বাবা
নিজের মতো, নিজের ইচ্ছায় বাঁচতে শিখেছি সেই ২০০৭ থেকে। নিজের উপার্জিত অর্থে নিজে চলতাম আর পড়ালেখা করতাম। মনে আছে তিনটা টিউশনি করতাম। মাস শেষে বেশ ভালোই কামাতাম। ভালোই চলে যেতো।
ছোটোবেলা থেকেই ঠান্ডায় কাবু। টনসিল, সাইনাস, মাইগ্রেন সবই ছিলো। এখনো আছে। কান ঢেকে বেড় না হলে ভয়াবহ সমস্যা হতো। কিন্তু স্বভাবসুলভ ঘাউড়ামি করে কখনই মাফলার ব্যাবহার করতাম না। মাঝেমাঝে কানটুপি ব্যাবহার করতাম।
আমাদের পরিবারের একজন মানুষ ছিলেন। যার সাথে আমার দূরত্বই বোধহয় সবচেয়ে বেশি ছিলো। কক্ষনো ফোনে বেশি কথা হোতো না। কল করলেই বলতেন, "নে তোর মা'য়ের সাথে কথা বল।"
জানিনা অত্যাধিক স্নেহ করতেন বলেই হয়তো সচরাচর বেশি কথা বলতেন না।
তবে শীত এলেই প্রতি সপ্তাহে অন্তত তিনবার কল করতেন। প্রতিবারই একটাই কথা, "মনা, কান গলা পেঁচিয়ে বেড় হইস তো?" কত যে মিথ্যা বলেছি, "হুম, বেড়হই"।
কত যে বিরক্ত হয়েছি!!!
আজ অফিস থেকে ফেরার সময় ঠান্ডা বাতাসে খুব সমস্যা হচ্ছিলো। কান ব্যাথা করছিলো। কানে যতটা না ব্যাথা তারচেয়েও বেশি ব্যাথা ছিলো মনে। শুধু মনেহচ্ছিলো, ইশ এখন আর কেউ বলেনা, কক্ষনো বলবে না। এখন আর কেউ আমার ঠান্ডা লাগার চিন্তায় সপ্তাহে তিন-চারবার কল দিবেনা। কেউ বলবে না কক্ষনো, "একটা মাফলার কিনে নিস।"
আমার পরিচিত অনেকেরই বাবার সাথে অনেক সুখস্মৃতি আছে। আমার নেই। আমি তথাকথিত সেকেলে বাবার ছোটো ছেলে। যে কক্ষনো বাবার কোলে চড়ে মেলায় গিয়েছিলো কি না, মনে করতে পারেনা।
আমার কাছে বাবা অর্থ একটা বটগাছ। বিশাল বটগাছ। যার ছায়ায় আমি পার করেছি আমার শৈশব কৈশোর। কিন্তু মর্ম বুঝেছি ছায়াটি নেই হবার পরে। এটা আমার আজন্ম আফসোস। অসম্ভব অপূর্ণতা। বাবার স্নেহ বা ভালোবাসা বলতে আমি এগুলোই বুঝি। শুধু বুঝি বললে ভুল হবে। আসলে অনুভব করি।
দেখতে দেখতে দুটি বছর চলে যাচ্ছে বাবার ছায়া বঞ্চিত আমি। প্রতি মুহূর্তে খুঁজে ফিরি সেই প্রিয়মুখ। জানি কারো বাবাই চিরকাল থাকেনা। তবুও মাঝেমাঝে চিতকার করে বলতে ইচ্ছেকরে "বাবা কতদিন কতদিন, দেখিনা তোমায়"।
শুধু একটাই প্রত্যাশা, তিনি যেখানেই থাকেন শান্তিতে যেনো থাকেন।
ননসেন্স,মনে হয় আপনার মত আমিও একটা ননসেন্স, তাই বলি মাত্র দু বছরেই এত কষ্ট। যত দিন যাবে যত কষ্ট পাবেন বাবার স্মৃতি সেটাকে অনেক অনেক গুন বাড়িয়ে দেবে। আর আপনার যদি সন্তান থেকে থাকে তখন ওদের ভাল বা মন্দ হলে যে অনুভুতি হবে তা বাবার উপর প্রতিফ্লিত করে দেখবেন। দেখবেন, কেমন দগ্ধ করে। কিন্তু আমরা ত আর নিয়তির বাইরে যেতে পারব না। প্রত্যেক প্রণীকেই তাঁর মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহ্ আপনাকে বাবার সুখ সহ্য করার শক্তি দিন।
বাবারা কেনো চিরকাল বাঁচেনা ???
তিনি যেখানেই থাকেন শান্তিতে যেনো থাকেন।
হুম, এই একটাই প্রত্যাশা
বাবার কথাই মনে পড়ছে
অনেক সুন্দর লেখা। ভাল লাগল
১৯ বছর...
~
মন্তব্য করুন