ভয়কে আমরা করবো জয়ঃ টাইগারপাস-৫
[পূর্বকথা: কাজীবাড়ীর কনিষ্ঠসন্তান ফরিদ ইংরেজবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে রাজরোষে পড়তে গিয়েছিল বলে তাকে চট্টগ্রাম শহর থেকে দূরের এক গ্রামে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ফরিদের সাম্পান এখন কর্ণফুলী নদীতে...
**************************************
কোনরকম আগাম সংকেত না দিয়ে মাঝি বুড়া দুম করে একটা অচেনা ঘাটে সাম্পানটা লাগিয়ে দিল।
-ব্যাপার কি? ফরিদ জানতে চাইল। মাঝি ইশারায় বললো তলপেটে চাপ। এই চাপ নামাতে হবে এবং হুক্কায় আগুন দিতে হবে।
ফরিদও নেমে দাঁড়ালো ঘাটের কিনারে। জায়গাটা একটা হাটের মতো মনে হলেও কেমন গা ছমছম নির্জনতা এখানে। আজকে হাটবার নয় বলেই কি? জনমানবশূণ্য বাজার হাটুরেদের ছনের চালাগুলো বাঁশের চার পায়ের উপর চুপচাপ দাঁড়িয়ে।
সুনশান নীরব একটা দুপুর। রাশেদের ভাষায় “ঠিক দুঁইজ্জা”। সূর্য যখন মাথার বরাবর উপরে থাকে সেটাকে বলে “ঠিক দুঁইজ্জা”। দিনে এই সময়টা খারাপ। গ্রামে এসময় বিশেষ বিশেষ জায়গা দিয়ে লোকজন একা চলাচল করে না। খারাপ জিনিসের আছর হয়। মায়েরা ছোট ছেলেমেয়েদের চোখে চোখে রাখে এসময়।
গ্রাম্য হাটগুলোতে কেন জানি অশ্বত্থ কিংবা বটগাছ থাকেই। এই বটগাছগুলো একেকটা দানবীয় হয়। ডালপালাগুলো মানুষের ধরাছোঁয়ার অনেক উপরে থাকে। সেই ঘন ডালপালার ছায়ার ভেতর নিঝুম একটা অন্ধকার লুকিয়ে থাকে দিনের বেলায়ও। ফরিদ লক্ষ্য করে এখানেও দুটো বিশালাকার অদ্ভুত বটগাছ দাঁড়ানো হাটের মধ্যিখানে।
গ্রামের হাটে একটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে। ভাল করে কান পাতলে বোঝা যায় মানুষের কল কোলাহল ছাড়িয়ে আরেকটা আলাদা শব্দের তান গুম গুম গুম করতে থাকে পুরো হাটময়। সেই শব্দের উৎস দেখা না গেলেও গ্রামের মানুষ জানে কিসের শব্দ। জেনেশুনেও উপেক্ষা করে 'তাদের' অবস্থান। তাদের নাম উচ্চারণ করা নিষেধ।
মানব বসতি থেকে দূরে বট অশ্বত্থ তেঁতুল অথবা যে কোন প্রাচীনবৃক্ষে তাদের বসবাস। হাটের বটগাছগুলো তাদের স্থায়ী ঠিকানা। সেই বটবৃক্ষনিবাসী বাসিন্দারা হাটের দিন এলে মানুষের ছদ্মবেশে নেমে আসে বাজারে এবং প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে নেয়, সেসময় তাদের নিজেদের মধ্যেকার হাসিঠাট্টার শব্দগুলো গমগমাকারে ছড়িয়ে পড়ে হাটের চারপাশে।
