আমার পুলাপান বেলা ১.১
আমরা দুই ভাই, বড় ভাই আমার চেয়ে দুই বছরের বড়। যার কারনে আমার ছুটো বয়সের সব কিছুই দুই বছর আগে আগে ঘটছে। যেমন ধরেন অ আ পড়া A B C D পড়া আলিফ বা তা সা পড়া ইত্যাদি। আবার যেমন ধরেন আমাদের দুই ভাইয়ের মুসলমানি এক সাথেই হইছে। মানে ভাইয়ার তখন মুসলমানির বয়স হইছে তাই সেইটা ঠিক আছে কিন্তু ফ্রীতে আমি দুই বছর আগেই মুসলমান হইয়া গেছি
সেই ছোট বয়সে একদিন আমার দাদা আম্বরশাহ মসজিদ থিকা এক হুজুর নিয়োগ দিলেন আমাদের আরবী পড়ানির জন্য। সেই হুজুরের নাম ছিলো 'বড় চানপুইড়া হুজুর' (বলা বাহুল্য উনার পৈত্রিক বাড়ি চাঁদপুরে ছিলো) তিনি বেশ রাশভারী লোক ছিলেন, সেই হুজুরকে আমার বেশ পছন্দ হইলো। চিকন একটা বেত নিয়া প্রতিদিন ভোরে তিনি আমাদের দুই ভাইকে পড়াইতে আসতেন, তবে তিনি সেই বেত আমাদের উপর কখনো প্রয়োগ করেন নাই, শুধু ভয় দেখাইতেন। উনার মুখে সব সময় পান এবং বেশ সুন্দর গন্ধওয়ালা জর্দা খাইতেন, সেই সুঘ্রান আমার খারাপ লাগতো না। আমার দাদীও পান খাইতেন পান খাইতে খাইতে তিনি সন্ধ্যায় উঠানের কোনায় বসে শচীন দেব বর্মন গাইতেন ..... 'কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া', তবে আমার দাদীর মুখের পানের ঘ্রান ছিলো পৃথিবীর সব চাইতে বড় সুগন্ধি।
'বড় চানপুইড়া হুজুর' কয়েকদিন আমাদের দুই ভাইকে পাঠদান করানোর পড় এক আজব পরামর্শ দিয়া বসলেন, তিনি আমার দাদাকে বুঝাইলেন যে উনি আমাদের রোজ বেশি সময় দিতে পারেন না কারন উনার মাদ্রাসায় পড়ানোর তাড়া থাকে এবং এতে করে আমাদের শিক্ষার গতি বেশ কম হয়ে যাচ্ছে, আমরা যেন মসজিদে গিয়া উনার নিকট থিকা শিক্ষা গ্রহন করি। আমার দাদা এক কথাতেই রাজি হইয়া গেলেন এবং আমাদের দুই ভাইকে মসজিদে নিয়া আসার জন্য লোকও নিয়োগ দেয়া হইলো। আমরা দুই ভাই উৎসাহের সাথে মসজিদে আরবী শিক্ষা গ্রহন করতে যাওয়া শুরু করলাম।
আমি অবাক হইয়া খেয়াল করলাম 'বড় চানপুইড়া হুজুর' মাদ্রাসায় যাবার পর থেকেই আমাদের 'তুই, তুই' করে ডাকা শুরু করলেন, এতদিন উনি আমাদের বাসায় যখন পড়াতেন আমাদের 'তুমি' করে ডাকতেন। এবং একই সাথে উনার চিকন বেত বাকি ১৫-২০ জন বাচ্চা-কাচ্চার সাথে আমাদের পিঠেও পড়তে লাগলো। তবে আমি সবচাইতে অবাক হইছিলাম উনার আরেকটা কথায়।
আমরা ছোটবেলা থেকেই জানি যে আমাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর, এবং এটা বেশ গর্ব করেই বলতাম যে - 'আমাদের বাড়ি চাঁদপুর সেখানে আমার এক জ্যাঠা আছেন যে আমাদের অনেক আদর করেন'। যদিও তখনও আমি চাঁদপুর যাইনি। সত্যি কথা হচ্ছে আমার সারা জীবনে আমি চাঁদপুর গিয়েছি ৫ বার, সে ভিন্ন কাহিনী।
'বড় চানপুইড়া হুজুর' একদিন কথা প্রসংগে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন -
- তোগো বাড়ি চানপুর পুরান বাজার তাই না?
- জ্বী হুজুর
- পুরান বাজার কুনখানে?
আমি বেশ উৎসাহের সাথে বড়দের মুখে বহুবার শোনা ঠিকানাটা গড় গড় করে বলে গেলাম,
- পুরান বাজার, লোহার পুলের পাশে
- তোগো বাড়ির চাইরপাশে তো খালি হিন্দু আর হিন্দু ... সকাল হইলেই লুকাইয়া হিন্দু বেটিগো গোসল দেখস তাই না ??
