যে জীবন ফড়িংএর, দোয়েলের মানুষের সাথে তার কোনদিন হয়নাকো দেখা
(ভদ্রলোককে আমি দেখিনি কোনদিন। নামে চিনতাম বড়বোনের খুব ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর বড় ভাই হিসাবে। সপ্তাহ খানেক আগে শুনলাম তার আট
বছরের ছেলেটি সুইসাইড করেছে। )
[si]শোনা গেল লাশকাটা ঘরে নিয়ে গেছে তারে, ফালগুনের রাতের আঁধারে[/si]
বাবামার কাঁধে সন্তানের লাশ নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বোঝার নাম। সন্তান জন্মের পর কত স্বপ্ন, কত কল্পনা তাকে ঘিরে। পুরো জীবনটাই ঘুরতে থাকে তাকে/তাদেরকে ঘিরে। একদিন সেই সন্তান হারিয়ে যায় নিতান্ত অল্প বয়সে। দুরারোগ্য ব্যাধিতে। দূর্ঘটনায়। অথবা ঘাতকের হাতে। কিংবা শিশুটি নিজেই হয় আত্নঘাতী।
[si]যখন গিয়েছে ডুবি পন্চমীর চাঁদ, মরিবার হোলো তার সাধ[/si]
আট বছরের একটি ছেলের মাথায় ঠিক কিভাবে সুইসাইড করার বুদ্ধি আসে? তাও গলায় ফাঁস দিয়ে? ঠিক কতটা দূর্বিষহ হলে নিজেই নিজের জীবন বিনাশ করার কথা ভাবে আট বছরের এক বালক। তাও গলায় ফাঁস দিয়ে। জানিওনা কেন এমন কাজ করেছিল। ক্লাসে বুলিয়িং? বাবামার শাসন? বাবামার দাম্পত্য কলহ? বয়সে বড় কারো হাতে অন্য কোনরকম নিপীড়ন?
[si] ঘুম কেন ভেঙে গেলো তার, অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল, লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার[/si]
আত্নহ্ত্যা করে কি সমাধান হলো সব সমস্যা? পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়ে কি বেঁচে যাওয়া গেলো? পৃথিবীর রং-রুপ-রস কি কিছুই বাকি ছিলোনা আর দেখার? বই-খেলা-কার্টুনের জগতে যার ব্যস্ত থাকার কথা, কোন বিপন্ন বিস্ময় তাকে ক্লান্ত করছিলো?
ছেলেটির বাবা-মা-বড়বোন কি কোনদিন সুস্থ হবে? ফিরে কি পাবে স্বাভবিক জীবন?
ছেলেটির মৃতদেহ একসময় মিশে যাবে মাটির সাথে। আত্না কোথায় যায়? পাখি হয় যায় উড়ে যায় আকাশে? অথবা মিশে যায় হাসনাহেনা ফুলের গনধে? নাহ। মানুষ মারা গেলে হারিয়ে যায়। কোনদিন ফিরে পাওয়া যায় না। [si]যে জীবন ফড়িংএর, দোয়েলের মানুষের সাথে তার কোনদিন হয়নাকো দেখা। [/si]
এই ভর দুপুরে এমন একটা মর্মান্তিক পোস্ট দিলেন?