ফরিদ এসব গল্প শুনেছে রাশেদের কাছে। রাশেদ এক অদ্ভুত ছেলে। স্কুলে না গিয়েও এই দুনিয়া সম্পর্কে সে যাকিছু জানে, তার কাছে ফরিদের স্কুলে পড়া কোন জ্ঞানই পাত্তা পায় না। ফুপুর ভাসুরের ছেলে রাশেদ। তার সমবয়সী কিন্তু বুদ্ধির বহরের মতো দেহের আকারও ফরিদের দ্বিগুন। ফরিদ গল্পগুলো শুনতে পছন্দ করলেও কখনোই এসব বাকোয়াজি বিশ্বাস করেনি।
মাঝির দেখা নাই। জঙ্গলে ঢুকেছে আধাঘন্টা হবে। বেরুবার নাম নেই। বটগাছের মগডাল থেকে কি একটা বিশালাকার পাখী শোঁ করে নেমে এসে ঘাটের কাছের চালাটার উপর বসলো। চোখটা লাল পাখীটার। এরকম লালচোখা পাখি দেখেনি কখনো সে। একেবারে টাটকা রক্তবর্ণ।
ফরিদ চোখ ফিরিয়ে নদীর ওপারে তাকালো। ওদিকে ধুধু মাঠ ধোঁয়াশার আড়ালে হারিয়ে গেছে। এই এলাকায় খুব বেশী বসতি নেই। অচষা জমি সব।
খিদে লেগেছে ফরিদেরও। বাড়ী থেকে আনা পুটলিতে নারকেলের নাড়ু আর গুড় দিয়ে মাখা চালভাজার গুড়ো ছিল। এই দুটো খাবার ফরিদের অতি প্রিয় বলে মা তৈরী করে দিয়েছিল। পুটলী থেকে একটা নাড়ু মুখে দিতেই “ঠট্টঅঅঅঅ” করে বিদঘুটে একটা শব্দ কানে আসলো। চমকে উঠে ফরিদ তাকিয়ে দেখে আবারো ঠট্টঅঅঅঅ শব্দটা আসছে সেই পাখিটার দিক থেকে। পলকহীন লালচোখে তাকিয়ে আছে এখনো। অস্বস্তি লাগলো তার। পাখি হলেও চাউনির মধ্যে কেমন একটা দানবীয় ব্যাপার আছে। পাখীদের মধ্যেও কি দেও দানব আছে নাকি?
মাঝি ব্যাটা গেল কই? এতক্ষণ লাগে নাকি সারতে। পাখিটাকে শেওওওওওও বলে তাড়াতে চাইল ফরিদ। হাত ঝাপটা দিল। কিন্তু পাখিটা নড়লনা। এমনকি চোখের পলকও পড়লো না। চুপ করে তাকিয়ে আছে বেয়াদবের মতো। কিংবা ফরিদের শেওওওওওওও করে হাত নাড়ানোকেই বেয়াদবী মনে করলো। পাখিটা যেন ধমকে দিল ফের ঠট্টঅঅঅঅ ....... করে।
এবার সত্যি সত্যি গায়ে কাঁটা দিল ফরিদের। তাহলে কি রাশেদের কথাই ঠিক? পাখির ছদ্মবেশে তেনারা........। এবার আরেকটা ঠিক সেরকম পাখি এসে ডান দিকের চালাটায় বসলো। এটাও ফরিদের দিকে তাকিয়ে আছে। লোলুপ দৃষ্টি তার। কি পাখি এগুলো? বাজ নাকি? নাকি শকুন। কিন্তু দুটোর একটা চেহারাও বাজ বা শকুনের মতো না। কেমন ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ভুতড়ে দুটো পাখির সামনে ফরিদ অসহায় বোধ করলো। খারাপ কিছুর আশংকা হচ্ছে মনে। খুব দেরী হয়ে যাবার আগেই সে খুব দ্রত সাম্পানে উঠে বসে দড়ি খুলে দাঁড় বাইতে শুরু করলো। অল্প শিখেছিল দুই হাতে দাড় বাওয়ার কায়দাটা, বেশ পরিশ্রমের কাজ। মাঝিকে ফেলেই চলে যাবে সে। মরুক ব্যাটা জঙ্গলে। এই পাখি দুটো স্বাভাবিক নয়। এরা নিশ্চয়ই জ্বীন। এদের দলই হয়তো মাঝিকে ধরে নিয়ে গেছে। এবার তাকেও নিতে এসেছে দুপুরের ভোজনে লাগাতে। ভয়ের চোটে রাশেদের কথার উপর শতভাগ বিশ্বাস স্থাপন করলো।
