ইউজার লগইন

এম্নেই ৮

ঠান্ডা লাগছে ভালোমতন। এই কারণে কয়েকদিন বাইর হইনাই ঘর থেইকা। গত পরশু মন বিদ্রোহ ঘোষণা কইরা বসলো, সে বাইরে যাবেই...তাই আমি আরো দুইজনরে পটাইয়া সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রওনা দিলাম বইমেলায়...সঙ্গীসাথী আমাকে নিরুৎসাহিত করার ব্যাপক চেষ্টা চালাইল, ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী, সরকারী ছুটির দিন, মেলায় নাকি ঢুকতেই পারবনা, কিন্তু আমি গোঁ ধৈরা বৈসা রইলাম, আমি যামুই, মেলায় ঢুকতে না পারলে টিএসসিতে চা খাইয়া ফেরত আইসা পড়ব...কিন্তু যাইতে হবেই। তো যাইতে যাইতে দেখি এলাহী কাজকারবার...ঢাকা শহরের বিয়া, যেইদিকে তাকাই সেইদিকে লাল-নীল-বেগুনি-হলুদ-সবুজ-সাদা রঙের মরিচ বাত্তি জ্বলজ্বল করতেছে। ছোটকালে মরিচ বাত্তি অনেক আগ্রহের জিনিস ছিল, বিয়া বাড়িতে গেলে আমি মরিচ বাত্তির দিকে ঘন্টার পর ঘন্টা হা কইরা তাকায় থাকতাম। দিনে দিনে সেই মরিচ বাত্তি ছোট হইতেছে, সেই ছোটবেলার বোম্বাই মরিচ সাইজের ভোম্বল মরিচ বাত্তি আর নাই, এখন ঢাকা শহরে লেটেস্ট আমদানি মিনি মরিচ বাত্তি, দুনিয়ার কোনো মরিচের সাথেই এর মিল নাই। একজন কইলো এইগুলির নাম নাকি 'কুল লাইট' কারণ এইগুলা নাকি রাতদিন জ্বললেও গরম হয়না, সবসময় ঠান্ডা থাকে। আর তাদের রংগুলাও বেশ ফিউচারিস্টিক, বিশেষ কইরা নীল আর সাদা বাত্তিগুলা দিয়া সাজানো কিছু দেখলেই আমার মনে হইতে থাকে এই শহরে ইউএফও নাইমা আসছে। যাই হোক, এই মটরশুটির দানার সাইজের বাত্তির পাওয়ার মাশাল্লাহ কম না, সেপ্টেম্বর-এ ফেরার পর থেইকা বিয়াবাড়ি আর দোকানে এই বাত্তি দেখতে দেখতে ভাবতাম এইবার মনে হয় আমার চশমা নিতেই হবে, কিন্তু বিশ্বকাপ উপলক্ষে যেই পরিমান বাত্তি চারপাশে ঢাকার শোভাবর্ধন করতেছে তাতে আমার ধারণা একমাস পর আমি আর চোখেই দেখতে পামুনা। শেরাটন হোটেল-এর তো পুরা ঝাকানাকা অবস্থা, সামনের দিকের লাল, নীল আর সাদা রঙের বাতি দেখলে হঠাৎ আম্রিকার পতাকা বৈলা ভ্রম হয়। আর সোনারগাঁওএর সামনে গাছগুলা দেখলে মনে হয় বিদেশে আছি, সামনেই ক্রিসমাস। কপাল ভাল এখনো গরম পড়ে নাই, এই বাতি জ্বালাইতে গিয়া কত লোডশেডিং হইত কে জানে!

কালকে বন্ধুর বাসায় ছিলাম। বৈসা বৈসা টিভিতে দেখলাম উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। জাতীয় সংগীতটা মিস করছি, কিন্তু অর্ণব/মিলা/বালাম আরো দশ বারোজনের গানটা শুইনাই পুরা ফিদা হইয়া গেলাম! রিক্সায় কইরা ক্যাপ্টেনদের মাঠে নেয়াটা জটিল লাগছে, সবচেয়ে মজা পাইছি রিক্সাওয়ালাগুলারে দেইখা, খুশির সীমা নাই Smile ...বক্তিমা যখন শুরু হইলো তখন আরেক বিনোদন, কে কত তেল দিতে পারে তার প্রতিযোগিতা শুরু হইলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বৈলা গলা কাঁপাইতে কাঁপাইতে একেকজন জেরবার...এর মধ্যে হঠাৎ দেখি শেখ হাসিনা একটা কাগজে কি জানি লিখতেছে, দেইখা বন্ধুর বুঝদার মন্তব্য, 'মার্কস দিতেছে মনে হয়'! তেল দেয়ার প্রতিযোগিতা ছিল উত্তেজনায় টানটান, একজন অতি আবেগে বৈলা ফেলল 'সাড়ে তিনশ পঞ্চাশ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ', আরেকজন দুইবার কইলো 'ওয়ার্ল্ড কাপ টু জেরো জেরো ওয়ান' আর একবার কইলো 'ওয়ার্ল্ডস লার্জেস্ট ম্যাঙ্গো ফরেস্ট'! ফেইসবুক-এ একজনের সাথে কথা হইতেছিল এইটা নিয়া, সে কয় 'চিন্তা করিসনা, কেউ ওগো ইংলিশ বুঝেনাই'! অনুষ্ঠানটা খারাপ লাগেনাই, বেশ দেশপ্রেমিক চেতনা জাগ্রত হইয়া গেল। আবেগটা খারাপ লাগেনা মাঝে মাঝে।

