শীতভাবনা ও বস্ত্র সমাচার
গত কয়েকবছর শীতের নিরুত্তাপ ব্যাপারটা একদমই গায়ে লাগেনি। হাতে পায়ে অলিভ ওয়েল, নাকে মুখে ঠোটে ভ্যাসলিন বা পেট্রোলিয়াম জেল মেখে টি শার্টের ওপর শার্ট চাপিয়েই কাজ চালিয়েছি। মোটা কাথা গায়ে ফ্যান ছেড়ে হীমঘরের আমেজ আনা। এবার শীত অন্যরকম, হাড়ে ধাক্কা দিয়ে কাঁপায়। শৈত্যপ্রবাহ জাতীয় ভারী কথায় কান না দিয়েই বোঝা যাচ্ছে প্রান্তিক জনগণ কি হালে আছে।
আজ অবশ্য তাদের ওপর একটু রাগই হলো আমার। ছোটভাইরা ধরেছে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রমে গরম কাপড় দিতে। ঘরে যা বাড়তি ছিলো সব দেয়ার পর নিজের দেরাজ খুলে আমার হাত সরে না। দুটো সোয়েটার তিনটা জ্যাকেট। সবচেয়ে নতুনটা কেনা হয়েছিলো ২০০৩ সালে। সেটার ছালবাকল ওঠার পর একটা রকস্টার মার্কা রূপ নিয়েছে। আর পুরানোটা আমার এক মৃত বন্ধুর গিফট, '৯৫ সালের। অনেক যত্নে রেখেছি, খুব কম গায়ে দিই। আবার ধুয়ে মুছে প্যাক করে তুলে রাখি। আমি এমনই, অতীতের খড়কুটোও আকড়ে রাখি। নস্টালজিয়াই আমাকে তাড়ায়। বর্তমানধন্য হতে না পারাই হয়তো এর কারণ।
পুরানো আর নতুনটা রেখে বাকিগুলোর পোটলা বানাই। সঙ্গে দিই স্বল্প ব্যবহৃত কিছু মোটা কাপড়ও। পাঞ্জাবী টি শার্ট। আমাদের নেতারা টিভি ক্যামেরা নিয়ে ফুটপাথের লোকজনকে ঘুম ভাঙ্গিয়ে কম্বল বিলান। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও গোটা শীত চেষ্টা করে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে। দুঃস্থদের শীতের কাপড় বিলোতে। তারপরও নিতান্তই অপ্রতুল মনে হয় তাদের প্রয়াস। কখনোই সবার কাছে তা পৌছে না, কিংবা এভাবে বলা যায় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। আচ্ছা এই কাপড়গুলোর কি হয় গরম কালে? তারা ফেলে দেয়? নতুন কম্বলটা কি বিক্রি করে দেয় খিদে পেটে ওম নেওয়ার বদলে উনুনে শরীর তাতিয়ে দু মুঠো ভাতের আশায়। উত্তরটা জানি না। রাগ হয়েছিলো আমার মতো ওরা রেখে দেয় না কেনো কখনও জমিয়ে শীত পড়বে ভেবে! শেষমেষ ভেবে দেখলাম কারণটা আর কিছু নয়, আমার স্মৃতি হারাতে ভালো লাগে না একদম।





কার ভাল লাগে?
স্বপ্ন হারাক...তবু স্মৃতি রয়ে যাক
কথাটা আসলে হারানোর বদলে হাতছাড়াই বেশী মানানসই
আমারো ভাল লাগে না...এইটা এবি তে আমার প্রথম কমেন্ট।।
বহুদিন পর সাক্ষাত পেলাম আপনার, আছেন কেমন?
হুম! পুরাণ কাপড়চোপর এক সম্য শরীরের অঙ্গের মতই মনে হয়। ত্যাগ করতে মায়া লাগে
অনেকটা সেরকমই আসলে, আমার ক্ষেত্রে কাপড় কেনাই হয় কম
হুম! পুরাণ কাপড়চোপর এক সময় শরীরের অঙ্গের মতই মনে হয়। ত্যাগ করতে মায়া লাগে
স্মৃতিজড়ানো সবকিছুতেই মায়া পড়ে যায়... বাচ্চার একদম পিচ্চি বয়সের জামাগুলোও এমন, কাজে লাগবেনা জেনেও ফেলা যায় না...
লেখাটা হৃদয়গ্রাহী।
=============================================
বিতরিত শীতবস্ত্র কোথায় যায়?
