তেইল্যাচোরা
সৃষ্টির বিবর্তন চিন্তায় আবুল হোসেনের চোখে ঘুম নেই গত কয়েকমাস ধরে। এতবছর ধরে সে জেনে এসেছে তার পূর্বসুরী হযরত আদম আর বিবি হাওয়া। কিন্তু সেদিন ডারউইন নামে এক লোকের পুস্তিকা পড়ার পর থেকে মাথাটা তার আউলা হয়ে গেছে। সে ভাবতেই পারছে না কোথাকার গেছো বাঁদর বা শিম্পাঞ্জি থেকে তার বংশের উৎপত্তি। চিন্তায় চিন্তায় মাথার চুল অর্ধেক পড়ে চকচকে স্টেডিয়াম বেরিয়ে গেছে, আর কিছুদিন গেলে পুরো ইনডোর স্টেডিয়াম, এই জীবনে আর বউ মিলবে না।
এই জন্যই ছেলেবেলার ফজু পাগলা রাস্তায় চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে বেড়াতো, 'বেশী পড়া পড়বি, পাগলা হয়ে মরবি'। ফজু হয়তো এককালে জ্ঞানের দিকপাল ছিল।
সেই থেকে বাথরুমে আয়নার দিকে বারবার তাকিয়ে মেলানোর চেষ্টা করছে গেছো বাঁদর বা শিম্পাঞ্জীর কোন অংশের সাথে তার বেশী মিলে। বৃথা চেষ্টা। ডজন ডজন বইপত্র ঘেটে ঘেটে প্রমান খোঁজারও বৃথা চেষ্টা করলো। ফলাফল ডারউইনের দিকে না গিয়ে ফজু পাগলার দিকেই যায়।
কিন্তু সেদিন রাতে পায়ের বুড়ো আঙুলে কিসের একটা কামড় খেয়ে তার নিদ্রা ছুটে যায়। মোবাইল জ্বালিয়ে দেখলো, বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুলটা কামড়ে ধরে আছে একটা নাদান তেলাপোকা। ঝট করে লাথি দিয়ে মেঝেতে ছুঁড়ে মারলো কালচে নোংরা তেলাপোকাটা। প্রচন্ড আতংক লাগলো দৃশ্যটা দেখে। ছোট্ট একটা তেলাপোকা আস্ত একটা মানুষ খেয়ে ফেলার চেষ্টা করছে?
কিছুদিন ধরে খেয়াল করছিল ঘরের তেলাপোকাগুলো ভীষণ বেয়াড়া হয়ে উঠেছে। এতকাল তেলাপোকার দল কেবল রান্নাঘরেই থাকতো, উচ্ছিষ্ট খাদ্য খেয়ে জীবনধারন করতো। মানুষ দেখলে পালাতো। কিন্তু আজকাল তাদের সাহস বেড়েছে মারাত্মক যখন তখন বিছানায় উঠে ঘোরাঘুরি করে চোখের সামনেই।
আজকে দেখা গেল তাদের রুচিও বদলে গেছে, আদম সন্তানের মাংসের প্রতি ঝোঁক চলে এসেছে। কেন? ড্রয়ারে রাখা মানিব্যাগ, কলমের ঢাকনি, চাবির প্লাস্টিক রিং, রিমোটের বোতাম, মোবাইলের খোপ ইত্যাদি খাওয়া ধরেছিল আরো আগেই। ওসব শেষে এখন ধরেছে সরাসরি মানুষ খাওয়া? এতবড় সাইজের একটা মানুষ, তোদের মনে ডরভয় নেই?
আজকে এক চিমটি খেয়ে দেখেছে, মজা লাগলে কালকে আরেক খাবলা খাবে। দেখা যাবে একদিন আস্ত মানুষটাকে কয়েকহাজার তেলাপোকা খেয়ে ফেলছে। ভয়ে আবুল হোসেনের ভেতর বাহির শিউরে উঠে।
হঠাৎ ভয়ের চেয়েও বড় একটা আবিষ্কারের আনন্দে আবুল হোসেনের আতংকটা কেটে গেল নিমেষে। দি ইউরেকা!!!!! পাওয়া গেছে!!!! ডারউইনের বিবর্তন প্রমানের জন্য আর গাদা গাদা বইয়ে মাথা খুঁড়ে মরতে হবে না। বিবর্তনের চাক্ষুষ প্রমাণ পাওয়া গেছে। সাধারন তেলাপোকা বিবর্তিত হতে হতেই মানুষখেকো হয়ে যাচ্ছে। বিবর্তন সৃষ্টির এক অনিবার্য বৈচিত্র।
কিন্তু তেলাপোকা নিয়ে ভিন্ন একটা চিন্তায় আবুল হোসেনের বাকী রাতটাও নির্ঘুম কাটলো।
সৃষ্টির লীলা বোঝা ভার। জগতে নাকি সকল জড় জীব প্রাণীর প্রয়োজনীয়তা আছে। মানুষ গরু ছাগল বাঘ হরিন কুকুর বেড়াল ফড়িং মাছ আমগাছ জামগাছ গাবগাছ সব কিছুর কিছু না কিছু ভূমিকা আছে। কিন্তু তেলাপোকা সৃষ্টির কারণটা কি? তেলাপোকা জগতের কি উপকারে আসে? বিধাতা তেলাপোকা সৃষ্টি করলো কেন?
