আমার পুলাপান বেলা ২.২
আমরা যখন নিচের দিকের ক্লাসে পড়তাম সাইফুদ্দিন স্যারকে দেখতাম শুধু বড়দের ক্লাস নিতো। সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি স্যারকে। ছোটখাট রুগ্ন শরীর, ফর্সা চামড়া তার নিচে নীল নীল রগ দেখা যেত। স্যার পাঞ্জাবী, পায়জামা, নেহেরু টুপি পড়তেন সাথে কালো চামড়ার স্যান্ডেল। টুপি পড়া অবস্থায় কেউ বুঝতেও পারবে না সেই টুপির নিচে যে মস্ত টাক। স্যার যখন অজু করতেন তখন মাথা মাসেহ করার সময় সেই টাক দেখা যেত। বড় ভাইদের দেখতাম সেই ছোটখাট মানুষটাকে বেশ সমিহ করে চলতো, যদিও সাইফুদ্দিন স্যারকে কখনো বেত হাতে দেখি নাই।
এক সময় আমরা উপরের ক্লাসে উঠলাম এবং সাইফুদ্দিন স্যারকে পেলাম। সেই রুগ্ন শরীর সেই চামড়ার ভাঁজ সেই নীল রগ সব আগের মতই। স্যারের ক্লাসগুলো ছিলো বেশ মজার, মাঝে মাঝেই স্যার পড়া থামিয়ে গল্প জুড়ে দিতেন। এত মজার করে গল্প বলতেন যে ক্লাসের সবচাইতে দুষ্টু ছেলেরাও চুপ করে শুনতো। স্যারের একটা গল্প এই মুহূর্তে মনে পড়ছে -
"একবার রাতে গেছি যাত্রা দেখতে। শীতের রাত, সবাই খড় বিছানো মেঝেতে বসে আছে। শীতের কারনে লোকজন ঘন হয়ে বসেছিলো। যাত্রা শুরু হলো, রাজা সেনাপতিকে হুংকার দিয়ে বলছে যুদ্ধে যেতে এমন সময় কে যেন 'নিরব বোমা' ছাড়লো। সাথে সাথেই সবাই নাকে কাপড় চেপে নড়েচড়ে বসলো, একটা মৃদু গুঞ্জন শুরু হলো, মঞ্চের চরিত্ররাও সামান্য বিব্রত। দর্শকরা একজন আরেকজনের দিকে সন্দেহের চোখে চেয়ে যাচাই করতে লাগলো। কিছুপরেই বোমার ঝাঁঝ কমে আসতেই সবাই আবার যাত্রায় মনযোগ দিলো। দশ মিনিটের মাথায় আবারও একই কান্ড। এবার গুঞ্জন হুংকারে রূপ নিলো, একজন বললো - কুন ব্যাটায় কামডা করলো রে! আরেকজন অভিজ্ঞ কণ্ঠে বললো - এইটা কাশেম্মাইর কাম হালায় একটা খাটাশ, আরেকজন বললো - এইটা নির্ঘাত মোবারকের কাম। দর্শকদের মধ্যে প্রায় হাতাহাতি হবার উপক্রম, যাত্রার রাজা মন্ত্রিরাও নাকে কাপড় চেপে বিব্রত অবস্থায় দাড়িয়ে। ঠিক তখনই যাত্রা কমিটির লোকজনের এগিয়ে এসে সবাইকে থামার অনুরোধ জানিয়ে বললো,
- বারবার একই কারনে যাত্রা থেমে যাচ্ছে, আপনাদের কাছে অনুরোধ দয়া করে এরপর কেউ যদি অনুমান করেন যে আপনার বায়ু আসছে হাত তুলে শুধু বলবেন যে 'পুলিশ আইলো' আমরা যাত্রা থামিয়ে রাখবো, আপনি বাইরে গিয়ে বোমা ছেড়ে আবার বসার পরই যাত্রা আবার শুরু হবে। দয়া করে আর হুলুস্থুল করবেন না।
দর্শকরা সবাই কমিটির অনুরোধ সমর্থন করলো। আবার যাত্রা শুরু হলো, টানটান উত্তেজনা- রাজপুত্র যুদ্ধে আহত কবিরাজ বলে দিয়েছে রাজপুত্রকে বাঁচানো যাবে না, রাণীর চোখের জলে সবাই আবেগাপ্লুত, ঠিক সেই সময় মঞ্চের সামনের সারি থেকে একজন হাত উঠিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো -
- পুলিশ আইলো, পুলিশ আইলো ...... এইরে! ........দাড়োগা বাইর হইয়া গেছে"
মানে এতক্ষন বায়বীয় পদার্থ চলছিলো এখন কঠিন পদার্থ চলে আসছে।
সাইফুদ্দিন স্যার গল্পে প্রায়ই উদ্ভট উপমা ব্যবহার করতেন, আমরাও বিব্রত হতাম। একবার এক গল্পের মাঝে উপমা হিসেবে তিনি বললেন -
"ধর, তুমি একটা চিকন আইল এর উপর দাড়ায়া আছো, তোমার দুই পাশে দুইটা সাগর। একটা গুয়ের সাগর আরেকটা প্রস্রাবের সাগর, দুইটার দুর্গন্ধে তোমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। এমন সময় তোমার মাথার উপর একটা বিরাট কড়াত চালু হইলো, কড়াতটা ঠিক তোমার মাথা বরাবর নেমে আসছে আস্তে আস্তে, তোমাকে সরতেই হবে নইলে তোমার শরীর দুই ভাগ হয়ে যাবে। এখন তুমি আমাকে জবাব দাও তুমি কি গুয়ের সাগরে ঝাপ দিবে নাকি প্রস্রাবের সাগরে ঝাপ দিবে?"
স্যার কোন গল্পের মধ্যে উপমাটা ব্যবহার করেছিলেন মনে নাই। তবে পাঁচ বছর পর পর ইলেকশন আসে ভোট দেয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেই আর নিজেকে দুই সাগরের মাঝে আটকে পড়া লোকটার মত মনে হয়।
ফার্স্ট কমেন্ট
ভাইজান কিরামাছুইন? শইলডা ভালা? বহুতদিন পর দেখলাম মাশাল্লাহ।
ও মনু! আছি বালা
লেখা চ্রম ও মেটাফরিক্যাল।
আমার মনে হয় স্যার যদি বেঁচে থাকেন আজো তাহলে নিঃসন্দেহে দেখতে পাবেন দু'পাশে কথিত গু আর মুতের সাগরের পরিবর্তে দুই ডাইনির বিকট হা করা মুখ ! স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা ! লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ !
সে আর বলতে
চ্রম পস্ট
আগের্কার লুগ্জন আগেই সব কইয়া গেছে
কিন্তু চাচা, ১৫ আগস্টের ব্যানার ১৭ নভেম্বরেও ঝুলতাছে .... ক্যামনে কি !!
রনি
জোশ হইছে পোষ্ট!
থ্যাংকু
অনেক দিন পর, চরম লিখছেন
থ্যাংকু আপা
জট্টিল লেখছো

জট্টিল লেখছো
পোষ্ট সরাইছো কেন?
ধুরো ................আমি কিছু কই নাই
দুরদান্তিস কিন্তুক দুঃখজনক!
বহুত দিন পরে আপ্নেরে দেইখা ভালা লাগলো খুব।
এখনতে আরেট্টু কম গ্যাপ দিয়া আইয়েন। ভালা থাকেন।
পোলাপান বেলা তো এমনই হইব, নাকি?

লেখা সেরাম!!
ভালো আছেনতো সবাই?
মন্তব্য করুন