দাঁড় বাইছে কিন্তু সাম্পানটা এগোচ্ছে না। তীরে কিসে যেন আটকে আছে। ওদিকে নৌকার তলায়ও কিসের ছপাছপ শব্দ। দানব কি নদীর তলায়ও? প্রাণপনে ঘাট থেকে দূরে চলে যেতে চাইলো ফরিদ। কিন্তু তাকে কিসে আটকে রেখেছে। ভয়ে কাতর ফরিদ, দমাদম পা দিয়ে নৌকার দলায় আঘাত করলো। এমনসময় পাখি দুটো ঠট্টঅঅঅঅ করে একসাথে ডেকে উঠলো। দুদিক থেকে ছুটে আসছে তার দিকে। ফরিদ আর পারলো না। জ্ঞান হারালো। জ্ঞান হারাবার ঠিক আগে দেখলো সামনে রাখা নাড়ুর পোটলাটা আকাশের দিকে উড়ে চলে যাচ্ছে।
জ্ঞান ফিরলে ফরিদ দেখলো সাম্পানের তলায় শুয়ে আছে সে। অনেক উপরে সাদা সাদা মেঘগুলো জটলা পাকাচ্ছে। কোন মেঘে জল আছে কোন মেঘে জল নেই ফরিদ ঠিক বলে দিতে পারে। এই মেঘগুলো জল ভরা। এরা চাইলে জোট বদ্ধ হয়ে ভিজিয়ে দিতে পারে আদিগন্ত সবুজ। তাকে চোখ মেলতে দেখে মাঝি হাসলো। বললো – ভয় পাইছ? পাখি দুইটারে দেখলাম তোমার পোটলা নিয়া কাড়াকাড়ি করতেছে। খুব বেশী খিদা লেগেছিল বোধহয় ওদের।
মাঝির গলা শুনে ফরিদের হুশ ফিরলো পুরোপুরি এবং তাৎক্ষনিক লজ্জিত চোখে নিজের দিকে তাকালো। এই ঘটনা জানাজানি হলে বেইজ্জতি। তাড়াতাড়ি মাঝিকে বললো, আরে না বেহুশ হইনি, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ক্লান্তিতে। পাখি দুটো কখন পোটলা নিয়ে গেছে আমি জানি না।
মাঝি হাসলো। অভিজ্ঞ হাসি। তবে বিশ্বাসের না অবিশ্বাসের দেখে বোঝার উপায় নেই।
নৌকা ঘাটে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। আজান দিচ্ছে গ্রামের মসজিদে। এখানে নেমে হাঁটতে হবে বেশ কিছুদুর। চরনদ্বীপটা একটা বিরানভূমি। জনবসতিগুলো খুব ফাঁকা ফাঁকা। হিন্দুমুসলিমের শান্তিপূর্ন সহাবস্থান এখানে। মানুষগুলো খুব আন্তরিক। বাইরে থেকে কেউ এলে সাড়া পড়ে যায় পাড়ায়। বিশেষতঃ শহুরে মেহমান। পিঠা বানাবার ধুম পড়ে যায় ঘরে ঘরে। এত সুন্দর জায়গায় একমাত্র সমস্যা হলো কিছু বেহুদা অশরীরি অপ্রাণী। এরা দিনে দুপুরেও ভদ্রলোকদের নাকাল করে ছাড়ে একা পেলে।
নদীর পাড়ে একটা জায়গা আছে চিতাখোলা নাম। ওখানে হিন্দুরা মড়া পোড়ায়। রাশেদ একবার নিয়ে গিয়েছিল মড়া পোড়ানোর সময়। অদ্ভুত একটা ব্যাপার দেখেছিল সে। পুড়তে শুরু হবার পর মড়াটা লাফ দিয়ে দাড়িয়ে যাচ্ছিল। লোকজন ভয়ে ছুট দিয়েছিল। মড়ার ভেতর নাকি ভুত ঢুকেছিল, তাই সে লাফিয়ে উঠেছিল। এসব বিশ্বাস করে কি করে না ফরিদ, তবে সে আর জীবনেও মড়া পোড়ানো দেখবে না বলে পণ করলো।