কালকে রাত্রে দেখলাম 'the king's speech'। অনেকদিন পর একটা অনেক ভালো লাগার মত ছবি দেখলাম। ছবিটা নিয়ে অনেক সমালোচনা হইছে, ছবিতে যেই ইতিহাস দেখানো হইছে ঐটা অনেক রং চড়ানো, আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে সোজাসুজি মিথ্যা। কিন্তু সমালোচকরা ছবিটারে ছবি হিসাবে ভালো বলতেছে, ছবি হিসাবে খারাপ লাগার কোনো কারণ নাই, আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি রাজার নিজের ব্যক্তিগত যুদ্ধ আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দুইটা পাশাপাশি রেখে যেভাবে কাহিনী আগাইছে সেইটা দেখে। আর কলিন ফার্থ এত ভালো কাজ করছে, ওর তোতলানো দেখে আমার মনে হচ্ছিল আমি নিজেই মনে হয় তোতলাচ্ছি! (যদিও সমালোচকরা বলে আসল রাজা এত তোতলাইতোনা, কিন্তু ছবিরে ছবি হিসাবেই দেখা ভালো, ডকু হইলে ভিন্ন কথা)।

আজকে মানুষের আনন্দ দেখতে বাইর হইছিলাম রাত্রে। মিরপুর পৌছাইলাম রাত ১১টায়, লোকে লোকারণ্য। এত আনন্দ দেইখা একটু ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়া গেলাম, স্টেডিয়ামের চারপাশে হাজার হাজার মানুষ, রাত যত বাড়তেছে গাড়ি, ট্রাক, মটর সাইকেলে কইরা আরো আরো মানুষ যোগ দিতেছে! বুড়া-বুড়ি, গ্যান্দা-গেন্দি সব 'হৈ হৈ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ' করতে করতে হাজির! মানুষের আনন্দ দেখলে ভালো লাগে...ঢাকার মানুষের আনন্দের উপলক্ষ খুব কম, দিন যায় ট্র্যাফিক জ্যাম-এ একজন আরেকজনের সাথে খিটিমিটি করতে করতে, তাই কোনো একটা উপলক্ষ পাইলেই সবাই ধামাদ্ধাম রাস্তায়। তবে ভুভুজেলা জিনিষটা সাউথ আফ্রিকার ওয়ার্ল্ড কাপ দেখার সময় টিভির মধ্যেই প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে, এখন সেই মূর্তিমান ভুভুজেলা কানের কাছে। প্রতি তিনজনের একজনের কাছে এই বিকট বস্তুটা, এবং যার কাছে এইটা আছে সে বিরামহীনভাবে এইটা নিয়া প্যাঁপোঁ করেই যাইতেছে। নানান আকৃতির নানান রকম শব্দের ভুভুজেলা অবলোকন এবং শ্রবণ দুইটাই করে আসলাম, আধা ঘন্টার মধ্যে মাথা এবং কান দুইটাই টনটন করতে লাগল। সাথে থাকা বন্ধু জানাইল বিশ্বকাপ উপলক্ষে চায়না থেইকা বিশাল লট আসছে এই প্লাস্টিকের কর্ণবিধ্বংসী যন্ত্রের। আমি কইলাম চায়না থেইকা আমদানি করা লাগলো ক্যান এইটারে? আমাদের তো ডুগডুগি আছে, ঐটা এই উপলক্ষে বানাইয়া বিক্রি করত, দেশের টাকা দেশেই থাকত। আর তাছাড়া ডুগডুগি জিনিসটার আওয়াজ-ও তো আর কম বিকট না, ভুভুজেলা আর ডুগডুগি দুইটাই সমান বিরক্তিকর কানফাটানো আওয়াজ উৎপাদনকারী বস্তু, তাইলে ডুগডুগি না ক্যান?