সহমর্মিতা পরিবারের সকলের জন্য।
জীবনের নির্মমতার আবার ভর দুপুর।
আমি একটা প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ওয়ার্কশপের কাজ হিসাবে ঝিনেদা জেলার আত্মহত্যা প্রবনতা নিয়া প্রামাণ্য চিত্র বানাইছিলাম...সেই কাজের লেইগা সাক্ষাতকার নিছিলাম আত্মহত্যার চেষ্টা কইরা বাঁইচা যাওয়া অনেক মানুষের। শ্যুটিংয়ের একদম শেষদিন হাসপাতালে গেছি দৌড়াইয়া, নতুন একজন গৃহবধুরে নিয়া আসা হইছে এই খবর পাইয়া। বিষ খাওয়া যন্ত্রণার মধ্যেই সেই গৃহবধু চীৎকারে প্রতিরোধ করতে চাইতেছিলেন তার চিকিৎসারে...মুখ দিয়া ফেনা গড়াইয়া পড়তেছিলো কিন্তু তবুও তারে আটকাইয়া রাখতে কষ্ট হইতেছিলো সবার।
তো এই গৃহবধুর মৃত্যুর মুখোমুখি অবস্থায় আমরা তার সাথে কথা বলি। সে তার নির্যাতক স্বামীরে শাস্তি দেওনের জন্য বিষ খাইছে কেবল এই বাক্য আমরা উদ্ধার করতে পারি। স্টমাক ওয়াশের জন্য নেওনের পথেই মারা গেলেন তিনি। আমাদের সকলরে অনুতপ্ত কইরা দিয়া এই গৃহবধু তার উদ্দেশ্যের দিকে গেলেন।
তো হাসপাতালে দেখি এক ছেলে আত্মহত্যা প্রচেষ্টার ওয়ার্ডে জায়গা না পাওয়ায় বারান্দায় শায়িত আছে। কতো বয়স ছিলো ছেলেটার? তার অশিক্ষিত মায়ের ভাষ্যে ৯ বছর। জোর কইরা মাদ্রাসায় ভর্তি করা হইছিলো তারে...কিন্তু ছেলের ভালো লাগতো বাংলা পড়তে...এর প্রতিবাদে সে কুলুঙ্গিতে রাখা কীটনাশকের বোতল চুপিসারে তুইলা নিয়া নদীর ধারে গিয়া ঢক ঢক একটানে পান করে। অনেক্ষণ পর খোঁজ পড়ে বালকের। আর তাই তার বাঁচামরা নিয়া সংশয়ে মা বইসা ছিলেন পাশে। ছেলেটারো মৃত্যু হইলো ঘন্টা খানেকের মধ্যেই।
এইরকম আরো কিছু দৃষ্টান্তমূলক ঘটনার দৃশ্যায়ণ করছিলাম সেই প্রামাণ্যচিত্রের জন্য। শিক্ষার্থী প্রামাণ্যচিত্র হিসাবে খুব খারাপ হয়তো হয় নাই। কিন্তু আত্মহত্যার কোন জোরালো কারণ আমরা খুঁইজা পাই নাই। যেই কারণে অমীমাংসিত এই বিষয়ে কোন জোরালো বক্তব্য ছিলো না সেই তথ্যচিত্রে...ছিলো না আত্মহত্যা নির্মূল বিষয়েও কোন বক্তব্য...আমি নিজে আত্মহত্যারে বিরোধীতা করতে পারি না সম্পূর্ণরূপে...তাই সেই খানে এনজিও ধর্মী কোন বক্তব্যও রাখি নাই। ফলতঃ বেশীর ভাগ মানুষই সেই ছবি বিষয়ে অনাগ্রহী হয় ২০০১'এর শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে এই ছবি দেখানো হইলে...
আমি প্রায় শ'খানেক মানুষের সাথে কথা হইলেও আত্মহত্যার কোন সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁইজা পাই নাই...আমাদের যা কিছু ছিলো সব অনেক হাপোথেটিক্যাল...
সুইসাইডের কোন কারণ নাই। তাও কেউ সুইসাইড করলে জানতে ইচছে করে প্ৃথিবী কি তাকে রাকহতে পারত। আট বছরের শিশু করলে আরো বেশী মন হয়।
কি কমু বুঝতাছি না। তবে শর্ট ফিল্মটা দেখার ইচ্ছা জাগলো। সিলেট মেডিকেলে আমি এক সপ্তাহ ছিলাম একবার। আমার পাশের বেডে একটা বিষ খাওয়া পোলা ছিল ৪ দিন। কি অমানসিক কষ্ট যে পাইছিল। এর মধ্যেও বার বার তার বন্ধুটারে গালি দিতেছিল তারে বাচাঁনোর অপরাধে(!)।
আত্নহ্ত্যা করে কি সমাধান হলো সব সমস্যা? পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়ে কি
বেঁচে যাওয়া গেলো? পৃথিবীর রং-রুপ-রস কি কিছুই বাকি ছিলোনা আর দেখার?