পরের মৌসুম পর্যন্ত আর থাকে না। শীত শেষ হতে না হতেই কন্ডিশন অনুযায়ী পুরনো কাপড়ের ফেরিঅলার গাঁটে অথবা বস্তির ধারেপাশে ধুনকরের (লেপ-তোষক-বালিশ বানায়) দোকানে চলে যায়। "দিন আনি দিন খাই" এর মতো মৌসুমের পরা মৌসুমেই শেষ। রাখবেই বা কোথায়? ছোট্ট নৌকার ছইয়ের মতো একঘরে একগণ্ডা লোক, তার ওপর নিয়ম করে প্রতি চৈত্রবৈশাখে আগুন লাগে।
যুক্তিগ্রাহ্য মন্তব্য, এমনটাই হয় আসলে
এইরকম ভাবে কখনোই ভেবে দেখা হয়নি। মনে ধরলো ব্যাখ্যাটা।
হুম আসলেই, দানে পাওয়া কাপড়গুলা পরে কৈ যায়?
আহারে, আজকে অনেক গুলা কাপড়, কাগজ, পুরানো জিনিষ ফেল্তে হৈলো...
নুশেরা আপনার প্রশ্নের উত্তর দিছেন
আমি কেনাকাটা করি সামান্য, তবে তারপরও পুরনোগুলো ফেলতে অনেক মায়া লাগে। কোন একটা জিনিষে নিজের (আমার) মোহর লেগে গেলে সেটাকে ত্যাগ করা আসলেই কঠিন। মানুষ হোক আর তুচ্ছ শীতের কাপড়ই হোক।
কি বিচিত্র আমরা।
আমার কিন্তু ব্যাপারটা অস্বাভাবিক লাগে না। তুচ্ছাতিতুচ্ছ ব্যাপারগুলায় মায়া জড়িত থাকলে সেটা আরও ব্যাপক পরিসরেও কার্যকর
বস... একবারে জায়গামত হাত দিছেন.. পুরানা জিনিষের প্রতি যে টান কাউরে দিতে ইচ্ছা করে না ... :(
কই যাউক ... কৈ যাইব... এইসব না ভাইবা চলেন শীতার্ত মাইন্ষেগো লাইগ্গা এক্টা ক্যাম্পেন করি।
যদিও এবি প্রতি বছর এটা করে ... কিন্তু এইবার ক্যান যে ঝিমাইয়া পরছে বুঝতাছিনা...
ক্যাম্পেইন শুরু হোক, আরো এক মাস শীত থাকবে
ক্যাম্পেইন শুরু হোক, আরো এক মাস শীত থাকবে
একবার কে ক্রাফটের ফ্যাক্টরিতে গিয়া দেখি একটা খাদির থান কাপড় স্যাম্পল হিসাবে রাখা, ডিজাইন করা হবে। দেখে পছন্দ হলো, নিয়ে আসলাম। বাউণ্ডুলে জীবনের প্রধাণ সঙ্গী হয়ে গেলো সেই চাদর। রাতে এটা গায়ে দিয়ে ঘুমাই, সারাদিন গলায় ঝোলে, খেয়ে হাত মোছা থেকে স্নান করে শরীর মোছা, আবার কখনো লুঙ্গির মতো পরা...
অফ হোয়াইট একরঙা কোনো ডিজাইন বিহীন সেই চাদরটা আমার কাছে এখনো আছে। ১০/১১ বছর হয়ে গেছে। এখন বিবর্ণ হয়ে গেছে। ধুয়ে পরিষ্কার করলেও মনে হয় বুঝি অপরিষ্কার। কিন্তু তবু এটা এখনো আমার প্রিয় সঙ্গী। বউ বকে, কতো সুন্দর সুন্দর শীতের পোশাক ছেড়ে আমি কেন তবু এটাই এখনো আগলে রেখেছি?
আমি তাকে কী করে বোঝাই, বেনেটনের ৮ হাজার টাকা দিয়া কেনা জ্যাকেট আমার পরতে ভালো লাগে না, ভালো লাগে বিনে পয়সায় পাওয়া এই বিবর্ণ চাদরটাই। এর জমিন জুড়ে জড়িয়ে যে আছে আমার স্বর্ণসময়গুলো...
লেখাটা খুব ভালো লাগলো
পরামর্শ : চাদরটা বাধায়া ফেলেন। আর্টও হইলো, স্মৃতিও সংরক্ষিত থাকলো। একসময় ডিপ পার্পলের উড়াধুরা ফ্যান ছিলাম। ছোটমামা তাগো একটা কনসার্ট থিকা টি শার্ট আনলো। পড়তে পড়তে আর পড়ার যোগ্য যখন রইলো না, তখন ওইটা ফ্রেমবন্দী করলাম। এখনও আছে ডিপি-র স্মৃতি হইয়া
আশিটাকা দিয়ে একটা চাদর কিনেছিলাম খাদির দোকান থেকে অনেকদিন আগে। ছাইরঙা যেনতেন একটা উলের চাদর। যত শীত বস্ত্র আছে কেন যেন এইটার মতো আর একটিও হয় না। গলায় ঝুলিয়ে হাঁটলেও যেন মায়াবী উষ্ণতায় শীত পালায়।
নুশেরার উত্তরটাই ঠিক মনে হচ্ছে
সেটাই
হু ম ম...
মন্তব্য করুন