বলেই তিনি খুব বিশ্রীভাবে উনার খয়েরী রঙের দাঁত বের করে হাসতে লাগলেন, হাসির দমকে উনার কাঁধ কাঁপতে লাগলো, উনার সাথে সাথে আশে পাশের কয়েকটা ছেলেও হেসে উঠেলো। আমি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলাম এবং উনার কথা শুনে প্রথমেই আমার মনে যে ব্যাপারটা মনে হয়েছিলো যে আমাদের গ্রামের বাড়িটা মনে হয় খুব পঁচা-নোংরা একটা জায়গায়, এবং সেই অপমানে আমার চোখে পানি চলে এসেছিলো।
সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানি যে আমাদের খুব বেশিদিন মসজিদে গিয়ে পড়তে হয়নি, এরপর আমাদের এক ভাড়াটিয়া ভদ্রলোক আমাদের আরবী শিক্ষা দিয়েছিলেন। সে আরেক ইতিহাস ...
এখানে আমার খুব প্রিয় একটা কোট শেয়ার করতে চাচ্ছি উক্তিটা কার জানি না তবে কথাগুলো আমি শতভাগ বিশ্বাস করি -
Your beliefs don't make you a better person, your behavior does
এইসব কি লিখছো? তাগো তালিকায় তোমার নাম উঠবো। তয় মোসলমানি করাইছো বইলা বাঁইচা যাইতো পারো।
অনেকদিন পর বিমার লেখা। সুস্বাদু। চালাইয়া যাইও
বেশ ভয়ে আছি মাসুম ভাই। আর ভয় দেখাইয়েন্না
'আমরা বন্ধু' ব্লগ কতৃপক্ষের কাছে কি আমার নাম ঠিকানা আছে? থাকার তো কথা না
নাম ঠিকানা না থাকলে তো নির্দোষ মডুরে ধরপে । দোয়া দৃরুদ পড়বা সবসময়।
কিন্তু ব্লগের মালিক তো শুনছি অস্ট্রেলীয়াতে থাকে
আমি মালিক না
অনেকদিন পর বিমার লেখা। পড়ে মজা পাচ্ছিলাম তবে শেষে এসে মনটা খারাপ হয়ে গেলো । দুর্ভাগ্য যে অসভ্যকে অসভ্য বলার স্বাধীনতাও আর নাই ।
সেই হুজুরের সেই নোংরা হাসিটা মনে হয় আমি কোন দিন ভুলতে পারবো না
আপনারে আর কেউ বাঁচাইতে পারলো না। লিস্টে নাম উইঠা গেছে।
হুজুররা সব কেনও জানি এরকমই।
ম্যাচ না খেললেও আপনার লেখার ফর্ম এখনো দারুন!
হ, আমি বিরাট মাপের লেখক, আমার নামে একটা ফেসবুক ফ্যান ক্লাব খুলুম চিন্তা করতাছি
ফ্যাক ক্লাব - ভুলে "ই" দেও নাই মনে হয়
আমাদের দেশের হুজুরগুলা আসলেই জানি ক্যামন।
প্রায়ই মিলাদ টিলাদে এমন সব কথা বলা শুরু করে...মুরুব্বিদের মাজখানে মুখ লুকায়া হাসাও কঠিন হয়ে যায় হাহা
বাই দা ওয়ে মেলাদিন পরে লগিন করলাম... আমার আইডি এখনো অ্যাক্টিভ আছে দেইখা ভাল্লাগতেসে
আর এই টাইপের লোকজন যখন মুখ খুলে তাদের রসালো কথা শুনতে লোকজনের ভিড়ও কম হয় না
নাম ওঠেনাই লিস্টে, ভালো আছো। আবার ভেজাল কইরা নাম উঠাইতে চাও কেন?
' আস্তাগফিরুল্লা '
আগেই তওবা পইড়া নিলাম।
যাদের কাছে ইসলামের শিক্ষাসমুহ ভালভাবে পাওয়ার কথা
ইসলামের ইমেজ নষ্ট করার শুরুটাই দেখতে হয় তাদের কাছে,
এটা ভয়ঙ্কর হতাশার একটা ব্যাপার।
আমারও নাম নাই... লিস্টি দেইখ্যা এট্টু হতাশই হৈলাম

বিমা, অসেকদিন পরে... আছো কিরাম
আছি ভাল মেজবাহ ভাই।
মসজিদে ডাকছে এইটুকুনু পড়েই আতকে উঠছিলাম
ভালো - খারাপ দুইরকমেরই হুজুরের দেখা পাইছি। খারাপরা গড়পড়তা হুজুরেরা যেমন হয় আরকি তাই তাদের মনেও রাখিনাই তেমন। ভালোজনকেই মনে রাখছি।
ভালতো অবশ্যই আছে নাইলে তো আমাদের পূর্বপুরুষরা পৈত্রিক ধর্ম পরিত্যাগ করতো না
মন্তব্য করুন