কে দেবে জবাব ?
সেটাই
রোবট ভাই!!! আপনি আর কিছু খুঁজে পাননি? আমার বাসায় আজকে সবাই কি খুশী, আমার প্রিয় মানুষটার সঙ্গে কথা বলার মাঝখানে দেখলাম এমন একটা পোস্ট,আমার কেমন লাগতে পারে?
আমি এসব নিয়েই লিখি। ম্ৃত্যু, সংগ্রাম, বেদনা, হতাশা, ব্যাধি।
ভাবুন ঐ বাবামার কথা। আপনার-আমার কেমন লাগবে, লাগছে ঐ চিনতা করবেন না।
সেটা চিন্তা করেই তো আরো বেশী খারাপ লাগছে। মনে আছে, ছোটবেলা রাগ করে আম্মুকে বলেছিলাম-আমি যখন মরে যাব, তখন তোমার খুব খুশী লাগবে, না? আম্মুর চোখে পানি দেখেছিলাম। মনে করিয়ে দিলেন সেই কষ্টের কথা।
মাত্র আট বছর? পৃথিবীটার কিছুই তো চেনা হয়নি পিচ্চিটার, তারপরও এতবড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো???
হুমম। সেই আর কি?
জাপানে মনে হয় এটা এখন বার্নিং ইস্যু, কৈশোরের গন্ডি পেরোতে না পেরোতেই তুচ্ছ কারণে আত্মহত্যা!
তুচ্ছ কি না জানিনা। মনে হয়, আমরা কেবলি দুরে সরে যাচ্ছি আমাদের প্রিয় মানুষদের কাছ থেকে। এমনকি একটি শিশুরও কেউ নেই যাকে সে মন খুলে কথা বলতে পারে।
আত্মহত্যার বিষয়টি সবার মাথায় থাকলে প্রতিরোধ কিছু একটা বের হতেও পারে......ভাল সাবজেক্ট রোবোট ভাই।
হুমম
কেন আত্মহত্যা করে , খুব জানতে ইচ্ছা করে আমার।
সেটাই
আশ্চরয এটুকু বয়সে আত্মহত্যার কথা মাথায় আসে কিভাবে
সেটাই। তাও গলায় দড়ি।
সেটাই, বোঝে কি ঐ বয়সে?
হুমম
এইটুকু বাচ্চা... ও জীবনমৃত্যুর কতোটুকুই বোঝে!
জানিনা। হয়ত বোঝে। হয়ত না।
নিরবতা।
আট বছরের বাচ্চা আত্মহত্যা করে..........অবিশ্বাস্য লাগে!! কি করে সম্ভব?
ওই বয়সী একটা বাচ্চার মাথায় আত্মহত্যা ব্যাপারটা মাথায় ঢুকিয়ে দেয়ার জন্য মিডিয়া কতখানি দায়ী? ভাল্লাগে না ভাবতে.........
...আমিও বুঝিনাই, আট বছরের ছেলে আত্মহত্যার মত দু:কহি হয়ই বা ক্যাম্নে, আর আত্নহত্যার কথা মাথায় আসেই ক্যাম্নে?...কি কমু আর?
সেটাই। কি বলবো বুঝিনা।
ভ্রাত, একদিন একটা খুশির লেখা দেন, দোহাই।
দিতে তো চাই।
আসলে এসব লেখা লিখি যদি আমাদের চোখকানমন একটু খুলে। তাহলে আর এসব পোস্ট লেখার বিষয় পাওয়া যাবে না
কাল রাতেই পড়েছিলাম.. মোবাইল দিয়ে তাই কমেন্ট করি নাই... সত্যি বলতে কমেন্ট করার অবস্থায় ছিলামও না... মাত্র আট বছরের একটা ছেলে, কই কমিকস আর কার্টুনের মাঝে থাকবে, সে কিভাবে এমনটা করতে পারে... ধুরো....
