ছ্যাপ
স্থান: মৌচাক মার্কেট ট্রাফিক সিগন্যাল
সময়: মধ্য দুপুর
ঘটনা সাল : বহুদিন আগে (তখন ঢাকা শহরে নতুন ট্যাক্সি নেমেছে, ইয়েলো ক্যাব-ব্ল্যাক ক্যাব)
ট্রাফিক সিগন্যালে বেশ জটলা বাস-ট্রাক-রিকশা-মটরসাইকেল সব মিলিয়ে একটা বিরাট ভজঘট। সেই ভজঘট জ্যামে নতুন ঝা-চকচকে এক কালো ট্যাক্সি এসে থামলো। জ্যামে বসে ঘামতে থাকা অনেকেই ঘাড় ঘুরিয়ে কালো ট্যাক্সিটাকে দেখছে নগরবাসীর জন্য তখন এটা নতুন বস্তু। ভেতরে ড্রাইভার বেশ বনেদি ভাব নিয়ে উৎসুক নগরবাসীর দৃষ্টি উপভোগ করছে।
এক খালি রিকশা পেছন থেকে হালকা ব্রেক করে ট্যাক্সিটার পেছনে থামলো, কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না। রিকশাটা থামার ঠিক আগ মুহূর্তে সামনের চাকা দিয়ে হালকা একটা ঘষা দিলো ট্যাক্সিটার পেছনে এবং সেই আলতো ছোঁয়াতেই ট্যাক্সির পেছনে প্ল্যাস্টিকের খোলসের মত দেখতে বাম্পার নামক বস্তুটা দুম করে খসে পড়লো। রিকশাওয়ালা নির্বিকার। এদিকে ট্যাক্সির ড্রাইভার বেশ মারমুখি ভাব নিয়ে সিট থেকে তেড়ে এলো রিকশাওয়ালার দিকে মুখে খিস্তি-
- হালার পুত, করলি কি তুই কামডা !! তর রিকশা বেঁচলেও তো বাম্পারের দাম দিতে পারবি নারে হালার পুত। তুই এইডা কি করলি !!!
কলার চেপে ধরতেই রিকশাওয়ালা নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো -
- তর বাম্পার কি ছ্যাপ দিয়া লাগাইছোস? হালকা ঘসা দিতেই খইসা পড়লো ক্যা !!!
পাব্লিক তখন বেশ মজায়। বাসের জানালা দিয়ে এক মুরুব্বি জবাব দিলো-
- রিকশাওয়ালা যা কইছে তার উপরে আর কোন কথা নাই, তুমি ওর কলার ছাইড়া বাম্পার নিয়া গ্যারেজে যাও মিয়া। এরপর থিকা ছ্যাপের বদলে সুপার-গ্লু লাগাইয়ো।
বেচারা ট্যাক্সি ড্রাইভার, নতমুখে কলার ছেড়ে দিয়ে বাম্পার বগলদাবা করলো ততক্ষনে জ্যাম ছেড়ে দিয়েছে।
এইশব হইলদা ট্যাক্সির বাম্পারেই লেগে মাঝে দিয়ে কতোগুলো এক্সিডেন্ট হলো, অরে বাম্পার খুলে রাখার নির্দেশ দিলো। লাভ কি মানা হচ্ছে আর কই!
রিক্সাওয়ালা তো রক্স
এখন তো ক্যাব এ উঠলে দরজা, জানালা টেনেও খোলা যায় না
থাম্বস আপ টু রিক্সাওয়ালা
চলমান বিভীষিকার আর এক নাম হল এই কালো ক্যাব।যখন নতুন নেমেছিল সেই সময় চর্ম চক্ষে দেখার সুযগ হয়ে উঠেনি। যখন দেখার সুযোগ হল ততদিনে সব ছ্যাপ দিয়ে লাগানো প্রত্যঙ্গ খুলে খুলে পড়ে গিয়ে বিকট চেহারা ধারণ করেছে। দুনিয়াতেই যারা হাবিয়া দোযখের এসেন্স নিতে চান তারা কালো ক্যাবে চড়ে দেখতে পারেন। আমি একবার চড়েছিলাম। মনে হল যেন ইটের ভাটার ভিতরে বসে আছি। গোদের উপর বিষ ফোঁড়া রাস্তায় জ্যাম লেগে গেল, তার উপরে ক্যান্সার ময়লা ফেলার গাড়ি এসে থামল ঠিক আমার পাশে। আমি শিওর জীবনে যত পাপ করেছি এবং ভবিষ্যতে যত পাপ করবো সব ঐ দিন মাফ হয়ে গেছে।
একবার ঈদে বাড়ী যাওয়ার সময় কি যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা হয়েছিলো! আর এখণ তো পুরা ভাঙ্গা যন্ত্রপাতি
এইবার দেশ থেকে ফেরত আসার সময় ঢাকা এয়ারপোর্ট রেলস্টেশন থেকে উত্তরা পর্যন্ত গেছিলাম। মফিজ দেখে ভাড়া নিলো ২০০ টাকা। ব্যাগ পোটলা নিয়ে এমন ভাবে বইসা রইছিলাম তার আর বলার মতো না। ধুলা-বালি দেখি একটু অনুযোগ জানাতেই আমার উনি বলে ''হইছে তোমার বাবুগিরী, দুইদিনের বৈরাগী ভাতরে কও পোলাও''
হোয়াট এ ডায়লগ!
রিকশাওয়ালা ভাই রক্স!
ছ্যাপ দিয়ে বাম্পার লাগানো!!! হেভি ডায়লগ
কালো ট্যাক্সিতে উঠতেই এখন ভয় লাগে, মনে হয় দরজাগুলো যে কোন সময় খুলে পড়বে।
রিস্কাওয়ালা পাত্থর... তয় আমার কইলাম কালা ক্যাবে উঠতে মজাই লাগে, মনে মনে আশা করি কোন্দিন পিছের সিট লইয়া রাস্তায় বইয়া থাকুম, আর ডেরাইভার সাম্নের সিট লইয়া চইলা যাইবো
রিক্সা ওয়ালার এই ডায়ালগ পড়ে আজ সারাদিন আমি একা একা হাসছি যখন তখন।
তর বাম্পার কি ছ্যাপ দিয়া লাগাইছোস? হালকা ঘসা দিতেই খইসা পড়লো ক্যা !!!
বেচারা ক্যাবচালক
বেচারা, রিক্সাওয়ালা আসলেই রক্স
বেচারা টেক্সি ডেরাইভার, রিক্সাওয়ালা জিন্দাবাদ।
রিকশাওয়ালা পুরাই রক।
টেক্সিক্যাব, এখন মনে হয় জাদুঘরের সম্পত্তি...
মজা পেলাম ।
মন্তব্য করুন