ফরিদ নৌকা থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করে। মাঝি নৌকা বেঁধেছেদে গুছিয়ে পরে আসবে। বাড়ী চেনে মাঝি। ফরিদের গা ছমছম করছে। দুপুরের ঘটনাটা ভুলতে পারছে না। এই এলাকায় একা চলাফেরার বিপদ সম্পর্কে জেনেও মাঝির জন্য অপেক্ষা করেনি। মাঝি ভাববে সে ভীতুর ডিম।
তাছাড়া বাড়ীতো কাছেই, মাইলখানেক পথ, পনের বিশ মিনিটেই পৌঁছানো যায়। গ্রামে ঘন অন্ধকার। পথটাই কেবল আন্দাজ করা যায়। এখানে বাড়ীগুলো অন্যরকম। প্রত্যেক বাড়ীর চারপাশে একটা সুপারী বাগান থাকবে। তারপর একটা পরিখা মতো জায়গা, যেখানে নানারকম ছোট মাছের মেলা, তার পাড়ে পাটিপাতার ঝোপ। এই পাটিপাতাগুলো দিয়ে কী সুন্দর বাশীঁ বাজানো যায়! প্রত্যেক বাড়ীর সামনে একটা পুকুরঘাট। ঘাটের পাড়ে চলাচলের রাস্তা। সবগুলো বাড়ীর চিত্রই একই। ফলে কোনটা কার বাড়ী টাহর করা মুশকিল হয়ে পড়ে। আগে কখনো রাতের বেলা আসেনি ফরিদ এই এলাকায়। দিনের বেলায়ই বেশ কয়েকবার পথ হারিয়েছে সে ছেলেবেলায়। এখন তো সে অনেক বড় হয়েছে, পথ হারাবার ভয় নেই।
সময় কতক্ষণ গেছে জানে না ফরিদ। কিন্তু সেটা যে পনেরো মিনিটের অনেক বেশী তাতে ভুল নেই। আধাঘন্টা কিংবা একঘন্টাও হতে পারে। আশ্চর্য, আবার কি বাড়িটা হারিয়ে ফেললো সে? রাস্তায় তেমন কোন লোকজন নাই। অন্ধকার আরো ঘন এখন।
রাস্তার পাশের খাদে পাটিপাতার ঝোপে জোনাকী জ্বলছে অনেকগুলো। গ্রামের রাস্তায় দোকানপাট থাকে না। রাস্তার দুইপাশেই বাড়ীঘর আছে সুপারীবনের ভেতরে। দুপাশেই জোনাকজ্বলা খাদ। সেই একই দৃশ্য পুরো গ্রামজুড়ে। দেখতে সুন্দর কিন্তু আচমকা আসা মানুষদের জন্য ঠিকানা খুঁজে পেতে কঠিন।
ফুপুদের বাড়ী সহজে খুঁজে পাবার জন্য একটা চিহ্ন ঠিক করে গিয়েছিল ফরিদ গতবার। বাড়ীটার প্রবেশ পথের খানিক আগে একটা কাঠের ভাঙ্গা সেতু আছে। সেই সেতুটা পেলেই বাড়ী খুঁজে পাওয়া সহজ। আজ এতটা হেটেও এখনো সেতুটার দেখা নেই।
দাঁড়াবে নাকি একটুখানি? মাঝি তো আসবেই পেছনে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েও মাঝির টিকির দেখাও নেই। আবার হাঁটা শুরু। কোনদিকে যাচ্ছে ঠিক নেই। পথ যেখানে যায় সেখানেই যাবো। পথের শেষ দেখবো। জেদ চেপে গেল ফরিদের। খানিক্ষন পর অন্ধকার ফুঁড়ে একটা হারিকেন এগিয়ে আসতে দেখলো সে। তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে কাছে গিয়ে দেখে দুজন গ্রাম্য হাটুরে লোক লোক। মাথায় ঝাকা বসানো। ওকে দেখে আপাদমস্তক পরখ করে নিল আধো আলোয়। জিজ্ঞেস করলো,
-কোথায় যাবেন?