কারণটা আমার মনে হয় অনেকটাই আমাদের সময়... আমি নিজেই তো আমার ছেলেবেলার সাথে আর এখনকার ছেলে বেলার মিল পাই না.... এই সাত আট বছরে আমরা কি করতাম... একটা চাচা চৌধূরী কিংবা টিনটিনের জন্য আব্বার পিছে ঘ্যান ঘ্যান করতাম... বিটিভিতে ম্যাকগাইভার টাইপের সিরিজ দেখার জন্য সপ্তাহ ভর অপেক্ষায় থাকতাম... বিকেলগুলো বাসার সামনের মাঠে কাটাতাম... সন্ধ্যার আগে আগে ঘরে ফিরা, পড়ার টেবিল, জলদি জলদি ঘুমিয়ে পড়া....
এখন.... কোনো সিরিজের দরকার পড়লে ডাউনলোড... ফেসবুক থেকে মোবাইল... সাত আট বছরের বালকের সামনে দুনিয়ার কত নরম কঠিন রুপ ফুঁটে উঠে বলাই মুশকিল.... যেইসব হতাশা, অভিমানটা আমরা টিনেজে পার করেছি সেটা ছিলো যোলো সতেরো বছরে... আজকাল মনে হয় টিনেজ কালটা অনেক এগিয়ে গিয়েছে... কদিন আগে দশ বারো বছরের এক ভাগ্নীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে ব্যাপক হতাশা, দুনিয়া ছাড়ার আগ্রহ দেখে কমেন্টগুলোতে গিয়ে দেখি হের এক বালক বন্ধুর জন্য হতাশার সূত্রপাত... আদার ফ্রেন্ডস এর সান্তনা দেবার কমেন্ট দেখে সান্তনার চেয়ে আরও আশংকিত হলাম...
বাচ্চাকাচ্চাদের থেকে শৈশব কেঁড়ে নিয়ে আমরা ভালো করছি না খারাপ -- এটা হয়তো সময়ই বলে দিবে.... তবে এসবের দায় এড়িয়ে যাওয়া -- এটা তো আর পারা যাবে না... আট বছরের বাচ্চাটার বাবা মা কে কোনো জবাব দেওয়াও হবে না...
মানুষের মৃত্যু ও জনমের রহস্য জানলেই তো শৈশব হারিয়ে যায়। আমরা কি সেটা খুব সহজপ্রাপ্য করে দেইনা শিশুদের কাছে?
জীবন জটিলতর হচ্ছে শিশুদের কাছেও।
আট বছর। আমার মাথায় আসলে কোনো ভাবেই আসতেছেনা এইটা কেম্নে সম্ভব? এই বয়সে অন্য কিছু দূরে থাক, ছেলে মেয়ের পার্থক্যও তো বুঝতাম না। না জানি কি ভয়াবহ দুঃখ এই রকম ভয়ংকর একটা পরিণতির দিকে নিয়া গেল ঐ শিশুটাকে।
আপনার কয়েকটা পোষ্ট থাকার পরেও এই পোষ্ট দিয়ে শুরু করতে গিয়ে থমকে গেলাম পুরোপুরি। ভালো থাকবেন।

সেটাই। বুঝিনা ঠিক। শিশুদের শৈশব কেড়ে নেয়া বড় অন্যায়। আমরা ব্লগে কি লিখি সেটা সবসময় মাথায় রাখতে হয়।
বাকিগুলো পুরনো পোস্ট। সামুতে লেখা।
খুব খারাপ লাগল ।
জীবন এ এই কবিতা কত বার যে পড়েছি কলেজে থাকতে!
খুব খারাপ লাগত ।
এইবারের মত না
সেটাই।
এ্যাপারেন্টলি এ ঘটনা শোনার পর আমি স্বাভাবিকই আছি। পুরাপরি না। লেখার আগে-লেখার সময়-লেখার সময় বুঝলাম।
মন্তব্য করুন