বিক্ষিপ্ত এক টেলিফোন সংলাপের স্মৃতি ভগ্নাংশ
- হ্যালো, তুমি কি আছো অচিন দা?
- আমি আছি, এতক্ষন পর এসেছো তুমি?
- রাত গভীর হবার অপেক্ষায় ছিলাম। তোমাকে উইশ করবো বলে। একটা কিছু দেবার খুব ইচ্ছে ছিলো তোমাকে জন্মদিনে....হলো না রে!
- বস্তু কে চায় তোমার কাছে?
- কেন?
- বস্তু হলো নশ্বর, আমি তো চাই অবিনশ্বর কিছু
- তবু মাত্রই তোমার কথা মনে করে একটা ছবি তুলেছি
- তুষারের না তুষারকন্যার?
- উল্টে যাওয়া থালার মতো চাঁদের ছবি
- জুম করে তুলেছো?
- ব্যাপার না, তবে সাথে আরো একটা দেবো
- তুষারকন্যার ছবি দেবে না?
- হি হি হি, দেখা যাক
- নাকি আরেকদফা ঝগড়া করতে হবে
- নানননননননননননা
- প্রতিটা ছবির পেছনে কিন্তু আমাদের ঝগড়ার ইতিহাস। তবু হৃদয়হীনার চেহারা দেখলাম না আজো
- পায়ে পড়ি কোন ঝগড়া না আজ
- মাঝে মাঝে তুমি এত কঠিন, আমি তোমাকে দেখতে চাই, অথচ তোমার মায়াও হয় না
- মাঝে মাঝে না তো বরাবরই, দেখে ফেললেই যে আমাকে একা হয়ে যেতে হবে ফের!
- এখনো তাই মনে হয় তোমার???
- না...তারপরও কোথাও যে সিঁদুরে মেঘ উঁকি দেয়, হারিয়ে ফেলবার কষ্ট তুমি জানো অচিন দা?
- আমি বুঝি, কিন্তু যদি সেই বিশ্বাস এখনো না আসে তাহলে দিও না
- না ছিঃ, চুপপপপপপপপপ
- আরো বিশ্বাসী হবার চেষ্টা করবো, সুনীলের একটা কবিতা আছে না? যোগ্য হও যোগ্য হও
- জানিনা...কবিতা পড়িনা আমি
- যোগ্য হতে পারবো না জানি, তবু চেষ্টাটাকে একটু মূল্যায়ন যদি করা হয়
- মাপকাঠিটা কি যোগ্যতার?
- ভালোবাসার
- হি হি হি
- তবু ওতেও তো পিছিয়ে পড়া মানুষ বরাবর, কেবল চাপাটা আছে বলেই..... হা হা
- চাপা??
- চাপাবাজি মনে হয় না আমার এসব কথা?
- আমি যাবো এখন, ভালো থেকো তুমি
- ঐ শোনো, আমি কি বলি, তুমি কি বোঝো, রাগ করো কেন চট করে
- কিছু শুনবো না, তুমি লাঞ্চ করো সময়মতো, যাচ্ছি আমি
- শোনো, যেও না
- বাইইইইইইইই
- আজকেও ঝগড়া করো তুমি? শোনোওওওওওওওও, ফোন আসছে আমার একটা। একটু থাকো প্লীজ।
- তাই তো আসবে এখন, আমি থাকলে যত ফোন আসে
- তোমার সাথে আলোচনা করা যায়না কেন, রেগে মেগে চলে যাও
- যাইনি আমি, তবে এই শেষবার, আর রাগাবে না আমাকে
- লক্ষী মেয়ে
- আজ আমায় গলা ধাক্কা দিলেও যাবো না
- আজ বিশেষ দিন নাকি
- অচিন দা তুমি খুব ব্যস্ত এখন?
-খুবববব........একজনের সাথে জরুরী কথা বলছি
-হি হি হি ...... শোনো কাল তুমি নীল শার্ট আর কালো প্যান্ট পরবে, হাফ স্লিভ স্যুয়েটার আছে তোমার?
-হ্যাঁ আছে
- কী রঙের রে?
- বাদামী ধুসর
- বাহ, নীলের সাথে যায়?
- খুব যায়
- পরবে?
- পরলাম
- হি হি হি
- তারপর?
- লক্ষী ছেলে
- এরকম করে কেউ আমাকে সাজায়নি কখনো
- নীলের সাথে কালো প্যান্ট?
- আছে
- আমি কিন্তু পরি
- আমিও
- গুড
- ওই কম্বিনেশানটা ভালো
- কাল ওটাই তোমার পোষাক
-ওকে বস
- হি হি হি কাল আমি রান্না করবো, বলো কী খেতে মন চায়?
- সত্যি?
- জী, মিথ্যে রান্না হয় নাকি রে বোকা
- ভেবে নেই
- ভাবো
- যদি ইন্টারনেটে ঘ্রান পাঠানোর ব্যবস্থা হতো, দারুন হতো
- ইশশশ
- এটাচ ফাইলে রান্নার সুঘ্রান পাঠিয়ে দিতে
- তবে রান্নার শব্দ শোনানো যেতো...........কি হলো, ভাবলে কি খাবে?
