নায়কালোচনাঃ The Last King of Scotland
সিনেমা দেখা শেষ হবার পর নায়কের উপর বিরক্তি এসেছে তেমন ঘটনা খুবই বিরল। সেরকম একটা বিরল ব্যাপার ঘটেছে সেদিন।
সবাই জানেন ইদি আমিনের মতো বিখ্যাত খবিস রাষ্ট্রপ্রধান দ্বিতীয়টি নেই। তাকে নিয়ে একটা উপন্যাস লিখছিল সাংবাদিক Giles Foden। তার উপর ভিত্তি করে ২০০৬ সালে The Last King of Scotland নামের একটা সিনেমা নামিয়ে ফেলেছিল Kevin Macdonald. হাতের কাছে ভালো সিনেমা পেলে না দেখে ঘুম আসে না। বহু পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি দ্য লাষ্ট কিং অব স্কটল্যান্ড না দেখেও ঘুমাতে পারছিলাম না। কিন্তু দেখেও মেজাজ খারাপ হয়ে ঘুমের বিঘ্ন ঘটালো চরিত্রহীন নায়কটা। আগে কাহিনীটা শুনুন।
সিনেমার মূল চরিত্রে ইদি আমিন হলেও, যেহেতু তার বিশ্বজোড়া দুর্নাম সেহেতু একজন নায়কের দরকার হয়ে পড়েছিল। নায়কের নাম নিকোলাস। সদ্য পাশ করা স্কটিশ ডাক্তার। পাশ করামাত্র লটারীতে উগাণ্ডাকে বেছে নিল কর্মক্ষত্র হিসেবে। উগাণ্ডায় পা রাখতে না রাখতে জানলো সেখানে একটা ক্যু হয়েছে, ইদি আমিন ক্ষমতায় বসেছে। ক্ষমতায় বসেই সে কি ভয়ংকর জিনিস সেটা প্রতিদিন জানান দিতে লাগলো দুনিয়াকে। কিন্তু নিকোলাস সেসব কিছুই জানে না। উগাণ্ডায় নামার পর মানব সেবা শুরুর আগেই ওখানকার নারীদের উপর কিভাবে উপগত হওয়া যায় তার স্বপ্ন দেখতে লাগলো। প্রথম স্বপ্নে আসলো পথে বাসের এক সহযাত্রী তরুনী। বাস থেকে নেমে যাবার পর ওই স্বপ্ন শেষ। তারপর কর্মক্ষেত্রে এলো সারাহর সাথে। এসে তার বৃটিশ সহকর্মী সারাহর সাথেও ঝুলতে চেষ্টা করলো। কিন্তু সারাহ বিবি তাকে ঝামা দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। নায়ক হিসেবে এখান থেকে সে প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হওয়া শুরু করবে। তবু কাহিনী এগোতে থাকবে।
কদিন পর (পরিচালক আয়োজিত) এক দুর্ঘটনায় ইদি আমিনের সাথে পরিচয় ঘটে যখন একটা কালো গরুর গুতোয় ইদি আমিনের হাত মচকে গিয়েছিল। মানবের প্রতি চরম অমানবিক হলেও ইদি আমিন বাহিনী আক্রমনকারী গরুটির দিকে মানবতা দেখিয়ে কেবল বন্দুক তাক করে চেপে ধরে রাখে। সেই গরুটির গোঙ্গানি সহ্য করতে না পেরে নিকোলাস পিস্তল দিয়ে গরুটিকে হত্যা করে। ডাক্তার হিসেবে তার এই কাজে ইদি আমিনও হতবাক এবং প্রথমে রেগে গেলেও পরে তাকে চরম পছন্দ করে ফেলে তার স্কটিশ পরিচয় জেনে। শীঘ্রই সে নিকোলাসের উপর আছর হিসেবে সওয়ার হলো। নিকোলাসকে জোর জবরদস্তিতে নিয়োজিত করলো ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসবে। প্রথমে সে যখন রাজী হচ্ছিল না, তখন ইদি আমিন তাকে ইঙ্গিত করে হেসে বলে, সে কি কোয়ার্টারে রেখে আসা সারাহ বেগমের জন্য এখানে আসতে চাচ্ছে না? নায়ক মুচকি হেসে নীরব সম্মতি দেয়। ইদি আমিন আবার জিজ্ঞেস করে, ওই মহিলা আরেকজনের বউ কিনা। আবারো নায়ক মুচকি হেসে বলে, হ্যাঁ। ( ওই দৃশ্যটা পৃথিবীর যে কোন নায়ক চরিত্রের জন্য অপমানজনক। এত্তবড় বেয়াক্কেল লুল নায়ক আমি আর কোন সিনেমায় দেখিনি)
