ইউজার লগইন

কা্বজাব - ২

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড এই কথাটার সাথে আমার চরম দ্বিমত আছে। শিক্ষা আমাদের সমাজকে কি দিচ্ছে? কিছু শিক্ষিত দুর্নীতিবাজ আর কিছু শিক্ষিত অমেরুদন্ডী প্রানী এবিং কিছু শিক্ষিত মূর্খ। এই যে শিক্ষিত তাকমা লাগিয়ে কিছু অমানুষ বের হচ্ছে এদের পিছনে সমাজ , পরিবেশ পরিস্থিতি দায়ী অনস্বীকার্য। কিন্তু যাদের মানুষ গড়ার কারিগর বলি তাদের কি কোন দায়বদ্ধতা নেই?

আমি যখন স্কুলে পড়ি একজন মহান (!) শিক্ষক ছিলেন নাম লুৎফর রহমান। বিষয় ছিলো বাংলা দ্বীতিয়পত্র। আমি বাংলা দ্বীতিয়পত্র ভয়াবহ ধরনের ভয় পেতাম। আমার দুঃস্বপ্ন ছিলো বলা চলে। তবে স্কুল পর্যন্ত সমস্যা হয়নি। ভদ্রলোকের ক্লাস ছিলো ৩৫ মিনিটের। এরমধ্যে তিনি ২০ মিনিট দেরীতে আসতেন। পাচঁ মিনিট চলত রাজনৈতিক আলাপ, পাচ মিনিট পড়াতেন এবং পাচ মিনিট আগেই ছেড়ে দিতেন। এমন ফাকিবাজীর নজির হাজার হাজার। পরীক্ষার খাতায় সমস্যা হত না কারন যত বড় লেখা তত বেশি মার্কস। জীবনে কেউ সারাংশ আট পৃষ্ঠা লেখেছেন কিনা জানি না কিন্তু আমাদের লেখতে হত। কারন চার লাইনের সারাংশতে দশে ১ বা ১.৫ এর বেশি মিলত না।
সে যাক এমন উদাহারন প্রতিটা স্কুলে আছে বলেই আমার ধারনা। এই ভদ্রলোকের কথা কেন টেনে আনলাম সে কথায় আসি । এক বন্ধু, বর্তমানে আম্রিকা প্রবাসী, এই ভদ্রলোক তাকে দেখতেই পারত না এক সময়। হঠাৎ জানা গেলো তিনি যেই এলাকার সেই এলাকার তার রাজনৈতিক মতাদর্শের দলের থানা সভাপতি সেই ছেলের মামা। পরের দিন লজ্জাহীনের মতন তিনি ক্লাসে এসে সেই ছেলেকে বললেন আরে বাবা তুমি উনার ভাগিনা আগে বলবা না? তুমি তো আমারও তবে ভাগিনার মতই। এখন থেকে আমাকে মামাই ডেকো। আরো অবাক হয়ে আবিস্কার করলাম তিনি ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে নিজে এসে সেই বন্ধুকে হোস্টেল থেকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক জনাব বদিউজ্জামান সাহেব, আমার বাবার বন্ধু। আমার দুষ্টামী ও বাদরামীর কথা শুনে মানুষ করার জন্যে আমাকে তার স্কুলে ভর্তির কথা তিনিই আমার বাবাকে বলেন। যেদিন থেকে তার ছাত্র আমি তিনি আমার বাবার পয়সায় এক কাপ চাও খান নি। বাবাকে বলেছেন আরে তুমি আমার ছাত্রের বাবা এখন তোমার থেকে কিছু খাওয়া নৈতিক ভাবে ঠিক না। লুৎফর স্যারের সেই ব্যাবহার আর আমার প্রধান শিক্ষক মহোদয়ের নৈতিক হিসাব তখন লিমানে পারতাম না। সেই হিসাব আজ মিলাতে পারি। একজনের কথা ভেবে গর্বিত হই আরেকজনের কথা ভেবে লজ্জিত হই, কুন্ঠিত হই। কিন্তু কিছু বলতে পারি না কারন আমিও এক শিক্ষিত মেরুদন্ডহীন।

এই লুৎফর স্যারেরই আরেক ঘটনা। আমরা তখন টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছি। ক্র্যাস ক্লাস শুরু হবে। ক্লাস রুটিন হলো প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা। ৪০ মিনিট করে এগারো বিষয় প্রতিদিন ক্লাস। স্বভাবই অনেকের ভালো লাগেনি। এদের মাঝে আমাদের ক্লাসের ফার্স্টবয় তৌফিকও ছিলো। সে লুৎফর স্যারের প্রেরনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আন্দোলনের হোতা হয়ে গেল হেডস্যারের কাছে। তিনি জানালেন তার স্কুলে এই নিয়ম সব সময় চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে। তৌফিকের ভালো না লাগলে সে স্কুল ছেড়ে দিতে পারে। পরের ক্লাস ছিল লুৎফর স্যারেরই। তিনি ক্লাসে চলে এলেন সেদিন সাথে সাথেই। এসেই তৌফিকের সাথে বিস্তারিত আলোচনা। সব শুনে বললেন তুমি স্কুল ছেড়ে দাও, এরপরে এইটা নিয়ে আমরা শিক্ষকরা আন্দোলনে যাবো। আমি তোমার জায়গায় হলে ছেড়ে দিতাম। খুব বেশি হলে এক বছর না হয় যাবে কিন্তু তুমি বড়ো নেতা হতে আপ্রবা। আচ্ছা এই স্যারের কি তখন মাথায় ছিলো আর চার মাস পর এই ছেলের এসএসসি পরীক্ষা? একবারও ভেবেছিলেন কি এই ছেলের ক্যারিয়ারে কি হতে পারে? হিসাব তখন না মিললেও আজ মেলাতে পারি।