বাসায় ফেরার আগে ঢুকলাম এক জায়গায় খাইতে, দারোয়ান প্রথমে খ্যাদায় দিছিল দোকান বন্ধ বৈলা, পরে আবার নিজেই ডাইকা আনলো...খোলা নাকি! খাইতে খাইতে শুনি পাশের টেবিলে কয়েকটা ছেলে আলাপ করতেছে বাংলাদেশের জেতার সম্ভাবনা কদ্দুর সেইটা নিয়ে। বন্ধু চিন্তিত আমরা এইরকম আবেগহীন হয়ে গেছি, আগে খেলা নিয়ে কত উত্তেজিত থাকতাম, এখন আর কিছুই গায়ে লাগেনা। রাত একটায় বাসায় ফিরতে ফিরতে আমিও ভাবতেছিলাম, নিরপেক্ষ এ্যাকাডেমিক হওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করতে গিয়া আসলেই একদম নিজস্ব কিছু ব্যাপার ছাড়া মোটামুটি আবেগহীন হয়ে গেছি। দেশপ্রেম মার্কা বড় আবেগগুলা যদি একটু মনকে ছোঁয় সেটা ঘুমাবার আগ পর্যন্তই থাকে। ঘুম থেকে উঠলে আর থাকেনা।

পোস্টটি ৭ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

তানবীরা's picture


দেশপ্রেম মার্কা বড় আবেগগুলা যদি একটু মনকে ছোঁয় সেটা ঘুমাবার আগ পর্যন্তই থাকে। ঘুম থেকে উঠলে আর থাকেনা।

ইউপ

বাতিঘর's picture


দিন দিন আপনার লেখার ভক্ত হয়ে যাচ্ছি Love ফটুক তুলেন নাই? দুই-একটা দিতেন, দেখতারতাম সান্তনা শুভেচ্ছা জানবেন।

নুশেরা's picture


ঘরে বাচ্চাকাচ্চা থাকলে বুঝতেন ভুভুজেলার যন্ত্রণা কারে কয়, মাথামুথা পুরা শ্যাষ!

মাহবুব সুমন's picture


Smile

জেবীন's picture


সাজুগুজু দেখতে গেছেন, আর ছবি তুলেন নাই?...  জলদি ছবি দেন...  Smile

নীড় সন্ধানী's picture


এরকম বর্ণনাগুলো প্রামান্যচিত্র দেখার সুখ দেয় Smile

নাজ's picture


অনুষ্ঠানটা খারাপ লাগেনাই, বেশ দেশপ্রেমিক চেতনা জাগ্রত হইয়া গেল। আবেগটা খারাপ লাগেনা মাঝে মাঝে।

সহমত!

আমাদেরও ঢাকা শহর ঘুরতে যাওয়ার প্লেন আছে, দেখা যাক কি হয় Smile

টুটুল's picture


প্লেন? Shock

ভাস্কর's picture


আমার প্লেনটা বিজয় সরণীর মোড়ে ফালাইয়া থুইছি.ঐটা মনে হয় ধার নিতে চাইছে নাজ...

১০

নাজ's picture


Big smile

১১

ঈশান মাহমুদ's picture


Rolling On The Floor

Rolling On The Floor Rolling On The Floor Rolling On The Floor Rolling On The Floor

১২

ঈশান মাহমুদ's picture


সাড়ে তিনশ পঞ্চাশ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ', আরেকজন দুইবার কইলো 'ওয়ার্ল্ড কাপ টু জেরো জেরো ওয়ান' আর একবার কইলো 'ওয়ার্ল্ডস লার্জেস্ট ম্যাঙ্গো ফরেস্ট'!

Rolling On The Floor Rolling On The Floor Rolling On The Floor Rolling On The Floor

১৩

মীর's picture


খেলা দেখসি অনেক মজা করে। ছবির হাটে গেটের ওপর বসার যে জায়গাটা আছে সেখানে বসে বসে। ভুভুজেলা ছিলো, এক ধরনের বেলুন বের হয়েছে। লম্বা আর দুইটায় বাড়ি দিলে ঠন ঠন ধাতব শব্দ হয়। সেগুলো ছিলো। সাকিব একেকটা চার মারে আর এমন হৈ-চৈ, চিল্লাচিল্লি, প্যাঁ-পু শুরু হয়, যে টেকাই মুশকিল। যদিও শেষ পর্যন্ত হারতে হয়েছে, তবে বাংলাদেশের লড়াকু মনোভাব ভালো লেগেছে।

১৪

সাহাদাত উদরাজী's picture


'ওয়ার্ল্ডস লার্জেস্ট ম্যাঙ্গো ফরেস্ট'! কথাটার জনকের নামটা যদি বলেন খুশি হব। আমিও শুনেছি, কিন্তু স্মরণ করতে পারছি না। আহাদ আলী, মাল আবুল নাকি সিএমসি!

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.