের কথা না, বাইশ তেইশ বছর হবে মাত্র। রিদোয়ান ভাইয়ের নাটকের দলে আমরা ছিলাম তার চেলা চামুণ্ডা। সন্ধ্যায় রিহার্সাল রুমে ঢুকে প্রথমেই সবাইকে গলার কারসাজি দেখাতে হতো। তার মধ্যে সবচেয়ে সহজ ছিল সারেগামা। দশ বারো জন একসাথে 'সারেগামাপাধানিসা' করে স্কুলঘরের দেয়াল কাঁপিয়ে দিচ্ছে, ব্যাপারটা দেখতে খারাপ ছিল না। কেবল এক হরতালের সন্ধ্যায় পাশের রাস্তার কোন এক বেরসিক পিকেটার ককটেল ছুড়ে মেরেছিল রিহার্সাল ঘরের পেছনে। সেই থেকে রিদোয়ান ভাই হরতালের দিনে সারেগামা বন্ধ রাখতেন। সেবার নাটকের শো যখন এগিয়ে আসছিল, রিদোয়ান ভাই সবার গলা আলাদাভাবে পরখ করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
নাটকে প্রচুর গান ছিল। আলাদা কন্ঠে গানগুলো গাইতে হবে। কিন্তু সারেগামা পরীক্ষা করার কি আছে। এ তো সবাই পারে। প্রতিদিনই তো পারছে। সবাই একে একে সহজ পরীক্ষাটায় উৎরে গেলেও সুবীরের পালা আসলে পুরো রিহার্সাল রুম থমকে গেল। তার সারেগামা দেখি অন্যরকম। এমনিতে দরাজ গলা তার। মাঠের এই প্রান্তে চিৎকার দিলে অন্যপ্রান্তেই শোনা যায় স্পষ্ট। কিন্তু সারেগামা বলতে শুরু করলে সেটা উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম উর্ধ অধঃ সবদিকে ঘুরে বেড়াতে থাকলো। রিদোয়ান ভাইয়ের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। গান থেকে সুবীর বাদ গেল। আমরা জানলাম, সারেগামা ছাড়াও অনেক মানুষ দুনিয়াতে এসেছে। সুবীর এর আগে বাথরুমে গাইতে চেষ্টা করলেও সেদিন থেকে তার বাথরুম মিউজিক বন্ধ। নিস্তার পেল আমাদের কর্নকূহর।
নিঃসন্দেহে সুবীরের চেয়ে আমরা ভালো বাথরুম সিঙ্গার ছিলাম। হারমোনিয়াম ধরে গান না গাইলেও, ভার্সটি ট্রেনের সিট পিঠিয়ে তক্তা বানিয়ে অনেক গান গেয়ে ফেলেছিলাম আট বছরের ক্যাম্পাস জীবনে। অতঃপর গত দেড়যুগ আগে সবকিছুতে ইস্তফা দিয়ে খাটি পেশাদার জীবনযাপন করছি। সেদিন কেজি পড়ুয়া কন্যার সাথে গলা মেলাতে গিয়ে টের পেলাম, অনভ্যাসে আমি নিজেই সুবীর হয়ে গেছি এখন। গলায় যে কি পরিমান মরিচা ধরেছে, এবং জিহবায় যে কি পরিমান কাঁকর জমেছে সেটা আরে পরিষ্কার টের পেলাম একটা কবিতা আওড়ানোর(আবৃত্তি বলার দুঃসাহস করলাম না) চেষ্টা করতেই।
কারণ ভাবতে ভাবতে সবচেয়ে স্পষ্ট যে কারণটা ধরা পড়লো, সেটার সাথে দুই হাতের দশ আঙ্গুলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। দাঁতমুখ খিঁচে আমি এখন দিনের ১৬ ঘন্টাই কীবোর্ড বাজাই। এই কীবোর্ড বাজিয়ে পেট চলে, কীবোর্ড বাজিয়ে মন চলে। কিন্তু এই কীবোর্ড থেকে কেবল অক্ষর টাইপ হয়, কোন সুর নয়। এবং আমি নিশ্চিত আমার মতো সুরবিহীন কীবোর্ড বাজিয়ে খাওয়া লোকের সংখ্যাই আজকাল বেশী। ঠিক বলেছি না?
তবে তার সাথে আরেকটা কাজও করি। কীবোর্ড নাচানোর ফাঁকে ফাঁকে তাবত দুনিয়ার সিনেমা দেখি। কালকে দেখলাম The Great Escape. জার্মান বন্দীশালা থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একদল বন্দীর পালিয়ে যাবার অবিরাম চেষ্টার কাহিনী। আপনি জীবন থেকে বারবার পালাতে গিয়ে ব্যর্থ হলে এই সিনেমাটা দেখুন। ব্যর্থতার মধ্যেও কেন আনন্দ পেতে হয় জানুন। কিন্তু হাতের মুঠো আলগা করবেন না। জোরসে কন্ঠ ছেড়ে বলুন, 'হাল ছেড়ো না বন্ধু!'
আমি হাল ছাড়িনি!
অপরিকল্পিত একটা লেখা তৈরীর জন্য বিষয় খুঁজে গিয়ে মাথায় কেবল এই বাক্যটাই এসেছিল। কিন্তু একটা বাক্য দিয়ে তো আর পোষ্ট হয় না। তাই এত ঘাসলতাপাতার আগমন ঘটেছে।
অপরিকল্পিত ঘাস লতা-পাতা ভালো লেগেছে।
চমৎকার।
তাইলে তো আরো ঘাসপাতার চাষ করতে হয়
চলুক চাষ-বাস!!
আপনি যা-ই লেখেন সেটাই গোগ্রাসে গিলি। কিন্তু টাইগারপাস সিরিজ এর কি হোল ?
টাইগারপাস আন্ডার কনস্ট্রাকশান আন্ডার ডিফল্টার কনট্রাকটর
কথা সত্য নীড়দা।
সত্য না হলে উপায় নাই। ব্লগে যে কয়জন আছে সবার জন্যই সত্য
বদ্দা, অনে বাঁছি আছেন্না ?
আঁই মনে গজ্জি, অনে মরি গেছেন গোই
ক্যান আছেন বদ্দা, অনেরে মিস গরি
(৯০ সালটা চাটগাঁ থাকার ফল... কিছু কি হলো ?)
আঁই মরি গেইলি অনরে কুলখানির দাওয়াত দি রাখিলাম
শেষ লাইন কিতা? বুঝলাম না তো
৯০ সালটা পুরা কাটিয়েছি চিটাগাং এ। তখন চেষ্টা করে কিছু কথা শিখেছি। সেটাই অনেকদিন পরে আপনার উপর এপ্লাই করলাম... হলো কিনা তাই জানতে চাইলাম
ঘাসলতাপাতা ভাল ঔষধি গুণ আছে বলেই জানি, এ রকম ঘাসলতাপাতার চাষ বাস আরো হোক।
নিশ্চয়ই হবে
হাল ধরেও লাভ নাই তাই হাল ছেড়ে দিছি!
“হাল তো হাতের নাগালেই নাই।, ধরা কিংবা ছাড়া তো পরের কথা।“
অপরিকল্পিত ঘাস লতা-পাতা ভালো লেগেছে।আরও চাষ হোক।
মন্তব্য করুন