লন্ডনে অনেকেই আমার কাজিন নোমানকে দেখেছেন। সব সময় হাসিখুশী একটা ছেলে। একদিন খুব গম্ভির ভাবে আমার বিছানায় এসে বসল। জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে। কিছুক্ষন গুম হয়ে থেকে বলল, তার কলেজের এক টিচারকে সে ফোন দিয়েছিল তখন তিনি বলেছেন যদি টয়লেট ক্লীনের কাজ পাও করবা । বললাম খারাপ কিছু তো বলে নাই। তখন জানা গেল আসল কাহিনী। এই শিক্ষক মহোদয় বলতেন “ মেথরের কাজ করবা? এই গুলা ছোটলোকের কাজ।“ ইত্যাদি । এখন সেই ভদ্রলোক এগুলো বলেছেন কারন লন্ডনে যে মেথরের কাজেও অনেক টাকা। নোমান খুবমন খারপা করে বলল “ ভাই টাকা বেশী হইলেই কি গু হীরা হইয়া যায়? মেথরের কাজ ফার্স্টক্লাস জব হইয়া যায়?” উত্তর দিতে পারিনি। কারন যাকে জানি মানুষ গড়ার কারিগর হিসাবে তারই হিসাবে যে গড়মিল।

এই শ্রেনীর লোকগুলাকে আমি ডাকি শিক্ষিত মূর্খ। এদের থেকে শিক্ষা পাওয়া ছাত্ররা যে হয় শিক্ষিত দুর্নীতিবাজ বা শিক্ষিত মূর্খ হবে আমার কোন সন্দেহ নাই। যেই শিক্ষা শিক্ষিত দুর্নীতিবাজ বা শিক্ষিত মূর্খ তৈরি করে বা তৈরি হয় শিক্ষিত মেরুদন্ডহীন সেই শিক্ষা একটা জাতির কি মেরদন্ড হবে আমার বুঝে আসে না। যেই শিক্ষকের ঘরে তার কাজের লোক নির্যাতিত হয়, স্ত্রী পেটান যেই শিক্ষক, যেই শিক্ষক রাজনৈতিক উচ্চকাংক্ষার জন্যে ব্যাবহার করেন কোন ছাত্রকে তারা জাতির কোন মেরদন্ড গড়বেন?

নাহ, লেখতে বসে অসম্ভব মেজাজ খারাপ লাগছে। আলস্যও জেকে ধরেছে, তাই এখানেই সমাপ্তি।

পোস্টটি ৯ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

জ্যোতি's picture


এত ক্ষোভ কেনো জমা হলো?মাথা ঠান্ডা করেন। ভালো থাকেন। প্রেম বিষয়ক লেখছিলেন যে ওইটার পরের কাহিনী কই?

টুটুল's picture


কয়দিন আছো দ্যাশে?

মুকুল's picture


দেশে এখন সেইরাম গল্পের মত শিক্ষক খুবই কম!

ভাঙ্গা পেন্সিল's picture


আমাদের স্কুলটাকে মোটামুটি দেশসেরা স্কুল বলা যায়। সে স্কুলে এক ইংরেজি স্যার ছিল, ভয়ংকর। তার শাস্তির বেশিরভাগই রক-ট্রিপলএইচ-স্টিভঅস্টিনরাও দিতে সাহস করবে না। আমরা তখন সিক্সে, আতংকে জমে যেতাম। নিতান্তই ইংরেজি ভাল পারতাম বলে রক্ষা...তবে আমার মতো সৌভাগ্যবান ৫০জনের ক্লাসে দু-তিনজনের বেশি ছিল না। বছর না ঘুরতেই স্যার চলে গেল, অন্য ইংরেজির স্যার আসায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। পরে খবর বের হলো...বৌ খুনের অভিযোগে স্যার পলাতক, উনি বৌকে জবাই করছিলেন।

তানবীরা's picture


শিক্ষক নিয়ে কিছু বলপো না, নারুদা রাগ করবেন Crazy

নুশেরা's picture


শিক্ষক নিয়ে কিছু বলপো না Puzzled

নীড় সন্ধানী's picture


ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় আমি স্কুলের শিক্ষককেই এখনো পর্যন্ত ভালো পেয়েছি, কলেজের শিক্ষককে দুবছরে চিনতেই পারিনি, আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ লোপ পেয়েছিল। (নিজের ডিপার্টমেন্টে)

মাহবুব সুমন's picture


লেখাপড়া শিখলেই শিক্ষিত হলেই মানুষ হওয়া যায় না

ছায়ার আলো's picture


স্কুলের এক স্যারের অনেক সুনাম শুনে তার কাছে পড়তে গেসিলাম...পড়ার দ্বিতীয় দিনে খাতায় মার্জিন টানি নাই বলে আমার খাতা জানালা দিয়ে ছুরে ফেলে দিসিল...আমি তখন ক্লাস ফোর কি ফাইভে পড়ি। সামনাসামনি কোন প্রতিবাদ করি নাই, কিন্তু ঐ দিন থেকে স্যারের ছায়াও দেখতে পারতামনা...

১০

শওকত মাসুম's picture


আমি দুধরনের শিক্ষকই পেয়েছি। চরম ভাল, চরম খারাপ।
আর আমার বাসায় একজন শিক্ষক আছে। তার ভয়ে আমার হাত পা.........

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.