-খইল্যা কাজী বাড়ী (খলিল কাজী বাড়ী)
-এইখানে খইল্যা বাড়ী কই পাবেন
-কেন এখানেই তো থাকার কথা বাড়ীটা
-খইল্যা কাজী বাড়ী তো চরণদ্বীপে
- এইটা চরণদ্বীপ না?
-জী না, এইটা তো খরনদ্বীপ। চরনদ্বীপ তো আরো মাইলখানেক পেছনে ফেলে আসছেন?
-অ্যাঁ???
বলে কি? ফরিদের মাথা ঘুরে উঠে। লোক দুজন রাস্তা বলে দেয়। তারপর নিজেরা বিড়বিড় করে বলতে বলতে যায়, এইটারে মাউচ্ছা দেওতে পাইছে।
ফরিদ জানে "মাউচ্ছা দেও" কি জিনিস। আগে সাক্ষাত হয়নি যদিও। কিন্তু মানুষকে পথ ভুলিয়ে উল্টাপাল্টা পথে হারানোর জন্য এই দেওকে দায়ী করা হয় গ্রামে। এবার গায়ে কাঁটা দিল তার। দোয়া দরুদ পড়ে ফরিদ আবার উল্টো পথ ধরে।
বাড়ীটা খুঁজতে খুঁজতে তার শরীর যখন ক্লান্তির শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে তখনই একদল লোক তাকে খুঁজে পেয়ে বাড়ী নিয়ে আসে। মাঝি আগেই পৌঁছে গিয়েছিল। ফরিদ এত আগে রওনা দিয়ে এখনো পৌঁছেনি শুনে বাড়ীময় তোলপাড় শুরু হয়। চারদিকে লোক পাঠানো হয় কয়েকটা দলে। তারই একটা দল ফরিদকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
ফরিদের নির্বাসন জীবনের শুরুটা তাই ভীষণ ক্লান্তিকর ছিল।
.
[চলতে পারে.........]
পাদটীকা: পর্ববিরতি দীর্ঘ হওয়ার জন্য দুঃখিত। তবে মূল কারন হচ্ছে যে কারণে সিরিজটা লিখতে শুরু করেছিলাম, সেই কারণ থেকে একটু দূরে চলে গিয়েছিলাম। চট্টগ্রামের আঠারো উনিশ শতকের মিশ্র ইতিহাসে বুঁদ হয়ে ছিলাম বলে লেখার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। ইতিহাস সন্ধানী লেখা যে কতো কঠিন, লিখতে গিয়েই টের পেয়েছি। একপাতা লেখার জন্য একশো পাতা পড়তে হয় এবং কাজটা মোটেও আমার মতো আনাড়ীদের জন্য নয়। এত চেষ্টা করেও আসল কাহিনীতে ফিরতে পারিনি বলে অতৃপ্তি বাড়ছে, আদৌ ফেরা হবে কিনা জানি না। কোন কোন ফেরা আসলেই খুব কঠিন।
পর্ব-৪ http://www.amrabondhu.com/neer/1976
পর্ব-৩ http://www.amrabondhu.com/neer/1962
পর্ব-২ http://www.amrabondhu.com/neer/1936
পর্ব-১ http://www.amrabondhu.com/neer/1922
পুরো পর্বটাই দুর্দান্ত। বিশেষ করে, ফরিদের জ্ঞান হারানোর ঠিক আগের দৃশ্যটা কী জীবন্ত ফুটিয়েছেন!
ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস করা শ্রম-সময়-সাপেক্ষ। তবু দাবী থাকলো, সময় লাগলেও কাজটা অবশ্যই শেষ করবেন। সে ক্ষমতা আপনার আছে।
ফরিদের একটু ইয়ে-র সম্ভাবনা ছিলো মনে পড়ছে, তার কথা ভুলতে পারছি না
ফরিদের ইয়ে সম্ভাবনা এখনো মাঠে মারা যায়নি, দেখা যাক গ্রামের আলোবাতাসে মন কতটা রোমান্টিক হয়
আমি টাইগারপাস এই প্রথম পড়লাম । পড়ে মনে হচ্ছে একটা কিশোর উপন্যাসের অংশবিশেষ । আগের পর্বগুলো পড়তে হবে সময় করে ।
যে পাখিটার কথা বললেন, ওইরকম একটা কালো রঙের পাখি আমি দেখেছি গ্রামে । চোখ লাল । এর নাম আমরা বলি কুক্কা পাখি । আর যেটাকে মাইচ্ছা দেও বললেন, আমরা সেটাকে বলি কানা ভুত । মাউচ্ছা ভুত বলি যেটা মাছ খেয়ে ফেলে ।
যত কষ্টই হোক, পর্বগুলো জলদি লিখে ফেলা কিন্তু আপনার উচিত । পত্রিকায় একটা জনপ্রিয় ধারাবাহিক লেখা এইরকম বন্ধ থাকলে কেমন লাগে? নিশ্চই সেই অনুভূতি আপনার আছে । এই যে আমি আজকে এই পর্ব পড়লাম , এখন পরেরটা না পড়া পর্যন্ত তো শান্তি পাবো না । তাই বলছি, আপনার যত কষ্টই হোক শংখ নদী
আর টাইগারপাস নিয়মিত দিতেই হবে ।
আপনার তো ভুত নিয়ে ব্যাপক অভিজ্ঞতা? লিজা নামের একটা চরিত্র যোগ করে দেবো নাকি? কি বলেন?
বাঙালীর ভুত নিয়ে অভিজ্ঞতার কি অভাব আছে নাকি ? আমাদের উঠতে ভুত বসতে ভুত । লিজা নামের চরিত্র দিলে নায়িকা চরিত্র দিতে হবে যে কতদিন মনে মনে তিন গোয়েন্দা সিরিজের নায়িকা হয়েছি ।
। আহা, নীড় দাদা কি মনে করাই দিল ।
নায়িকা চরিত্র অলরেডী বুকড। সহ নায়িকা সৃষ্টি করতে পারি, যদি রাশেদকে মনে ধরে, সেও ভুত বিশেষজ্ঞ
কাভি নেহি আমি সহনায়িকা হইতে রাজি না । আর তাছাড়া রাশেদ নামে এক বাটপারকে চিনি আমি
পারলে আগের নায়িকারে ডিলিট কইরা লিজারে সেইভ করেন ।
এই পাখিটার একেক জেলায় এক এক নাম। যেমন কানাকুয়া, হাড়িকুড়ি। ছোটবেলায় নানার বাড়ি গেলে দেখতাম পাখিটা। ঐখানে আবার এটার নাম আরো খারাপ। আইরাকুত্তি।
আইরাকুত্তি।
কি বিদঘুটে নাম রে!!!!