- তন্দুরী রুটি সাথে শিক কাবাব আর একগাদা দইসালাদ
- শিক কাবাব তো পারিনা আমি!
- হে হে হে
- তবে রুটি করা যাবে, সালাদও
- না থাক তুমি যেটা পারো তোমার প্রিয় আইটেম করো, তোমার প্রিয় আইটেম খাবো
- ঠিকাছে, চিকেনের খুব ঝাল ঝাল একটা রান্না করি সবাই খুব মজা মজা বলে...ঠিক আছে?
- ঠিক আছে, জিবে জল এসে গেল এখুনি।
-তুমি শীতে ঝরে যাওয়া পাতা দেখেছো অচিন দা? যেদিকের বাতাস সেই ঝরাপাতা কে ধারণ করে পাতা সেদিকের...
- তুমি ওইসব কি বলো, শীতে ঝরাপাতা
- মেঘ হবো, ছায়া হবো ... হি হি হি
- মানেটা কি, শীতে ঝরে পড়েছো তুমি?
- আমি কুড়িয়ে নিয়েছি মনে হয়? আমি কি পাতা কুড়োনি?
- নাওনি?
- আমি নেইনি বরং আমি একটা মায়াবতী বৃক্ষের সন্ধান পেয়ে তার ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছি
- তর্ক থাক। তারচে চলো একটা কবিতা শোনাই তোমাকে? শুনবে?
- শুনবো
যে নক্ষত্র মরে যায়, তাহার বুকের শীত
লাগিতেছে আমার শরীরে–
যেই তারা জেগে আছে, তার দিকে ফিরে
তুমি আছো জেগে–
যে আকাশে জ্বলিতেছে, তার মতো মনের আবেগে
জেগে আছো–
জানিয়াছে তুমি এক নিশ্চয়তা — হয়েছ নিশ্চয়!
হয়ে যায় আকাশের তলে কত আলো-কত আগুনের ক্ষয়;
কতবার বর্তমান হ’য়ে গেছে ব্যথিত অতীত–
তবুও তোমার বুকে লাগে নাই শীত
যে নক্ষত্র ঝরে যায় তার!
যে পৃথিবী জেগে আছে, তার ঘাস– আকাশ তোমার!
জীবনের স্বাদ লয়ে জেগে আছ– তবুও মৃত্যুর ব্যথা দিতে
পার তুমি;
তোমার আকাশের তুমি উষ্ণ হয়ে আছ, তবু–
বাহিরের আকাশের শীতে
নক্ষত্রের হইতেছে ক্ষয়,
নক্ষত্রের মতন হৃদয়
পড়িতেছে ঝ’রে–
ক্লান্ত হয়ে– শিশিরের মতো শব্দ ক’রে!
জানো নাকো তুমি তার স্বাদ,
তোমারে নিতেছে ডেকে জীবন অবাধ,
জীবন অগাধ!
হেমন্তের ঝড়ে আমি ঝরিব যখন–
পথের পাতার মতো তুমিও তখন
আমার বুকে পরে শুয়ে রবে? — অনেক ঘুমের ঘোরে ভরিবে কি মন
সেদিন তোমার!
তোমার আকাশ — আলো — জীবনের ধার
ক্ষয়ে যাবে সেদিন সকল?
আমার বুকের পরে সেই রাতে জমেছে যে শিশিরের জল
তুমিও কি চেয়েছিলে শুধু তাই! শুধু তার স্বাদ
তোমারে কি শান্তি দেবে!
আমি চ’লে যাব — তবু জীবন অগাধ
তোমারে রাখিবে ধরে সেই দিন পৃথিবীর ‘পরে;–
আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য ক’রে!
[অচেনার কন্ঠ ভারী হতে হতে বন্ধ হয়ে যায়, কিংবা ফোনের লাইনটা কেটে যায় এখানে এসে]
কোন এক যুগে তুষারদেশের এক অচেনার সাথে দেখা হয়েছিল এক অচিনদার। তারপর পৃথিবীর মহাজাগতিক ঘুর্ননে হারিয়ে গেছে তারা মহাকালের অনন্ত গহ্বরে। ইহকাল বা পরকাল কোনকালেই তাদের কখনো দেখা হয়নি আর।
কথোপকথন সুস্বাদু হয়েছে। ঝাল দেয়া গোশতের চেয়েও
লেখা স্বার্থক হইছে তাইলে, অচিনদারে ধন্যবাদ
অচিনদারে সমবেদনা জানাইলাম
যাক অচিনদা সময়মত হাজির আছে
আহারে, ভালৈ লাগলো টেলিকথন। তয় ফোনের লাইন কি লেখা শেষ করার লাইগা কাইটা গেল নাকি হাছা হাছা কাটছে?
টেলিফোন অসময়ে কেটে যেতে ওস্তাদ।
স্মৃতিকথা নাকি?
অচিনদার স্মৃতিকথা
আহারে...
লবনযুক্ত
কবিতা কি জীবনানন্দের নাকি??
কথোপকথনের সময় দু'জনের সামনে কেবল (-) না দিয়ে ভিন্নতা(- , ::, >) আনলে আমার মত নিম্ন শ্রেণীর পাঠকদের জন্য সুবিধা হয়।
লেখা বড়ই উমদা হইছে।
মন্তব্য করুন