অতিকায় ডাইনাসোর বিলুপ্ত হইয়াছে, কিন্তু অতিক্ষুদ্র তেলাপোকা টিকিয়া গিয়াছে। টিকে থাকার যোগ্যতা না হয় আছে তাদের, কিন্তু ক্ষতিকর এই প্রাণীটা সৃষ্টি করে বিধাতা কোন মহিমা দেখাতে চেয়েছে?
বিধাতা তার মহিমা দেখাক, আমি কিন্তু তেইল্যাচোরা দেখামাত্র গদামে পিষ্ট করিব।
একটা সিদ্ধান্তে আসতে পেরে আবুল হোসেন পুলকিত হয়।
( পিষ্ট করার ইমো হবে )
ডেভু কৈ? জুতার তলে তেইল্যাচোরা পিষ্ট করার ইমো চাই, যেটার কোড হবে :পিষ্ট:
তেইল্যাচোরার ম্যালা গুণ! তেইল্যাচোরা অবতাররূপে আবির্ভূত হয়, তাদের মোবাইল নেটওয়ার্কও গায়েবি ক্ষ্যামতার অধিকারী।
কপাল.... দেশে এত কোটি ডিজিটাল ফোন, জীবনে একবারো রং নাম্বারে ডায়াল করলো না কেউ আমারে.........আর মাইনসে ঘুম থেকে জেগে ওঠে অচেনা নাম্বার থেকে চেনা কাহিনী শুনে.......চুক চুক চুক......ডিজিটালী এনালগ হয়ে থাকলাম জীবনভর
আধুনিক তেইল্যাচুরারা ব্যাপক বিনোদনেরও খোরাক। তাদের মধ্যে পীর মুরিদ জ্ঞান প্রকট। তাদের ভ্রাতৃত্ব-বোধও প্রশংসনীয়। সময়ে তাদের মধ্যে শিয়াল জাতিয় চাতুরী ও হুক্কাহুয়া পরিলক্ষিত হয়। তাদের পাখা আছে সুতরাং তারা পাখি এই মতবাদ প্রচারে তারা পদপিষ্ট হবার আগ পর্যন্ত তাদের ফাটা ঢোলটি বাজাতে থাকেন।
কিন্তু শেষতক তেইল্যাচুরা তেইল্যাচুরাই। তার শেষ গন্তব্য সর্বদা পদতলে।
তেইল্যাচোরা পিষ্ট করার ইমো চাই।আপাতত এইটা দিলাম
স্টেডিয়ামের সাথে বউ পাওয়া- না পাওয়ার সম্পর্ক কী?
শিরোনাম দেখেই সন্দ হইছিলো, আবুল হোসেন এই কান্ডই করবেক।
সই, রাগ ছিল আমার ওপরে, মাঝখান থেকে তুমারেও ঝাড়লো। কিন্তু জীবনের আসল সুখ কুতায় সেটা জানা হলো না, কান মলায় নাকি কান ডলায়
ফিকফিক সাবের পয়লা পোস্টে রবীন্দ্রপরবর্তী যুগের স্টিকি আহ্বান কমেন্টটা কৈরাই তো পীরানি হৈয়া গেলাম, যে কপি কর্ছে তারেই মুরিদ ঠাউরাইছে তেইল্যাবতার
আবুল হোসেনরে
তেল্যাচোরারে লইয়া ত্যক্ত আছি । পদপিষ্ট করলেও পা খারাপ । অবশ্য জুতার তলে পিস্ট করলে পা খারাপ হওনের সম্ভাবনা কমে ।
দাদা নতুন এক ধরনের লেখা শিখলাম।
আপনে বস্। জটিলস্য জটিল হৈসে।
তেইল্যাচোরা কিলবিল করবেই, তাই বলিয়া জুতা নোংরা করার পক্ষপাতি নই! ননস্টিকি এরোসল প্রয়োগে বিশ্বাসী
তেলাপোকা না থাকলে পৃথিবী কিরাম হপে সেটা আমায় বড্ড ভাবাচ্ছে গো!
আমি তো তেইল্যাচোরা দেখলেই দেই সাথে একখান সজোড় চিৎকার ও।
এইটা কি বললেন
তেলাপোকা মারলেও ঝামেলা বাকিগুলা দৌড়াইয়া ম্যাসাকার করে। আর যেইটা জুতাপিষ্ট হয় সেইটার পেট থেকে হলুদ গু টাইপের জিনিস বাইর হয় তার জন্য গরম পানি আর সেভলন দিয়ে ঘর মুছতে হয়।
নীরদার রেজিস্টারড মুরিদ হয়া গেলাম।
যাক অবশেষে ব্লগে একজন পুরুষ পীর পাওয়া গেলো আমিতো মনে করছিলাম হাসিনা-খালেদার মতো এই ব্লগে তা-নু পীরাইন ছাড়া অন্য আর কেও নাই।
মন্তব্য করুন