পাখিটা লম্বায় কাকের দেড়গুণ। সারা শরীরের পালক কালো আর মরচেরঙা মিলিয়ে। ঠোঁট কালো, চোখ লাল। নাম হলো কানাকুয়া। এরা খুব লাজুক আর ভীতু টাইপের, লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে, ওড়ার চেয়ে বেশি হাঁটে। আমাদের সেগুনবাগানের বাসায় বিশাল ঝোপঝাড়ে ভরা বাগানে কয়েকটার আস্তানা ছিলো। মজার ব্যাপার, সবাইকে ভয় পেতো এরা, শুধু আমার মায়ের ধারেপাশে নির্ভয়ে হাঁটতো।
হাড়িকুড়ি নামের এক পাখী গ্রামে দেখেছি, কানুকুয়া আর ওইটা একই জাতের পাখী হতে পারে। ওই পাখীর বাসায় নাকি যাদুর হাড্ডি পাওয়া যায়, সেই হাড্ডি হাতে পেলে নাকি অদৃশ্য হয়ে যাওয়া যায়। ছেলেবেলায় ওই পাখীর বাসা যে কত খুজছি। জীবনের একটা অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল সেই হাড্ডি দিয়ে অদৃশ্য হয়ে ঘোরাফেরা করা। আহা ইনভিজিবল ম্যান প্রথম দেখার পর ভাবতাম ব্যাটা কত ভাগ্যবান হাড্ডিগুড্ডি বাদেই কিরাম বাতাসে মিলিয়ে যায়
নীড়দার জন্য খবর, প্রথমটা দুঃখের- কিংবদন্তীর গল্প প্রাথমিক অনুসন্ধানে পাওয়া যায়নি। তবে খোঁজদ্যসার্চ চলমান, নবীন প্রজন্মে চট্টলার অন্যতম সেরা পড়ুয়া সৈকতের কাছে সন্ধান থাকতে পারে, জিজ্ঞেস করে জানাবো। সুমি বোধহয় সৈকতকে চেনে; অতি অবশ্য্ই আলাপ করে নেবেন (যদি ইতোমধ্যে আলাপ না হয়ে থাকে)।
পরেরটা কাকতালীয় ও সামান্য আনন্দের- সুচরিত চৌধুরীর সর্বশেষ রচনাটির নাম 'টাইগার পাস', একপাতার বেশি এগোয় নি সেটা। সুচরিত স্মারক গ্রন্থে ওটাসহ তাঁর বেশ কিছু রচনা আর সাক্ষাৎকার আছে।
সৈকতের সঙ্গে একবার বোধহয় পরিচয় হয়েছিল, এই সৈকত কি বীথির সৈকত? আরেক সৈকত আছে মুক্তাঙ্গনে লেখে, অবশ্য দুজন একই ব্যক্তি কিনা জানি না। খোঁজ নেবো।
বাহ দারুন কাকতাল তো! তাহলে তো সুচরিত চৌধুরীর বইটা যোগাড় করতেই হয়।
সৈকত হলো সৈকত দে। মাঝেমধ্যে ছোটকাগজ 'নাব্যিক' বের করে। বীথি মানে আসমা বীথির বন্ধু।
স্মারক গ্রন্থটা নেয়ার উপলক্ষে চলে আসেন বাসায়
আপনি ঢাকা থেকে ঘুরে আসেন, তারপর আসবো।
তবে বইমেলা থেকে মাসুম ভাই আরাশি সহ কয়েকজনের বই আনার কষ্ট দেবো কিনা ভাবছি আপনাকে।
মাথায় থাকলো
(সৈকত দে ব্লগের ব-ও দেখেনি কোনদিন, পাজিটাকে বলি দেখতে-লিখতে, পড়ার চাপে তার সময় নেই। এমনকি চাকরিও ছেড়ে দিলো 'আউট বইয়ের' পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে বলে!!!)
লেখার কথা আর নাই বলি। এই লাইনটায় আলাদা করে লাইক দিলাম।
আলাদা করে নয়, আপনার বইয়ের অটোগ্রাফে লাইকটা জুড়ে দিলে আনন্দিত হব।
হাহাহাহাহাহা।
একটু মিস্টেক আছে, গল্পের নায়কের নাম ফরিদ হবে না, হারুন হবে
ঠিক করে দিয়েনতো দাদা
আপনি এত কিছু জানে কি করে? আপনি কি চরনদ্বীপের লুক নিকি? তাহলেতো আপনার একটা বিস্তারিত সাক্ষাতকার নিতে হয়
আমি থাকি গাছে গাছে , তেনাদের সাথে
একটার মাঝখানে আরেকটা দেন। পড়তে পড়তে আউলায়া ফেলি। আগের পরব মনে হয় নুহ নবীর আমলে পড়ছিলাম। কী পড়ছিলাম ভুইলা গেছি। আবার মাঝখানে আবুলের কাহিনী দিছেন। এইটা কাহিনী ধরতে হইলে আবার পিছন থিকা পইড়া আসন লাগবোক।
অভিযোগ সত্য।
কিন্তু ফরিদের পিছু পিছু আবুল হোসেন এসে এমন তাড়া দিল ফরিদরে কদিনের জন্য রেস্ট দিয়ে দিছিলাম। এখন আবুল হোসেনরে পাহাড়ে পাঠিয়ে একটু অবসর পেলাম এদিকে।
দোলনায় বসে বসে গল্পটা পড়ি
দোলনায় বসে বই পড়া যায় নাকি?