যাই হোক, তবু চাকরীটা নিতে হলো তাকে। নিয়োগ পাবার পরদিন প্রথম পারফরমেন্স হলো এরকম। মাঝরাতে ইদি আমিনের পেট ব্যথা উঠলো। খবর পেয়ে সে ছুটে গিয়ে ইদি আমিনের পেট থেকে গদা চেপে গ্যাস বের করে ব্যথার উপশম করলো। আরেকদিন আরো একটা ভয়ংকর বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করে দুর্দান্ত ড্রাইভিং পারফরমেন্স দেখিয়ে। এসব করে সে ইদি আমিনের খাস লোকে পরিণত হয়। তাকে দেশ পরিচালনার অংশীদার করে ফেলে রীতিমত। কিন্তু কদিন পরেই ইদি আমিনের কদর্য নির্যাতন দেখে নিকোলাস বিরক্ত হয়। চাকরী ছেড়ে চলে যাবার চেষ্টা করে। কিন্তু ইদি আমিন তাকে জোর করে রেখে দেয়।
তারপরই সে চরম বেকুবির ঘটনাটা ঘটায়। ইদি আমিনের তিনটা বউ ছিল। তৃতীয় বউয়ের সাথে প্রথম দেখার পর থেকেই টাংকিবাজি করতো নিকোলাস। কাহিনী যদিও প্রেম বলেছে ওটাকে। কিন্তু যেভাবে করছিল, তাকে প্রেম বলা যাবে না কিছুতেই। একদিন মুহুর্তের দুর্বলতায় সে উপগত হলো ইদি আমিনের তৃতীয় বউয়ের সাথে। অবশেষে যেন তার দীর্ঘদিনের চেপে রাখা মনোবাসনা পূর্ন হলো। কিন্তু কী দুঃসাহস ভাবা যায়? যে ভয়ংকর চীজ ইদি আমিন, তার বউয়ের সাথে এহেন অপকর্ম? তাও কি তার ঘরের মধ্যে বাস করে??
পৃথিবীর সমস্ত নায়ককুলের কলংক নিকোলাসকে প্রথমবারের মতো নার্ভাস দেখায় যখন ইদি আমিনের বউ জানায় সে গর্ভবতী। তাকে এবরশন করাবার জন্য হাসপাতালে ছোটাছুটি করে। এক সময় বউটি মরে যায় হাসপাতালে (সম্ভবতঃ গর্ভপাত করাতে গিয়ে)। ইদি আমিন সবকিছু জেনে যায়। ইদি আমিনকে কৌশলে বিষ প্রয়োগ করতে গিয়ে ধরা পড়ে নিকোলাস। তারপর নায়ককে ধরে চামড়ায় ইস্পাতের বড়শি গেঁথে ঝুলিয়ে দেয়া হয় এয়ারপোর্টের একটা কক্ষে। তখন এয়ারপোর্টে একটা ফিলিস্তিনি ছিনতাই নাটকের সুরাহা হচ্ছিল ইদি আমিনের উপস্থিতিতে।
নায়ক ওখানে মরে যেতে পারতো। কিন্তু যারা সিনে পরিচালকদের চেনেন, তারা বুঝবেন কিভাবে হঠাৎ একটা পার্শ্বচরিত্রের জীবনের বিনিময়ে নায়কের জীবনকে বাঁচিয়ে দেয় তারা। এখানেও তাই হলো। নিকোলাসকে বাঁচিয়ে দিল তার এক উগাণ্ডান সহকর্মী বন্ধু। তারপর নিকোলাস ইদি আমিনের লোকদের অগোচরে জিম্মিদের সাথে উঠে পড়ে একটা প্লেনে। প্লেনটা কোনদিকে গেছে আমি জানি না। কিন্তু এই ভুদাই নায়ক বেঁচে থেকে আমার সারারাতের ঘুম নষ্ট করেছে। আমি ইদি আমিন হলে তাকে আরো চারটা বরশিতে গেঁথে হেলিকপ্টারের লেজে ঝুলিয়ে মারতাম।
এমনিতে সিনেমাটা খুব ভালো। কিন্তু যারা চিরায়ত নিয়ম অনুসরণ করে নায়কের উপর ভরসা রাখতে চান, তারা খুব বড় একটা হোঁচট খাবেন। নায়ক শেষমেষ বেঁচে গেলেও, তার ইজ্জত মারিং গেছে। এখানে বরং আপনি ভরসা রাখতে পারেন ভিলেন ইদি আমিনের উপর। সে আপনাকে হতাশ করবে না এটা নিশ্চিত।
(কয়েকদিন আগে 'বাংলা ভাই' নামে একটা সিনেমার পোষ্টার দেখলাম রাস্তায়, ওই সিনেমায় একই কায়দায় বাংলা ভাইকে নায়ক বানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে মনে হয়েছে, কেউ দেখলে দয়া করে একটা পোষ্ট লিখবেন নিশ্চিত হবার জন্য)
দেখুম নে।
============
নীড়দা টাইগার পাসের সিরিজটা!!