দোলনায় বসে বই পড়েন, দেখেন কত্ত মজা!
নীড়দা এমনভাবে লিখেন সবই সত্য মনে হয়।গল্পের মতো একটা বিরাট বটগাছ আমাদের বাড়ীর পাশে আছে।আর আমাদের গ্রামে রাতে পথ হারিয়ে ফেললে বলে 'কানাওলা ধরছে'।
মাত্র সত্য 'মনে' হয়!!! এটা কি সত্য ঘটনা বলা হচ্ছে না???
ভালো লাগা অক্ষুন্ন আছে । বিলম্বে হলেও এমন ভালো কিছু তৃপ্তিদায়ক ।
আপনার তৃপ্তি আমার স্বস্তি
ভালো থাকুন।
ব্যতিক্রমধর্মী বিষয়/সময়কাল বেছেছেন। ভালো কাজ। শুভকামনা।
অনেক ধন্যবাদ পাঠক
লেখাটা পড়ে লেখককে কিছুটা বোঝার চেষ্টা করলাম। সুযোগ থাকলে পরিশ্রম বাড়ায় দেন নীড়দা'। বন্ধু-বান্ধব সবাই মিলে একটা সেলিব্রেশনের দিকে আগাই। আস্তে আস্তেই আগাই, অসুবিধা নাই। কবি বলেছেন, দের আয়ে তো দুরস্ত আয়ে।
কিসের সেলেব্রেশান, বুকে কাঁপুনি ধরায়া দিছেন তো!!!
চলুক। বাটালীহিল আসবে তো।
আগামী পর্বে বাটালী হিল দেখা যেতে পারে
নীড়দা, যথারীতি দারুণ লেখা! এইটা লেখা শেষে দিব্বি বই হিসেবে বের করা যায়..ভেবে দেখতে বিনীত অনুরোধ করে গেলাম। আর যদি, বই হিসেবে বের করেন তবে দয়া করে কিছু বানানে সামান্য ত্রুটি থেকে গেছে ঠিক করে নেবেন। যদিও আমি অতি সামান্য লুক, আমার কথায় পাত্তা না দিলেও চলে...তবুও বাংলাভাষার প্রতি আপনার নিদারুণ ভালোবাসার কথাটা জানা বলেই বলা। রাখা, না রাখা আপনার একান্ত মর্জি। এমন হৃদয়গ্রাহী লেখা অব্যহত থাকুক। মঙ্গলময় হোক আপনার সারাটি ক্ষণ(মানে তেনারা না আবার আইস্যা ঘাড় মটকে দেয়..মাগ্গো )
বানানগুলো: দুরে/দূরে
পুটলি/পুটলী( দুটোই ব্যবহৃত হয়েছে এখানে)
তেতুল/তেঁতুল
আটকে/আঁটকে
বাশী/বাঁশী
যে পারতপক্ষে একদম লেখে না খালি কমেন্ট করে জাতির উপকার করে যেতে চায়, তার নাম বাতিঘর। যার কমেন্ট পাওয়াই যেন ভাগ্যের কথা। আমার পোষ্টে উপকারী পদার্পন করার জন্য ধন্যাপাতা উইথ পুদিনাপাতা। বানানগুলি শুদ্ধ করে নিলাম।
মন্তব্য করুন