সিরিজটা.....
নায়কালোচনা পড়ে সিনেমাটা দেখতে ইচ্ছা করতেসে।
সিনেমাটা দেখা উচিত
সেকি !! আমি তো এমন দৃষ্টিকোন থেকে দেখি নাই।
সিনেমাটা যেহেতু সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরী আর শারীরিক জৈবিক চাহিদা যেহেতু আদম সন্তান মাত্রই আছে এবং সেইটা যতক্ষন উভয়ের সম্মতিক্রমে হয় সেইটা স্বাভাবিক ভাবে নেয়াই নিয়ম। বাসের কালো মেয়েটা কিন্তু তার বাড়ির সামনে আসার পর ঘুমন্ত নায়ককে ডেকে তোলে এবং বাসায় নিয়ে যায়, সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে মেয়েটির আগ্রহই বেশি ছিলো।
আবার ইদি আমিনের বউও কিন্তু প্রথম দেখার পর থেকেই তার ভয়ংকর স্বামীর ফিজিশিয়ানের প্রতি একটু মোহ দেখায়।
ইদি আমিনের চরিত্রে হুইটেকারের অভিনয় অনবদ্য লেগেছে।
নায়কদের আমরা সবসময় নীতিবান হিসেবেই দেখে অভ্যস্ত। সে সবসময় দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করবে এইটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সিনেমাটা বিখ্যাত উপন্যাস থেকে নেয়া এবং সত্য ঘটনা বলে দাবি করা হচ্ছে। তাই হয়তো নায়কের এই রূপ দেখে ঠিক নিতে পারেন নাই
উপন্যাসটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে, কিন্তু পুরোটা সত্য না, নিকোলাস ব্যাটা পুরোই আমদানীকৃত লুল।
বাসের মেয়েটা তাকে জাগিয়ে তুলে ঠিকই, কিন্তু মেয়েটারে নিয়ে স্বপ্নটা দেখতে ছিল নিকোলাসই। ইদি আমিনের বউয়ের দিকে লুল চাউনিটাও পরিচালকের নির্দেশমাফিক, তার মানে পরিচালক বুঝেশুনেই নায়কের জাত মেরে দিয়েছে
হুইটেকারের অভিনয় দুর্দান্ত লাগছিল মুভিটায়,
নায়কের মাঝে নায়কের ন ও নাই!
আসলে হুইটেকারই মূল নায়ক এখানে। তার ভয়ংকর রূপটাও কোথাও কোথাও সৌন্দর্য হিসেবে দেখা দিয়েছে অভিনয়গুনে। কিন্তু ঔপন্যাসিক বা পরিচালক কয়েক জায়গায় বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে, তার অন্যতম একটা হলো নিকোলাসকে গাড়িটা নিজের হাতে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে। এতটা বেকুব ইদি আমিন বিশ্বাস হয় না।
বাংলাদেশ টুডেতে নায়িক ময়ূরীর জবানে জানলাম, বাংলা ভাইয়ের নাকি পাকিতেও অনেক ফ্যান আছে। সরকারের উচিত এটাকে উরদুতেও সাবটাইটেল দিয়ে বিদেশেও মুকতি দেয়া। আর খালেদা নাকি নোবেলের জন্য এটাকে মনোনীত করতে চায়
নায়কটার অভিনয়ও দুর্বল। আর নায়করা লুল না হইলে কিছু দৃশ্য কেমনে দেখুম?
মীরপুরের এক বন্ধু বললো বাংলা ভাই নাকি খুব চলতেছে হলেও ব্যাপক নাকি ভীড়!
একটা লুল নায়ক না-ই হইলো।
দেখা হয়নি, দেখতে হবে।
হে ভুল ভূগোলে জন্ম নেয়া একজন অতৃপ্ত কিন্তু স্বঘোষিত সুখী মানুষ, আপনার আরেকটা নূতন লেখা কবে পড়ার সুযোগ পাবো?
মন্তব্য করুন